নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
কবিতা এবং আবৃত্তি.....
আমার কাছে লেখালেখির জগতে কবিতা লেখা হচ্ছে সব চাইতে কঠিন, যা লিখতে মেধার বিকল্প নাই। একজন সাহিত্যিক-উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার যা লিখতে অনেক পৃষ্ঠা, কিম্বা একটা বইতে প্রকাশ করেন- তাই একজন কবি মাত্র কিছু শব্দে, বাক্যে প্রকাশ করেন!
কবিতার মানে কী? আসলে আমি কবিতাকে বলতে পারি- রহস্য! যে কথার নকশা কখনও পুরনো হয় না, তার নাম কবিতা। আমি কবিতার ভুবনছাওয়া উপস্থিতিকে অনুভব করতে পারি, তার রূপ ধ্যানে ধরতে পারি, কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না! তবে, সেই ছেলে বেলায়ই কবিতার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিল আমার অকালপ্রয়াত বুবু। কত বয়স হবে তখন? প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। বুবুর অনেক কবিতার বই ছিল। বুবু কবিতা আবৃত্তি করতেন-
"মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ'ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।।
সন্ধে হল, সূর্য নামে পাটে,
এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপন-মনে তাই
ভয় পেয়েছ – ভাবছ, 'এলেম কোথা।'
আমি বলছি, 'ভয় কোরো না মাগো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।'
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে -
অন্ধকারে দেখা যায় না ভাল।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
'দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!'
এমন সময় 'হাঁ রে রে রে রে'
ওই-যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!'
তুমি বললে, 'যাসনে খোকা ওরে,'
আমি বলি, 'দেখো-না চুপ করে।'
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে,
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে
শুনলে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।
এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে,
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, 'লড়াই গেছে থেমে,'
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে
বলছ, 'ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল'
কী দুর্দশাই হত তা না!"
আবৃত্তি প্রতিভা বুবু পেয়েছিল ছেলে বেলা থেকেই। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবৃত্তিতে অনেক পুরস্কার জিতেছিল। বুবুর মখমলি গলায় রিদম আর স্ট্রেস এখন বুঝি- তার কবিতা আবৃত্তির মাধুকরী মাধুর্য। আমার শিশু বয়স উপযোগী কবিতাগুলো খুব মজা করে ছড়া কবিতা আবৃত্তি করতেন-
"বাবুদের তাল-পুকুরে হাবুদের ডাল-কুকুরে সে কি বাস করলে তাড়া, বলি থাম একটু দাড়া....", -কখনো-
"বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?"
বুবুর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনেই আবৃত্তি শোনায় একধরনের নেশা আমাকে পেয়ে বসে। আমি অনুভব করি, ধ্বনিময় কাব্যজগতে প্রবেশের একটা প্রধান পথ হলো কানে শোনা। বুবু নিখুঁত ভাবে কবিতা আবৃত্তি করতেন বলেই অত দ্রুত ছন্দ ছুঁয়েছিল আমায়। আর এটাই হওয়ার কথা। আমাদের সভ্যতা বারবার শোনার আর শুনে মনে রাখার ওপর জোর দিয়েছে। এ আমাদের হেরিটেজ। এই হেরিটেজই মিথ, রুপকথা এবং কোরআন। কোরআন এর কথা বলায় অনেকেই আমাকে বিভিন্ন অভিধায় অভিযুক্ত করবেন জানি। কিন্তু কোরআন এর শুরু হয়েছিল শোনায় এবং বিশ্বব্যাপী কোরআন প্রচার তথা ছড়িয়ে শ্রুতির মাধ্যমে।
আজ থেকে অন্তত অর্ধশত বছর আগের কথা। রেডিওতে শুনে 'সামান্য ক্ষতি' আবৃত্তির ঘোর তখনও কাটেনি। একদিন আমাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে পৌঢ় বয়সী তুষার দাস গুপ্ত স্যার মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে একদম আটপৌরে কথা বলার ভঙ্গীতে কবিতা বলতে লাগলেন,
'মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক--
সবার তরে নহে সবাই।'
এমন সুন্দর আবৃত্তি শুনে আমি যেনো শূন্যে ভাসছি- বিশাল কালো আকাশের চাঁদোয়া ওপরে। ধ্বনি, স্বর, অর্থ, বোধ আমায় জড়িয়ে ধরছে!
