নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দেব করের লেখাজোকা

জয়দেব কর

অন্ধ আমি অন্ধকারে আলো কুড়াই,গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল জীবন পোড়াই!

জয়দেব কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদ্ধমতবাদে নারী (প্রশ্নোত্তরসমূহ)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩২


মূল: ড. ধম্মানন্দা ভিক্ষুণী
ভাষান্তর: জয়দেব কর

প্রশ্ন-১:বুদ্ধের নিকট যখন রাণী মহাপজাপতি সঙ্ঘে যোগদানের অনুমতি চেয়েছিলেন,কেন তিনি দ্বিধাবোধ করেছিলেন,আবার পরে অনুমতিও দিয়েছিলেন?

উত্তর:যারা নারী-উপসম্পদা নিয়ে আগ্রহী তাদের জন্য এটি একটি অন্যতম ধাঁধা-তৈরিকারী প্রশ্ন, যা প্রাসঙ্গিক বোধশক্তি দ্বারা সুবিবেচিত উত্তরের দাবী রাখে। যখন বুদ্ধের পিতা রাজা শুদ্ধোদন মারা গেলেন তখন স্ত্রী হিশেবে মহাপজাপতির স্বামীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। গভীরভাবে বুদ্ধের শিক্ষা অনুশীলন অনুসরণ নিয়ে বিবেচনা করার এটাই ছিলো তাঁর জন্য উপযুক্ত সময়। কিন্তু যখন তিনি বুদ্ধের কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলেন, বুদ্ধ সোজা বলে দিলেন, “অনুগ্রহপূর্বক এমনটি প্রার্থনা করবেন না”। ত্রিপিটক , যা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক উৎস, সঙ্ঘে নারীদের অনুমোদন না করার কোনো কারণ প্রদান করে নি। অবস্থার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পরবর্তিতে টিকাসমূহে অনেক বিশ্লেষণ করা হয়েছিলো। এগুলোও প্রচলিত বিশ্বাসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলো যে, বুদ্ধ নারীদের ধর্মীয় জীবনযাপনের অনুমতি প্রদান করেন নি। এগুলো ভিত্তিহীন নয়। ভারতীয় সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী ধর্মীয় জীবনযাপন করা নারীদের গতিপথ নয়। মনুধর্ম শাস্ত্র স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে নারীর মুক্তি শুধুমাত্র তার স্বামীকে ভক্তির মধ্য দিয়ে সম্ভব।

কিন্তু মহাপজাপতি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। বুদ্ধ চলে যাওয়ার পর তিনি ৫০০ শাক্যনারী নিয়ে রাজ দরবার হতে মুণ্ডিত মস্তকে হলুদ চীবর পরিধান করে পায়ে হেঁটে তাঁকে অনুসরণ করে বৈশালী পৌঁছেছিলেন, যেখানে বুদ্ধ অবস্থান করছিলেন। পুনরায় প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে তারা আরামে পৌঁছার পরও বুদ্ধের সাক্ষাতপ্রার্থনা করেন নি। আনন্দ, বুদ্ধের কাকাতো ভাই এবং ব্যক্তিগত সহকারী, তাঁদেরকে প্রবেশপথে ধূলিধূসরিত, দীর্ণ চীবর ও রক্তাক্ত পায়ে দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁরা অনেকেই ছিলেন দুর্দশাগ্রস্ত এবং হতাশার অশ্রুতে নিমজ্জিত। তিনি তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের অনুরোধ জ্ঞাত হয়ে বুদ্ধের সমীপে গেলে বুদ্ধ পুণরায় একইভাবে আনন্দকে নিষেধ করেছিলেন, “আনন্দ, অনুগ্রহপূর্বক, এমনটি প্রার্থনা করো না”।

