নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাথুরে জলের বিছনাকান্দি: ঘুরে আসতে পারেন এই বর্ষায়

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯

রাজীব রাসেল

মুগ্ধতাটা এমনই যে বারবার মনে হয়- সুন্দরেরও একটা সীমা থাকা উচিত! বিছনাকান্দিতে গেলে আপনারও এমনটা মনে হতে বাধ্য। নদী-পাথর-পাহাড়ের কি অপূর্ব সমন্বয়:

ওপারে ভারত আর এপারে বাংলাদেশের বিছনাকান্দি। ভারত থেকে প্রবল বেগে শীতল জলস্রোত ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে, মিশে যাচ্ছে বিছনাকান্দির রূপবতী নদীতে। স্রোতেরা বয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর পেরিয়ে। সেই পাথরে মাথা রেখে শীতল জলে গা ডুবিয়ে-ভাসিয়ে শুয়ে থাকছে মানুষ, ভাসিয়ে দিচ্ছে যাপিত জীবনের চিরায়ত ক্লান্তি- এটি বিছনাকান্দির এক নৈমিত্তিক দৃশ্য।

কোথা থেকে এই স্বচ্ছ শীতল জলের উৎপত্তি, তা দেখার উপায় নেই মোটেই। ওপাশেই যে ভারত, সীমারেখায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ভিন্ন জনপদ! এপাশে বিজিবি'র সশস্ত্র আনাগোনা আর ওপাশে বিএসএফ'র সতর্ক চোখ। সীমানা পেরোলেই গর্জে উঠতে পারে রাইফেল! তাই অনেকটা স্বাধীন আর অনেকটা সীমাবদ্ধ অবস্থানে থেকে গিলে খেতে হয় বিছনাকান্দির অপার সৌন্দর্যকে। পাথুরে জলে নিজেকে সঁপে দেয়া আপনাকে দেবে এক ভিন্ন প্রশান্তি, নিয়ে যাবে এক অপার্থিব জগতে।

মেঘলা দিনে বিছনাকান্দি গেলে দেখা পেতে পারেন পাহাড়ের গায়ে ভেসে থাকা মেঘমালা
সুন্দরের ছড়িয়ে থাকাটা অবশ্য বিছনাকান্দির পথে পথে। সড়কপথের দুপাশে চা বাগান, নদী, অবারিত সবুজ মাঠ আর ছোটখাটো বনাঞ্চল দৃষ্টিকে দেবে অন্যরকম সুখ। সড়কপথ ফুরিয়ে যখন নৌকায় চাপবেন, তারপরই মনে হবে- "একি! ঘরের দুয়ারে এমন জায়গাও আছে!!"

সরু নদীর দুপাশে পাথরের সাম্রাজ্য আর সবুজের গালিচা পেছনে রেখে যতোই সামনে এগোবেন, ততোই আপনার চোখের সামনে উন্মুক্ত হতে থাকবে ওপারের বিশাল সব মেঘে ঢাকা পাহাড়, যেনো কোনো শিল্পীর আঁকা বিশাল ক্যানভাস কেউ বসিয়ে দিয়েছে যত্ন করে! এভাবেই মুগ্ধ বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই নৌকা আপনাকে নামিয়ে দেবে বিছনাকান্দির শেষ অথচ কাঙ্ক্ষিত সেই সুন্দরের কেন্দ্রে। ইচ্ছে হলেই পাথুরে জল ভেঙ্গে ছুটে যেতে পারেন সে সুন্দরের দিকে আর নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারেন আপাদমস্তক, তবে ইচ্ছে হলেই ফিরতে পারবেন না হয়তো!

