নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আস্তিকতা

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৪১

:শুনো,আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেননি,মানুষ আল্লাহু সৃষ্টি করেছে।আর আমি এটা যুক্তি,উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে পারি।শুনবে?
:নাহ,আমি শুনতে চাই না।

:তার মানে আপনি আল্লাহ বিশ্বাস করেন না।
:নাহ,করার কোন কারণ নেই।তোমার ধর্ম কি প্রমাণ দিতে পারছে?

:এখানে প্রমাণের কি আছে!ধর্ম বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত।
:আর নাস্তিকরা যে এতএত প্রমাণ দিচ্ছে সেটাকে কি বলবে?

এভাবে তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। সেদিন অনেক কথা হয়েছিল,তার সারমর্ম ছিল যে তিনি একজন নাস্তিক।আমি তার কাছে এসেছিলাম জুডিসিয়ারি নিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য জানতে।

আজ আবার এসেছি। তিনি এলেন,সারা ঘর আতরের ঘ্রাণে ভরে আছে।
:কি ব্যাপার, আপনার চুলতো সব সাদা হয়ে গেছে।
:হ্যা,,,প্রতীক ঝুলিয়ে রাখছি যে আমার মরার টাইম হইছে।তা কেমন আছো?

:আছি আরকি!
:তা আমার কাছে কেন,খুব বিপদে না পরলে এই বুড়ার কাছে কেউ আসে না।হা হা হা,,,

:নামাজ পড়ে এলেন মনে হয়।
:হ্যা,,

:তা,, আপনিও আল্লাহ বিশ্বাস করেন।
:তা না।ইবাদত করি আরকি,বিপদে-আপদে!

:কবে থেকে,,
:লম্বা কাহিনী আছে,শুনবে?

:হ্যা,একজন নাস্তিকের ধার্মিক আচরণের কারণ জানার প্রবল আগ্রহবোধ করলাম)
:কোন প্রশ্ন করতে পারবে না।যা প্রশ্ন তার কোন উত্তর আমার জানা নেই।

২০০৫ সালের ঘটনা।আমি তখন ময়মনসিংহ ফৌজদারি আদালতের বিচারক।সেদিন রবিবার ০৪/০৯/০৫ আমার কোর্টে একটি মামলা এলো,খুনের মামলা।
৯ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।আসামী মেয়েটির চাচা!

অভিযোগ পত্রে লিখা ছিল,
মেয়ের বাবা কালাম আর চাচা জলিল এর মাঝে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।সোমবার ০১/০৮/০৫ তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।মঙ্গলবারে ০২/০৮/০৫ জলিল অন্যখানে ঘর তৈরি করে থাকা শুরু করে।

গ্রাম্য শালিসে জলিলকে কালাম সবার সামনে চড় মারেন।বুধবার ০৩/০৮/০৫ কালামের মেয়ে জবা নিখোঁজ হয়।
সারারাত, পরের সারাদিন তাকে খুজে পাওয়া যায়নি।তাকে পাওয়া গেল শুক্রবার ০৫/০৮/০৫ সকালে জলির নতুন ঘর থেকে।মেয়েটিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে!

ময়না তদন্ত রিপোর্ট আরো ভয়াবহ। মেয়েটিকে হত্যার আগে দুইবার ধর্ষণ করা হয়েছে।ঘটনাটা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করলো।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম,জলিলকে কঠিন শাস্তি দিব।

এটা Open and Shut মামলা ছিল।পুলিশ তদন্তে উল্লেখ করেছে যে বটি দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল (murder weapon) পাওয়া গেলো জলিলের রান্নাঘরের মেঝে থেকে।

