নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান পর্ব ৫ঃ মেশিন এবং মেশিনের ইতিহাস

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৮



আগামী দুই'শ বছরের মধ্যে মানুষ সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ অমরত্ব লাভ করবে অথবা অমরত্ব লাভের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে! (অবশ্য এটা কোন ধরনের অমরত্ব হবে সেটাও ভাবনার বিষয়, কেননা মহাবিশ্বের সবকিছুই ধ্বংসশীল।)
সোজা হয়ে বসুন, আপনার তাক লেগে যাবে। বিজ্ঞান শুধু বলে না, করে দেখায়।
বায়োনিক মানব শরীর তৈরী হবে, মানুষ বাস করবে মেশিনের শরীরে! কল্পবিজ্ঞান মনে হচ্ছে? অবশ্য কল্পবিজ্ঞান মনে হবারই কথা। আজকের দিনের কম্পিউটারের কথা একশো বছর আগে চিন্তায়ও আনা যেত না, এখন তো কম্পিউটারে বসে লিখছি।
বিজ্ঞানে কল্পবিজ্ঞানের খুব বড় একটা জায়গা রয়েছে, কেননা আজকের কল্পবিজ্ঞানই আগামীদিনের প্রকৃত বিজ্ঞানে পরিণত হবে। মানুষের তৈরি মেশিন হয়তো মানুষের চাইতেও বেশী বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হয়ে যাবে।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কথার সাথে কথা মেলানো যাক, "পদার্থবিজ্ঞানে কণা সমূহের মধ্যে এমন কোন নিয়ম নেই যে, এর মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কের চেয়ে বেশী ক্ষমতাধর কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।"
একদম গোড়া থেকে শুরু করব, মেশিনের ইতিহাস। আলাদিনের জাদুর চেরাগ!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বললেই চোখের সামনে চলে আসে রোবট, মানে একটি কম্পিউটার। অবশ্য ছোট খাটো রোবটে দু'চারটে সেন্সর আর গেট জুড়ে দিলেই হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কম্পিউটার আসলেই বড় মাপের জিনিস। আপনার বিষয়গুলো পুরপুরি না বুঝলেও চলবে, নিচের দিকে চলে যান

যাইহোক, আসল কথায় আসা যাক- আমরা একটি কম্পিউটার কী বুঝাতে পারি? শুধুমাত্র দু'টি সংখ্যা শূন্য (০) আর এক(১)

সংখযা মানে ঠিক সংখ্যাও না, আসল কথা হচ্ছে বিভব পার্থক্য(ভোল্টেজ)
+৫ ভোল্ট মানে ১, অর্থাৎ অন হওয়া। ০ ভোল্ট মানে ০, অর্থাৎ অফ হওয়া।
অর্থাৎ অন অফ দিয়াই পুরো কম্পিটারের কাজ শেষ। এই দুইটা সংখ্যা দিয়েই আমরা কতকিছু করতে পারতেছি। যদি এর বাইরে আরো কিছু বোঝানো যেত, তাহলেই তো কেল্লাফতে!
একটি কম্পিউটারে বিলিওন বিলিওন ট্রানজিস্টার থাকে। এইটার নামই প্রসেসর, এই ট্রানজিস্টার তৈরী হয় ফেব্রিকেশন ল্যাবে। অনেক ব্যয়বহুল বিষয়, তাই আমাদের দেশে কোন ফেব্রিকেশন ল্যাব নাই। এইগুলাই গেট, লজিক গেট। ০ আর ১ দিয়েও আখ্যান লিখতে পারে!
আরো কিছু বিষয় আছে বাইপোলার আর ইউনিপোলার জাংশন যা মসফেট বিজিটি নামের পরিচিত। রয়েছে মাইক্রোকন্ট্রোলার, যার ভেতরে কোড করে দিলে কোন রোবট সেই কোডের কমান্ড অনু্যায়ী কাজ করে।

মেশিন নিয়ে লিখতে বসেছি, সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চলে এসেছে। অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেশিনেরই অংশ। বস্তুবাদী বিজ্ঞানে বলতে গেলে আমাদের শরীরও তো একটা মেশিন। আমাদের অনুভূতিওতো মেশিনের বিভিন্ন কার্যকারিতার ফলাফল।
প্রশ্নটি করে ফেলি তাহলে-

মেশিন কী?

