নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা

আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।

ছোট কাগজ কথিকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান: মায়াময় সবুজের হাতছানি

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

রাস্তার দুইপাশে ঘন সবুজ বন। বনের ভেতর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। মাঝে মধ্যে এর সাথে তাল মেলাচ্ছে সুরেলা পাখির কন্ঠ। আশপাশে জনমানবের অস্তিত্ব খুব একটা চোখে পড়ে না। দুইপাশের টিলার গাছপালার ডাল নুয়ে পড়েছে রাস্তার উপর। দূর থেকে মনে হতে পারে এটা পায়ে চলার কোন রাস্তা নয়, সবুজের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার মায়াময় সুড়ঙ্গপথ। সবুজের ছাউনির এই রাস্তা বয়ে গেছে সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে। খাদিম নগর জাতীয় উদ্যানের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে শুধু এই পথ ধরে হাঁটলেই চলবে না। আপনাকে হতে হবে আরেকটু সাহসী, পরিশ্রমী। সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে হলে আপনাকে ঢুকতে হবে উদ্যানের ভেতরে। এজন্য আপনাকে ব্যবহার করতে হবে উদ্যানের নির্ধারিত ওয়াকিং ট্রেইল। পায়ে হেঁটে টিলার উপরে ওঠা ও এখানকার জীববৈচিত্র্য দেখার জন্য রয়েছে দুইটি ওয়াকিং ট্রেইল। একটি ৪৫ মিনিটের, অপরটি ২ ঘন্টার। ওয়াকিং ট্রেইল দিয়ে হাঁটা শুরু করতে গিয়ে আপনার গা শিহরে ওঠতেই পারে। ঘন সবুজ বনের ভেতর মাত্র এক-দেড় হাত প্রশস্ত আঁকা-বাঁকা রাস্তা। তাও আবার খুব একটা মসৃণ নয়। রাস্তার মাঝে মধ্যে চোখে পড়বে স্বচ্ছ পানির ছড়া। কোথাও কোথাও এই ছড়া দিয়ে হেঁটে যেতে হবে সামনের দিকে। টিলার উপর উঠতে উঠতে আপনি যখন পরিশ্রান্ত, তখন এই ছড়ার শীতল পানিতে পা ভিজিয়ে আপনি সঞ্চয় করে নিতে পারেন নতুন শক্তি। ছড়ার পানির শীতলতা আপনাকে চাঙা করে তুলবে সামনের পথ পাড়ি দিতে। খাদিম নগর উদ্যানের ভেতর হাটার সময় হঠাৎ যদি সামনে পড়ে যায় কোন বন্য প্রানী তবে তাদেরকে উত্যক্ত করবেন না। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে বন্যপ্রাণীগুলো তাদের মতো চলাফেরা করার সুযোগ পাবে। দূর থেকে আপনিও উপভোগ করতে পারবেন তাদের জীবনধারা। উদ্যানের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে পেছনের গাছ থেকে যদি কেউ ঢিল ছুঁড়ে বা হঠাৎ যদি গাছের মাথা নড়ে চড়ে ওঠে ভয় পাবেন না। বুঝে নেবেন এটা বানরের কাজ। আপনার সাহসিকতার পরিচয় নিতে এটা তাদের একটি পরীক্ষামাত্র। উদ্যানের ভেতর সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে হলে আপনি সাহায্য নিতে পারেন স্থানীয় গাইডদের। উদ্যানের ওয়াকিং ট্রেইলের আশপাশে খোঁজ করলেই আপনি পেয়ে যাবেন স্থানীয় আদিবাসী (চা শ্রমিক) গাইডদের। এরা আপনাকে বনের ভেতরের বিভিন্ন গাছপালা ও পশু পাখির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। ওয়াকিং ট্রেইল থেকে বিচ্যুত হয়ে আপনি যাতে বনের ভেতর সত্যিকারের হারিয়ে না যান সেজন্য তারা আপনাকে সঠিক পথেই নিয়ে যাবে। গাইডদের নির্ধারিত কোন ফি নেই। তবে বনের ভেতর যাত্রা শুরুর আগেই আপনি গাইডের সাথে তার সম্মানির বিষয়টি আলাপ করে নিন। মনে রাখবেন ক্ষণিকের পরিচিত এই গাইডের সাথে আপনি সম্পর্ক জমিয়ে তুলতে পারলে আপনার অ্যাডভেঞ্চার অনেক বেশি আনন্দদায়ক হবে। উদ্যানের ভেতর বেড়ানোর সময় শিশুদেরকে সাথে না নেওয়াই ভালো। টিলার উপর ওয়াকিং ট্রেইল দিয়ে হাঁটা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে। বনের ভেতর প্রবেশের আগে সারা শরীরে একটু ভালো করে লোশন মেখে নিন। লোশন আপনাকে পিঁপড়া বা পোকার কামড় থেকে রক্ষা করবে। চোখের রক্ষায় ব্যবহার করতে পারেন সানগ্লাস। সাথে খাবার পানি নিতে ভুলবেন না। বনের ভেতর খালি পানির বোতল বা কোন রকম ময়লা না ফেলাই উত্তম। বনের ভেতর মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে গান না বাজানো