নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক

পৃথিবীর পথে পথে আমি একা অনভিজ্ঞ এক নাবিক।

মারুফ তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান পর্ব-১ঃ জন্ম থেকে মৃত্যু, মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাসংকোচন অথবা পরিবর্তনের মহাবিশ্ব।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯

সময়ের‬ সাথে শরীরের কথা, পরিবর্তনের মহাবিশ্ব। পরিবর্তন যে কোন দিকেই ঘটতে পারে।



যদি উপরের ছবিটি ডান থেকে বাম দিকে কল্পনা করি।ধরুন, সময়ের সাথে সাথে আপনার বয়স না বেড়ে কমতে শুরু করল।তাহলে কী করবেন? এই বিষয় নিয়ে কথা বলার আগে একটু বকবক করে নেই।

সময়ের সাথে শরীর কথা বলে,কথা বলে প্রকৃতি, কথা বলে মহাবিশ্ব। আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, প্রতিটি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে সবকিছু। এই পরিবর্তন নিয়েই কথা বলব।প্রথমে কী দিয়ে শুরু করব? চলুন চলে যাই শরীরের অভ্যন্তরে। শতকোটি ইলেকট্রন নিউট্রন প্রোটন স্থায়ী কনিকাসহ আরও হাজারো কোটি অস্থায়ী কণিকা রয়েছে আমাদের দেহের ভেতরে।আর এই সব কিছু মিলিয়েই আমাদের দেহ।
সময়ের সাথে সাথে আমরা বড় হচ্ছি।সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে কোষগুলোও। প্রত্যেক সেকেন্ডে আমার শরীরের কিছু কোষ মারা যাচ্ছে। আবার নতুন করে তৈরীও হচ্ছে।ওরা কীভাবে বুঝতে পারে জন্মের পরে মৃত্যু?

আসলে এই সবই কোড আকারে লিখা আছে আমাদের শরীরের ভেতরে। আর এই নিয়মগুলোকেই অনুসরণ করে আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষ। ফ্রান্সিস ক্রিক নামের এক ভদ্রলোকই এই বিষয়টি সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন।
যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেহ পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা বুড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের মস্তিষ্ক হরমোন নিঃসরণ করছে প্রতিনিয়ত, যাতে আমরা বুড়ো হয়ে যাই।
এই হরমোনের প্রভাব সামনের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু,পেছনের দিকে গেলেই কেল্লাফতে।। :)

এখন আসি মহাবিশ্বের প্রসঙ্গ নিয়ে। মহাবিশ্ব এবং শরীর এই দুই বিষয় নিয়ে মূলত একটি বিষয়েরই দিকেই এগুবো, আর তা হল পরিবর্তন। যা সম্মুখে অথবা পশ্চাৎ, যে কোন দিকেই সম্ভব।
বিগ ব্যাং অথবা মহা বিস্ফোরনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে আমদের মহাবিশ্ব।খৃষ্টান ধর্মযাজক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্জে লমেট্র (Georges Lemaître) প্রথম আমাদের বিগ ব্যাংয়ের ধারনা দেন।


উপরের ছবিটিতে মহাবিশ্বের শুরু থেকে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত দেখনো হয়েছে। এই মহাবিস্ফোরণ থেকেই শুরু। মহাবিস্ফোরণ যেহেতু আছে, তাহলে মহাসংকোচন (Big Crunch) হলে সমস্যা কি?
স্টিফেন হকিং এর " A brief History of Time" বইয়ে বিগ ব্যাং অথবা মহা বিস্ফোরনের বর্তমান অব্দি মহাবিশ্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতের মহাসংকোচন ঘটার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আমারা নিচের গ্রাফের সাহায্যে এই বিষয়টিকে ভালভাবে বুঝতে পারব।


এই গ্রাফটি আমাদের দেখায় আমরা মহাবিশ্বের মোট সময়ের প্রায় অর্ধেক অতিক্রম করে মহাসংকোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ একসময় আমাদের মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে শুরু করবে।

