![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ও আমার উড়াল পঙ্খিরে, যা যা রে উড়াল দিয়া যা..." পাগলা কিছিমের মানুষ কোন ইষ্টিশন নাই, গাইল জানি কিন্তু গাইল পাড়ি না। দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল...
১. ইচ্ছে ছিল বলাকায় দেখবো। রাস্তায় নেমে জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে মনে হলো শো মিস করে ফেলব তাই মাঝ পথে নেমে কর্দমাক্ত রাস্তায় খানাখন্দ নর্দমা পেরিয়ে গাড়ীঘোড়ার ফাকফোকর দিয়ে সিনেপ্লেক্সের দিকেই যাই। ঢুকতেই মোজো কম্পানীর আস্ত এক উটের খাঁচা সামনে পড়ল। লেখা উদ্ভট অফার। সেই জন্যই জ্যান্ত উট নিয়ে এই উদ্ভট প্রদর্শনী। দেশের মানুষের মস্তিষ্ক দিন দিন ভালোই উর্বর হচ্ছে। বেচাবেচির জন্য কতইনা ক্যারিক্যাচার!
টিকেট কাটতে যেয়ে দেখি এখানে শো সোয়া সাতটায়। কি আর করা, টিকেট কেটে এদিক ওদিক ঘন্টা পার করা। হাতে ঘন্টর উপরে সময়, বসুন্ধরা সিটির আট তলায় কিলবিল করছে মানুষ। বাইরে খাবারের যায়গা গুলিতে মানুষ ভিড় করে খাচ্ছে, চিবাচ্ছে, ঢেকুর তুলছে। সিনেপ্লেক্সের নতুন থ্রী ডি থিয়েটারের পাশেই দেখি সেইরকম অবস্থা! বিশাল বিশাল পরিসরের দুই দুইটা সম্ভবত ফরেন কোন ফুড চেইন(!) নর্থ আমেরিকার ব্রান্ড গুলা চিনি ইওরোপের গুলোতো আর চিনি না। ঢুকে মনে হল দুবাই কিম্বা হিথ্রো এয়ার্পোটের কয় নম্বর টার্মিনালে ঢুকে পড়েছি! দেয়ালের এপাশ থেকে ওপাশ অব্দি জায়েন্ট টিভি চলতেছে। মানুষে মানুষে সয়লাব, চলছে খানাখাদ্য সেইরকম তরিকায়। আমি পাশের মিউজিক ক্যাফেতে য়েয়ে এক কাপ কফিতে অপেক্ষার সময়টা পার করি।
২. হলের ভেতর ঢুকতেই চোখে পড়ল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এখনো চলছে। কোবানীর ঈদের আর দিন দশেক বাকী। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবি এখনো চলছে এই হলে। দেশে কী এর মাঝে আর কোন সিনেমা মুক্তি পায়নি! পেয়েছে অন্য হল গুলিতে তবে সিনেপ্লেক্সে এখনো মানুষ আসছেন হলিউডের সিনেমার পাশাপাশি অনন্ত জলিলের ছবি দেখতে। কফি খাবার সময় পাশের টেবিলের এক দল তরুন তরুনীকে দেখলাম অনন্ত জলিল কে নিয়ে হাসাহাসি করছেন। তারাও দেখতে এসেছেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। বুঝতে পারি না বাংলা সিনেমার জন্য অনন্ত জলিল ট্রেজেডি না কমেডি! সিনেমা উপভোগ করার এ কোন নতুন তরিকা বাংলাদেশে চালু হলো! সিনেমার প্রতি ভালোবাসায় নয়, প্রগাঢ়হ কোন আকর্ষনে নয় মানুষ দলবেধে স্রেফ তামাশা করার জন্য সিনেমা হলে যাচ্ছে। উদ্ভট কান্ডই বটে!
