নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যুক্তরাষ্ট্র শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সমগ্র পৃথিবীতে যুদ্ধের আগুন সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪৮ টি যুদ্ধের মধ্যে ১৪১ টি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে।শত হলেও বিশ্বের মোড়ল, তাই কেউই তেমন উচ্চবাচ্য করতে পারেনা।আর মিডিয়ার কাজ হল ঢোলের বাদ্য বাজানো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব তেমন একটা ছিল না। তাই শুরু করছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ
৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালের ভোরে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ-ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালিত করে জাপান।জাপান পরিচালিত এ বিমান আক্রমণে ১৮৮টি মার্কিন বিমান ধ্বংস হয়। নিহত হয় ২,৪০২ জন এবং আহত বা ঘায়েল হয় ১,২৮২ জন। ফলে মহাযুদ্ধে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র । এই আক্রমণ ছিল অনেকটা ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগানোর মত। পরবর্তীতে জাপান যার ফলাফল ভোগ করেছে। ৮ই মে ১৯৪৫ সালে জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে আত্নসমর্পণ করে। তখন যুদ্ধ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্ত, ৬ ই আগস্ট এবং ৯ ই আগস্ট যথাক্রমে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমানবিক হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ।
আর এই হামলাটি চালানো হয় জার্মানির আত্নসমর্পণের প্রায় তিন মাস পরে।কতটুকু দরকার ছিল এই বোমা হামলার? এই বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যান।নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন।জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ।
উপরের ছবিটি হিরোশিমায় বোমা হামলার পরে তোলা।বড় ভাই ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে যাচ্ছে কবর দেওয়ার জন্য।
জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এই বোমাবর্ষণের ভূমিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অধিকাংশের ধারণা এই বোমাবর্ষণের ফলে যুদ্ধ অনেক মাস আগেই সমাপ্ত হয়, যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত জাপান আক্রমণ (invasion) সংঘটিত হলে উভয় পক্ষের যে বিপুল প্রাণহানি হত, তা আর বাস্তবে ঘটেনি।অন্যদিকে জাপানের সাধারণ জনগণ মনে করে এই বোমাবর্ষণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, কেননা জাপানের বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছিল।
এমন নয় যে পারমানবিক বোমার ধ্বংসলীলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানত না।আর এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদী মনোভাব ফুটে উঠে।
অবশেষে বিপুল পরিমাণে ক্ষতির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। তার মানে এই নয় যে যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ করা শেষ হয়েছে।এমন নয় যে, পারমানবিক বোমার ধ্বংসলীলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানত না।তাই এই হামলার কারনে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদী মনোভাব ফুটে উঠে। জার্মানির কারনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হলেও যুক্তরাষ্ট্রেরও ধ্বংসলীলা ভোলার নয়।
আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ১৯৪৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হল শীতল যুদ্ধ (Cold War).
শীতল যুদ্ধ (Cold War):
শীতল যুদ্ধ হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র সমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার টানাপোড়নের নাম। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক দেশ।এর পক্ষে থাকে চীন,কিউবা।এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ছিল যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশগুলো। যা ১৯৪৭ সাল থকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। অর্থাৎ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে শেষ হয় শীতল যুদ্ধ। ১৯৯১ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের মত দেশগুলোর জন্ম হয়।আর এর পেছনে হাত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী তৈরীতে সহায়তা করেছিল। বলা হয়ে থাকে আল-কায়দা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মার্কিনীদের থেকেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত । যারা পরবর্তীতে কালসাপে রূপান্তরিত হয়েছে।শীতল যুদ্ধ শেষ হয়েও শেষ হয়নি। এখনও রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পর বিরোধী কাজকর্ম অব্যাহত রয়েছে। মাঝে মাঝেই এই দুই দেশের মধ্যে আটককৃত গুপ্তচর বিনিময় ঘটে।
বলা বাহুল্য যে, যুদ্ধ করা এবং যুদ্ধ লাগানোতে মার্কিনীদের স্বার্থ আছে।অন্যতম কারন হল, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গুলোকে লুটেপুটে খাওয়া যায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য অস্ত্র বাণিজ্য অন্যতম ভূমিকা পালন করে। যদি যুদ্ধ নাই লাগে তাহলে অস্ত্র বিক্রি হবে কি করে? পৃথিবীতে অস্ত্র বাণিজ্যে শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্র।যদিও এই নিউজটি কোন সংবাদ মাধ্যমের নয় তবুও লিখলামঃ ইউএন এর এক সামরিক কর্মকর্তার বিবৃতি অনুযায়ী, মার্কিনীদের এই অস্ত্র বাণিজ্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে মাফিয়াও নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের কারন ও ধরন নিয়ে নির্মিত হয়েছে "Dirty Wars: The World is a battlefield" নামক তথ্যচিত্রটি। লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=O7UCFSbduuY
আজকে এই পর্যন্তই।পরবর্তী পর্বে কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধ, কোরীয় যুদ্ধ ,হান্টিংটন মতবাদ, ইরাক এবং সমসাময়িক যুদ্ধ নিয়ে ফিরব।
ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্রঃ The Times, যুগান্তর,কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও উইকিপিডিয়া।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
মারুফ তারেক বলেছেন: ভালোই বলেছেন বিজন শররমা। আমাদের দেশেরও তো একই অবস্থা। অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, বাংলাদেশের কোন মানুষের না খেয়ে মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অথচ আমাদের ভাইদের লাশে ভরে যায় সাগর। বার্মা থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড অথবা মালেশিয়ার।ওদের একটাই দোষ, ওরা বাঁচতে চেয়েছিল।
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৮
বিজন শররমা বলেছেন: পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছেন- আমাদের ফ্যামিলি প্লানিং এর দরকার নেই ।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
মারুফ তারেক বলেছেন: আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রী, ভাবতেই আবাক লাগে।মনে হয় গো-মূর্খরা আমাদের দেশ চালাচ্ছে। বলতে পারেন আমাদের দেশ কোন দিকে এগুচ্ছে?
৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন, ঠিক এই কথাগুলোই আমি গতকাল আমার এক ইরানি সহকর্মীকে বলছিলাম। যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যবসা, বেচে থাকার হাতিয়ার। তাই দুনিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই যুদ্ধ বাধিয়ে রাখবে, শান্তিতে থাকতে দেবে না কাউকে।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫
মারুফ তারেক বলেছেন: ধন্যবাদ মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যবসা, বেঁচে থাকার হাতিয়ার।আসলেই তাই।
শান্তি, প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ বার বার ব্যর্থ। সবাই মিলে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে রুখে না দাড়ালে ওরা বাড়তেই থাকবে। আরও একটি কথা, ওরা বলে শান্তি আনবে যুদ্ধ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্দুকের নলের ডগায় কখনও শান্তি আসে না।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩১
বিজন শররমা বলেছেন: যেসব দেশ থেকে শরনার্থী অন্য দেশে যাচ্ছে সেসব দেশের মানুষের উচিত হবে তাদের দেশের অযোগ্য সরকারগুলিকে এখনই বিতারন করার ব্যবস্থা করা । আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ উন্নত বিশ্বের উচিত হবে এই সব দেশের অযোগ্য সরকারগুলিকে সহযোগিতা না করা এবং ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করা । একই সঙ্গে বিতারিত শাসকদের কাছে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ থাকলে তা বাজেয়াফত করে শরনার্থীদের পূনর্বাসনে খরচ করা ।