নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।
লেখক: ইমন আহমেদ
প্রতি দিন তো বানিয়ে গল্প বলি,,,আজ একদম সত্য একটা ঘটনা শেয়ার করতে চাই রেডিও মুন্না পরিবারের সাথে। ঘটনাটি এক অবুঝ মনের বন্ধুত্বের...
ছেলেটির নাম সাব্বির। বাবা মার একমাত্র সন্তান ছিলো সাব্বির, তবে এখন একটা ছোট ভাই ও আছে। একমাত্র মায়ের সান্নিধ্য বড় হয়েছে সাব্বির খুব আদরের সন্তান সে,, বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান বলে কথা। এক ছেলে সন্তান নিয়ে খুব সুখে-শান্তিতে কাটতো সাব্বিরের মায়ের দিন নাটোরে গুরুদাশপুরে...
সাল ২০০৬, জানুয়ারি মাস। সাব্বির মাত্র ক্লাস থ্রি তে উঠেছে। হঠাৎ একদিন সাব্বিরে আব্বু ফোন করে জানায় তার আম্মু কে ঢাকায় যেতে হবে। সাব্বিরের আব্বু মিলিটারিতে চাকুরী করে, সেই সুবাদে আর্মি কুয়াটারে বাসা পেয়েছে। তাই পরিবারকেও সাথে রাখতে চান তিনি, কিন্তু খবরটা শুনে সাব্বির একদম খুশি হতে পারেনি। সাব্বিরের মনটা ভীষণ খারাপ কারন কখনো মা কে ছেড়ে কোথাও থাকে নাই সে,, আর অপর দিকে মায়ের সাথে যেতেও পারবে না,, স্কুল প্রাইভেট সব এখানে রেখে বার্ষিক পরীক্ষার আগে আর্মি-সাহেব,,তাকে নিয়ে ও যাবে না। সাব্বির তার আব্বুকে বেশ ভয় পায় ও সম্মান করে। তাই নিরবে কষ্টকে মেনে নিয়ে বাচ্চা ছেলেটা একলাই হোস্টেলে থাকতে রাজি হয়ে যায়। এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলের হোস্টেলে থাকাটা যে কত কষ্টের তা একমাত্র আল্লাহ,,,ই ভালো জানেন।
.
মার্চের ৪ তারিখ। গ্রীষ্মের ছুটির আগেই স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে,, সাব্বিরকে ঢাকায় রেখে আসে তার মামা। ঢাকা, জিয়ে কলনী, বিমান বন্দরের পাশে, ১১০ নং বাসার ১১০(A) ব্লকে থাকতো সাব্বিরের বাবা-মা।
.
বাসায় একা নিরানন্দ ভাবে চলছিলো দিন গুলি। সারাদিন স্কুলের বই পড়া অথবা আম্মুর নতুন মোবাইল Nokia 1100 এ স্নেক গেম খেলাই ছিলো তার প্রতিদিনের রুটিন। এর মাঝেই একদিন পাশের বাসার এক ছেলের(আসিফ) সাথে পরিচত হলো সাব্বির, আসিফ ক্লাস ফাইভে পড়ে,,এর পর পরিচত হলো অপজিট বাসার আলিফের সাথে,,বিকালে দুই-তিন ঘন্টা ওদের সাথে খেলা করাটাও সাব্বিরে প্রতি দিনের রুটিনের মাঝে চলে আসলো। সাব্বির খেলাধুলা খেলায় খুব পটু এর জন্য বেশ ভালো কিছু বন্ধু পেয়ে গেলো সে,, অল্প কিছু দিনের মাঝেই সবাই যেনো তার খুব ভালো ও কাছের বন্ধু হয়ে গেল।
.
একদিন বাসায় তার আম্মুর সাথে আম্মুর কাজে সাহায্য করতেছিলো সাব্বির। হঠাৎ পাশের বাসার এক আন্টি আসলো, সাথে একটা মেয়ে। অনেক কিউট দেখতে ছিলো মেয়েটা,, বড়দের মাঝে কথা হচ্ছোছিলো। কথার এক পর্যায় সাব্বিরে আম্মু ঐ মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করলো।
.
মেয়েটির নাম ছিলো উর্মি। উর্মি ক্লাস ফোরে পড়ে সাব্বিরের থেকে বয়সে বড়। আস্তে আস্তে উর্মি আর সাব্বিরের মাঝে খুব ভালো একটা সখ্যতা তৈরি হয়ে গেলো। উর্মি সাব্বিরকে মাঝে ওর বাসায় নিয়ে যেতো ওর সাথে পুতুল খেলার জন্য। উর্মি বয়সে বড় হলেও সাব্বির তাকে নাম ধরেই ডাকতো। উর্মি দেখতে উজ্জল শ্যমলা ছিলো, পাতলা, চোখটায় একটু টানা ভাব ছিলো, আর মুখটা অনেক মায়াবি। উর্মির চুল গুলো অনেক সুন্দর ছিলো। যখন কথা বলতো নড়তো, মাথা দুলাতো তখন উর্মির চুল গুলোতে অনাবিল ঢেউ খেলে যেত। উর্মির কন্ঠস্বর, কথা বলার ভঙ্গিতা, আচারণ সব কিছুতেই এক অস্বাভাবিক মায়া ছিলো। সাব্বির নিজের অজান্তেই, সেই মায়ার জালে বাধা পড়ে যায়। উর্মি ব্লু বার্ড স্কুলে পড়তো। গ্রীষ্মের ছুটি দিয়ে,, দিছে তখন সারা দিনটাই সাব্বিরের,, উর্মির সাথে কাটতো বলা যায়। উর্মি অনেক গল্প জানতো, গল্প বলা তার প্রিয় একটা কাজ ছিলো..
