নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জার্মান নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের ঢাকা সফরের ছবি। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে পুরান ঢাকার গলিতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন গুন্টার গ্রাস৷
এই লেখায় রাজনৈতিক বায়াসনেস থাকতে পারে, যেহেতু মানুষ মাত্রই থাকে। যাইহোক, গ্রহণ কিংবা বর্জনের দায়িত্ব পাঠকের, এর জন্য লেখক দায়ী নয়।
-
নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গুন্টার গ্রাস ঢাকায় এসেছিলেন, গিয়েছিলেন কলকাতায়ও। ঢাকা-কলকাতা ঘুরে লেখেছিলেন 'শো ইয়োর টঙ্গস', জার্মান ভাষায় Zunge zeigen. হিন্দু ধর্মের দেবী কালীকে মেটাফোর বা রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এই বইয়ে। বইটি পড়তে শুরু করলেও শেষ করিনি।
গুন্টার গ্রাসের ঢাকা ভ্রমণ নিয়ে 'গুন্টার গ্রাসের ঢাকা আবিষ্কার' নামে গোটা একটি বই লিখেছেন নাসির আলী মামুন। লিটারেচারে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চের পর সবচেয়ে বেশি নোবেল পেয়েছে জার্মানভাষী সাহিত্যিকেরা এবং জার্মান সাহিত্যে গত শতাব্দীর শেষ নোবেলজয়ী ছিলেন গুন্টার গ্রাস। গত সামারে ঘুরতে গিয়েছিলাম গুন্টার গ্রাসের শহর লুবেক। জার্মানির যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে সেটি এই বিকেন্দ্রীকরণ। বাংলাদেশে ঢাকার বাইরে বুদ্ধিজীবী সমাজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ বাংলাদেশের সবাই ঢাকায় আবদ্ধ, সুষম উন্নয়ন হবে কী করে? আবার সুষম সুযোগ-সুবিধা নেই বলেই সবাই ঢাকায় থাকে।
গুন্টার গ্রাসের বিখ্যাত উপন্যাস দ্যা টিন ড্রাম, যা অস্কার ম্যাটজিরাথ নামের এক বামন ছেলের কাহিনী। এটা নিয়ে একটা মুভিও (১৮+) হয়েছে, চাইলে দেখতে পারেন। গুন্টার গ্রাস হিমলারের সাথে সুভাষ চন্দ্র বসুর হাত মেলানোর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যেন বিষয়টা খুবই লোমহর্ষক। সুভাষ চন্দ্র বসু স্বাধীন ভারতে হিরো বনে গেলেও জার্মানিতে হিমলার হয়েছেন ভিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, নতুন জার্মানি গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন গুন্টার গ্রাসের মতো বুদ্ধিজীবীরা, ইয়োর্গেন হাবারমাস (Jürgen Habermas) মতো দার্শনিকেরা।
প্রশ্ন হলো স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতিগত বেহাল দশা হলো কেন? অন্যতম কারণ হতে পারে বাংলাদেশের হাজারেরও উপর বুদ্ধিজীবীকে মাত্র একদিনে মেরে ফেলা!
এ্যাডলফ হিটলার ফেড্রিক নিৎসের মতো দার্শনিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, একজন হিটলার মূলত তৎকালীন ইউরোপের ধ্বংসবাদী দর্শন দ্বারাই একজন ফুয়েরার হয়ে উঠেছিলেন।
হিটলার ছিলেন মূলত অস্ট্রিয়ান নাগরিক, পরবর্তীতে তিনি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালের ইকোনমিক ডিপ্রেশন হিটলারের ক্ষমতা আসার পথ সুগম করেছিল। আর হিটলারের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর একে একে বহু ইন্টেলেকচুয়াল জার্মানি ছেড়ে নির্বাসনে যেতে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছেন থিওডর অ্যাডর্নো, ম্যাক্স হরখাইমারের মতো দার্শনিকেরা।
জার্মান টেলিভিশন ডয়েচে ভেলে ইয়োর্গেন হাবারমাসকে নতুন জার্মানিতে ক্রিটিকাল আলোচনার পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যিনি জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরে ১৯২৯ সালে ইকোনমিক রেসিশনের বছর জন্মেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের তরুণ হাবারমাস আধুনিক জার্মানির রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করেছেন।
জার্মানি এঙ্গেলা মার্কেলের মতো একজন চান্সেলর পেয়েছে, যদিও বাংলাদেশ পায়নি৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বরাবরই স্বৈরাচারী কাঠামোর কবলে পড়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিই শেষ কথা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ইন্টেলেকচুয়ালরা কোথায়?
আমি বিএনপির রাজনীতি করি না, যদিও প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক-আহমদ ছফা-সলিমুল্লাহ খাঁনকে রাজনীতির মেরুকরণের বাইরের সিলসিলা মনে করি।
আহমদ ছফা একবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। খালেদা জিয়ার পিএস আহমদ ছফাকে চিনতে পারেননি। পরবর্তী খালেদা জিয়া ফোন করার পর ছফা বলেছিলেন, ''ম্যাডাম, কী সব অশিক্ষিত পিএস টিএস রাখেন আহমদ ছফার নাম জানে না''। বেগম জিয়া হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ''আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়। আপনারা কেউ তো এগিয়ে আসছেন না?'' কেউ-ই কী কখনও এগিয়ে আসেনি?
