নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।
রিনা আক্তার তুলি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার-মেহেরুন রুনি হত্যার চার বছর পূর্ণ হচ্ছে বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারি। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার পর হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তারপরও হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার যেমন করতে পারেনি, তেমনি রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তেও ভাটা পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ সাগর-রুনির পরিবার ও সাংবাদিক সমাজ।
র্যাবের সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে পৃথক দুই ধরনের ডিএনএ’র নমুনা পাওয়া গেছে। উদ্ধার হয়নি সাগরের ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপের একটিও।
এই মামলায় আটক হয়েছেন আটজন। এরা হলেন- বাবুল মিয়া, কামরুল হাসান, মো. রফিক, মিন্টু প্রকাশ, আবু সাঈদ, তানভীর আহমেদ, পলাশ রুদ্র ও এনামুল। এদের মধ্যে ছয় মাসের জামিনে রয়েছেন তিনজন- তানভীর আহমেদ, পলাশ রুদ্র ও মিন্টু প্রকাশ। এ সব আসামিদের কাছ থেকে কোনো ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পাওয়া যায়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রতিমাসে একবার নিয়মিত তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে এ পর্যন্ত আদালতে ৪০টির বেশি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, সাগরের ব্যবহৃত ল্যাপটপ দু’টির সন্ধান করা হচ্ছে। ল্যাপটপ দু’টি উদ্ধারের জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা চলছে। হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই ল্যাপটপ দু’টো নিয়ে গেছে বলে অনুমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
র্যাবের দাবি, ডিএনএর যে দু’টো নমুনা পাওয়া গেছে, সেগুলোর সঙ্গে ঘাতকদের ডিএনএ’র মিল পাওয়া যাবেই, তা ঘাতক যে বা যারাই হোক না কেন। কিন্তু দেশে অপরাধীদের ডিএনএ নমুনার তথ্যভাণ্ডার না থাকায় ওই দুই ডিএনএ নমুনা দিয়ে সন্দেহভাজন ঘাতকদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
চার বছরেও কেন হত্যার রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এএসপি মহিউদ্দীন আহম্মেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডটি যেহেতু একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড, তাই আমি আমার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চার বছর পেরিয়ে গেলেও আশা শেষ হয়ে যায়নি। ক্লু-লেস হওয়ায় তদন্তে বেশি সময় লাগছে। ইতোমধ্যে তদন্তে আমরা যেটুকু এগিয়েছি, তাতে দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
পারিবারিক, সামাজিক, পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণ, নাকি অন্য কোনো কারণে এই হত্যাকাণ্ড? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হত্যার কারণ জানা যায়নি। কারণ জানতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। কারণ দোষীদের শাস্তি না হলে অপরাধ বেড়ে যায়। পেশাজীবনের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবেই এ কাজে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ চার বছর পার হয়ে গেলেও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারায় ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করেছেন সাগর-রুনির পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান পরিবর্তনকে বলেন, ‘তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে র্যাব আমাদের কোনো তথ্য দেয় না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তদন্ত চলছে জানিয়েই খালাস। আমি ও আমার পরিবার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আমরা আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল পরিবর্তনকে বলেন, ‘র্যাবের তদন্তে আমরা হতাশ। তাও সরকারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই।’
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিগত ৪৫ বছরের দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, যে কয়জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে তার তুলনায় সুবিচার পাওয়ার ঘটনা সংখ্যায় অনেক কম। খুলনায় গৌতম দাস ও হারুন-রশিদ হত্যার বিচার হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলার দৈনিক সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা জাসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম হত্যার বিচার ঝুলে আছে। সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি।’
তদন্তের বিষয়ে জানতে কথা হয় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদের সঙ্গে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এটি একটি ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ড। এই হত্যার কারণ জানতে করণীয় কোনোটাই আমরা বাকি রাখিনি। হত্যার পর ঘটনাস্থলে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর পৌঁছানোর আগেই গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছিল। এ সময় হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তাই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কেউ প্রকৃত হত্যাকারী নয়। এদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
মামলার বাদি রুনির ভাই নওশের আলম মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য দিই না, এ অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমাদেরকে অনেক কিছু গোপন রাখতে হয়।'
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই বাসা থেকে পুলিশ তাদের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে। ওই দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ঘোষণা দেন। আর ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, 'তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই এর রহস্য উন্মোচন করা হবে।'
আদালতের নির্দেশে একই বছরের ২৬ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। হত্যার আগে সাগর-রুনির দেহে কোনো ধরনের বিষ বা চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতেই ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। তবে লাশে পচন ধরায় ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদনে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তে ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
http://www.poriborton.com/more/poriborton-law-court-news/8827-2016-02-10-09-06-34
©somewhere in net ltd.