নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্মানের শিক্ষা -আজহার উদ্দিন

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:১৮

নোয়াপাড়া গ্রামের একটি পরিচিত মুখ মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি একজন সরকারী চাকুরীজীবী, যিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং বাহ্যিকভাবে একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার ব্যবহার এবং কথাবার্তার ধরণ গ্রামের মানুষকে ক্রমাগত হতাশ করে। তিনি নিজেকে একজন মহা পণ্ডিত মনে করেন এবং অন্যকে ছোট করে কথা বলতে কখনোই দ্বিধা করেন না। বয়স বা সম্পর্কের কোনো গুরুত্ব তার কাছে নেই; তিনি সকলকে “তুই তুকারি” করে ডাকেন, যা অনেকের মনে আঘাত করে।

গ্রামের মানুষরা তার প্রতি সম্মান দেখাতে বাধ্য হয়, কারণ তিনি সরকারী চাকরির উচ্চ পদে আছেন। কিন্তু তার ব্যবহার নিয়ে সবার ভেতরে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে। যদিও তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলেন, তবুও তার মধ্যে মানুষের প্রতি বিনয়ের অভাব এবং পারিবারিক শিক্ষার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।



তার প্রতিবেশী মজিবুর রহমান সাহেব একদিন বলেন, "আবুল কালাম সাহেব, নামাজ পড়ার পাশাপাশি আপনার ব্যবহারও তো ঠিক করতে হবে। আপনি আমাদের ছোটদের এভাবে সম্মানহীন করে ডাকবেন, তা কি শোভা পায়?" কিন্তু আবুল কালাম সাহেব বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। তিনি হেসে বলেন, "তুমি তো আমার বয়সের সমান হবে না, আমি যেমন চাই তেমনই বলবো। তোমাদের মতো ছেলেদের কথা শুনে আমি চলবো না।"

গ্রামের সবাই তার এই অযাচিত গর্বের কথা জানে, কিন্তু তারা কেউই তাকে সরাসরি কিছু বলতে সাহস পায় না। কারণ, তিনি সবসময় তার চাকরি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কথা বলেন। কিন্তু একটি ঘটনা তাকে ভেতর থেকে নাড়া দেয়।

একদিন আবুল কালাম সাহেবের ছেলে শহীদ, যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, বাড়িতে আসে। শহীদ তার বাবার মতো নয়; সে বিনয়ী, মানুষকে সম্মান দেয় এবং সমাজের সবার সাথে ভালোভাবে মিশে থাকে। তার বন্ধুরা তাকে খুব ভালোবাসে এবং তার ব্যবহারের প্রশংসা করে। শহীদ যখন তার বাবার ব্যবহারের কথা শোনে, সে খুব মর্মাহত হয়।

একদিন গ্রামের এক তরুণ শিক্ষার্থী, রায়হান, আবুল কালাম সাহেবের সামনে এসে বললো, "চাচা, আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। আপনি আমাদের গ্রামে সম্মানীয় মানুষ, কিন্তু আপনার কথাবার্তার কারণে অনেকেই কষ্ট পায়। আপনি যদি একটু বিনয়ী হতেন, তবে আমরা আপনার থেকে আরও অনেক কিছু শিখতে পারতাম।"

শুনে আবুল কালাম সাহেব প্রথমে রেগে গিয়েছিলেন, কিন্তু তার ছেলে শহীদ এসে তার পাশে দাঁড়ায় এবং বলে, "বাবা, রায়হান যা বলছে, সেটা সত্য। আপনি নামাজ পড়েন, ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন, কিন্তু সবার সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলার যে শিক্ষা, সেটা আপনার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না। ধর্ম শুধু নিয়ম পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের ব্যবহারেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত।"

এই কথাগুলো শুনে আবুল কালাম সাহেব কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু বয়সের জন্য নয়, যোগ্যতারও একটা বড় ভূমিকা আছে একজন মানুষকে সম্মান করার ক্ষেত্রে। তিনি প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেন যে, তার ব্যবহার মানুষকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

এরপর থেকে, আবুল কালাম সাহেব নিজের ব্যবহারে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, মানুষকে সম্মান করা এবং বিনয়ীভাবে কথা বলা একজন সত্যিকার ধার্মিক মানুষের পরিচয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৮

আজব লিংকন বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনা এবং শিক্ষনীয় গল্প। পড়ে ভাল লাগলো।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৭

ছোট কাগজ কথিকা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.