৩. পরিচালকের নাম অমিত আশরাফ। উধাও ছবির কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্যও তাঁর। উধাও অমিত আশরাফের প্রথম চলচ্চিত্র। উধাও মুক্তি পেল আজ। প্রথম দিনের পঞ্চম শো, হল ভরে নাই। সামনে পেছনে অনেক সারিতেই আসন খালি তবু দর্শক সমাগম মোটামুটি ভালো। ফেইস বুক এ এই ছবিটার ট্রেলার দেখেছি গত বছর। এর ছবির পেইজে লাইক দেয়ার সুবাদে ছবিটির বিভিন্ন আপডেট জানতাম। বিদেশের বিভিন্ন ফেস্টিভাল এ ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে প্রশংসা পাচ্ছে পুরস্কৃত হচ্ছে সব আপডেটই পাচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম কবে নাগাদ ছবিটি দেখতে পাবো। তাই মুক্তি পাবার প্রথম দিনেই দেরী না করে দেখে ফেলার ব্যবস্থা। সিনেপ্লেক্সের পর্দায় টু ডি এনিমেটেড জাতিয় পতাকা প্রদর্শন শেষে শুরু হয় অমিত আশরাফ এর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র উধাও। সিনেমা শুরু হয়। টাইটেল দেখতে দেখতে মনে হল বলাকা-২ এর ছোট পর্দায় না দেখে ভালোই করেছি। সিনেপ্লেক্সের বড় পর্দা আর উন্নত শব্দ আয়োজনে ছবি দেখবার আনন্দ পূর্ণতা পায়।
লেখার শিরোনামে লিখেছি আমি কোন রিভিউ লিখছিনা। উধাও প্রথাগত বাংলা সিনেমার ভাবভাবনার বাইরের একটি চলচ্চিত্র প্রয়াস। অমিত আশরাফ এর চিত্রনাট্যটি আধুনিক। শিল্পনির্দেশনা চিত্রনাট্যের সাথে ছন্দময়। চিত্রায়ন মেধাবী। আবহ সংগীত, চলচ্চিত্র ও শব্দ সম্পদনা আকর্ষণীয়। আলোক পরিকল্পনা ও আলোক প্রক্ষেপন চমৎকার। এ চলচ্চিত্রের কাস্টিং তথা পাত্রপাত্রী নির্বাচন যথাযথ। অভিনয়ে মোটেও বাংলাদেশী সিনেমার থিয়েটার মার্কা মেলোড্রামা নেই। আছে মেদ চর্বিহীন সাবলিল অভিনয় দক্ষতা। "সিনেমার ভাষা" বলে একটা কিছুর কথা আমরা বলি বা শুনে থাকি। ইংরেজীতে যাকে ফিল্ম ল্যাংগুয়েজ বলা হয়। উধাও বাংলাদেশের সিনেমায় যা বিরল দৃশ্য সেই চলচ্চিত্র ভাষায় কথা বলে দর্শকের সাথে। কেবল মাত্র হরহর করে উগরানো সংলাপ নির্ভরতা নয়। এ সিনেমায় টুকরো টুকরো ডিটেইলের মাধ্যমে ভিজ্যুয়ালি দৃশ্যের সাথে দৃশ্যে গেথে গেথে, টাইম আর স্পেস নিয়ে দর্শকের সাথে একটা মনস্তাত্তিক খেলা খেলার প্রচেষ্টা আছে। সিনেমা দেখতে যেয়ে দর্শক কেবল বসে বসে তামাশা দেখে না এখানে। এ ছবি দেখতে দেখতে দর্শক নড়ে চড়ে বসে, মাথা ঘামায়, অস্বস্থি বোধ করে। ভাবে, কি দেখছি? কেন এমন ভাবে দেখছি! প্রথাগত এক রৈখিক গল্প বলার বাচন থেকে অমিত আশরাফের চিত্রনাট্য বেরিয়ে এসে আমাদের সাথে এক প্রকার ছোঁয়াছুই খেলে। আমরা সিনেমা দেখায় মাত্ত হই এর গল্পটা উদ্ধারের চেষ্টা