শেখ মুজিবুর রহমানও চেষ্টা করে, তৈরিও করেছিলেন সোভিয়েত আদলের রোডম্যাপ। সত্তরের পরে সোভিয়েতের ভাঙন শুরু হয়, এক সময়ের বাম রাজনীতি করা কবি আল মাহমুদ তখনই বুঝতে পেরেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর টিকবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান নিজেদেরকে বাইরের পৃথিবী থেকে পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে আবিষ্কার করলো। আর তাই জাপান নিজেদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করলো।
কবি আল মাহমুদ জামাআতের রাজনীতিতে আকর্ষণ বোধ করেন। আমাদের ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের প্রিয়পাত্র ছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছিলেন। ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশে হেনস্তা হলেও তার সোশ্যাল বিজনেস মডেল নিয়ে ইউরোপ থেকে নর্থ আমেরিকার শহরগুলোতে সেমিনার হয় পুঁজিবাদের ড্রব্যাকগুলো কমানোর নিমিত্তে।
অথচ ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস কিংবা আহমদ ছফা একজন ইয়োর্গেন হাবারমাস হয়ে উঠতে পারেননি।
সংযুক্তি:
জার্মানির অনেক শহরের আবাসিক এলাকার রোডগুলো বেশ পুরনো, বহু বছর ধরে শুধু রিপিয়ার করে চলছে। বহু জায়গায় গেলে মনে হবে এ যেন পূর্ব ইউরোপের কোন এক দেশ। ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও জার্মানির এই অবস্থা কেন? কোথায় জার্মানি টাকা ঢালছে?
জার্মানির জিডিপির নয় শতাংশের উপরে শিক্ষাখাতে খরচ করে। গত কয়েক বছরে ১১.৭-১৩.২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করেছে হেলথ কেয়ারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে খরচ করে জিডিপির মাত্র দুই শতাংশ, চিকিৎসায় প্রায় আড়াই শতাংশ।
বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা কিংবা হেলথকেয়ারের চাইতে মহাকাশে সৌন্দর্যবর্ধক(!) স্যাটেলাইট পাঠানো, সেতু কিংবা পাওয়ার প্লান্ট বানানো অনেক বেশি জরুরি। পাঠকের দায়িত্ব এর কারণ খুঁজে বের করা।
১৬ই আগস্ট, ২০২৩
জিগেন, জার্মানি
অন্যান্য পর্বসমূহ:
নয়: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: ওয়েস্ট ও বাঙালি জীবনের পার্থক্য, আমার ভাববার অবসর
চৌদ্দ: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: আমাদের ক্ষমা চাইবার ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাঁচফোড়ন।
বিশ: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: কলা যুদ্ধ
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:১২
মারুফ তারেক বলেছেন: সহমত
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩
ক্লোন রাফা বলেছেন: আমাদের নেতা , নেত্রীরা মনে করেন মানুষ যত বেশি জানবে তত কম মানবে ! কাজেই তাদের সুবিধার্থে তারা তাদের রোড ম্যাপ তৈরি করে । সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ সকলের মধ্যে বিদ্যমান। কাজেই শিক্ষা ও সাস্থ নিয়ে চিন্তা করলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা বিচার করেই সেই পথে হাঁটেন না।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৮:৪১
আমি সাজিদ বলেছেন: কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা ২০০০ সালের পর থেকে কেমন মৌলিক বাংলাদেশে? বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ নির্মানে কতটুকু ভূমিকা রেখেছেন উনারা বিগত দুই দশক? আপনার মতামত কি এই বিষয়ে?
চমৎকার আলোচনা।
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:১২
মারুফ তারেক বলেছেন: ধন্যবাদ @আমি সাজিদ
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৮:৪৬
সোহানী বলেছেন: লিখাটা আগষ্ট ২৩, ২০২৩ এর।
আগষ্ট ২০২৩ এর বাংলাদেশ আর আগষ্ট ২০২৪ এর বাংলাদেশ এর যোজন যোজন পার্থক্য। একদল লুটরা, চাটুকার, ক্ষমতালোভী দেশ চালিয়েছে এতকাল। যে দেশ এ ক'দিন দেখছি তাতে আমি ভীষনরকম আশাবাদী। একটা কিছু আমরা করতে পারবোই।
গুন্টার গ্রাস এর টিন ড্রাম ছাড়া আর কোন বই পড়া হয়নি। এতো এতো বই পড়া বাকি আছে, এক জীবনে শেষ করতে পারবো কিনা জানি না।
৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:৫১
করুণাধারা বলেছেন: ভালো লিখেছেন। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আরেকটা লেখা চাই, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন এখন।
যতদূর জানি জিডিপিতে শিক্ষা খাতের জন্য দেড় শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে এ বছর।
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:১৩
মারুফ তারেক বলেছেন: চেষ্টা করবো
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ ভোর ৪:৩৭
কামাল১৮ বলেছেন: ব্ংলাদেশের সরকারগুলি এমন কাজ পছন্দ করে যে কাজে নিজের পকেট ভারি হয়।আমাদের মূল কথা হলো নিজে বাচলে বাপের নাম।