নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
হারিয়ে যাওয়া এক পেশা নিদ্রা জাগানিয়া বা নকার আপার্স (Knocker Ups/Uppers)
Knocker Ups/Uppers শব্দের অর্থ ঘুম জাগানিয়া, অর্থাৎ যে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে তাকে Knocker Ups/Uppers বলে। তাহলে আমরা বলতেই পারি- পরিবারের যে কেউই তো আমাদের, আমাদের সন্তানদের কিম্বা ভাইবোনদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে- তাকেও কি Knocker Ups/Uppers বলবো? উত্তর হ্যা বা না দুটোই হতে পারে। তবে Knocker Ups/Uppers একটা পেশার নাম।
যখন এলার্ম ঘড়ি আবিস্কার হয় নি কিংবা এলার্ম ঘড়ি আবিষ্কার হলেও সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য ছিল না, তখন সাধারণ খেটে খাওয়া অফিস কিংবা কল কারখানায় কাজ করা লোকদের সময় মতো ঘুম ভাঙাতো বেলা অবেলায়। তাদের ঘুম থেকে তুলে দিত "নকার আপার্স" রা। এরা ছিল ভাড়া/ বেতনভোগী জ্যান্ত এলার্ম। মানুষের দরজায় ঠক ঠক ঠক শব্দ করে- মৃদুস্বরে বলতো- "উঠে পরুন সাহেব, ভোর হয়ে গেছে...অফিসে যাওয়ার সময় হয়েছে"- এটাই ছিল তাদের পেশা!
ঊনবিংশ শতক ও বিংশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত ইংল্যান্ডে আর আয়ারল্যান্ডে এদের দেখা যেত। শিল্প বিপ্লবের পর যখন কল কারখানা তৈরি হল তখন মানুষেরও সকাল সকাল কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল। ফলে ঘুম থেকে সময় মতো উঠতে হত। ইংল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়ায় সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর একটু পানাহার করে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমালে খুব ভোরে সহজে ঘুম ভাঙার কথা নয় কিংবা ভাঙতও না। ফলে কাজে যেতে দেরি হয়ে যেতো, ফলে মাইনে কাটা যেতো কিংবা চাকরিও চলে যেত! তখনই সৃষ্টি হল নকার আপার্স পেশার। এদের বেশি দেখা যেত উত্তর ইংল্যান্ডে শিল্পাঞ্চলে যেখানে মানুষ কল কারখানায় শিফটে কাজ করত। সাধারণতঃ বয়স্ক লোকজন, ভারী কাজের ক্ষমতা নেই কিন্তু রোজগারের দরকার এমন মানুষ ই Knocker Ups/Uppers পেশায় নাম লেখাতো। ভোর হলেই এরা লোকজনের ঘুম ভাঙাতে বেরিয়ে পড়ত। হাতে থাকত লগির মত লম্বা লাঠি বা বাঁশির মত একটা পাইপ বা নরম হাতুড়ি। তখন বেশিরভাগ লোক দোতলায় ঘুমাতো তাই এরা সেই লম্বা লাঠি দিয়ে সাহেবদের শোবার ঘরের জানলায় ঠক ঠক করে ৩/৪ বার আওয়াজ করত। সাহেবের ঘুম ভেঙেছে নিশ্চিত হয়েই পরবর্তী বাড়ির দিকে এগোতো। কেউ কেউ আবার বাঁশির মত ফাঁপা পাইপে মটর দানা ঢুকিয়ে তাক করে কাঁচের জানলায় ছুড়ত ফলে ঘুম ভাঙতো। আবার কেউ নরম হাতুড়ি দিয়ে সদর দরজায় কয়েকবার টক টক করে আওয়াজ তুলে ঘুম ভাঙাতো। এরা কখনও খুব জোরে শব্দ করত না বা চেঁচাত না, কারণ, আশেপাশের লোকের ঘুম নষ্ট হলে মাইনের টাকা কাটা যেতো! চুপিচুপি শুধু নিজ নিজ খদ্দেরের ঘুম ভাঙাতে আস্তে আস্তে নক করতে হতো। ভোর পাঁচ থেকে ছটার মধ্যেই এদের কাজ সারতে হতো।
একজন নকার আপার কর্মি গড়ে ৫০ থেকে ১০০ জনের ঘুম ভাঙাত। কেউ কেউ আবার ঘুম ভাঙানোর জন্য রেগেও যেত, সুখনিদ্রা ভাঙানোর জন্য রাগটাও গিয়ে পড়ত এদের ওপর, টুকটাক খিস্তি খেউড়ও নসিবে জুটতো।
এরা অন্যের ঘুম ভাঙাত কিন্তু এদের ঘুম ভাঙাত কে? এরা রাতে তেমন একটা ঘুমতই না! সারা রাত জেগে ভোরে খদ্দেরদের জাগিয়ে তারপর নিজে শুতে যেত- অনেকটা আমাদের দেশের বাজার, বাসা বাড়ি এলাকার নাইট গার্ডদের মতো। দিনভর ঘুমিয়ে বিকেলে আড়মোড়া ভাঙত...
