নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাজিতা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

এই বাড়ির একটা বিশেষত্ব হল এখানে তিনবেলাই তুমুল ঝগড়া হয়।আজও জামাল সাহেবের ঘুম ভাঙল চিৎকার শুনে।নিচতলায় তার বড় ভাইয়ের বাসায় ঝগড়া হচ্ছে। তিনি বিব্রতবোধ করলেন।কারণ বাসায় নতুন জামাই এসেছে।

২০১০ সালে যখন তার বড় ভাই কামাল,জুয়ায় সব হারিয়ে তার কাছে আশ্রয় চাইতে এলেন,তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।খুব কঠিনভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

পরের দিন নিহান এসেছিল, কামালের একমাত্র মেয়ে।খুব ভোরে তিনি দরজা খুলে দিলেন।মেয়েটি শুরুতেই বলল,চাচ্চু আমাদের থাকতে দাও।আব্বু আর তোমার কাছে টাকা নিবে না।তিনি নিহানকে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

অফিসে যাবার সময় মেয়েটি আবার বলল,চাচ্চু আমি তোমার বাসার সব কাজ করব।রান্না ঘরে থাকবো। আমাকে থাকতে দাও।তিনি নিহানের দিকে না তাকিয়েই অফিসে চলে গিয়েছিলেন।

অফিস থেকে ফিরে তিনি দেখলেন,নিহান সেখানেই দাড়িয়ে।কেউ নাকি তাকে ঘরে নিতে পারে নি।সারাদিন কিছু খায়নি।
তিনি ডাক দিতেই নিহান ঘরে এসেছিল।চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,চাচ্চু,আমাকে তোমার বাসায় থাকতে দাও।আব্বু একটা রুম ভাড়া নিয়েছে,আব্বু-আম্মু আমার সামনেই ঐসব কাজ শুরু করে দেয়।আমার খুব লজ্জা লাগে।

জামাল সাহেব এই প্রথম নিহানের দিকে ভালো করে তাকালেন,নিহান দেখতে অবিকল তার মায়ের মত।চোখে সবসময় পানি জমে থাকে।জামাল সাহেবের খুব মনে পড়ে, তার মা পাগল হয়ে মারা গিয়েছেন।পরনে কাপড় ছিল না।কিছু বললে রেগে বলতেন,তরা লেংটা;আমার কাপড় ঠিকই আছে।

তিনি টিউশনি করে বাড়িতে টাকা দিতেন আর কামাল সে টাকায় জুয়া খেলতো।আর তার ঘরেই কিনা নিহান এসেছে।তিনি তাদের থাকতে দিয়েছিলেন।

নিহানের তাকে খুব দরকার।আসলে নিহানকে তার খুব দরকার।সকালে নাস্তার টেবিলে এই মায়াময়ী মেয়েটাকে না দেখলে,অফিস থেকে ফিরে নিহানের হাতে পানি না পেলে, তার মেজাজ নীল হয়ে যায়।মেয়েটির আবোল তাবোল প্রশ্নও তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না।অথচ তিনি তার সন্তান মুহিব,দিয়ার একটু আহ্লাদকেও প্রশ্রয় দেন না।

মুহিব ঝড়ের বেগে নিচ তালায় গেল।

"হারামজাদী,রান্না করলি না কেন?বাসায় চাল নাই,ভাড়া খেটে চাল কিনে আনবি।মা-মেয়ে ভাড়া খাটবি,তোদের দিন কেটে যাবে মানুষেত কোলে-কোলে।"কামাল সাহেব একদমে কথাগুলো বললেন।

মুহিব ঘরে গিয়েই চিৎকার করে বলল,অনেক হয়েছে।অনেক সহ্য করেছি আর না।৭ দিনের মধ্যে এ বাসায় ছেড়ে দিবেন।নিহান মুহিবের দিকে পানি এগিয়ে বলল,ভাইয়া ঝগড়া করতে এসেছিস। নে বসে,পানি খেয়ে ঝগড়া কর।এমনিতেই মা-বাবার ঝগড়া শুনে শুনে আমি ক্লান্ত। দেখি তুই কেমন ঝগড়া করিস।

মুহিব এক ঝটকায় পানির গ্লাস ফেলে দিয়ে বলল,আমার সাথে ঢং করবি না।

পরদিন বিকালে ঢাকা কলেজে কি নিয়ে আন্দোলন চলছিল। নিহানের সাথে মুহিবের নীলক্ষেতে দেখা হল।মুহিব নিহানকে বলল,"শোন বেশি ঘুরাঘুরি করবি না।বাসায় যা,এক্ষুণি।"
নিহান উত্তর দিল,"আমি ঘুরাঘুরি করলে তোমার কি?তোমাদের বাসা থেকে বের করে দিচ্ছ,আমাকে তো বাইরে বাইরেই ঘুরতে হবে।তাই প্র‍্যাকটিস করছি।"মুহিব রেগে গেল,"থাপ্পড় খেতে না চাইলে,বাসায় যা।"

মুহিব বাসায় ফিরে দেখল নিচতলায় বেশ লোকজন। নিহানকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।পাত্র ব্যবসায়ী, পুরাণ ঢাকায় দুটা হোটেল আছে।আগামী শুক্রবার বিয়ে ঠিক করে সবাই চলে গেল।