লাশ যেহেতু জলিলের ঘর থেকে পাওয়া গেলো,তার সাথে কালামের ঝগড়া চলছে দুধের শিশুও তাকে আসামী মানবে।আবার হত্যার অস্ত্রও তার ঘর থেকেই পাওয়া গেলো।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম,জলিলকে মৃত্যুদণ্ড দিব।আমি ফাসির আদেশ দিব আর হাই কোর্ট বাতিল করে দিবে তা আমি হতে দিব না।অন্যদিকে NGOগুলো,সুশীল সমাজ ন্যায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার।পেপারে প্রতিদিন কালামের খবর বের হত।তার কষ্টে আমিও ভেঙে পড়েছিলাম।

ফাসির রায় জোড়ালো করার জন্য আমি জবার শরীর থেকে বীর্য আর ঘামের ডিএনএ (DNA) পরিক্ষার আদেশ দিলাম ১১/০৯/০৫।

সাতদিন পর ১৯/০৯/০৫ তারিখে ফলাফল এলো। যা আশা করেছিলাম তাই।ফলাফলে মিল পাওয়া গেল।
এবার আর জলিল বাচতে পারবে না।

আমি দু'রাত জেগে রায় লিখলাম ২২ তারিখ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করব।এমনভাবে রায় লিখলাম যেন হাই কোর্ট কিছুতেই বাতিল না করতে পারে।গত দুরাত অনেক কষ্ট করেছি,রায় লিখে আমি সন্তুষ্ট।

খুশি মনে ঘুমাতে গেলাম।কতটা বাজে জানি না।হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
চোখ খুলে দেখি আমার সামনে একটি মেয়ে বসে ইনিয়েবিনিয়ে কাঁদছে। আমি চিনলাম এটা জবা।

আমি অবাক হইনি, বিশ্বাস কর।
:তুমি কাঁদছ কেন জবা?
:ও স্যার, আমার কাকারে ফাসি দিয়েন না।হের কোন দোষ নাই!

:কি বলছো জবা!তোমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে।সম্পত্তির লোভে জলিল তোমাকে খুন করেছে!
:না কাকা আমারে মারে নাই।

:তোমার কাকা তোমাকে ধর্ষণ করতেও দ্বিধা করেনি!
মেয়েটি ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো। ধর্ষণ শব্দের মানে তার বোঝার কথাও নয়।

আমি চিৎকার করে উঠলাম,জবা তোমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে।জলিলের ফাসি হবেই।চিৎকার শুনে আমার স্ত্রী ছুটে এল।ভোর চারটা বাজে।আমি স্বপ্ন ভেবে আবার ঘুমাতে গেলাম।

কোর্টে আমি সেদিন রায় দিলাম না।শরীর খারাপ বলে চলে এলাম।

সেদিন রাতে আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল।তুমি বলবে স্বপ্ন , এটা কিছুতেই স্বপ্ন ছিল না।

সেদিন আমি আবার জবাকে দেখলাম।

:ও স্যার। আমারে মারছে আব্বায়।মারা আগে আমার কাফর খুলছে,,,,,,,।আমার খুব বেদনা অইছে।আমি কানছি,,,পায়ে দরছি।আমারে ছাড়ে নাই,,,

:তো,তো-তোমার মা কোথায় ছিল।হেয় খাড়ায়া দেখছে!ছার,আমার আম্মায় বডি দাও নিয়া খাড়ায়া আছিল।কইছে,চিল্লাইলে কুপ দিব।আমার বেদনা অইছে আমি চিল্লাই নাই।

:তু-তু-তুমি চুপ কর জবা।
:ছার আমার বাপেরে ফাসি দেন,আমার কাকারে না।হেয় আমারে কিছু করে নাই।

২৫ তারিখ রবিবার ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠলাম।সকল কাজ স্বাভাবিকভাবেই করেছি।রাতের সব কিছুকে স্বপ্ন ভেবে, রায়ের কপি নিয়ে কোর্টে গেলাম।