নৌকা করে হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি যেতে পড়বে এমন সুন্দর খাল
যাদের এখনো দুই পা ফেলিয়া দেখা হয়নি মায়াময় বিছনাকান্দি, তারা এই না ফেরার ঝুঁকিটা নিয়েই ফেলুন!
যেভাবে যাবেন:
সিলেট শহর থেকে প্রথমে পাড়ি দিতে হবে দেড়-দুই ঘন্টার সড়ক পথ, যেতে হবে হাদারপার বাজার পর্যন্ত। পথে অনেকটা জায়গায় খানাখন্দ, তাই গাড়ি না নিয়ে সবচেয়ে ভালো হয় হালকা যান ব্যবহার করলে। ১০/১২ জনের দল হলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন হচ্ছে লেগুনা। ভাড়া নেবে সারাদিনে ২০০০-২২০০ টাকা। আর শহরের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি অটোরিকশা যাবে প্রতিজনে ৮০ টাকা ভাড়ায়।

লেগুনা বা সিএনজি থেকে হাদারপার বাজারে নেমে মিনিটখানেক হাঁটলেই নদীর ঘাট, ঘাটে পাবেন ছোট-বড় নানান আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজনমতো ভাড়া করে ফেলবেন নৌযান। ভাব দেখাবেন এমন যেন হেঁটেই যেতে পারবেন। ৩/৪ ঘন্টার জন্যে ভাড়া নিবে ৮০০-১০০০ টাকা আর নৌযাত্রায় সময় লাগবে মিনিট বিশেক। ব্যস, পৌঁছে গেলেন বিছনাকান্দি।

যা করতে মানা:
১) প্রথমেই জেনে নেবেন আমাদের দেশের সীমানা কোন পর্যন্ত। নতুবা সীমানা অতিক্রম করে গুলি খেয়ে ফেলতে পারেন! সেখানে তেমন কোন সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতার নেই, তাই সাবধান বাহে! দেখে-শুনে-বুঝে পা ফেলবেন।

২) অবশ্যই সাথে খাবার প্যাকেট নেবেন না। হাদারপার বাজারে সুস্বাদু ছোলা-পেঁয়াজু-খিচুড়ির চমৎকার সব দোকান আছে। সেখান থেকে নাস্তা বা খাবারের কাজ সেরে নিতে পারেন, তাও আবার নামমাত্র মূল্যে! প্যাকেট ফেলে বিছনাকান্দিকে আবর্জনার স্তুপে পরিণত না করার স্বার্থেই এই পরামর্শ দিলাম।

৩) স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না। তাতে আখেরে আপনারই মঙ্গল হবে।

৪) পানিতে নেমে গা ভেজানোর সময় অসতর্ক থাকা যাবে না , প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এবার নিশ্চিন্তে বেরিয়ে পড়ুন বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে

ফেরার পথে দেখুন অপরূপ সূর্যাস্ত

সিলেটের বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের জন্য:

ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৪টি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেনের ভাড়া প্রকারভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে প্রায় ৭ ঘণ্টা। ট্রেনে আসতে গেলে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেসে আসাটাই সব চেয়ে ভালো। এছাড়া বাসেও আসা যাবে।

ঢাকা-সিলেট সড়কে বিভিন্ন মানের অসংখ্য বাস চলাচল করে । এর মধ্যে গ্রিন লাইন, শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক, এনা পরিবহন উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২.৩০টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা । ভাড়া ননএসি ৩৮০-৪৭০ টাকা। এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

থাকবেন কোথায়:
সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারে। সব মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিলেট ভ্রমণে আসলে ভ্রমণের আনন্দ আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে । অত্যাধুনিক মানের হোটেল রোজভিউ ছাড়াও রয়েছে হোটেল ডালাস, ফরচুন গার্ডেন, গার্ডেন ইন, পর্যটন মোটেল, হোটেল অনুরাগ, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল।

এছাড়া সিলেটে আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো ধরনের হোটেল পাবেন। এদের মধ্যে রয়েছে হোটেল আল-হেলাল, হোটেল হিল টাউন, গুলশান, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি।

শহরতলীতে রয়েছে কয়েকটি রিসোর্ট, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- খাদিম পাড়া এলাকায় অবস্থিত নাজিমগড় রিসোর্ট, এবং খাদিম চা বাগান এলাকায় অবস্থিত শুকতারা প্রকৃতি নিবাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.