করি। এই কাজটা দর্শক হয়ে আমরা কতকটা পারি আবার পারি না। শেষমেষ পরিচালক একটা নিদৃষ্ট সময় শেষে একটা গল্পের দৃশ্য বয়ান শেষ করেন। দর্শক হিসেবে আমাদের সে প্রয়াস কারো পছন্দ হয় কারো হয় না। কেউ এ চলচ্চিত্র দর্শন শেষে বিরক্ত হন, কেউ বা হন বিনোদিত। তবে এটা সত্যি এ ছবি দেখবার পর অনেকেই নিশ্চই ভাবিত হবেন। ভাববেন কেন এমন, কি জন্যে এমন? বাংলাদেশের সিনেমার জন্য এটাই নতুন বারতা।
উধাও চলচ্চিত্রের গল্পটি আমার তেমন পছন্দ হয় নাই। কিন্ত এই চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও নির্মাণ আমাকে বাংলাদেশের আগামী দিনের সিনেমা নিয়ে আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, গুরুত্বপূর্ণ ভোটরাজনীতি এমনতর প্রেক্ষাপটে মুক্তি পেল চলচ্চিত্র উধাও। রাজনৈতিক নেতার দোতলার বারান্দা থেকে বক্তৃতা করা বা হাত নাড়া। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে সোনার মানুষ সোনার দেশের স্বপ্ন নিয়ে বক্তৃতা করা। বার ক'এক নির্মীয়মান উপুড় করা একটা নৌকার দৃশ্য। তিরিশ টাকায় একটা বড়সড় পাঙ্গাসের সময়কাল কখন? কেন দেখানো? না কি এমনি এমনি মনে হল তাই দেখানো কে জানে! সিনেমার শেষে গল্পের মুল চরিত্র আকবর হারানো অতীত ফিরে পেয়েও নিঃশ্চিহ্ন করে ফেলে কেন কি জন্যে তাও বুঝতে পারি না। না বুঝতে পারলেও অসুবিধে নেই। গল্পকার এমন একখানা গল্প নিয়ে সিনেমা বানাতেই পারেন।
উধাও আজ ঢাকার তিনটি বিশেষ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। দেখার বিষয় এই ছবি আগামী ছয় দিন হল গুলিতে কেমন দর্শক টেনে নিয়ে যায়। আরো দেখার বিষয় এর পর এ ছবি দেশের আর কোথায় ও প্রদর্শিত হয় কি না এবং দর্শকরা তা কিভাবে দেখছেন বা নিচ্ছেন? উধাও এর পাশের হলে গত আট সাপ্তাহ ধরে চলছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। দেশী সিনেমার প্রথাগত মেলোড্রামা এবং অবাস্তব গল্প বয়ানের চরম রূপ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর এ ছবি দেখতে এখনো দর্শক লাইন ধরে টিকেটও কাটছেন। অন্যদিকে উধাও বাংলাদেশের সিনেমাকে নতুন ভাবে নির্মানের চেষ্টা, যদিও এখানেও দর্শক দেখবেন উদ্ভট এক গল্পের আধুনিক এক বয়ান।
লেখার শেষে এসে সিনেপ্লেক্সের বাইরে বেধে রাখা উট এর কথা আর মোজো কম্পানীর উদ্ভট অফারের কথা মনে হলো। আসলে এখন বুঝি সময়টাই এমন উদ্ভট। তাইতো পণ্যর বাজার থেকে চলচ্চিত্রের পেক্ষাগৃহ সকল কিছুতেই উদ্ভট কিছুর ছড়াছড়ি। প্রশ্ন হতে পারে: এই উদ্ভট উটের পীঠে চড়ে কে কোথায় যাবে? কোন সে বিরানায় যাবে তা কে জানে!