বুদ্ধের মনে সম্ভাব্য বাধাবিঘ্নতা বোঝার প্রয়াসে বিবেচনায় নেয়ার মতো অনেকগুলো কারণ উদিত হয়েছিলো । প্রথমত মহাপজাপতি ছিলেন রাণী, রাজ দরবারের ৫০০ নারীসহ , শুধুমাত্র আরাম-আয়েশের জীবন সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সন্ন্যাসজীবন যাপনের জন্য বৃক্ষমূলে অথবা গুহায় নিদ্রা যাওয়া তাদের জন্য খুবই কষ্টের । তাই করুণাঘন বুদ্ধ চেয়েছিলেন তাঁরা এ চিন্তা বাদ দিয়ে দিক। অধিকন্তু উপসম্পদার জন্য বিশাল সংখ্যক নারীদের গ্রহণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত তাঁদের নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হতো। বুদ্ধও তাদের জন্য নিজেকে সার্বক্ষণিকভাবে সুগম করতে পারতেন না। বিশালসংখ্যক নারীদের পরিচালনা করতে উপযুক্ত শিক্ষকমণ্ডলীসহ সঙ্ঘ প্রস্তুত ছিলো না। পরবর্তীতে যখন নারীরা সঙ্ঘে গৃহীত হয়েছিলেন তখন এই বাস্তবতাটা প্রমাণিত হয়েছিলো। যে সমস্ত ভিক্ষুরা ভিক্ষুণীদের শিক্ষা দিতে পারেন তাদের অবশ্যই শুধুমাত্র পণ্ডিত হলেই চলে না, ভিক্ষুণীদের আধ্যাত্মিকভাবে উন্নয়ন ঘটাতে যথাযত আচরণের অধিকারী হওয়াও বাঞ্ছনীয়।

এমনিতেই বুদ্ধ, উপসম্পদা প্রদান করে পরিবার ভাঙ্গার অভিযোগে, বাইরের লোকদের থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যখন মহাপজাপতি ৫০০ শাক্যনারী নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন, সুনিশ্চিতভাবে তাও অনেক বড় সমালোচনার কারণ হতো। শাক্যরা বিশেষত অন্য গোত্রের মানুষের সাথে বিবাহের সম্বন্ধ করতো না। ৫০০ শাক্যনারীকে উপসম্পদার অনুমতি দিলে তা অবশ্যই তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতো। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে এই সকল নারীদের স্বামী ইতোপূর্বে সঙ্ঘে যোগদান করে ফেলেছিলেন। ফলে, এই সকল নারীদের সঙ্ঘে গ্রহণ করলে তাদের পরিবার ভেঙ্গে যেতো বলাটা ভিত্তিহীন।

বিষয় হচ্ছে এই সকল নারীদের তাঁকে অনুসরণ করে পায়ে হেঁটে বৈশালী আসা, তাদের ধর্মীয় জীবনযাপনের প্রতি বিশুদ্ধ অঙ্গিকারেরই প্রমাণ করেছিলো এবং তাদের উপসম্পদা প্রার্থনা যে ক্ষণস্থায়ী আবেগ থেকে উৎপন্ন নয় সে সন্দেহটা দূরীভূত হয়েছিলো । আনন্দও বুদ্ধের প্রত্যাখ্যানের কারণ বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন। এর কারণ কি নারীরা আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভ করে আলোকিত হতে সমর্থ নন? যদি তা হয়, তবে আধ্যাত্মিক পথ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খোলা। তখন এ ব্যাপারটি বুদ্ধ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, নারী ও পুরুষ উভয়েরই আধ্যাত্মিক সিদ্ধি লাভ করে আলোকিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা রয়েছে।

আমাদেরকে এই বক্তব্যটির দিকে নজর দিতে হবে, ধর্মগুলোর ইতিহাসে প্রথম একজন ধর্মীয় নেতা অকপটে ঘোষণা করেছিলেন নারী ও পুরুষ আধ্যাত্মিক ভিত্তিতে সমান। পূর্বে হিন্দু মতানুসারে, বেদসমূহ, পবিত্র গ্রন্থসমূহ শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। বুদ্ধমতবাদ গোত্র, জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্যের উর্ধে উঠে ঘোষণা করে যে সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক অর্জন লৈঙ্গিক বাধা বা বৈষম্য অতিক্রম করে ফেলে। এই সেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ যার জন্য বুদ্ধ তার সঙ্ঘে নারীদের যোগদানের অনুমতি দিয়েছিলেন।


প্রশ্ন-২:ভিক্ষুণী উপসম্পদার জন্য কী কী প্রয়োজন?


