নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়লাখনি আর হীরা একটি মিথ....

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৯

কয়লাখনি আর হীরা (একটি মিথ)

হীরার নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে কোহিনুরের ছবি। হীরক রাজার দেশে সিনেমাটাও উঁকি মারতে থাকে। পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় রত্ন হল হীরা। কত যুদ্ধ, কত রক্তক্ষয়, প্রতিহিংসার পিছনে আছে এই হীরার প্রতি মানুষের লোভ। বহুকাল থেকেই অতুলনীয় বৈভবের প্রতীক হল হীরা। ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেকেই শুনে এসেছি যে কয়লা খনি থেকেই হীরা পাওয়া যায়। যেহেতু কয়লা এবং হীরা এই দুটিরই মৌলিক উপাদান হল কার্বন কণা (Carbon atom), তাই অনেকদিন ধরেই মানুষের ধারণা, কয়লা খনিতে হীরা পাওয়া যায়। তাপবিদ্যুৎ ও জ্বালানি হিসেবে কয়লার বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের জন্য কয়লাকে কালো হীরাও বলেন অনেকে। তবে কি সত্যি এই দুইয়ের উৎপত্তি ও এই পৃথিবীর বুকে এদের খুঁজে পাওয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?

প্রথমেই আসি কয়লা কীভাবে তৈরি হয় সেই প্রশ্নে। কোটি কোটি বছর আগে, যে সময়টাকে বলা হয়ে থাকে পারমিয়ান-কার্বনিফেরাস যুগ, প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগের কথা বলছি (১ মিলিয়ন মানে ১,০০০,০০০ বছর) পৃথিবী ছিল বড় বড় গাছে ভরা। প্রবল বৃষ্টি আর বন্যা প্রায়শই হত। সেইসব ভয়াবহ বন্যায় বড় বড় গাছ এর ধ্বংসাবশেষ জলের সাথে বয়ে গিয়ে পৃথিবীর বুকের কোনো নিচু জায়গায় গিয়ে জমা হত, আর তারপরে চাপা পড়ত পলির নিচে। বছরের পর বছর ওপরের ক্রমবর্ধমান পলির চাপে ও তাপমাত্রা (Pressure and Temperature) বেড়ে চলার কারণে ধীরে ধীরে সেই গাছপালার মধ্যেকার কার্বন কণা কয়লায় পরিণত হয়। কয়লা মোটামুটি ভূপৃষ্ঠ (Earthcrust) থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে চাপা পড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

তবে পৃথিবীতে পাওয়া ব্যবসায়িক পরিমাণের হীরা কিন্তু তৈরি হয় আরও অনেক অনেক গভীরে। এইবার আসব হীরে তৈরির আলোচনায়।
প্রাকৃতিক হীরে মোটামুটি চার রকম ভাবে তৈরি হয়। সেগুলি হল-

(১) পৃথিবীর ম্যান্টেলে তৈরি হওয়া হীরা-
ব্যবসায়িক কারণে যেসব হীরে খনন করা হয়, তা তৈরি হয় পৃথিবীর অনেক গভীরে যাকে ম্যান্টেল বলা হয়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বা তারও গভীরে এবং তাপমাত্রা প্রায় ১০৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ। পৃথিবীর ভিতরে, পৃথিবী তৈরি হওয়ার সময় যে কার্বন আটকা পড়ে যায়, সেই কার্বনই হল এই হীরার আসল উৎস। পৃথিবীর ম্যান্টেলে এই প্রবল চাপ ও অত্যধিক তাপমাত্রায় ঐ আটকে পড়া কার্বন, স্ফটিকে(Crystal) পরিণত হয়ে হীরা হিসেবে জমা হয়। এই জায়গাটিকে “ হীরা স্থিতিশীল অঞ্চল” (Diamond Stability Zone) বলে। এই অঞ্চলের নিচ থেকে যখন তরল লাভা উঠে এসে, অগ্ন্যুৎপাত ঘটায় পৃথিবীর বুকে, তখন ঐ লাভার সাথে হীরাও ওপরে চলে আসে এবং পৃথিবীর ওপরের স্তরের নিচে কোথাও জমা হয়। এই বিশেষ ধরনের লাভা কিম্বারলাইট (Kimberlite) অথবা লাম্প্রোআইট (Lamproite rock) নামে পরিচিত। এই লাভা, এক পাইপ আকার তৈরি করে এবং খোলামুখ বা ভূগর্ভস্থ খনন করে হীরা সংগ্রহ করা হয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে কয়লার কোথাও যোগাযোগ নেই। তবে এই লাভা পাইপ যদি ওপরে ওঠার সময় কোনও কয়লার স্তরকে ভেদ করে, তখন কয়লার মধ্যে এই লাভা পাওয়া যাবে ও তাতে হীরা মিলতে পারে। তবে এই ধরনের লাভা উদ্গীরন খুবই বিরল।

