নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ঐ ঘরে তর দুই ফুপু নেংটা হয়ে হুইত্তা রইছে,যাইস না ঐ ঘরে!"
যে লোক এই কথাগুলো বললেন,তিনি জড়সড় হয়ে সোফায় বসে আছেন।বিবস্ত্র এবং রুগ্ন,ক্ষুদাক্রান্ত হাড়জিরজিরে দেহ!
বড় বড় চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন।আবার বললেন,"কাইল্লা, তর মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে কেন?" আমাকে কেউ কাইল্লা বললে আমি সাধারণত খুব রেগে যাই, উনি বলায় এমন কোন অনুভূতি হয়নি।
"০,১,১,২,৩,৫,৮,১৩,২১,৩৪...."ফিবোনাক্কি ধারা ঠিকই বলতে পারলাম।একটু পানি খেলাম,গায়ে চিমটি কাটলাম।না,আমি স্বপ্ন দেখছি না,জেগেই আছি!হায়,ঈশ্বর আমার আবার তার সাথে দেখা হল।
আমি জেগেই আছি আর লোকটির কথা সত্য,প্রমাণ করার জন্য আমি বারান্দা থেকে মাঝখানের ঘরে গেলাম।মোবাইলের মৃদু আলোতে আমার ছোট-ফুপুর ফর্সা পিঠ আর মেঝো-ফুপুর বৃদ্ধ-স্তন স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
খুব প্রস্রাবের বেগ নিয়ে জেগে ছিলাম,এখন সেই বেগ আর নেই।তবে অত ভয়ও লাগছে না।
এই লোকটির সাথে আমার এই প্রথমবার হল তা কিন্তু না।আগেও দেখা হয়েছিল ২০১৩ সালে। চেহারা দেখা হয়নি।
সেবার ইদ-উল-ফিতরের আগের ইদু-উল ফিতরে আমরা বাড়ি যাবার জন্য তৈরি হয়েছি।হুট করে মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙল,আমার সচরাচর রাতে ঘুম ভাঙে না।দেখলাম ঠিক আমার মুখ সোজা সোফায় লোকটি বসে আছেন।বললেন,"বাইত গিয়া লাভ নাই।কাইজ্জা-ঝগড়া অইব,তর ক্ষতি অইব!যাইস না বাড়িত।"
আমি কিন্তু একটুও ভড়কাইনি।ভেবেছি স্বপ্ন দেখলাম।হরর মুভি আমার প্রিয়,সব সময় ভাবি অমন ঘটনা আমার সাথে হয় না কেন?
তবে ঠিকিই ইদে বাড়িতে অনেক ঝগড়া হল।ফুপাত ভাই আমার শখের ট্যাব ভেঙে ফেললো।আমার পিসি নেই,ওটা দিয়েই এসাইনমেন্ট করতাম।ট্যাব নেই,তাই ঠিক সময় এসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারায় আমার CGPA কমে গেল।আমার স্কলারশিপ বাদ গেল।আমি মারাত্মক বিপদে পরলাম!আমি "তাকে" বিশ্বাস করলাম।
দ্বিতীয়বার দেখা হল গত ইদ-উল-আযহা'য়।ইদের আগের রাতে,খুব ভোরে জেগে উঠলাম। তিনি ঘরের এক কোণায় জড়ো হয়ে বসে আছেন।গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,"আইজ তুই হুন্ডার নিয়া বাইর হইস না,তর বিপদ আছে।"
মোটেই পাত্তা দিলাম না।আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি আমি বাইক দিয়ে এক্সিডেন্ট করেছি,অনেক উপর থেকে নিচে পরছি।আমাকে সাপ দৌড়াচ্ছে। আরও কত ভয়ংকর স্বপ্ন।
ঠিক আগের বারের মত পাত্তা দিলাম না।ঠিকই বিকালে এক্সিডেন্ট করে হাত-পা ছিলে গেল,৭ দিন বিছানায় পরে থাকলাম।
আমার স্ত্রী,সেতারার খুব কষ্ট হলো। সে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছিল।আমার জন্য তার চাকরি চলে গেল।সেবার আমরা গ্রামে অনেকদিন থেকে গেলাম।৫ দিনের জায়গায় ২০ দিন।খুব খারাপ লেগেছিল তা নয়, কিন্তু সেতারা খুব বিরক্ত আর রাগান্বিত হয়েছিল। প্রতিটা প্রেমের বিয়েতে যা হয় তাই,আমার পরিবার সেতারাকে মেনে নিতে পারেনি। সেতারা তাদের কিভাবে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিবে?
মাঝে মাঝে মনে হয় সেতার চাইলেই সব ঠিক হয়ে যেত,সে চেষ্টাই করেনি বা করছে না।
তৃতীয়বার "তার" দেখা হবার কথা শুরুতে বলেছি।
ফুপুদের দেখে এসে আমার রুমে ঢুকতেই দেখি, "তিনি" বিছানায় বসে আছেন।ভাগ্যিস সেতারা এবার আসেনি।ভয়ে কি কান্ড করতো, আল্লাহু জানেন!