উত্তর:ভিক্ষুণী-উপসম্পদার জন্য কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুণীর প্রয়োজন। উপসম্পদা-প্রার্থী নারীর ভিক্ষুনীসঙ্ঘকর্তৃক মনোনীত হওয়ার পর একই দিনে কমপক্ষে পাঁচজন ভিক্ষুর নিকট অবশ্যই মনোনীত হতে হয়। পবত্তিনি বা ভিক্ষুণী-আচার্যকে ন্যূনতম ১২ বর্ষাবাসকারী ও ধর্ম-বিনয়ে সুপণ্ডিত এবং উভয় সঙ্ঘকর্তৃক নিয়োজিত হতে হবে।

সঙ্ঘে নারীদের অনুমোদন প্রাপ্তির পর, নারীদের কাছে সঙ্ঘে যোগদান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে আবাসন-ব্যবস্থার সঙ্কট দেখা দেয়। প্রত্যেক পবত্তিনি, তখন, প্রতি এক বছর পরপর শুধু উপসম্পদা প্রদান করার জন্য অনুমোদিত ছিলেন। ভিক্ষুণী-আচার্যকে তাঁর তত্ত্বাবধানে ভিক্ষুণীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হয়, তারা যদি অসুস্থ হয়ে পরেন তাদের সেবাযত্নও করতে হয়।

ভিক্ষুদের জন্য তিন ধরণের উপসম্পদা রয়েছে। প্রথম এহি ভিক্ষু উপসম্পদা, বুদ্ধকর্তৃক কোনো ধরণের আনুষ্ঠানিক রীতি ছাড়া শুরুর দিকে সরাসরি প্রদত্ত উপসম্পদা । বুদ্ধ শুধুমাত্র “ভিক্ষু হয়ে যাও” বলে অনুমোদন দিতেন, যা পূর্ণ উপসম্পদা বলে বিবেচিত ছিলো।

তারপর এলো ত্রিরত্ন গ্রহণের মধ্য দিয়ে উপসম্পদা, যথা বুদ্ধ, ধর্ম ও সঙ্ঘের শরণ। এটা প্রথম দিকে আচার্যদের দ্বারা প্রদত্ত এক ধরণের উপসম্পদা যা দিয়ে তাঁরা তাঁদের শিষ্যদের ভিক্ষু হিশেবে গ্রহণ করতেন।

পরে যখন আবেদনকারীদের সংখ্যা বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছিলো , তখন আরো আনুষ্ঠানিকভাবে উপসম্পদা প্রদান করা হয়েছিলো। একে বলা হয় নত্তিচতুথকম্মবচ, যাতে একজন আচার্য দুইজন প্রশিক্ষক এবং উপসম্পদা প্রত্যক্ষ করতে কমপক্ষে দশজনের ভিক্ষুসঙ্ঘ প্রয়োজন। এই উপসম্পদা সঙ্ঘদ্বারা প্রদত্ত, এবং এই উপসম্পদাই বর্তমান কালে প্রচলিত।

আরেক ধরণের উপসম্পদা ভিক্ষুণীদের জন্য আরোপিত হয়েছিলো। একটা ঘটনা ঘটেছিলো, একজন নারী ভিক্ষুণীসঙ্ঘের নিকট উপসম্পদার কার্যক্রম সমাপ্ত করেছিলেন, কিন্তু উপসম্পদার প্রয়োজনীয় নিয়ময়ানুযায়ী একইদিনে ভিক্ষুসঙ্ঘের নিকট পৌঁছতে পারেন নি। কিছু চোর তাকে অপহরণ করার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিলো। তখন বুদ্ধ দুতেনসম্পদা অনুমোদন করেছিলেন_ একজন নিযুক্ত দূতের মাধ্যমে উপসম্পদা প্রদান। তা হচ্ছে, হতে যাওয়া ভিক্ষুণীদের পক্ষে ভিক্ষুণীসঙ্ঘকর্তৃক অন্য একজন ভিক্ষুণী নিযুক্তহয়েছিলেন। এটাও সঠিক উপসম্পদা বলে বিবেচিত।

