![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ও আমার উড়াল পঙ্খিরে, যা যা রে উড়াল দিয়া যা..." পাগলা কিছিমের মানুষ কোন ইষ্টিশন নাই, গাইল জানি কিন্তু গাইল পাড়ি না। দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
"ঝিঁঙ্গে বেঁচো পাঁচ ছিকেতে
হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচনা।’
- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
আশির দশকের মাঝামাঝি আমরা ছিলাম একদল উচ্ছন্নে যাওয়া পোলাপান। উচ্চ মাধ্যমিকের পরের বন্ধুত্ব, কেউ কারো বাপ দাদার ঠায়-ঠিকানা জানি না। আমরা তখন ফার্মগেইট ছেড়ে শাহাবাগ, কলতা বাজার ছেড়ে শাহাবাগ, মতিঝিল কলোনী ছেড়ে শাহাবাগ, এলিফেন্ট রোড আর ধানমন্ডি ছেড়ে দিনে দশবার নীলক্ষেত, আজিমপুর, চানখার পুল চক্কর মেরে মেরে শাহাবাগ। সে সময় চানখারপুল মোড়ের মাঝখানটায় ট্রাফিক পুলিশ দাড়াবার জন্য একটা ছোট্ট গোল চক্কর ছিল। চানখারপুল রাস্তায় ঢুকতেই বাহাতে আমেনা ড্রাগ হাউস বলে একটা ঔষধের দোকান ছিল। তখন দেশে শুধু মাত্র একটি টিভি চ্যানেল ছিল। মহিলা সমিতি আর গাইড হাউজে প্রতি সন্ধ্যায় নাটক হতো। গ্যাসের ট্যাবলেট এন্টাসিড সাইজের ৫ টাকা দিয়ে একটা ট্যাবলেট পাওয়া যেত নাম ম্যানড্রেক্স। শাহাবাগ মার্কেটের শেষ দোকানটায় সুটকেস আর চামড়ার ব্যাগ বিক্রি হতো, পিজির বিল্ডিং এর গা ঘেষে একটা ছাপড়া মত চা দোকান ছিল, আজিজ মার্কেটের পুরো যায়গাটা জুড়ে একটা ডোবার মত ছিল, পাবলিক লাইব্রেরীতে নান্নুর ক্যান্টিনটাও ছিল আর ছিল চারুকলার উল্টো দিকে মোল্লা চাচার দোকান। আমাদের সেই উচ্ছন্নে যাওয়া পোলাপান কারোই কষ্ট একাউন্টিং পড়তে ভালো লাগত না। ভালো লাগত না বিজনেস’ল আর স্টাটিসটিক্স এর ক্লাশ! মনে মনে আমরা তখন খুঁজতাম একটা কবিতার ইশকুল, গানের ইশকুল, সিনেমার ইশকুল! চানখার পুল থেকে ঘুরে এসে আমরা যেনো আরো কোন কোন ইশকুল খুঁজতাম, কি কি হবার স্বপ্ন দেখতাম... রঙচটা জিন্স, পুরোনো ক্যামেরা, তাঁর ছেড়া গিটার হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্লেন উড়ে কই যায় কোন দিন তা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। ঢাকা শহরে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ানো সেই ভ্যাগাবন্ড গুলো কখন কিভাবে যেনো একে একে উড়াল দিল সব! কেউ কেউ তো সেই উড়ালে একেবারে পরপারে।
আমাদের সেই দলের এক বন্ধু গিটার কাধে ঘুরে বেড়াত রক গায়ক হবার স্বপ্ন নিয়ে। দিনের মাঝে দশবার ঝগড়া হতো, যার সাথে আমার কোন কিছুতেই মিলতনা অথচ আমরা দল বেধে ঘুলে বেড়াতাম দিনমান। ক'দিন আগে জাঙ্ক মেসেজ বক্সে অদ্ভুত ইংরেজীতে আমার ফোন নাম্বার চেয়ে একটা ম্যাসেজ এলো। দেখি, আমার সেই বন্ধুটি এখন দক্ষিন আফ্রিকায় স্থানীয় ভাষার গানের গীতিকার, সুরকার, শিল্পী! ওর গান শহরের ক্লাবে, রেডিওতে দিনরাত বাজে। গায়ক হবার স্বপ্ন পুরন হয়েছে তার সুদূর দক্ষিন আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে। গত পরশু ফোনে আমাদের কথা আর ফুরায় না। ২৬ বছর যার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ নেই, জাঙ্ক মেসেজর লিংন্ক ধরে আমার সেই তারছেড়া বন্ধুটির স্বপ্ন পুরনের খবর পড়ি, যে গানের মাথামুন্ডু কিছু বুঝিনা সেই গান শুনে চোখ ঝাপসা হয়ে গেলে নিজে নিজেই হাসি। ইন বক্সে বন্ধুটিকে আমি লিখে জানাই,
'Dosto, tuito finally singer hoya gachos mama! That is what you wanted to be all your life. Glad to see that you are rocking mama!'
উত্তরে বন্ধু আমাকে লিখে,
'tumer mama pagla dowell akhon kobita lekhe ...gun lekhe ..ah sob tumer jonno ..tume oke shekheocho kobita lekhte ..gun lekhte ...crying ..manushe ke valo bashte ..tumer mama akhon south africa hiphop singer ..pray 4 him'
বন্ধুটি আমাকে ওর গাওয়া গানের লিংন্ক পাঠায় (Click This Link), যে গানের ছাতামাথা আমি তেমন বুঝি না, এই গানকে রক বলে না হিপ্হপ্ বলে তাও জানিনা কেবল শুনতে থাকি। আমার চোখ বেয়ে জল গড়ায়, কেবল উচ্ছনে যাওয়া দিন গুলোকে মনে পরতে থাকে আমার...
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:১৪
আলী আরাফাত শান্ত বলেছেন: কি মনে করে জানি এই মাঝরাতে সামুতে ঢুকলাম। আপনেই আছেন যিনি মাঝে সাজে এই পাড়ায় পোষ্ট দেন। ফেসবুকেই এই লেখা পড়া, এখানেও জানিয়ে দিলাম। ভালো থাকেন ভাইয়া!