নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুই জীবনে নামের প্রেমে পড়েছিস?ধুর নামের প্রেমে পড়া যায় নাকি!কিন্তু আমি পড়েছিলাম,খুব ভালোভাবেই পড়েছিলাম।তখন ২০০৩ সালের শেষের দিকে হবে,আমাদের স্কুলে একটা মেয়ে এসেছিল,কেউ একজন ডাকছিল "পিয়া,পিয়া"।আমি ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটা বেশ সুন্দরী! এখন যদি বলি আমি সেদিনই তার প্রেমে পড়েছিলাম, তবে তুই বলবি আমি ইচরে পাকা!আমি সেদিনই তার প্রেমে পড়েছিলাম!
মেঘ না চাইতেই সেদিন তুফান শুরু হয়েছিল।মেয়েটি আমার বাড়ি ফেরার রাস্তায় বাড়ি ফিরছিল যে!
কে কথা বলেছিল মনে নেই।প্রথম দিন থেকেই তার সাথে স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু হল।রাস্তায় একসাথে বসে থাকার আর তার সাথে ফেরার জন্য স্যারের কাছে কত মিথ্যা বলে ছুটি নিয়েছি!তার সাথে স্কুলে আসার জন্য কত না খেয়ে স্কুলের জন্য বের হয়ে গিয়েছি,পথে কি কথা হবে গুছিয়ে নিয়েছি।কিন্তু আমি কথা বলার সুযোগ পেতাম কই,সে নিজেই এত কথা বলতো! নাম দিয়েছিলাম বাবুইপাখি!
তার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগতো, আমি অন্য ছেলেদের মত তাকে ঘিরে চিন্তা করিনি,মিশে ছিলাম তার পরিবারের সবার সাথে!সকাল-দুপুর -বিকাল নেই চলে যেতাম তাদের বাড়িতে।
ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম,আর তার বাবার কঠিন প্রশ্নের জবাব না দিতে পেরে মন খারাপ করতাম।হয়ত তার সাথে অল্প কথা হত,তবু তার জন্যই পরের দিন আবার যেতাম।
যে আমাকে দুই মাস আগে থেকে স্যারের কাছে পড়তে যাবার জন্য তোরজোড় করা হচ্ছিল,আমি যাইনি।সে আমি তার সাথে কথা হবার পরেরদিনই পড়তে গেলাম।যাবার আগে, পড়ার পরে তাদের বাড়িতে উকি মারতাম।কতদিন পড়তে না গিয়ে একসাথে গল্প করেছি।
এমন সময় পড়তে যেতাম যাতে তার বড় আপুর সাথে দেখা হয়।আপুরা অনেক আদর করতেন।স্যার আমাকে কখনো তাদের সামনে বকা দিতে পারেননি। ফেরার সময় স্মৃতি আপু দুধের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন,না খেলে পরের দিন কথা বলা বন্ধ।
আপুর সাথে তার বাসায় যেতাম।আমি শুক্রবারেও পড়তে যেতাম।তাকে দেখতে হবে তো!
তার বাবার প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করতাম।আমি ক্লাস ফোরে পড়েই জানতাম "ঘরে বাইরে"রাজনৈতিক উপন্যাস, "শেষের কবিতা" কবিতা ধর্মীয় উপন্যাস, এরশাদ ভালো মানুষ নন আর জিয়াউর রহমান অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।
আমি অনেক কঠিন ট্রান্সলেশনও তার কাছে শিখেছিলাম,মা শিশুকে খাওয়ান এটা Mother eats the child হবে না,,আমার বাবার একটা গরু আছে My father is a cow হবে না,আরো কত কি!
আমি সবই করেছি তার সাথে সময় কাটানো বা শুধু তাকে একঝলক দেখার জন্য।
তারপর ২০০৫,সে পড়ালেখার জন্য চলে গেল দিনাজপুর আর আমি সরিষাবাড়ি। বেশ কয়েকবছর আমাদের যোগাযোগ হয়নি।আমি যখন তার খোজ নিতে গেলাম,তখন সব পরিবর্তন হয়ে গেছে।আপুদের বিয়ে হয়ে গেছে,তার বাবা মারা গেছেন।
আমি তার খোজ পেলাম ২০১২ সালে, সে দিনাজপুর পড়ে তার মোবাইল নাম্বারও পেলাম।প্রথম তার সাথে কথা বললেই সে চিনতে পেরেছিল,আমি যে কত অভিভূত হয়েছিলাম।সে প্রশ্ন করেছিল,তুমি এত দিন কোথায় ছিলে?আমি মেয়ে মানুষ তোমাকে খুজে পাওয়ার সুযোগ ছিল না!তুমি কেন যোগাযোগ করনি!