Knocker Ups/Uppers ঘুম জাগানিয়ার কাজ করে ১৮৭০ সালে সপ্তাহে জনপ্রতি ছয় পেনি করে আয করতো। তখন অনেক পুলিশ সদস্যও অতিরিক্ত রোজগারের জন্য এই কাজ করত। যেসব পুলিশের রাত্রিকালীন ডিউটি থাকত তারা রাতের ডিউটি শেষে খুব ভোরে লোকদের জাগিয়ে দিয়ে বাড়তি কিছু রোজগার করত। আধুনিক যুগে বাজারে সস্তা এলার্ম ঘড়ি এলে এদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।
সূত্র: 'The fun is knowing the unknown'- ভাষান্তর- আমার।
২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ইনসোমেনিয়া প্যাশেন্ট- এমন একটা চাকরি পেলে মন্দ হতো না
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৯
মন থেকে বলি বলেছেন: জানা হলো। ধন্যবাদ আপনাকে
২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪
জটিল ভাই বলেছেন:
দারুণ তথ্য!
২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
ঢাকার লোক বলেছেন: একটা নতুন কিছু জানলাম, সময়ের সাথে অনেক পেশাই অবলুপ্ত হয়ে গেছে !
আমাদের দেশে কিছুদিন আগেও রোজার সময় সেহরিতে সময় মত উঠার জন্য পাড়ায় পাড়ায় ছেলেপেলেরা দল বেঁধে এলাকাবাসীকে ঘুম থেকে জাগাতে দেখা যেত, যদিও তা ছিল নেহায়েতই ভলান্টারী, টাকা কামাইয়ের জন্য না, আখেরাতে সওয়াবের আশায় ! অ্যালার্ম ঘড়ি বা মোবাইল ফোনের কল্যাণে আজকাল আর তেমন লাগেনা !
২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৪৩
জুল ভার্ন বলেছেন: আগে সেহরির সময় কাসিদা গেয়ে ঘুম ভাংগাতো অত্যন্ত তমিজেত সাথে। সেহরির সময় এখনো কোথাও কোথাও হৈচৈ করে ঘুম ভাংগানো হয়, তবে এরা এলাকার বখাটে টাউট শ্রেণীর লোক। ১৫ রমজানের পরই শুরু করে চাঁদাবাজি।
৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১:৩৯
আজব লিংকন বলেছেন: আমাদের দেশে রমজান মাসে রাত্রিবেলা কাফেলা বের হয়। সেহরির সময় হয়েছে এলাকাবাসী জাগুন বইল্যা চিল্লান মারে।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: এটাকে বলে কাসিদা, যা একসময় এলাকা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীরা করতেন অত্যন্ত বিনয়ের সাথে। গভীর রাতে তাদের মৃদু মোলায়েম কণ্ঠে গাওয়া কাসিদা শুনতে ভালোই লাগতো। এখন পাড়াভিত্তিক কিছু বখাটে চিতকার চেচামেচি করে ১০/১৫ রমজান পর্যন্ত। তারপর ওদের সমিতির নামে বাসা বাড়ি প্রতি ৫০০/১০০০ টাকার একটা বিল ধরিয়ে দিয়ে জোর জবরদস্তি টাকা আদায় করে।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: অলস ব্যক্তিদের জন্য আকর্ষনীয় প্রফেশন৷