আমারা জানি, মহাবিশ্বে শক্তি বিভিন্নরূপে বিদ্যমান রয়েছে। আলোক শক্তি, চৌম্বক শক্তি, তাপ শক্তি ইত্যাদি। যা শক্তির এক রূপকে অন্য রূপে পরিবর্তন করতে পারে তাই মেশিন। আমাদের বৈদ্যুতিক মোটর, ফ্যান,কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, সবকিছুই মেশিনের অন্তর্ভুক্ত।

অনন্য অতীতঃ
পৃথিবীর প্রথম মেশিন হচ্ছে হাতে তৈরি পাথরের কুড়াল! অবাক হবার কিছু নেই, এই কুড়লও কিন্তু শক্তি রূপান্তর ঘটাচ্ছে এবং আপনার কাজকে সহজ করে তুলছে।

চিত্রঃ প্রাচীনকালে ব্যবহৃত একটি কুড়াল
সাধারণ মেশিনের ধারণা এসেছে গ্রীক দার্শনিক আর্কিমিডিসের কাছ থেকে, যিনি লিভার, স্ক্রু নিয়ে কাজ করেছিলেন। আমাদের যাঁতাকলের ধারনাটি কিন্তু তখন থেকেই এসেছিল।

এই যে মেশিনের যাত্রা, মানে মানুষের কাজকে সহজ করে দেবার কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। আমরা একটা পাথরের যন্ত্র থেকে পৌঁছে গেছি যন্ত্রমানব পর্যন্ত।

মেশিনের ইতিহাসে জেমস ওয়াট, এডা ল্যাভয়সিয়ে(Ada Lovelace ), লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চিরা যোগ করে গেছেন নতুন নতুন যুগ।
জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললেন! ১৭৯৫ সালে জোসেফ ব্রম্মাহ (Joseph Bramah) নিয়ে আসলেন হাইড্রোলিক প্রেসার বা কপিকল। মেশিন চলছে যেন চললেই। আর অবশেষে বিদ্যুৎ যার ফলে আরো কিছুই যেব বাকী রইল না, এসে গেল কম্পিটার!
জেনে নিই বিভিন্ন ধরনের মেশিন সম্পর্কে-
বিভিন্ন ধরনের মেশিন রয়েছে লেদ, ইঞ্জিন, টারবাইন ইত্যদি। এদের শ্রেণীবিভাগো বিভিন্ন হতে পারে। আসলে ছোট এক পর্বের ব্লগে এত কিছু লিখাও সম্ভব নয়।
যান্ত্রিক শক্তির উপর ভিত্তি করে তিন ধরনের-
১) যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্নকারী মেশিন
উদাহরণ- স্টিম ইঞ্জিন, ওয়াটার টারবাইন ইত্যাদি।

২) যান্ত্রিক শক্তি রূপান্তকারী মেশিন
উদাহরণ-হাইড্রোলিক পাম্প

৩)যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগিক মেশিন।
উদাহরণ-লেদ মেশিন

লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চি-
আমি এই মানুষটির কাজ দেখে আশ্চর্য হই। সেই পনের শতকের লোক যিনি বিমানের মডেল তৈরী করেছিলেন। তৈরী করেছিলেন, সামেরিন আর কামানের মডেল, তবে একটু অন্যভাবে। সে যাই হোক, পনের শতকের একটি মানুষের মাথায় এত চিন্তা আসে কীভাবে ভেবে আমি অবাক হই, বিস্ময়ে আমার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।

চিত্রঃ লিউনার্ডো দ্য ভিঞ্চির উড়ন্ত মেশিনের ডিজাইন।
লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চির মেশিনের কাজ দিয়ে ভলিউম লিখা যায়।

