নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।
হযরত শাহজালাল (র: ) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সঙ্গী আউলিয়াদের নিয়ে প্রায় বিনা যুদ্ধে সিলেট জয় করেন। জালিম রাজা গৌড় গোবিন্দ ছলচাতুরীর আশ্রয় নিলেও শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যান। কথিত আছে শাহজালাল (র: )-এর সঙ্গে অনীত আরবের একমুঠো মাটির সাথে সিলেটের মাটির সাদৃশ্য পেয়ে তিনি এখানেই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন এবং এখানেই ১৩৪০ (৭৪০ হিজরিতে) খ্রিস্টাব্দে ৬৯ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। হযরত শাহজালাল (র: ) যখন সিলেট আসেন তখন বাংলার সুলতান ছিলেন শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ (১৩০১-১৩২২)| সে সময়ে তরফ, ইটা, পঞ্চখন্ড, ও প্রতাপগড় ছিল ত্রিপুরা মহারাজার অধীনস্ত ছোট ছোট সামন্ত রাজাদের অধীনে। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখনো পানির নিচে। জৈন্তা তখন হিন্দু রাজার শাসনাধীন। ঐ সব এলাকায় বাদে হযরত শাহজালাল (র: ) এর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়া বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তাঁরা এ মাঠিকে আপন করে নিয়েছিলেন মনে প্রানে। মানবিক উদারতা ছিল তাদের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য। হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়া দোষণীয় নয়, জালিম হওয়া দোষনীয় এই মনোভাবই ছিল দরবেশ ও মুসলিম শাসকদের। তাই হিন্দু মুসলিম সকলের নিকট সমান শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন হযরত শাহজালাল (র| তখন চিহ্নিত অঞ্চলের শাসনভার সেনাপতি সিকন্দর গাজীর উপর ন্যস্ত হয়। সিপাহ সালার নাসির উদ্দিন যান তরফ অঞ্চলে। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন ছিল। অনুমান করা যায় ঐ সময়ে সিলেট আসাম অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটে। হযরত শাহজালাল যখন সিলেট ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করলেন তখন তাঁর আধ্যাত্নিক শাক্তিতে সবাই মুগ্ধ হন এবং তাঁরই নামানুসারে ও জেলার নাম হয় জালালাবাদ।
সিলেট ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসনাধীনে আসে। পাঠান বীর খাজা উসমান (১৫৭১-১৬১২) মোগল বাহিনীর মোকাবেলা করেন প্রবল বিক্রমে। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার গ্রামে ছিল তাঁর রাজধানী। এর ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে দৌলম্ভাপুর নামক স্থানে সংঘঠিত যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ দেন খাজা উসমান। উসমানের পতনের পর পাঠান শক্তির পরাজয় ঘটে এবং মোগল প্রভাব বিস্তার লাভ করে। ১৬১২ থেকে ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোগলরা পর পর ৩০ জন ফৌজদার নিযুক্ত করে সিলেট শাসন করেন। ১৭৬৫ খৃস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে বাংলার দেওয়ানি আসার পরও সিলেট ফৌজদারদের শাসনে ছিল। ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে সুপারভাইজার হিসাবে সিলেটে নিযুক্ত কোম্পিনীর প্রথম প্রতিনিধির নাম সামনার। তারপর কালেক্টর হিসাবে নিয়োগ পান উইলিয়াম মেকপীস থেকার। ১৭৭২-১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ সময়ে তিনি বর্তমান ডিসির বাংলার স্থানে এবং এম.সি কলেজ টিলায় যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বাসগৃহ নির্মাণ করেন। এরপর উল্লেখযোগ্য কালেক্টর হলেন রবার্ট লিন্ডসে। ১৭৭৮-১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১১ বছর তিনি সিলেট ছিলেন। তাঁর সময়ে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে সৈয়দ হ্দী ও সৈয়দ মেহদী ইংরেজ বিরোধীতায় শাহাদাত বরণ করেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটকে আসাম প্রদেশের সাথে যুক্ত করা হয়। এর আগে সিলেট ঢাকা ডিভিশনের অঙ্গ ছিল।
১৭৭৬ খৃস্টাব্দে সিলেটকে চারটি সাব ডিভিশনে বিভক্তির ঘোষনা দেয়া হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জ, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে করিমগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সাব ডিভিশন খোলা হয়। সদর সাব ডিভিশন আয়তনে বড় হওয়াতে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা মৌলভীবাজার সাব ডিভিশন চালু হয়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশ গঠিত হলে সিলেট আসাম থেকে বেরিয়ে এসে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের সাথে যুক্ত থাকে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে আসামভুক্তির সময় সিলেটবাসী এতে আপত্তি জানায়নি। কংগ্রেসী হিন্দু নেতৃবৃন্দ সিলেট বাংলার সাথে আন্দোলন করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত সিলেট ছিল প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা।
পাকিস্তানী আন্দোলনের সময় মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের স্বপ্নে সিলেটের মুসলমান সমাজ সম্মুখ হয়ে ওঠে। ভারত বিভক্তির এই ক্রান্তিলয়ে আসাম প্রদেশভুক্ত সিলেট জমিয়ত উলামার একটি দল পাকিস্তানভুক্তির তীব্র বিরোধী ছিল। আসামে তখন কংগ্রেস সরকার। তাঁই সিলেটবাসীর মতামত যাচাইয়ের জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ ও ৭ জুলাই যথাক্রমে সোম ও মঙ্গলবার গণভোটের তারিখ নির্ধারিত হয়। পাকিস্তানের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য সিলেটের সর্বত্র তোড়জোড় শুরু হয়। অপরপক্ষেও চলে জোর তৎপরতা। জমজমাট প্রচারণা। পাকিস্তান পক্ষের প্রতীক ‘কুড়াল’ অপরপক্ষের প্রতীক ‘ঘর’| শান্তিপূর্ণভাবে দুই দিনে ভোট পর্ব শেষ হল। দেখা গেল পাকিস্তানের পক্ষে ২,৩৯,৬২৯ এবং বিপক্ষে পড়েছে ১,৮৪,০৪১ ভোট। সিলেট সদর সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং করিমগঞ্জ ও কাছাড় জেলায় মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ মহকুমার বিস্তির্ণ জনপদের সে কী আনন্দ উল্লাস, কিন্তু এই আনন্দের মধ্যে সীমানা কমিশনার রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী করিমগঞ্জ মহকুমার পাথারকান্দি, রাজবাড়ী বদরপুর ও করিমগঞ্জ থানার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তান থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। গণভোট পূর্ববর্তী সিলেটের আয়তন ছিল ৮,৭৫৩ বর্গকিলোমিটার। সাড়ে তিন থানা ভারতভুক্ত হওয়াতে ৭,৬৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে সিলেট পাকিস্তানভুক্ত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারীতে সিলেটের লোকসংখ্যা ছিল ৩০,৫৯,৩৬৭ জন এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী এর সংখ্যা ছিল ৩৪,৮৯,৫৮৯ জন। স্বাধীনতার পর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলাকে চারটি স্বতন্ত্র জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। সিলেটবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে চারটি জেলা নিয়ে সিলেটকে বিভাগ হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয়। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট বিভাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
তথ্যসূত্র: সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইট থেকে
©somewhere in net ltd.