ভালো। এতে বন্যপ্রাণীরা ভয় পেতে পারে। হাঁটতে হাঁটতে আদিবাসী গ্রামে পৌঁছলে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। আপনার দিকেও তারা বাড়িয়ে দেবে সহযোগিতার হাত। উদ্যানের ভেতর আপনি দেখা পেতে পারেন ভাল্লুক, বানর, হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, শিয়াল, বনবিড়াল, বেজি, কাঠবিড়ালি, খরগোস, মেছোবাঘ, লজ্জাবতি বানর, অজগর, গোখরা, দাড়াইশ, উলুবুড়া, চন্দ্রবুড়াসহ নানা জাতের বন্য প্রাণী। পাখিদের মধ্যে দেখা মিলতে পারে দোয়েল, ময়না, শ্যামা, কাক, কোকিল, টিয়া, কাঠঠোকরা, মাছরাঙা, চিল, ঘুঘু, বক, টুনটুনি, চড়–ই, বুলবুলি, বনমোরগ, মথুরা, শালিক ইত্যাদি। খাদিমনগর উদ্যানে ঝোঁপ-ঝাড়ের মাখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মূল্যবান বৃক্ষরাজি। এর মধ্যে রয়েছে সেগুন, ঢাকি জাম, গর্জন, চাম্পা, চিকরাশি, চাপালিশ, মেহগনি, শিমুল, চন্দন, জারুল, আম, জামা, কাউ, লটকন, বন বরই, জাওয়া, কাইমূলা, পিতরাজ, বট, আমলকি, হরতকি, বহেড়া, মান্দা, পারুয়া, মিনজিরি, অর্জুন, একাশিয়া, বিভিন্ন জাতের বাঁশ, বেত ইত্যাদি। খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে গেলে আপনি যে শুধু সবুজের ভেতর বন্য প্রাণীদের ক্রীড়াশৈলী দেখবেন তা নয়। উদ্যানে পৌঁছার আগেই আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে টিলার ভাঁজে ভাঁজে সাজানো চা বাগান দেখে। কোমরে শিশু সন্তানকে আর পিঠে ঝুড়ি বেঁধে নারী শ্রমিকদের চা পাতা তোলার দৃশ্য আপনাকে মোহিত করবে। উদ্যানের চারপাশে রয়েছে ৬টি চা বাগান। পূর্বে ছড়াগাঙ ও হাবিবনগর চা বাগান, পশ্চিমে বুরজান, কালাগুল চা বাগান, উত্তরে গুলনী চা বাগান আর দক্ষিণে খাদিম চা বাগান। উদ্যানে পৌঁছার আগেই আপনার মন চাইবে চা আর রাবার বাগানে হারিয়ে যেতে। মূল পাকা রাস্তা (সিলেট-তামাবিল সড়ক) থেকে উদ্যানের পথে যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন খাদিম ও বুরজান বাগানের চা ফ্যাক্টরি, চা শ্রমিকদের মাটির তৈরি ঘর। এদের সাথে খাতির জমিয়ে নিতে পারলে জানতে পারবেন তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সম্পর্কে। শুধুমাত্র মাটি দিয়ে তৈরি চা শ্রমিকদের ঘর দেখে আপনি ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারবেন না। তবে ছবি তোলার আগে বাড়ির মালিকের অনুমতি নিয়ে নিন। খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের অবস্থান সিলেট নগরী থেকে প্রায় ১১-১২ কিলোমিটার পূর্বে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে। এর আয়তন ১৬৭৬ দশমিক ৭৩ একর। এতে রয়েছে ২১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির উভয়চর, ৯ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৮ প্রজাতির পাখি ও ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এই উদ্যান রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট বনবিভাগ। এখানে তাদের একটি বিট অফিসও রয়েছে। যেভাবে যাবেন : সিলেটে পৌঁছে আপনি খাদিম নগর উদ্যানে যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাস বা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন। সিলেট নগরী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বে খাদিম চৌমুহনী যাওয়ার পর ডানদিকের ছোট পাকা রাস্তা ধরে আপনাকে সামনে এগুতে হবে। পিচ, ইট বিছানো ও কাঁচা রাস্তা মিলিয়ে আপনাকে আরো ৩ কিলোমিটার ভেতরে যেতে হবে উদ্যানে পৌঁছতে হলে। মাইক্রোবাসে যাতায়াত খরচ পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা, আর অটোরিকশার ভাড়া হবে ৪০০-৫০০ টাকা। তবে শিক্ষাসফরে আসা শিক্ষার্থীদের বাস না নিয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ উদ্যানের সরু কাচা রাস্তা দিয়ে বাস নাও যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে পায়ে হেঁটেই বাকি পথ পেরুতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.