নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়লানের ছবি তুলেছিলেন যিনি

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২


রোকেয়া রহমান



নিলুফার দেমির‘লাল টি-শার্ট, গাঢ় নীল রঙের শর্টস আর পায়ে কালো জুতো। শিশুটিকে সৈকতের ভেজা বালুতে উপুড় হয়ে নিথর পড়ে থাকতে দেখে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে কর্তব্যের কথা ভেবে আবেগকে একপাশে ঠেলে রেখে হাত চলে যায় ক্যামেরার শাটারে।’ কথাগুলো তুরস্কের ফটোসাংবাদিক নিলুফার দেমিরের। ২৯ বছর বয়সী এই নারী সাগরতীরে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ দেহের ছবিটি তোলেন। কয়েক দিন ধরে এই ছবিটিই সারা বিশ্বকে কাঁপিয়েছে, কাঁদিয়েছে বহু মানুষকে, বইয়ে দিয়েছে আলোচনার ঝড়। নিলুফারের তোলা এ ছবিটি প্রথমবারের মতো ইউরোপের অভিবাসী সংকটকে বিশ্ব আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে নিলুফার দেমিরের জন্ম ১৯৮৬ সালে তুরস্কের মুগলা প্রদেশের বোদরুম শহরে। তিনি কাজ করেন তুরস্কের বার্তা সংস্থা দোগান নিউজ এজেন্সিতে (ডিএইচএ)। বার্তা সংস্থাটির পক্ষে তিনি ইউরোপের শরণার্থী সংকট বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি ছবিও তুলছেন।
৩ সেপ্টেম্বর তুরস্কের ইংরেজি দৈনিক হুররিয়েত ডেইলি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিলুফার জানান, অফিস থেকে শরণার্থী সংকট কভার করার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আগের রাতে বোদরুম ছেড়ে গ্রিসের কস দ্বীপে যাওয়ার পথে ডুবে যায় শরণার্থীবোঝাই দুটি নৌকা। তারই একটিতে ছিল তিন বছরের আয়লান কুর্দি। নিলুফার ২ সেপ্টেম্বর ভোর ছয়টার দিকে আয়লানের ছবিটি তোলেন বোদরুম শহরের কাছে আকিয়ারলার সৈকতে।
নিলুফার বলেন, ‘ছবি তোলা ছাড়া আমার আর অন্য কোনো কিছু করার ছিল না। আমি সেটাই করেছি। আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ দেহের ছবি তোলার পর আমি দেখতে পাই, প্রায় ১০০ মিটার দূরে বছর পাঁচেকের আরেকটি শিশুর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। পরে জানতে পারি, সে আয়লানের ভাই গালিব। আমি খেয়াল করে দেখলাম, তাদের গায়ে কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। সমুদ্র তাদের ভাসিয়ে রাখতে পারে, এমন কোনো কিছুই ছিল না।’
আয়লানের ছবি তোলার সময়ের অনুভূতির কথাও জানান নিলুফার। তিনি বলেন, ‘আয়লানের ছবিটি যখন তুলছিলাম, তখন ভাবিনি যে এই ছবি এমনভাবে সাড়া ফেলবে। তবে আমার মাথার মধ্যে একটা চিন্তা কাজ করছিল যে এই ছবি আমি সবার কাছে পৌঁছে দেব। এ ছাড়া আর ভিন্ন কোনো কিছু ভাবিনি। আমি তাদের কষ্টকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।’
নিলুফার দেমিরের সঙ্গে উদ্ধারকারী সেনাসদস্য মেহমেত চিপলাক। ছবি: ডিএইচএগৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে আয়লান কুর্দির বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি তাঁর দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন তুরস্কে। ২ সেপ্টেম্বর তুরস্ক থেকে নৌকায় চেপে ইজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এই পরিবার। তখনই দুর্ঘটনার শিকার হন তাঁরা। এ সময় নৌকা ডুবে গেলে আবদুল্লাহর হাত ফসকে সাগরের পানিতে পড়ে যায় আয়লান ও গালিব। এ ঘটনায় তাদের মা রেহানও মারা যান।
কেন তিনি আয়লানের ছবিটি টুইটারে ছেড়েছেন, সাক্ষাৎকারে নিলুফার দেমির তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি ছবিটি তুলি, সেদিনই আমি টুইটারে ছেড়ে দিই। তুরস্কসহ বিশ্বের বড় বড় সব সংবাদমাধ্যম তাদের ওয়েবসাইটে ছবিটি শেয়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে আমি ব্যাপক সাড়া পাই। অনেকে আমাকে অভিনন্দন জানান। তাঁদের বেশির ভাগই বলেছেন, তাঁরা ছবিটি দেখে ভীষণভাবে আলোড়িত হয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য ছবিটি ছাড়ার জন্য আমার তীব্র সমালোচনা করেছেন। একজন বলেছেন, “ও তো একটি ছোট শিশু। তাকে অন্তত একটু সম্মান দেখাও।” এই কথাটা আমাকে একেবারে হতভম্ব করে দেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্মান! প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মৃত সিরীয় শিশুদের কত ছবি প্রদর্শিত হয়? লোকজন কি জানে না, সিরিয়ায় কী ঘটছে? আমার মনে হয়, তারা জানে না।
‘আমি ও আমার সহকর্মীরা প্রতিনিয়ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে লিখছি। চার বছর ধরে দেশটিতে যুদ্ধ চলছে। আমরা লিখছি সিরীয় শরণার্থীদের হতাশা নিয়ে। এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত শিশুসহ প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের নিয়ে লিখছি। নিহত হয়েছেন সিরিয়ার স্থানীয় ও বিদেশি সাংবাদিকেরা। আমরা তাঁদের কথাও বলার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি যেটা অনুভব করছি, কেউ ঠিক সেভাবে বিষয়টিতে নজর দিচ্ছে না। যুদ্ধ অবসানের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে না কেউ। মৃত এই শিশুর ছবি দেখে যদি লোকজনের টনক নড়ে, এই ভেবে ছবিটি দিয়েছি।’
হাজার হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশী বোদরুমে ভিড় জমায়। কারণ, এখান থেকে গ্রিসের কস দ্বীপটি মাত্র চার মাইল দূরে। নিলুফার বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে এই অঞ্চলে আমি অভিবাসন-প্রত্যাশীদের বহু ঘটনা দেখেছি। বহু মৃত্যু দেখেছি। তাদের বহু ছবি তুলেছি। এগুলো আমার জন্য খুবই দুঃখজনক ও যন্ত্রণাদায়ক। আমি আশা করব, আজকের পর এটির পরিবর্তন হবে। হৃদয়বিদারক এই ছবি দেখার পর অনেকের টনক নড়বে। জেগে উঠবে মানবতা।’


সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন, হাবারলার ডটকম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.