আমি কিছু না বলে ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম।আজ চলে যাবো। তিনি আয়েশ করে বিছানায় শুয়ে পরলেন, বললেন, "কাইল্লা, তুই আইজকা যাইস না।বৌটারে কয়দিন আরাম করতে দে।"
আমি বললাম,"আমার বৌ আমি বাসায় থাকলেই সুখে থাকে।"তিনি বললেন,"যাইস না।আইজকা গেলেই সমস্যা।তর কাইল যাইবার কতা কাইল যা।"
আমি জোরালোভাবে বললাম,"আমি আজকেই যাবো।"
তিনি হুট করে উঠে আমার গালে ঠাস করে চড় কষালেন।আমার কানে পিনপিন শব্দ শুরু হল।
"কাইল্লা হারামজাদা, আমার কতা না শুনলে কি অয়, আগে দেহস নাই?হেরপরেই হুনবি না?" তিনি হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।
আমি সেদিনই ঢাকায় ফিরে এলাম।তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম।সেতারা ঘুমাচ্ছিল।
আমি কাপড় পাল্টিয়ে ড্রয়িংরুমে টিভি ছেড়ে বসলাম।সোফার কোণায় ম্যানফোর্স'র ছেড়া প্যাকেট। ময়লার ঝুরিতে কনডম পরে আছে,ভিতরে থকথকে তরল।
আমি সবসময়ই প্যানথার কিনি।আর সোফায়-ময়লার ঝুরিতে প্যাকেট-কনডম ফেলে রাখে অসম্ভব! সেতারা এগুলো দেখলে খুব রেগে যায়।
গত কয়েকদিন ধরে আমরা বিবাদে জড়িয়ে পরছি।আমি সন্তান চাই,সেতারা আরেকটু সময় চায়।তাই আমি বাসায় কমডম কিনে আনি না।সেতারা সেদিন কিনেছিল।সেই মনে হয় ম্যানফোর্স কনেছিল।সেদিন আমি তাকে সোফাতেই আদর করেছিলাম,কিন্তু পাঁচ দিন আগে।কি জানি? মনে নেই প্যাকেট-কনডম কোথায় ফেলেছিলাম!
আমি নিজের ভালোবাসাকে সন্দেহ করছি?নিজেকে ধিক্কার দিয়ে সেতারাকে ডেকে তুললাম।সেতারা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বললো,"আবির, তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছ?"
আমি চমকে গেলাম!কারণ আমার নাম আবিদ।বললাম,"সেতারা,আমি আবিদ।"সেতারা চোখ খুলে আমাকে আরেকবার চুমু দিয়ে বললো,"আমি কি অন্য কেউ বলেছি?কেমন আছো?বিশ্রাম নাও,আমি খাবার দিচ্ছি।"
কলিংবেল বাজলো। আমি দরজা খুললাম।একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন।আমাকে দেখে একটু চমকে গেলেন। "স্যার,আমি দারাজ থেকে এসেছি।আপনাদের বাজার;গরুর মাংস,ইলিশ।" আমি জিজ্ঞেস করলাম,"আপনার নাম?" "আবির,আমি আবির হাসান।"
আমি রান্না ঘরে এলাম।"সেতারা,ঘরে বাজার আছে?"আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলল,"হ্যা, আছেতো।সবই আছে।" "তুমি অনলাইনে বাজার অর্ডার করেছিলে?" "নাতো, কেন করবো?সব বাজার আছে।"
আমি দোটানায় পরে গেলাম।কি হচ্ছে আমার সাথে?
সেদিন রাতে সেতারা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,"সেতারা,আবির কে?" সে আহ্লাদ করে বললো,"তুমিই আমার আবির,জীবনের রঙ।"আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুম থেকে জেগে শুনলাম বারান্দায় সেতারা খুব হাসছে।
আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই খুব চমকে গেল।হাতের মোবাইলটা নিচে পরে গেল।সাত তলা থেকে নিচে পরলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম,"আবিরের সাথে কথা বলছো?" সেতারা মাথা নিচু করে ফেললো।
বারান্দা থেকে নিচে তাকাতেই দেখলাম "তিনি" দাঁড়িয়ে আছেন।বরাবরের মত মুখ দেখা যাচ্ছে না।তবে স্পষ্ট শুনতে পেলাম তিনি বলছেন,"বৌরে নিচে পাডায়ে দে।মোবাইলডা লইয়া যাক।"
আমি "তার" কোন কথা রাখিনি। এই কথা রাখলাম।সেতারাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললাম,"যাও মোবাইলটা নিয়ে এসো।"
আমি "তার" কথা রেখেছি, পাছে যদি আবার বিপদ হয়।
পরিশিষ্টঃ পুলিশ আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছিল,"আমরা দুঃখিত,মিঃ আবিদ।আপনার স্ত্রীর অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল।ঐ সম্পর্ক কিছুদিন ধরে ভাল চলছিল না।" আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব দুঃখিত হলেন।
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: দাদা,এটাতো বানানো গল্প। পুলিশকে যা ইচ্ছে বলানো যাবে।
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: সেতারা নামটা সুন্দর।
পুলিশ এত দুর্বল কথা বলে!
১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:০০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: না, বলে না।তবে লেখকেরা অসম্ভব ক্ষমতাশীল, যা ইচ্ছে তাই ঘটাতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: সেতারা নামটা সুন্দর।
পুলিশ এত দুর্বল কথা বলে!