নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি কর্দমাক্ত লাশ পাওয়া গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল কবি আত্নহত্যা করেছেন।
সফেদ চুল, ছিমছাম দেহ আর মধ্যবয়স পার হওয়া লোক মিঃ জালাল। গোয়েন্দা হিসেবে উনাকেই তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে।দ্রুততার সাথে কুমিল্লা থেকে মিঃ জালালকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
দেখতে অনেকটা তীক্ষ্ণ মেজাজের
মিঃ জালাল সিগারেট মুখে ছোয়ান না। কিন্তু নিয়ম করে প্রতিদিন দু'প্যাগ হুইস্কি দরকার হয়, তিনি বলেন ওষুধ। মরা মানুষ, খারাপ মানুষ দেখতে দেখতে জালালের সব মুখস্ত হয়ে গেছে।গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কিছুদিন আন্ডারকাভারেও ছিলেন মিঃ জালাল। ছেলে মেয়ে পরিবার থাকলেও প্রতিমাসে সপ্তাহখানেক তিনি বাসার বাইরে থাকেন, একা না থাকলে কোন তদন্তের ব্যাপারে তার মাথা খোলে না। কবি হত্যার বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যকর। কেউ বলছে হত্যা, কেউ বলছে আত্নহত্যা।
এদিন তুমুল কান্ড হয়ে যাচ্ছে,
ফিল্মমেকার সাংবাদিকরা বললেন ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার কারনে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা কবিকে মেরে ফেলেছে। অবশ্য একটা বলার যথেষ্ট যুক্তিও আছে। এর আগেও এরকমের আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। লেখক সাহিত্যিকদের হত্যা ঘটনা নতুন নয়। এখানে অনন্ত লাতিন আমেরিকার মতো কোন ঘটনা ঘটে না, যা করার বিচ্ছিন্নবাদীরাই করে থাকে।
মিঃ জালাল স্পটে আসলেন, অন ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। অফিসার বললেন স্যার লাশকে মর্গে পাঠানো হয়েছে, দু'দিনের ভেতরেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। স্পট থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি, শুধুমাত্র একটি ছুড়ি পাওয়া গেছে। আত্নহত্যা করবে ভালো কথা, কিন্তু এখানে এসে কেন?
মিঃ জালাল স্পটটিকে খুব ভালো করে দেখতে লাগলেন। জিজ্ঞেস করলেন,এখান থেকে পুলিশ ফাঁড়ি কত দূরে?
স্যার হেঁটে গেলে চার মিনিট।
সামনে লেক ভিউ, শুনশান রাস্তা; শহর হলেও কেমন যেন থমথমে একটা গ্রামের মতো পরিবেশ। এখানটায় মানুষজন কম আসে।
মিঃ জালাল বুঝে গেছেন এখানে আত্নহত্যা সম্ভব না, দূর থেকে দেখার সম্ভাবনাও রয়েছে; হত্যাই হবে।
কিন্তু দু'দিন তদন্ত শেষে হত্যার কোন আলামত পাওয়া গেল না। তাহলে হল কী?
পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে, মৃত্যুর আগে কবি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। প্রচুর মদ খেয়েছেন, ফেরার পথে হাতের রগ কেটে নিয়েছেন।
এরকম পরিস্থিতিতে তদন্ত বন্ধ হয়ে যাবারই কথা, বুঝা যাচ্ছে নিশ্চিত আত্নহত্যা। মিঃ জালালের মনে তবু খটকা লেগে আছে, প্রচুর রক্তপাতের চিহ্ন তো পাওয়া যায়নি। অবশ্য এমন এক দিনে লাশ পাওয়া গেল, যেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছড়াছড়ি।
কবির বাসায় তল্লাশি চালানো হল, কোন শেষ নোট যদি পাওয়া যায়। নাহ তেমন কিছুও নেই। তাহলে কি এভাবেই সব শেষ?
মিঃ জালাল এখনই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেন। কিন্তু তিনি কি দিবেন?
অন্তত এর আগের হত্যাগুলো মিঃ জালালকে ভাবিয়ে তুলল। মিঃ জালার কবির কবিতা পড়তে শুরু করলেন, যদি আত্নহত্যার কিছু আভাস পাওয়া যায়। নাহ কোথাও কিছু নেই। খটকা বেড়ে চলছে, বেড়েই চলছে। পত্রিকাগুলোর তাজা খবর- দেশের মান বেঁচেছে, অন্তত হত্যা নয়, আত্নহত্যা।
আন্ডারকাভারে থাকার সময় মিঃ জালাল অনেককিছুই জেনেছেন, ক্রিমিনালদের সাথে কাজ করেছেন, আবার নিজের কাজ আদায় করে সরেও গিয়েছেন।
এখন আর কেন যেন তার ভেতরে দেশভক্তি, ন্যায় অন্যায়ের অনুভূতি আর তেমন একটা কাজ করে না।
তার কাছে তার কাজটা অনেকটা নেশার মতো হয়ে গেছে, স্রেফ নেশা। প্রতিদিনকার কাজ, ফলাফল যাই আসুক কাজ করতেই হবে।
রাতে পানে বসেছেন মিঃ জালাল, অনেক চিন্তা আসছে মাথার মধ্যে-
দেশের চিন্তা, দেশদ্রোহীতার চিন্তা। আন্ডারকাভারে থাকাকালীন তাকে মেরে ফেলা হলে সে একটা মামুলি সন্ত্রাসী বলেই পরিচিতি পেত। কী আশ্চর্য বিষয়। ভাবছেন আর মদ গিলছেন...
