নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃদ্ধের চোখে ৭১

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩


গল্পকারের মাথার ভেতরে গল্প ঘুরে, হাজার হাজার গল্প। সব গল্প প্রকাশিত হয় না। আবারমাঝে মাঝে গল্প বাস্তব হয়ে জেগে উঠে।

আজ থেকে অনেকদিন আগে, সন্ধ্যার একটু পর রেসিডিন্সিয়াল কলেজের পাশের রাস্তা দিয়ে হাটছি। চারদিকে প্রায় শুনশান নিরবতা।মাঝে মাঝে দু-একটা রিক্সা যাচ্ছে।এই হালকা মেঘলা সন্ধ্যায় তরুন-তরুনীরা যাচ্ছে। আমি চারপাশটা দেখে যাচ্ছি।আমার তো দেখারই কথা। এই আবহাওয়াতেও একজন লোক ছালা গায়ে গায়ে দিয়ে কি যেন বলছে।। আমি একটু
এগিয়ে গেলাম। লোকটি আমাকে দেখে যেন একটু সরে গেল। আমি কাছে গেলে লোকটি বলল সিগারেট আছে। আমি বললাম হ্যা। লোকটি বললেন দ্যান। আমি দুইটি সিগারেট বের করে একটা উনাকে দিলাম আর অন্যটা আমি।উনি বললেন চলুন গল্প করি। আমি ভাবলাম করিই না, একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে। লোকটি বললেন আমি এই আশে পাশেই থাকি। সবাই আমাকে
পাগল বলে। আমিও তো লোকটিকে পাগল মনেকরেছি।যাইহোক, তিনি শুরু করলেন।

আমার বয়স প্রায় ৭২ বছর। আমার জন্ম নড়াইলে। লোকটির কথা শোনে তো ভালোই মনে হচ্ছে। জেকে বসলাম গাছের নিচে।
আমার বাবা অবস্থাপন্ন লোক ছিলেন।মেট্রিকুলেশনের পর ১৯৬৫ সালে আই এ পাস করলাম ঢাকা কলেজ থেকে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে বিভাগে কাটিয়ে দিলাম দু'বছর। আমার আব্বা সংবাদ পাঠালেন বাড়ী যেতে। যাওয়ার পর আমার বিয়ে হল। আব্বা আগেই বিয়ের সবকিছু ঠিক করে রাখছিলেন, আমি কিছুই জানতাম না। বিয়ে হল আমি ঢাকায় আসলাম,বউ থাকল
নড়াইলে। তার বছর দুয়েক পর বউকে ঢাকায় নিয়ে আসলাম। ১৯৬৯ সালে আমার মেয়ের জন্ম। ওর নাম দিলাম শিউলী। ওর মাকে নিয়ে থাকি শাখারীবাজারের একজন হিন্দু মালিকের বাসায়।একটি বছর গেল। আমাদের অবস্থা ভাল।কিন্তু দেশের অবস্থা ভালো না।৭১ সালে তো মিছিল আর মিটিং। আমিও
মাঝে মাঝে যাই। হ্যা আমাদের যা অধিকার আমরা তো তা আদায় করবই।

শিউলীর বয়স প্রায় দুই বছর। আমাদের ভালোই সময় কাটতেছিল। সেদিন আমার ফিরিতে ফিরতে প্রায় রাত সারে দশটা বেজে যায়।শিউলীর মা আবার আমায় ছাড়া খায় না।
এসে একসাথে খেলাম।খেয়ে খুমিয়েছি মাত্র।হঠাত ঘুম ভেংগে গেল। চারদিকে গুলির শব্দ। এত শব্দ আসে কোথা থেকে? আমরা সবাই জেগে উঠেছি।শিউলির কান্ন থামছেই না। পাশের বাসার বউদি বললেন মিলিটারি আইছে, পালান সবাই। আমি বললাম মিলিটারি আসিছে তো কী হয়েছে? ওরা
তো আমাদের দেশের লোক। আমাদের নিজেদের লোক। আর এই আমাদের নিজেদের লোক ভেবেই বোধয় ইতিহাসের
অন্যতম ভুল করেছিলেন বাঙালীরা।সমরেশ মণ্ডল বেরুলেন বাসা থেকে। মূল দরজার সামনে জেতেই একটা আস্ত বুলেট
ঢুকে গেল সমরেশ মন্ডলের মাথায়। শিউলীর
মা বলল দরজা বন্ধ করে।বন্ধ করার আগেই আমি কিসের যেন একটা আঘাত পেলাম। তারপর বুঝতে পারলাম আমার
বুক পকেট ভিজে গেছে রক্তে। শিউলী কাঁদছে। শিউলীর মা বলেছিল আমরা তো মুসলমমান। কেউ একজন বলেছিল,বাঙাল মালাউন অর মুসলমান, কই ফারাক নেহি।

তারপর শিউলীর মায়ের চিৎকারের সাথে যেন সবকিছু মিলিয়ে গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই। দুইদিন পর জ্ঞান ফিরল। দেখলাম আমি হাসপাতালে। শিউলী কোথায়? শিউলীর
মা কোথায়? শিউলীকে ওরা... আমার দুই বছরের মেয়ে। ওর মাকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে।আমি বের হয়ে গেলাম। পাগলের মত ছুটাছুটি শুরু করলাম। সপ্তাহখানেক পড়ে বুড়িগঙ্গায়
মিলল শিউলীর মায়ের লাশ।

আমি গালে হাত দিয়ে দেখলাম গাল ভিজে
গেছে। কিসের গল্প শুনছি আমি?

লোকটি আবার বলতে শুরু করলেন।এরপর কেরানীগঞ্জ
ঢুকে পড়লাম। যোগ দিলাম মুক্তিযুদ্ধে।আমাদের বাহিনীর নাম
মুক্তিবাহিনী।
তারপর কী হল? পাঠকই ভাল বলতে পারবেন।


বিঃদ্রঃ গল্পটির কাহিনী চরিত্র সম্পূর্ণ
কাল্পনিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.