.
রাতে লোডশেডিং হলে, জোনাকি ধরাতে ব্যস্ত থাকতো দুই শিশু। জোনাকি গুলোকে একটা কাছে পাত্রে রেখে ওদের আলো কিভাবে জ্বলে সেটা দেখে সময় কাটাতো...
.
গ্রীষ্মের ছুটি শেষে এবার সাব্বিরের হোস্টেলে ফেরার পালা,,মন চাইছে না এই ১১০নং বাসা ছেড়ে পুনরায় হোস্টেলে যেতে, কিন্তু দুনিয়ার কিছু নিয়মের কাছে সাব্বির বন্ধি,,ফিরে যায় হোস্টেলে। কেমন যেনো ফিকে হয়ে গেছে রঙিন দিন গুলা। সাব্বির সিদ্ধান্ত নিলো সে একলাই ঢাকা যাবে। ভাবা মাত্র কাজ একদিন সত্যি হোস্টেল থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে গেলো, এরুপ ব্যবহারের জন্য আর্মি-সাহেব(সাব্বিরে বাবা) খুব প্রহার করলো তাকে,,, আম্মু নিজের ছেলেকে নিজের কাছেই রেখে দিলেন।
.
বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন বিকেলে উর্মি বলছে, কাল ওরা চলে যাবে। জিজ্ঞেস করলো সাব্বির,, কই যাবা? বললো পাশেই মাটিকাটায় আব্বু বাসা ভাড়া নিছে, ওখানে থাকবো, আমাদের এখানে থাকার মেয়াদ শেষ।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওরা চলে গেছে..
.
হঠাৎ নিজের ভেতোরে একটা শুন্যতা কাজ করতে লাগলো সাব্বিরের। লাগবেই বা না কেনো? সাব্বিরের মনে প্রানে যে তখন একটাই নাম ছিলো(উর্মি)। তার সারাদিনের খেলা, সব অনুভূতির সঙ্গি যে চলে গিয়েছে..
.
কিছুদিন পর একদিন বিকেলে একাই মাটিকাটা চলে যায় সে। অনেক গলি , অনেক রাস্তা ঘুরেছিলো সেদিন,, ভিতরে ভিতরে বোবাকান্না ও কেঁদেছে সে কিন্তু তারপর ও আর উর্মির দেখা পায়নি সে।
সপ্তাহ খানেক পর আবার হোস্টেলে ফিরে যায় সাব্বির.... নিঃসঙ্গতার এক দুনিয়া সৃষ্টি করে গিয়েছিলো এই মেয়েটি সাব্বিরের জীবনে... যেটা আজও অপূর্ণ...
.
হয়তো আজও একই কারনে মেয়েটাকে সাব্বির খুঁজে যায় সবার আড়ালে, লক্ষ্য কোটি মানুষের ভীরে...আজ সাব্বির ক্লাস থ্রি থেকে H.S.C পরীক্ষার্থী। উর্মি ও হয়তোবা আজ কোনো কলেজ থেকে ভালো রেজাল্ট করে নতুন কোনো স্বপ্ন দেখছে...
.
মাঝে কেটে গেছে ৯ টা বছর, মেয়েটা কি এখনও সাব্বিরের কোনো কিছু মনে রেখেছে? এই নয় বছরে সাব্বিরে জীবনে অনেক বন্ধু বান্ধব এসেছে,,, সব সময় প্রতিটা ক্যারেকটারে মাঝেই উর্মির সেই বন্ধুত্ব ভাবকে খুঁজে গেছে সাব্বির... পায়নি সেই হারিয়ে ফেলা বন্ধুটাকে কারো মাঝেই,,,
.
[বি:দ্র: লিখিত কাহিনী সম্পূর্ণ সত্য। আজকে ঘটনাটা শেয়ার করার শুধুমাত্র একটাই উদ্দেশ,, #উর্মিকে খোঁজার জন্য। কারন আজও সাব্বির বিশ্বাস করে হয়তো উর্মি লেখাটা পড়বে, হয়তো উর্মিকে আবার সেই আগের মতো বন্ধুত্ত্বের,,, বন্ধু রুপে ফিরে পাবে আপনাদের মাঝে থেকে]
©somewhere in net ltd.