নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি গবেষণার সমাপ্তি

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬



একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ এবং দশ বছর বয়সের এক শিশুকে সাবজেক্ট হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রায় চার-পাঁচ মাস যাবত আমি ওদের দেখেছি, বুঝতে চেয়েছি।
ওরা আমার বাসার সম্মুখে থাকে। বারান্দা থেকে তাকালেই ওদের দেখা যেত। দু'জন আমাদের বাসার সম্মুখে হলেও ওরা ভিন্ন ভিন্ন বাসায় থাকে।
একজন বয়োবৃদ্ধ যিনি বলতে গেলে সঙ্গীহীনভাবে অনন্ত জীবনের দিন গুনছেন। অপর দিকে একটি ছোট ছেলে, তার মূলত সঙ্গী নেই, নেই সমবয়সী কেউ।স্কুল বাদ দিলে সারাদিন বাসায়ই থাকে ছেলেটি। মাঝে মাঝে বারান্দায় এসে
নিজে নিজে একাই খুনসুটি করে, কখনো গ্রীল ধরে ঘোরে। এই এলাকায় শিশুদের খেলার জন্য তেমন কোন মাঠ নেই বিধায় ছেলেটির মানুসিক বিকাশ যে প্রবলভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফিরে আসছি বৃদ্ধের কাছে-
লোকটির সারাদিনে তেমন কোন কাজ নেই। দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে লোকটি কোরআন নিয়ে বসেন, মাঝে মাঝে অবশ্য অনান্য ইসলামিক বইও পড়েন। আমাদের রান্নাঘর থেকে তাকালে উনাকে স্পষ্ট দেখা যায়।
তার জীবনের চাওয়া পাওয়া কী ছিল? তিনি কি পেয়েছেন? কে জানে সে কথা?
হয়তো লোকটি নিজেও জানেন না তিনি কী চেয়েছিলেন। সমস্ত জীবন হয়তো কোন চাকুরীতে ঢুকে অর্থনৈতিক গোলাম হয়ে জীবন পার করে দিয়েছেন।
আজকের শিশু, আকাশ দেখেনি! শস্যভরা সবুজ অবারিত মাঠ দেখেনি। আমাদের উত্তরপুরুষেরা ধীরে ধীরে সভ্যতার বাক্সে বন্দী হচ্ছে। ধীরে ধীরে কী যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
আমার গবেষণা ডাটা উপাত্ত থেকে আমি মূলত তেমন কিছুই পাইনি। কিন্তু, আমাকে পথ দেখালেন জীবনানন্দ দাশ-
"তুমি কথা বল — আমি জীবন-মৃত্যুর শব্দ শুনি:
সকালে শিশির কণা যে-রকম ঘাসে
অচিরে মরণশীল হয়ে তবু সূর্যে আবার
মৃত্যু মুখে নিয়ে পরদিন ফিরে আসে।
জন্মতারকার ডাকে বার বার পৃথিবীতে ফিরে এসে আমি
দেখেছি তোমার চোখে একই ছায়া পড়ে:
সে কি প্রেম? অন্ধকার? — ঘাস ঘুম মৃত্যু প্রকৃতির
অন্ধ চলাচলের ভিতরে।"
প্রত্যেকটি দিন, প্রত্যেকটি মুহূর্ত, প্রত্যেকটি নারী, প্রত্যেকটি বৃদ্ধ, প্রত্যেকটি শিশুর ভেতরে এ এক অনন্য প্রবৃত্তি কাজ করে। কালের স্রোতে সে হয়তো নিজেও না যে, সে যাচ্ছে কোথায়।
এখানে আমি দেখেছি বয়সের ভিন্নতায় দু'টি মানুষের চিন্তা চেতনা এবং কর্মপদ্ধতির পার্থক্য। শত চিন্তার মাঝেও একটা বিশাল চিন্তাহীনতার স্রোত।
আজ আর লিখব না আমি। হাজার বছরের এই মানুষের সংগ্রাম কোন এক আজানা কালোত্তীর্ণ কালে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। সময়ের সমুদ্র তবু ভীষণ সময় চাই।
হাজার বছর ধরে পড়ছি-
"ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগলো। চাঁদ হেলে পড়লো পশ্চিমে। উঠোনের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। পরীর দীঘির পারে একটা রাতজাগা পাখির পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনা গেলো। রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

জাহিদ অনিক বলেছেন: গিনিপিগ হিসেবে যাদের এনেছেন তাদের দৈনন্দিন জীবনে হতাশা ছাড়া আর কিছুই নেই ।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০২

মারুফ তারেক বলেছেন: হতাশা একটি সাধারণ ব্যাপার। তবে সে যাই হোক, শহরের বেশীরভাগ মানুষগুলো একই ধাঁচের। কোন মধ্যবয়সী হলে হয়তো তার মধ্যে একটা যান্ত্রিকতা দেখতে পেতাম।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনার মত গবেষক জাতির দরকার আছে। আপনি বারিন্দা থেকেই তাকিয়ে মানুষ সম্পকে গবেষ ণা কাজ সেরে ফেললেন।

ছেলেটি আপনাকে ফলো আপ করছিল। সেটি আপনি বুঝতে পারেন নি। আপনি এই বয়সে বারান্দায় দারিয়ে করেনটা কি।

আর, একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধার ঈশ্বর নাম ঝপ করা বা কোরআন, বাইবেল পাঠ করা ছাড়া অন্য কোন কাজ থাকতে পারে না।

এখন আমার সন্দেহ হয়, আপনার মানুসিক বিকাশ যে প্রবলভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না তা না হলে আপনি বৃদ্ধা এবং শিশুর মত ঘরের বারিন্দায় করেনটা কি!

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫২

মারুফ তারেক বলেছেন: ছেলেটি আমার থেকে নিচের ফ্লোরে থাকে, সে আমাকে দেখার প্রশ্নই আসে না।
একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধার ঈশ্বর নাম ঝপ করা বা কোরআন, বাইবেল পাঠ করা ছাড়া অন্য কোন কাজ থাকতে পারে না।

আমি তো মানছি সে কথা।

এই যে বিশাল কালের যাত্রা অথবা অবধারিত মৃত্যু, যাক সে কথা। এই নিত্য বিষয়গুলোকেই তো এ হীন মস্তিষ্কে বুঝার চেষ্টা করেছি মাত্র।

আর কিছুটা পাগলাটে চিন্তা না আসলে কি আর হয়?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.