অসীম ভালো লাগায় পুরো কবিতাটা মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। তারপর আরও কতো কবিতা মুখস্ত করেছি.... কিন্তু কবিতা মুখস্ত করলেই তো আর আবৃত্তিকার হওয়া যায় না। আমিও আবৃত্তিকার হতে পারিনি। তবে কবিতা বুঝি।
তখন ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ.... ক্যাসেটে বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত, কাজী সব্যসাচীর কন্ঠে ওঁদের কবিতা পাঠ শুনি। বাদ যায়না- আমাদের গোলাম মুস্তফা, কাজী আরিফ, ওপারের সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী কিম্বা টি. এস. ইলিয়ট। এইটুকু বুঝেছি, সব কবি স্বরক্ষেপণে দিক ভোলাতে পারেন না, কিন্তু, তাঁর লেখার ভাবটা ঠিক কী, সেটা তাঁর চেয়ে বেশি কেউ জানে না।
আমি কবিতা লিখতে পারিনা, তবে কিছুটা হলেও কবিতা বুঝি, কবিতা আবৃত্তিতে স্বর ক্ষেপণ, গলার কারুকাজ বুঝি...আজও কবিতা আমার দেহ-মন দিয়ে ছুঁয়ে দেয়। কবিতা আমার কাছে মন্ত্র আর কবি হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ শিল্পী, কাব্যের জাদুকর।
বুবু নেই আজ পয়তাল্লিশ বছর পেরিয়ে.... কিন্তু বুবুর কণ্ঠে-
"বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?"- অজান্তেই আমার দুচোখ ভিজিয়ে দেয়....মায়ের কোনো স্মৃতিই নাই, আর বুবুর সব স্মৃতি জাজ্বল্যমান!
(ব্লগে অনুপস্থিতিতে ফেসবুকে লেখা পোস্ট এবং ড্রাফট করে রাখা ফোল্ডার থেকে)
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনার মন্তব্যও অত্যন্ত কাব্যিক। আপনারা যারা কবিতা লেখেন অর্থাৎ কবি তাদের এডভান্টেজ এটাই কাব্যিক উপস্থাপন। ❤️
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: বাহ দাদা...
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪০
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আমার। ❤️
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৭
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয়জনদেরেমন স্মৃতিই তাদেরকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে আজীবন। সৃষ্টিকর্তা উনাকে জান্নাতবাসী করুন, আমিন।
অনেকদিন পর আপনের পোস্ট দেখলাম। আমি নিজে অনিয়মিত থাকায় দেখতে পারিনি। তবে আপনার অনিয়মিত সময়ে আপনাকে কিন্তু আমরা মিছ করেছি অনেক। সব মিলিয়ে কেমন আছেন?
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনাদের ভালোবাসা আর প্রশ্রয়ই আমার সম্বল।
শুভ কামনা নিরন্তর।
৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৭
জটিল ভাই বলেছেন:
আল্লাহ্ বুবুকে বেহেশত নসিব করুন।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: আমীন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ইশ কী যে সুন্দর পোস্ট। এত সুন্দর করে লিখেছেন। আপনার বুবুকে যেন আল্লাহ জান্নাতে ঠাঁই দেন।
সুন্দর আবৃত্তি শুনলে মন মুগ্ধতার ভরে যায়। অলীক আনন্দ মনে নেয় ঠাঁই।
আগে খুব শুনতাম। এখন আর শোনা হয় না।