একজন নারী যিনি উপসম্পদা চান তাকে অবশ্যই কমপক্ষে ২০ বছর পূর্ণ হতে হবে, পিতামাতা বা স্বামীর অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হবে এবং নিরোগ হতে হবে যাতে পরবর্তিতে ভিক্ষুণী জীবন যাপন করতে কোনো বাঁধার সম্মুখীন হতে না হয়। তাকে অবশ্যই শিক্ষামনা হিশেবে দুই বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে, এবং প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ, যেমন: পাত্র, চীবর প্রভৃতির অধিকারী হতে হবে ।



প্রশ্ন-৩: কেন পুরুষদের উপসম্পদার জন্য শুধু দুইটি স্তর যখন নারীদের উপসম্পদার জন্য তিনটি পর্যায় দিয়ে যেতে হয়?

উত্তর: ৫ টি ভিন্ন ধরণের উপসম্পদা রয়েছে, ২টি পুরুষদের জন্য এবং ৩টি নারীদের জন্য। সামনেরী (নারী শিক্ষানবিস) ১০টি শিক্ষাসহ নিম্ন উপসম্পদা (পব্বজ্জা)। পব্বজ্জাপ্রার্থীকে অবশ্যই ধানক্ষেত থেকে গরু তাড়ানোর মতো সক্ষম বয়সী হতে হবে। পরবর্তিতে এটা ন্যূনতম ৭ বছর নির্ধারিত করা হয়েছিলো। বয়স্করাও মাঝে মাঝে শুধুমাত্র নিম্ন উপসম্পদা গ্রহণ করেন।
উচ্চ উপসম্পদার জন্য তিনিই প্রার্থী হতে পারবেন যার পূর্ণ ২০ বছর এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বিদ্যমান। একজন বিবাহিত নারী তার স্বামীর সম্মতি সহকারে ১২ বছর বয়সে উপসম্পদাপ্রাপ্ত হতে পারেন।
শিক্ষামনার জন্য প্রশিক্ষণের কাল পরে প্রবর্তন করা হয়। একজন বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে, একটা বিশেষ ঘটনা ঘটেছিলো যিনি নিজে যে গর্ভবতী তা না জেনে উপসম্পদা চেয়েছিলেন। তার গর্ভাবস্থার কথা শুধু উপসম্পদার পর গোচরীভূত হয়। এই কারণে একটি নিয়ম প্রচলিত করা হয় যে নারীদের দুই বছরের শিক্ষামনা প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই সময়ের ভিতর একজন শিক্ষামনাকে ৬ টি অনুধর্ম প্রতিপালন করতে হবে যেগুলো সামনেরীদের ১০ টি শিক্ষাপদের প্রথম ৬ টি । যাই হোক, একজন শিক্ষামনা সামনেরীর চেয়ে উচ্চতর পর্যায়ের প্রশিক্ষণের জন্য বিবেচিত হন যদিও তারা শুধু ৬টি শিক্ষাপদ গ্রহণ করেন। এতে প্রতিভাত হয় যে, একজন শিক্ষামনা প্রকৃতপক্ষে উচ্চ উপসম্পদা গ্রহণ করার পথে প্রস্তুতিমূলক স্তরের একজন ব্যক্তি; এবং দুই বছর প্রশিক্ষণকালীন সময়ে যদি তিনি একটি শিক্ষাপদ লঙ্ঘন করেন তবে তাকে সবকিছু পুনরায় শুরু করতে হবে। তাকে অবশ্যই একটানা দু বছর প্রশিক্ষণে কোনো শিক্ষাপদ লঙ্ঘন না করে অবশ্যপুরণীয় শর্ত মিটানো কর্তব্য।