সে যেদিন বাড়ি আসবে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,আমি তাকে দেখতে পাইনি!কি যে হতাশ হয়েছিলাম।
তার সাথে দেখা করতে সাথে নিয়েছিলাম ১১ টা লাল পদ্ম।আমি নিজেই কোমড় সমান কাদা থেকে তুলেছিলাম,গ্রামের ছেলেগুলো বলছিল পদ্মগড়ে প্রচুর সাপ থাকে।আমি সাপ দেখেছিলাম,তবু পদ্ম তুলতে নেমেছি,কাটার আচড়েও দমে যাইনি!
হ্যা,আমাদের মাঝে ভালোবাসা হয়েছিল।চলছিলও ভালো, কিন্তু আমি বাকিদের মত ছিলাম না।আমি কি করবো,নিজের টাকা নিজেকে আয় করতে হয়!ক্লাস, টিউশনি করার পর আর রাত জেগে কথা বলার শক্তি কই?তাই বলে ভালোবাসা কম নেই।এটাই সে মানতে চায় না।আমি নিরুপায়! তবু সে আমার সাথে আছে,এটা তার বিশেষত্ব,আমার প্রতি ভালোবাসা বা করুণাও হতে পারে।
এইতো সেদিন সে বলল,তাকে দ্রুত বিয়ে করতে।আমি মাত্র চতুর্থ বর্ষের ছাত্র,টিউশনি করে নিজে চলি।বিয়ে করে আমাদের চলবে কি করে?অনেক ভালোবাসার বিয়ের মত পরে আমাদেরও করুণ পরিণতি হবে!এটা আমি চাই না!
আমি তাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি,আমার ২ বছর সময় চাই।সে বলেছে, ২ বছর পর আমি নাকে তাকে আর চিনবো না।আমি নাকি তার জন্য কিছু করিনি।হ্যা, কিছুই করিনি।তাকে দামী উপহার দিতে পারিনি,তাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে পারিনি।সময় আর টাকা, কোনটাই আমার নেই।আমার নিজেকে সাপোর্ট দিতে হবে,আবার ভালো রেজাল্টও করতে হবে!
হ্যা,তাকে অভিভূত করার জন্য আমি কিছু করিনি।বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজ-ক্রিকেট আত্মপ্রাণ আমি,সব ছেড়ে দিয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম শুধু তাকে দেখার জন্য,তার সাথে দু-একটা কথা বলার জন্য।
রাত হয়ে গেলে,তাদের বাসা থেকে ফেরার কোন রিকশা-ভ্যান পাওয়া যেত না।হেটে ফিরেছি,অন্ধকারে খুব ভয় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর যাবো না।পরের দিন ঠিকই গিয়েছি।সে আমার সাথে ৫ টা কথা বললে ৪ টাই খোচা দিয়ে বলতো। সব সহ্য করেছি।
ফোনে রাগারাগি, খোচা দিয়ে কথা বললে চুপ থেকেছি।আমি তার সাথে ঝগড়া করতে চাইনি।এখনো চাই না।
তবু আমরা একসাথে ভালো থাকতে পারছি না।
আমার বন্ধু মুহিব যখন কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেল,চুপ করে শুনলাম।খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তার পিঠে হাত রেখে কিছু বলি।
আমার সাহস হয়নি,যদি সে কান্না শুরু করে!বিশ্বাস করুন,ছেলেদের কান্না বড়ই কুৎসিত!
১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৯
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হৃদয়ের কথাতো পরের ব্যাপার, ভালোবাসার মানুষেরই বড় অভাব।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম। এমনই হয়।
ভালবাসার বাহ্য প্রকাশটাই বুঝি মূখ্য! হৃদয়ের গহনে উঁকি দেবার মানুষ কই???
+++