নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাকীত্বের নয়, আমি কবি আবুল হাসানকে ভালোবাসার কবি বলি।
আমি কোনদিন কারো প্রেমিক হবো না;
প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো।
আমার কাছে যদি কোন প্রেমের কবির নাম চাওয়া হয়, কোন ভালোবাসার কবির নাম চাওয়া হয়; তবে আমি প্রথমেই বলবো আবুল হাসানের নাম। আবুলের হাসানের নামের সাথে লেগে আছে ষাটের দশকের সময় আর এক বৈরাগী সত্ত্বা। কবি ঢাকা শহরের এপথ হতে ওপথে হেঁটেছেন; নিষিদ্ধ পল্লী, পত্রিকা অফিস ঘুরে বস্তিতে তাস খেলেছেন। ‘আমি সব প্রেমিকের বিদ্রোহী’ বলার মাধ্যমে কবি মূলত তার নিজ সত্ত্বার প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় কবি প্রথম হয়েছিলেন। কবিতায় লিখে গেছেন, আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ, মৃত্যুচেতনা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, নিঃসঙ্গচেতনা, স্মৃতিমুগ্ধতা, মুক্তিযুদ্ধ।
অথচ এই বিদ্রোহী প্রেমিক কবির প্রেমিকা হয়তো আজো আছে এই শহরে। শুধু হয়তোবা নেই সুলতানা রাজিয়া খোন্দকার অথবা সুরাইয়া খানম, যাদেরকে কবি ভালোবেসে ছিলেন অথবা যাদের জন্য কবি লিখেছিলেন ‘সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন ’।
যে যুদ্ধ এবং যুদ্ধের করুণ দুঃখে কবি ক্লান্ত হয়েছেন, তার সমস্তটা শান্তিকামী মানুষের উদ্দেশ্যে রেখে গিয়েছেন। ‘চলে গেলে- তবু কিছু থাকবে আমার : আমি রেখে যাবো আমার একলা ছায়া, হারানো চিবুক, চোখ, আমার নিয়তি’। কবিকে বিচার করা যায় না, শুধু ভালোবাসা যায়; ইনিই সে, যিনি জাতিসংঘকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বলেছিলেন, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না; আজও জাতিসংঘ কবিকে নিতে পারেনি, কবিকে তুলে নেবার মতো শক্তি এখনও অর্জন করেনি।
কবি বস্তিতে বসে তাস খেলেছেন, শহরের এগলি ওগলি চষে বেড়িয়েছেন নিরন্তর।কবির সাথে থাকতেন কবি বন্ধু নির্মলেন্দু গুণ। তবু কবির মনের যে একাকীত্ব ভাব, যে বেদনাবোধ তা কোনদিন শেষ হবার নয়, ওটাই যে ঘোর; বেঁচে থাকবার পুঁজি। তাই কবি তার বেদনাবোধ, একাকীত্ববোধ দিয়ে কবিতা লিখেছেন। আর তাই কবিকে বলা হয় একাকীত্বের কবি। কবি লিখেছেন, অবশেষে জেনেছি মানুষ একা ! জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা ! দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।
এখানে তো কবি তার নিজের কথা বলেছেন, কবি আমাদের সমাজের মানুষগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বস্তুত, আমরা জানি প্রত্যেকটি মানুষ একটি প্রাণীরূপে পৃথিবীর পথে লক্ষ মানুষের ভীরে অন্তর্গত রক্তের বেদনায় কতোটা নিঃসঙ্গ। আর এই নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তির আশায় মানুষ ছুটে চলে নিরন্তর। এই অনন্ত ছুটে চলা তবু তার শেষ হয় না। তাই কবি কলম ধরেন,
যেখানেই যাই আমি সেখানেই রাত!
স্টেডিয়ামে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁয়
অসীমা যেখানে তার অত নীল চোখের ভিতর
ধরেছে নিটোল দিন নিটোল দুপুর
সেখানে গেলেও তবু আমার কেবলই রাত
আমার কেবলই শুধু রাত হয়ে যায়!
এই একাকীত্বোবোধ থেকে যেন নিস্তার নেই, পালিয়ে বেরাবার কোন স্থান নেই। এটা যেন মানুষের জীবন থেকে জীবনের পথে ছুটে চলা; অন্তর্গত রক্তের ভেতরে ক্ষয়িত হয়ে চলা। আর তাই হয়তো কবি এতোটা আগেই চলে গেছেন, জীবনের তরে প্রস্থান করেছেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে কবি অনন্তের পথে যাত্রা করেছেন।
এতো সবকিছুর বাইরেও তবু আমি কবিকে ভালোবাসার কবি নামে চিনি; সেই ভালোবাসা কবিতার তরে প্রতীক্ষায় আজও দাঁড়িয়ে থাকে নিরন্তর।
আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!
আমি বিশ্বাস করি একজন আবুল হাসানের যা লিখবার প্রয়োজন ছিল , কবি আবুল হাসান তাই লিখে গেছেন।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৮
মারুফ তারেক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার লেখা আমার প্রিয়কবি কে নিয়ে ;
লেখা টা প্রিয়তালিকায় রাখলাম ।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৪
মারুফ তারেক বলেছেন: ধন্যবাদ, শুভকামনা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৩
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেব না
এইটা আমার পছন্দের লাইনগুলোর একটা