মহাবিশ্বের পরিণতিকে ওমেগা পয়েন্ট (Omega point) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
ওমেগা বিন্দু বলতে এমন জটিলতা, চেতনা এবং জ্ঞানের চূড়ান্ত পর্যায়কে বোঝায়, মহাবিশ্ব যে পর্যায়ের দিকে ধাবমান। মানবজাতির সর্বশেষ অবস্থা তথা পূর্ণ জ্ঞানের স্তরকেই এটি নির্দেশ করে। ফরাসি জেসুইট পিয়ের তাঁয়ার দ্য শারদাঁ এই ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। মহাবিশ্ব সর্বদা অধিকতর জটিল এবং সচেতন অবস্থায় বিবর্তিত হচ্ছে, তাঁয়ার বিবর্তনের এই তত্ত্বটিই মনে প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একে জটিলতা বা চেতনার নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। সময়ের সাথে সাথে পদার্থ জটিলতর রূপ ধারণ করে এবং অধিকতর সচেতন অবস্থায় উপনীত হতে থাকে। তাঁয়ার বলেন, এমন বিবর্তন তখনই সম্ভব যদি উচ্চতর কোন অবস্থা মহাবিশ্বকে তার দিকে টেনে নিতে থাকে। কারণ নিম্নতর চেতনার অবস্থা নিজে থেকে উচ্চতর চেতনার অবস্থার জন্ম দিতে পারে না। এ থেকেই তাঁয়ার স্বীকার্য প্রণয়ন করেন যে, ওমেগা পয়েন্ট চেতনার একটি ক্রান্তি বিন্দু যা জটিলতা বা চেতনার নীতি অনুযায়ী মহাবিশ্বকে উচ্চতর চেতনার অবস্থার টেনে নিয়ে যায়। সবচেয়ে জটিল ও সচেতন পদার্থ হল মানুষ। তাই মানুষ স্বভাবতই এ ধরণের চেতনার বিবর্তনের অংশ। এ কারণে মানব জাতি "প্রতিফলন গুণ" বিশিষ্ট। অর্থাৎ মানুষ নিজের উপর প্রতিফলন ঘটাতে পারে তথা মানব জাতি আত্ম-সচেতন।
তাঁয়ার দ্য শারদাঁ নিজের মত করে বলেন, "The human-being is consciousness squared".

গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাংক জে টিপলার ওমেগা বিন্দু শব্দটি দ্বারা মহাবিশ্বের সুদূর ভবিষ্যতে ভৌতভাবে প্রয়োজনীয় একটি মহাজাগতিক দৃশ্যপট বুঝিয়েছেন। তার ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব অনুসারে, নির্দিষ্ট ধরণের একটি মহা সংকোচনের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব যখন সমাপ্তির দিকে ধাবিত হবে তখন এক্সপোনেনশিয়াল ত্বরণের মাত্রা হবে সময় প্রবাহের চেয়ে বেশী। এই বিষয়টিকে সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখলে তা অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে যদিও কম্পিউটারে তা সসীম দেখাবে। এই তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, মহাবিশ্ব একসময় সংকুচিত হবে এবং সঠিক সময়ে মহাবিশ্বের এই হিসাবকৃত ক্ষমতাটিকে নস্যাৎ করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকবে।

অধ্যাপক টিপলার অসীম তথ্যে ভরপুর এই অসীমতটীয় অবস্থাটির চূড়ান্ত ব্যতিক্রমী বিন্দুকে স্রষ্টার ক্ষমতার সাথে তুলনা করেছেন। টিপলার এবং অধ্যাপক ডেভিড ডয়েচ মনে করেন, বর্তমানের মানব জাতির জন্য এই ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব কার্যকরী হলে এই চূড়ান্ত মহাজাগতিক কম্পিউটার সে পর্যন্ত মহাবিশ্বে বাস করে গেছেন এমন সবাইকেই আবার পুনর্জীবিত করতে পারবে। মাস্টার সিমুলেশনের মধ্যে অবস্থিত সকল কোয়ান্টাম মস্তিষ্ক অবস্থার ইমুলেশন পুনরায় সৃষ্টি করার মাধ্যমেই এটি সম্ভব হবে। এটি সিমুলেশনকৃত বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিবে। সিমুলেশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা অধিবাসীদের সাপেক্ষে পর জীবনটি হবে অসীম। ওমেগা বিন্দুই এই অসীম পর জীবনের প্রতিনিধিত্ব করবে। সিমুলেশন জগতের ভার্চুয়াল প্রকৃতি থাকায় সেটি কাল্পনিক যে কোন রূপ নিতে পারবে। সিমুলেশন করে তথ্য উদ্ধার করা বর্তমান বাস্তব। মহা সংকোচন ঘটলে সবকিছু আবার দ্বিতীয়বারেরমত ফিরে পাওয়া অসম্ভব কিছু হবে না।