আসল ঘটনা ঘটলো। আমি কোর্টে সবার সামনে ঘোষণা করলাম,জলিল নির্দোষ।স্বপ্নে যা দেখেছি বললাম।পুলিশকে বললাম,জবার বাবাকে আসামী করে অভিযোগপত্র তৈরি করতে।
দেশের সব বড় বড় সংবাদকর্মী আমার কোর্টে ছিল সেদিন।সবাই অবাক!
রারা রব উঠলো। কে যেন আমায় জুতা নিক্ষেপ করলো। সারা দেশে রব পরে গেল,বিচারক আজিজুল হক টাকা খেয়েছেন। আমার কুশপুত্তলিকা পোড়ান হল।আমার স্ত্রী আমায় ছেড়ে চলে গেল।আমায় পাগল-দুর্নীতিবাজ বলে দেশের সকল পেপারে খবর বের হল।
আমার খারাপ লাগেনি। হতাশ হইনি,কষ্ট পাইনি।আমি নিশ্চিত, আমি ঠিক কাজ করেছি।

:তারপর কি হলো?
:সরকার আমাকে OSD তে রেখে দিল।
:মানে কেস টার কি হল?
:পরের যে বিচারক সেও একই কাজ করল।আমার কাছে এসছিল।আমি দেখা করিনি।

:কেন?
:আমি যুক্তিবাদী মানুষ। সারা জীবন প্রমাণে বিশ্বাস করেছি।আজও করি।তাই চাইনি তার সাথে দেখা করে আমার যুক্তি নষ্ট হোক।

:এর সাথে আপনার আস্তিক হবার কি সম্পর্ক?
:কে বলেছে আমি আস্তিক?আমার সেদিন মনে হয়েছিল যে, কেউ আমাকে সে নিষ্পাপ লোকটিকে হত্যা করা থেকে বাঁচিয়েছে। আর যেহেতু আমার পূর্বপুরুষ মুসলিম। তাই ইসলামের কায়দায় ধন্যবাদ দেই।

:মানে?...
:আমি মোটেই আস্তিক নই!

:মামলাটার এখন কি খবর?
:আমি জানি না।জানতেও চাই না।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:০০

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: ++++++++++++++++++++

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:০৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: লেখক প্লাস চিহ্নের মানে জানে না!

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:০০

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: :(

৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩৩

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: তাহলে এই পোস্টের উল্লেখিত ডিএনএ পরীক্ষার রেজাল্টকে বিচারক পাশ কাটিয়ে স্বপ্নকে প্রাধান্য দিলেন !!

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৪২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: না,ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ছিল।বিচারক রায়ে জলিলের ফাসি লিখেছিলেন। কিন্তু এজলাসে বলেছেন অন্য কথা।এটা অতিপ্রাকৃত হতে পারে!তিনি কিছুতেই স্বপ্নকে প্রাধান্য দিতে চাননি,,,

৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৪৩

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: এই পোস্টে বলা আছে বীর্যের ডিএনএ রেজাল্ট মেয়ের চাচার সাথে মিলে যায় । তাহলে বিচারক হিসেবে স্বপ্ন দেখার পর বিবেচ্য হওয়া উচিত ছিল দুইজন ব্যক্তির (মেয়ের বাবা ও চাচা) ডিএনএ এক হবার প্রবাবিলিটি কতটুকু ।

Is it possible for two people to have the same DNA?
Of course, a lot of the gene pairs in your genome are actually the same, so it wouldn't matter which copy you used, but the odds of constructing an exact duplicate genome by chance are still vanishingly small. And even identical twins don't necessarily have identical DNA.Apr 7, 2011
Can two people have the same DNA? | Science Focus
www.sciencefocus.com/qa/can-two-people-have-same-dna

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: জনাব মনিরুল ইসলাম,আমি সাইন্স রিপোর্ট লিখিনি!গল্প লিখেছি।তবে হ্যা,সাধারণত ভাইদের ডিএনএ ৫০% এর চেয়েও বেশি মিলে।
আপনি ex-DIG মামলা পড়তে পারেন।Beautiful Bibi v Saidur Rahman case পড়তে পারেন।এখানে ডিএনএ টেস্ট এর legal Admissibility এর কথা বলা আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.