নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সংবাদকর্মী, সমাজসেবক এবং প্রযুক্তিবিদ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, এবং সমাজের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখে থাকি।
বাংলার রূপ চিরকাল ঐশ্বর্যময়। বাংলার প্রতি প্রান্তঘেরা সবুজ-শ্যামল মিলন যেন প্রকৃতির রূপের এক বিশাল ক্যানভাস। কোথাও বিস্তৃত ফসলের মাঠ, কোথাও সবুজে ঘেরা পাহাড়, বেয়ে চলা নদী, ছায়া সুনিবিড় বন আর একপ্রান্তে বিশাল সমুদ্র মিলে অপরূপ বাংলা। অপরূপ এই বাংলার রূপে আরো গহনা পরিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন। সিলেট সবুজের রানী। সবুজে ঘেরা সিলেটের পূর্বপ্রান্তীয় নগরকেন্দ্রিক টিলাগড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজ যা এমসি কলেজ নামেই বেশি পরিচিত। সিলেটের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রাচীন সিলেটের শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশচন্দ্র রায় তাঁর প্রমাতামহ মুরারীচাঁদের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কলেজটি পূর্বের জায়গা (রাজা জিসি হাইস্কুল সংলগ্ন) থেকে টিলাগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যবেষ্টিত প্রায় ১২৪ একর জমির উপর স্থানান্তরিত হয়। যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত রয়েছে এই কলেজটি। দেশের অনেক নামী ব্যক্তিত্ব এ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। অতিথি হয়ে এ কলেজ ঘুরে গেছেন বিশ্ববরেণ্য অনেকজন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনিও কলেজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় গাছ-গাছালির ছায়া, পেছনে ছোট ছোট পাহাড়ঘেরা কলেজটির প্রাকৃতিক দৃশ্যও অত্যন্ত মনোরম। পূরনো আদলের কলেজ ভবনগুলো কলেজটির ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটকরা সিলেট আসলে এই কলেজটিও ঘুরে যেতে চান। কলেজে গেট থেকে শুরু করে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ ধরে যতটুকু আগানো যায়, এর দু’পাশ জুড়ে সবুজের হাতছানি। সেই সাথে পুরনো ধাঁচের ভবনগুলোও দৃষ্টি টানে। বর্তমান সময়ে এগুলোকে অনেক পুরোনো মনে হলেও প্রত্মত্বত্তের গবেষণা আর এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভবনগুলো অমূল্য। বিশাল আয়তনের এই কলেজ ঘিরে বেড়ে ওঠেছে নানা রকমের বনজ, ভেষজ, ঔষধী বৃক্ষ। অধ্যক্ষের বাংলোর চারপাশ ঘিরে উঁচু-নিচু টিলা ঘিরে রয়েছে হরেক রকম গাছ। এসব উঁচু টিলা থেকে আশপাশের দৃশ্যগুলো অবলোকন করা যায় চমৎকারভাবে। স্পোর্টস রুমের পেছন দিকটায় রয়েছে উঁচু সবুজ ঘাসের খোলা জায়গা। অধ্যক্ষের বাংলোর ঠিক বিপরীত দিকেই রয়েছে বেশ উঁচু একটি টিলা। এই টিলাটি প্রাচীন আমলের ঐতিহ্য বহন করছে। কলেজের মধ্যদিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ছোট একটি খাল। কলেজ গেট থেকে বায়ে উঁচু টিলাসম জায়গায় রয়েছে কলেজ দপ্তর আর অধ্যক্ষের কার্যালয়। অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে রয়েছে মোটামুটি আকৃতির পুরনো ধাঁচের একটি ঘন্টা, যেটি সময়ের জানান দিত। কলেজের একপ্রান্তে অবস্থিত উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রক্ষণাবেক্ষনের আওতায় রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। আকারে ছোট হলেও এটি সিলেটের একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেন। বর্ষাকালে এমসি কলেজ পুরো সবুজময় হয়ে ওঠে। এসময় এর প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার আর আরো নান্দনিক হয়। প্রায় দিঘী আকৃতির পুকুরটিও এই কলেজে বেড়াতে আসা লোকজনদের অন্যতম আকর্ষন। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের আড্ডায় পুকুরপাড় বেশ পছন্দের জায়গা। বিকেলবেলা বেড়াতে আসা লোকজনেও প্রায়সময় মূখরিত থাকে পুকুর পাড়টি। বিশেষ করে বলতে বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে তিল ধারণের ঠাঁই মেলেনা কলেজ প্রাঙ্গণে। পুরনো-নতুন শিক্ষার্থী থেকে শুরু সিলেটের সকল শ্রেণীর মানুষ পহেলা বৈশাখে সিলেটের সবচাইতে বৃহৎ এই মিলনমেলায় জড়ো হন। এটা শুধুই এমসি কলেজের বিশালতা আর প্রকৃতির টানে। বসন্তের প্রথম দিনেও কলেজ প্রাঙ্গণ মূখরিত থাকে যুগলদের পদচারণায়। কলেজ ক্যান্টিনটি যুগোপযোগী চাহিদা না মেটালেও প্রবীন শিক্ষার্থীরা আজও এর প্রতি নস্টালজিক। কলা ভবনের পেছন দিকের জারুলতলা- গ্রীষ্মের দুপুরের আড্ডা কিংবা কলেজকেন্দ্রীক বিভিন্ন সংগঠনের সভার পছন্দের জায়গা। বেশ পুরনো হয়ে যাওয়া টেনিস কোর্টে টেনিস খেলা না হলেও এটি ব্রিটিশ ক্রীড়া মনোভাবের পরিচায়ক। কলেজের বাইরে আলাদা ছাত্রাবাসের বাহ্যিক দৃশ্যও বেশ চমৎকার । ছাত্রাবাসের ঠিক সম্মুখেই বিশাল খেলার মাঠ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য মিলিয়ে এমসি কলেজ সিলেটে আসা পর্যটকদের জন্য আকর্ষনের বিষয় হতে পারে। তবে এর জন্য এখনই প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এর ঐতিহ্য রক্ষা আর সংস্কার কাজ। একশ বছরের প্রাচীন এমসি কলেজ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিলেট অঞ্চলের পথিকৃত। সব মিলিয়ে প্রাচীন এমসি কলেজকে বলা যায় সিলেটের গৌরব ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ।
©somewhere in net ltd.