টিপলারের ওমেগা বিন্দু তত্ত্ব মহা সংকোচনের মাধ্যমে কার্যকর হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মহা সংকোচন ঘটবে না। টিপলার পরবর্তীতে তার চিন্তাধারায় কিছু সংশোধন এনেছেন। ধনাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবকের কারণে মহাবিশ্বে যে ত্বরণ বজায় থাকবে তার ব্যবস্থা করতেই এই সংশোধন আনা হয়েছিল। টিপলার আন্তঃনাক্ষত্রিক নভোযানের প্রচালক শক্তি হিসেবে বেরিয়ন টানেলিং প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। এই প্রক্রিয়ায় যদি মহাবিশ্বের বেরিয়নগুলো নিঃশেষ হয়ে যায় তবে হিগ্‌স ক্ষেত্র তার নিরঙ্কুশ শূন্যতায় উপনীত হবে। ফলে ধনাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবক থাকবে না এবং ত্বরণও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্ব ওমেগা বিন্দুতে ধ্বসে পড়বে।

মহা সংকোচন সম্পর্কে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী স্টিভ অ্যালেন( Steve Allen) বলেন, "এটা সত্য যে, ইহা এখনো একটি খোলা দৃশ্যকল্প। অবশ্যম্ভাবী কি ঘটতে যাচ্ছে তা আমরা এখনও নিশ্চিত জানি না"।

আমরা এখনও নিশ্চিত নই। কিন্তু কল্পনার সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে দোষ কোথায়?

আবার পরিবর্তনের কথায় চলে আসি। মহাসংকোচনের সাথে সাথে সময় যদি পেছন দিকে চলতে শুরু করে তবে সভত্যাও পেছন দিকে যাত্রা শুরু করবে।
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি মহাবিশ্বের সার্বিক ফলাফল। কিন্তু, আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনেও কি পেছনের দিকে যাত্রা শুরু হতে পারে না? জন্ম মৃত্যু থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের সবকিছুই এই বিশাল পরিবর্তনের অংশ।

হাজার বছরের এই বিবর্তনকে আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারিনা।
কল্প লেখকরা এ বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা লেখেননি। তবে "The age of Adaline" মুভিতে দেখনো হয়েছে যে, ২৯ বছর বয়সে এসে Adaline চরিত্রটির বয়স আটকে যায়। অর্থাৎ, তার বয়স আর বাড়ে না।

মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব কল্পবিজ্ঞানকে বারবার হার মানায়। মহাবিশ্বের এই আসীম রহস্য আমাদের বারবার হারিয়ে নিয়ে যায় মহাশূন্যের বিশালতায়।
Reality is more unreal than you think.

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯

মহা সমন্বয় বলেছেন: অসাধারণ এক কথায় অসাধারণ - চালিয়ে যান সাথেই আছি। :)
কিন্তু কোন কমেন্ট নেই !!! :-< দুঃখিত হলাম যে

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১০

মারুফ তারেক বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ। মহা সমন্বয়।।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৬

মারুফ তারেক বলেছেন: বিজ্ঞান মনস্ক পাঠকেরা হয়ত বেশী একটা খেয়াল করেননি। আবার একটু বড় হওয়ার কারনে হয়ত অনেকে সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়েননি।। :D

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩০

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: Reality is more unreal than you think
সত্যিই.........

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

মারুফ তারেক বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ নয়ন বিন বাহার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.