সকালে নিহান জামাল সাহেবের সাথে নাস্তা করতে এলো। মুহিব বলল,তর জামাই নাকি বুড়া!নিহান উত্তর দিল,আমার জামাই বুড়া-লুলা-কানা হোক তাতে তোর কি?!তুইতো চাস আমরা এ বাড়ি ছেড়ে দেই,তাই তাড়াতাড়ি কারো গলায় ঝুলে পরছি আরকি!
মুহিব কঠিন চোখে তাকালো।

বিকালে জামাল সাহেব ব্যবসার হিসেবপাতি দেখছিলেন।এমন সময় নিহান,গুদামের অফিসে এসে হাজির।"
:তরে না কইছি গুদামে আসবি না,আসলি কেন?বাসায় যা!
:তোমার অফিসে শেষ বার পেপসি খেতে এলাম।বিয়ের পরতো আর আসিতে পারব না।
নিহান কাঁদতে শুরু করল।

:কিরে আবার কাঁদছিস? এত বড় মেয়ে কাঁদলে কেমন দেখায়!
:আমি চলে গেলে খাবার টেবিলে আমার কথা কারও মনে পরবে না,আমি জানি!

:কি বলিস,তুই অবিকল আমার মায়ের মত।তুই আমার মা!
:তাহলে আমার বিয়ে আটকাও।আমি মুহিবকে ভালোবাসি!
নিহান জামাল সাহেবের বুকে মুখ লুকালো।

:আগে বলিসনি কেন, পাগলী? আর আমার ছেলেটাও যে বেপরোয়া!
:তুমি বাবাকে বল!নয়তো আমি বিষ খাবো, গলায় দড়ি দিবো।

:আজেবাজে বকিস না,ছেলেটা কি যেন নাম খুব ভালো! দুইটা হোটেল আছে।তুই সুখেই থাকবি!
:আমি মুহিবের সাথে কষ্টেই থাকতে চাই!

:তর বাবা আমার বড় ভাই,আমার কথা শুনবে না।তুই মা আর দ্বিমত করিস না!

নিহান কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেল।জামাল সাহেব ডাকতে ডাকতে বের হয়ে এলেন।নিহান থামলো না।

আজ শুক্রবার, নিহানের বিয়ে।সকাই থেকে এবাড়িতে সানাই বাজছে।এর মাঝেও কামাল সাহেব ঝগড়া করছেন,"আজ তর একদিন কি আমার একদিন,*********(মুদ্রণযোগ্য নয়) দূর হ আমার সামনে থেকে।"

মুহিব আজ সারাদিন বাইরে যায় নি।জামাল সাহেব একটু পরপর তার ঘরে উকি দিচ্ছেন।সানাইয়ের সুর তার বুকে কাটার মত বিঁধছে। আজ যদি মুহিবটা.......

ঝামেলা হল বিকেলে নিহান কিছুতেই শাড়ি পড়বে না।কামাল সাহেব এক চড় দিয়েই সমস্যা সমধান করলেন।

নিহান কিছুতেই কবুল বলবে না।কামাল সাহেবের চোখ রাঙানি তাকে এতটুকু টলাতে পারেনি। সবার সামনে তিনি মেয়েকে চড় মারলেন।তবু সে কবুল বলেনি।সাক্ষীরা অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে বললেন, তারা শুনেছেন।পেছনে নিহানের কান্না আর চিৎকার শুনা গেল।মুরুব্বিদের এত কিছু নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না।

জামাইকে শুধু TVS মোটর সাইকেল দেয়ার কথা থাকলেও কাবিন নামায় সই করার আগে পাত্র বলল, R1-5 মোটর সাইকেল না দিলে সে সই করবে না।এটা নিয়ে বেধে গেল তুমুল ঝগড়া।

মুহিব ঘর থেকে বের হয়ে এল।খুব ঝগড়া হচ্ছে।পাত্র হঠাৎ বলল,"আমি বিয়া করুম না,তুমি বিয়া কইরা ফেল।আর তোমার লগেতো ইটিসপিটিস ছিলই।আমি সবই জানি।"


মুহিব নিহানের হাত ধরে ঘর থেকে বের করে আনল।আমিই তোকে বিয়ে করবো,আমিই করবো,আমিই করবো.....
এটা বলতে বলতে সে নিহানকে মোটর সাইকেলে করে নিয়ে চলে গেল।

হ্যা,সারা বিয়েবাড়ি স্তব্ধ হয়েছিল।হবারইতো কথা!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪১

জুলকারনাইন নাঈম বলেছেন: পড়তে গিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেললাম। আর ক্যারাক্টারের নামগুলোও যেন কনফিউজিং লাগছিলো। আরো গোছানো হলে পুরোটা হয়তো পড়া হত।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি দু:খিত।পরের বার চেষ্টা করবো!

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:১৭

কিরমানী লিটন বলেছেন: শুভকামনা সব সমশ

১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:০১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন?

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সব লেখাই কারো না কারো জীবন থেকেই নেয়া!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.