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:০৪
লাল দরজা বলেছেন: অতীত অস্বীকার করে আবার বর্তমান জীবনকে বেছে নেয়া। এটাই জীবনের নিয়ম? বাপরে ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখি!
একই সাথে ছবি দেখেছি জেনে আনন্দিত হলাম।
২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: উদ্ভট সময়ের ছবি নিয়ে অনেক কথাই বললেন। তবে এর মাঝেও যেন আমাদের সিনেমা শিল্পটি টিকে থাকে এবং এগিয়ে যায়, সে চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদেরও আছে।
লেখাটি পড়ে অনেক মজা পেলাম। ধন্যবাদ
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১০
লাল দরজা বলেছেন: এর মাঝেও যেন আমাদের সিনেমা শিল্পটি টিকে থাকে সেই কারনেই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার চেষ্ট করি, সিনেমা নিয়ে ভাবনা করি। ব্লগে, ফেইসবুকে সেই ভাবনার রেশ লিখে রাখি নিয়মিত।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ইচ্ছে হলে সিনেমা নিয়ে অন্য লেখা গুলোও পড়ে দেখতে পারেন। শুভকামনা।
৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: নিজেদের সিনেমার স্বার্থেই অনন্ত জলিলকে নিয়ে হাসাহাসি করতে সিনেমা হলে গেলে অনন্ত জলিলের ভাব বাড়তে থাকবে , কাজের কাজ কিছুই হবেনা ! তার চেয়ে অনেক উত্তম এই ধরনের সিনেমাগুলো হলে গিয়ে দেখা , গঠনমূলক সমালোচনা করা ! তাতেই হয়তো বাংলা ছবি আলোর মুখ দেখবে !
পোষ্টে ++++
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৩
লাল দরজা বলেছেন: জয় বাংলাদেশের সিনেমা!
৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:২৮
খেয়া ঘাট বলেছেন: দেশের মানুষের মস্তিষ্ক দিন দিন ভালোই উর্বর হচ্ছে। বেচাবেচির জন্য কতইনা ক্যারিক্যাচার - দারুন পর্যবেক্ষণ আপনার।
আপনি লিখেন চমৎকার।বাবুই পাখীর মতো মুন্সিয়ানায় গল্পের ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু আপনার লিখার পাঠক কম। কারণ ব্লগ শুধুমাত্র পারস্পরিক সম্প্রীতির প্রীতিতেই আটকা পড়ে আছে।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:০১
লাল দরজা বলেছেন: সময়টা বড়ো গিভ এন্ড টেইক এর। আমি কারো ব্লগ না পড়লে, কমেন্ট না করলে কেউ আমার ব্লগইবা পড়তে আসবেন কোন দুঃখে? ৬ বছর আগে অনেক পাঠকই আমার ব্লগ পড়তেন, আমিও পড়েছি অন্যের ব্লগ। এখন আর আগ্রহ হয় না তেমন। আমার কম্পিউটার সারাক্ষন খোলা থাকে, লগইন করা থাকে ব্লগ/ ফেইসবুক। কিছু মনে এল, ফেইসবুকে কোন নোট লিখলে ব্লগেও এক কপি পোস্ট করে রাখি। কেউ না পড়লে আর কী করা!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য আর কমেন্ট করার জন্য। শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: উধাও ছবি নিয়ে বিস্তর আলোচনার অবকাশ আছে। হারানো অতীত ফিরে পেয়েও পুঁতে ফেলার ব্যাপারে থিওরি সিম্পল। মানুষ অনেক উঁচুতে উঠে গেলেও অতীততাড়িত হতে পারে, স্মৃতিকাতর হতে পারে, কিন্তু সেটা শুধুই একটা পরাবাস্তব ভ্রমণ। তারপর সেটাকে অস্বীকার করে আবার বর্তমান জীবনকে বেছে নেয়া। এটাই জীবনের নিয়ম।
আপনি আর আমি একই শো দেখসি!