সেকাল আর একাল মিলিয়ে লিখা শুরু করলে তবু লিখা শেষ হবে না। মেশিনের বিবর্তন চলছে যেন চলছেই। কোথায় এর শেষ আমরা ঠিক জানিনা। কে জানে মানুষের সৃষ্টি মেশিন না একদিন মানুষের উপর রাজত্ব শুরু করে দেয়!
বলতে গেলে আমাদের পৃথিবী একটা জায়গান্টিক ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। আমাদের সূর্যও কিন্তু শক্তির পরিবর্তন করে চলেছে, রূপান্তর করে চলেছে। আমাদের শরীরকেও তো মেশিনের কাছাকাছি বলা চলে। :)
মহাবিশ্বটা মেশিনময় হয়ে যাচ্ছে! এগুলো অবশ্য মানুষের তৈরী নয়, তাই মেশিন বলতে আমরা ঠিক যা বুঝি সে সাধারণ সংজ্ঞায় পরে না।
++দেবতার শক্তি মানুষের হাতে
নর্স পুরাণে থর হলেন একজন হাতুড়ি-ধারী দেবতা। তিনি বজ্রবিদ্যুৎ, ঝড়, ওক গাছ, শারীরিক শক্তি, মানবজাতির সুরক্ষা এবং প্রথাগত পবিত্রকরণ অনুষ্ঠান, আরোগ্য ও উর্বরতার দেবতা। তার হাতুড়ি দিয়ে বিদ্যুৎ বের হত, আর তা দিয়েই ইনি শত্রুদের বধ করতেন। অথবা গ্রিক পুরাণের দেবতা জিউস, যিনি বিদ্যুৎ ছুড়ে মারেন পৃথিবীতে। অথচ নিকোলা টেসলা, যিনি কিনা দেবতার শক্তিকে নিজের করে নিলেন! তৈরী করলেন টেসলা কয়েল, যা বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে। :)
বিজ্ঞানের হাত ধরে আলোর পথের এ যাত্রা রোধ হবার নয়, মাথা নোয়াবার নয়। :)


যারা মেশিন সম্পর্কে আরো কৌতুহলী তাদেরকে মুভি সাজেস্ট করি, এক্স মেশিনা, এলা টুরিং এর বায়োগ্রাফি নিয়ে নির্মিত এ The Imitation Game, টান্সফর্মার সিরিজ।
মেশিন সম্পর্কে আরো অনেক লিখতে ইচ্ছে করছে। ভাবছি সামনে মেশিন নিয়ে আরো পর্ব লিখব। দেখা যাক ।

অন্যান্য পর্ব-
বিজ্ঞান পর্ব-১ঃ জন্ম থেকে মৃত্যু, মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাসংকোচন অথবা পরিবর্তনের মহাবিশ্ব।

বিজ্ঞান পর্ব-২ঃ আমরা গিয়েছি অসীম পথে, জীবনের খোঁজে।

বিজ্ঞান পর্ব-৩ঃ রহস্যময় রাতের আকাশ।

বিজ্ঞান পর্ব-৪ঃ সময়(Time)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০২

জেন রসি বলেছেন: বায়োটেক কোম্পানি calico( founded by google) প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কিভাবে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছে। মানুষের মনের রহস্য( ব্রেনের) জানার জন্য প্রযুক্তির ব্যাবহার করা হচ্ছে। এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে খুব দ্রুত সবকিছুর বিকাশ হচ্ছে। তাই আসিমভের আই রোবটের মত কোন কিছু ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে ঘটেও যেতে পারে। আর মানুষ হয়ে যেতে নর্স কিংবা গ্রিক দেবতাদের মত ক্ষমতাধর কেউ!

আপনার পোস্ট ভালো লেগেছে। প্রিয়তে নিলাম।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৩

মারুফ তারেক বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি

শুভকামনা জানবেন।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৭

গেম চেঞ্জার বলেছেন: চমৎকার পোস্ট!!

মেশিন ইন্টেলিজেন্স যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাহলে মানব জাতির খবর আছে! সেদিন তারা আমাদের মনের ভাবনা বুদ্ধি ডিকোড করে ফেলবার ক্ষমতা পেয়ে গেলে সেটা হবে মানব সভ্যতার ইতি ঘটবার মতো সাংঘাতিক ব্যাপার!! :| :|

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৪

মারুফ তারেক বলেছেন: বিজ্ঞানীরা এসব বিষয় মাথায় রেখেই এগুবেন বলে আশা করি। তবে দূর্ঘটনা ভিন্ন বিষয়।

ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২২

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: ভাই পোস্ট পড়ে খুব ভাল লাগল।
তবে এ বিষয়ে আমার জানা খুবই কম।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৮

মারুফ তারেক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
শুভকামনা জানবেন

৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৫

সে্‌নসেটিভ শিমুল বলেছেন: চমৎকার

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৮

মারুফ তারেক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.