মিঃ জালাল ভেবেই চলেছেন।
মিঃ জালালের মনে হলো কবি শুভ্র সুপ্রদীপের কয়েকজন বন্ধুর থেকে তার লিখাগুলোর উপর ধারণা নিবেন, যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
পরদিন সকাল এগারোটায় কবি সুপ্রদীপের বন্ধু কলেজের সাহিত্য শিক্ষক শঙ্খ নারায়ণের কাছে গেলেন। চায়ের কথা বল্ব হয়েছে, মিঃ জালাল না করেছেন। কলেজ গেস্টরুমে শান্ত স্থবিরতা কাজ করছে। মিনিট দু'য়েক আগে যাই-
মিঃ জালাল বলছিলেন, আচ্ছা কবি যদি তার কোন কবিতায় আত্নহত্যার পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। আপনি তো তার বন্ধু আবার তার উপর বাংলা সাহত্যের শিক্ষক। আপনার এব্যপারে কী মনে হয়। শঙ্খ নারায়ণ কেন যেন অনেকটা উত্তেজিত হয়ে গেলেন।
আত্নহত্যা! আমার বন্ধু কবি শুভ্র সুপ্রতীম আত্নহত্যা করতে পারেনা।
লাতিন আমেরিকান কবি লোরকাকে চিনেন? যিনি হত্যা হবার আগে তার কবিতার তার নিজের হত্যার বর্ণনা সম্পর্কে লিখে গিয়েছিলেন। কী ভাবছেন, এ নিয়ে চারজনের আত্নহত্যা হল, বিশববিদ্যায়ের দর্শনের শিক্ষক, দু'জন রাজনৈতিক কর্মী আর আমার বন্ধু শুভ্র সুপ্রতীম।
আমি অনেক বলেছি, একটু সাবধাবে থাকিস। ও কি উত্তর দিয়েছিল জানেন?
সাবধানে কীভাবে থাকতে হয় বলতে পারিস?
দর্শনের শিক্ষকের আত্নহত্যার পর ও কী বলেছিল জানেন?
বলেছিল, কোনদিন আমার আত্নহত্যার খবর পেলে ভাববি আমি আত্নহত্যা করিনি, আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কবিরা তো এত সহজে হেরে যেতে পারে না।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তিলে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই।
শঙ্খ নারায়ণ মেটামরফোসিস সম্পর্কিত একটা বই নিয়ে বেড়িয়ে পরলেন।
সন্ধ্যায় মর্গে গেলেন মিঃ জালাল। সবগুলো মর্গের পরিবেশ যেন একই, একটা গুমট অন্ধকার কাজ করে। মানুষগুলো কেমন নিথর পড়ে থাকে, অথচ মানুষগুলো কোথায় চলে যায়।
কবি শুভ্র সুপ্রতীমের লাশ দাফন হবে না, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মেডিকেল কলেজকে হস্তান্তর করা হবে অতি শীঘ্রই।
মিঃ জালাল লাশটির দিকে তাকিয়ে আছেন, একটা ছুড়ি আঘাতে রক্তাভ চিবুক, একটি অনিয়ত মুখ ফ্যাল ফ্যাল করে যেন তাকিয়ে আছে।
নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে মিঃ জালালের। মিঃ জালাল খুব ভালো করেই জানেন কখন কী করা হয়।
খুব ভালো করেই জানেন মৃত্যু কতোটা সহজ, ন্যায় অন্যায়ের বুলি কতোটা সহজ। এই তদন্তগুলোকে ঘাটাতে গেলে কতোটা সংশয়।
মিঃ বিড়বিড় করে বললেন, পারলে ক্ষমা করে দিবেন শুভ সুপ্রতীম, পারলে ক্ষমা করে দিবেন।
তদন্তের রিপোর্ট জমা দিবেন মিঃ জালাল।
রিপোর্ট জমা শেষে গাড়ীতে উঠলেল না মিঃ জালাল, হেঁটে ফিরছেন আর ভাবছেন।
ঢাকায় তার কাজ শেষ, কিছুদিন বেড়েয়ি আসবেন তার গ্রামে থেকে। পৃথিবী যেন তাকে ঋণী করে ফেলছে, সময় যেন তাকে বেঁধে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৭
মারুফ তারেক বলেছেন: কিছুটা কাজ পাঠককেও যে করতে হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:০২
কাঠমিস্ত্রি বলেছেন: গল্প কি আগামী পর্বে সমাপ্ত হবে?
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৮
মারুফ তারেক বলেছেন: সমাপ্তটা পাঠকেরা করবে
ধন্যবাদ মিস্ত্রি
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১৮
সুমন কর বলেছেন: গল্পে তো রহস্য হয়ে গেল !! নাকি মিঃ জালাল !!