(২) সাবডাকসন এলাকায় তৈরি হওয়া হীরা-
পৃথিবীর ওপরের স্তরে দুধের সরের মত ভেসে বেড়ায় পাথুরে এক স্তর, যাকে প্লেট (Plate) বলে। এইরকম দুটি প্লেটের ধাক্কা লাগার জায়গায় একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের নিচে ঢুকে পৃথিবীর গভীরে ঢুকে যায়। এই এলাকাটিকে সাবডাকসন এলাকা (Subduction Zone) বলে। ঢুকতে ঢুকতে প্রায় ৮০-১০০ কিলোমিটার গভীরতায় ও প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খুবই ছোট ছোট হীরে তৈরি হয় যদি প্লেটের স্তরে চুনা পাথর, মার্বেল বা ডলোমাইট জাতীয় পাথর থাকে যার মধ্যে কার্বন থাকে ভরপুর। তবে এই হীরা ব্যবসায়িক নয় একদম। ঐ গভীরতায় প্লেট গলে গেলে, সেই গলিত তরলের সাথে ছোট ছোট হীরে ওপরের দিকে উঠে আসে।
যদি কয়লার কোনও স্তর সাবডাকসন অঞ্চলে ঢুকে যায় তাহলে এই পদ্ধতিতে হীরা তৈরি হওয়ার একটা সুযোগ থাকে তবে ভূতাত্ত্বিক নথিতে এই রকম কোনও উদাহরণ নেই।

(৩) উল্কাপাতের ফলে তৈরি হওয়া হীরা-
বছরের পর বছর বিভিন্ন সময়ে নানান আকারের উল্কাপাত এর আঘাত সয়েছে আমাদের পৃথিবী। যখন একটি উল্কাখণ্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরে তখন অত্যধিক তাপ ও চাপের সৃষ্টি হয়। আর এই উল্কাপাত যদি কোনও কার্বন-সমৃদ্ধ পাথরের (Carbon enriched rock) ওপরে হয় তাহলে ঐ প্রবল চাপ ও তাপের কারণে হীরা তৈরি হওয়ার একটা সুযোগ থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় উল্কাপাত হওয়া জায়গার আশেপাশে অত্যন্ত ছোট হীরে পাওয়া যায়। তবে এই হীরা ব্যবসায়িক হয় না তেমন।
কিন্তু কয়লার কি কিছু যোগাযোগ আছে এই ক্ষেত্রে? হ্যাঁ যদি উল্কাপাত হওয়ার জায়গায় কয়লার স্তর থাকে, তাহলে সেই কয়লার কার্বন, হীরার কার্বনের উৎস হতে পারে। তবে এইরকম ঘটনা একেবারেই কাকতালীয়, কারণ কয়লার তুলনায় অন্য কার্বন সমৃদ্ধ পাথরের পরিমাণ পৃথিবীর বুকে বেশি।

(৪) বহির্বিশ্বে বা মহাকাশে তৈরি হওয়া হীরা-
বিভিন্ন দেশের মহাকাশবিজ্ঞানীরা দেখেছেন অসংখ্য খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরা পাওয়া যায় মহাকাশ থেকে আশা উল্কাপিণ্ডের মধ্যে। এইসব হীরা মহাকাশেই তৈরি হয়, উচ্চগতিতে অন্য কোনও বস্তুর সাথে ধাক্কা লাগার জন্য, যেমন পৃথিবীর বুকে উল্কাপাতের ফলে হীরা তৈরি হয়।
সুতরাং এইখানেও দেখা যাছে কয়লার কোনও রকম ভূমিকা নেই হীরা তৈরি হওয়াতে।

তাহলে হীরা তৈরি হওয়ার এই চার রকম পদ্ধতি আমরা জানলাম ও দেখলাম কয়লার সাথে হীরার তেমন সম্পর্ক নেই। এইবারে আর একটা জিনিসের উদাহরণ দিই, যাতে কয়লার মধ্যে হীরে পাওয়ার ব্যাপারটাকে আরও খানিকটা নস্যাৎ করে দেওয়া যাবে।

এই পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন পাথরে যা হীরার সঞ্চয় পাওয়া যায়, সেই সমস্ত পাথরই দেখা গেছে প্রিক্যাম্ব্রিয়ান সময়ে (Precambrian era) তৈরি। এই সময়টা হল মোটামুটি পৃথিবীর সৃষ্টি (৪৬০০ মিলিয়ন বছর আগে) ও ক্যাম্ব্রিয়ান সময় (Cambrian era, ৫৪২ মিলিয়ন বছর আগে) এর মাঝের একটা বিশাল সময়। এরও প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পরে (৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে) পৃথিবীর প্রথম স্থলভাগের গাছের আবির্ভাব। আর এই গাছই হল কয়লার প্রধান উৎস। এই তথ্য থেকে একদম পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবীর প্রথম স্থলভাগের গাছটি পৃথিবীর বুকে পাওয়া হীরার অনেক অনেক পরে এসেছে, তাই কয়লাখনিতে হীরা পাওয়ার ঘটনাটি যদি কিছু থেকে থাকে তা একেবারেই কাকতালীয় ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব।

©বিবিসি আর্থ চ্যানেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.