প্রশ্ন-৪ : ভিক্ষুদের থেকে ভিক্ষুণীদের কেন বেশী শিক্ষাপদ পালন করতে হয়?
উত্তর: থেরবাদে ভিক্ষুদের ২২৭ টি শিক্ষাপদ ও ভিক্ষুণীদের ৩১১ টি শিক্ষাপদ পালন করতে হয়। এই পার্থক্যের কারণে প্রায়শই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় যে বুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে নারীদের সঙ্ঘে যোগদান চান নি, এবং তাই তিনি শুরুতেই নারীদের আটকিয়ে রাখতে বিধান স্থির করেছিলেন ।

ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের পাতিমোক্ষের মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ (থাই শিক্ষার উপর আন্তর্জাতিক অধিবেশনে উপস্থাপিত, চিয়েংমাই, অক্টোবর ১৪-১৭, ১৯৯৬) থেকে দেখা যায় যে ভিক্ষুদের আটটি পরিচ্ছেদ অনুসরণ করতে হয় যেখানে ভিক্ষুণীদের সাতটি করতে হয়। একটা পরিচ্ছেদ শুধুমাত্র ভিক্ষুদের জন্য, যাকে বলা হয় “অনিয়ত”। এই পরিচ্ছেদে দুইটি নিয়ম প্রথম দিককার নেতৃস্থানীয় উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক উপস্থাপিত । সেগুলোর একটি ভিক্ষুদের আবদ্ধ জায়গায় একাকী একজন নারীর সাথে থাকা থেকে নিষেধ আরোপ করে এবং অন্যটি ভিক্ষুদের খোলা জায়গায় অন্যদের শ্রবণসীমার বাইরে একাকী একজন নারীর সাথে থাকা থেকে নিষেধ করে ।

পাতিমোক্ষের প্রথম অনুচ্ছেদ, পারাজিকায়, যা কিছু সবচেয়ে বেশী গুরুতর অপরাধ হিশেবে বিবেচিত, কোনো ভিক্ষু বা ভিক্ষুণী এই সকল বিধির যেকোনোটি লঙ্ঘন করলে তিনি সেই মুহূর্তেই ‘পরাজিত’। ভিক্ষুদের জন্য চারটি এবং ভিক্ষুণীদের জন্য আটটি বিধি রয়েছে। যে অতিরিক্ত বিধি এই অনুচ্ছেদে ভিক্ষুণীদের প্রতিপালন করতে হয় তা ভিক্ষুদের বেলায় হয়তো পাওয়া যায়, তবে তা কম গুরুতর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ, সঙ্ঘাদিসেসের মধ্যে শ্রেণিবিন্যস্ত। তা লঙ্ঘন করলে একজন ভিক্ষুকে সঙ্ঘ থেকে সাময়িক আত্মনির্বাসন, “মানত্ত” কালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে সহজেই বোঝা যায় যে বিধি-বিধানের এই শ্রেণীবিন্যাস পরবর্তি সময়ের ভিক্ষুদের হাতে সংগঠিত কাজ।

পটিদেসনীয় অংশে ভিক্ষুণীদের জন্য আটটি বিধি রয়েছে। ভিক্ষুদেরও একই বিধি রয়েছে কিন্তু সেগুলো অন্য পরিচ্ছেদ সেখিয়তে শ্রেণিবিন্যস্ত এবং সেখানে সবগুলোকে একটি হিশেবে ধরা হয়। ভিক্ষুণীদের জন্য অধিক বিধি থাকার কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম কারণ। পচ্চিত্তিয় অংশে ভিক্ষুণীদের জন্য ১৬৬ টি নিয়ম রয়েছে যেখানে ভিক্ষুদের জন্য ৯২ টি । এর মধ্যে উভয় সঙ্ঘের জন্য অভিন্ন ৭০ টি নিয়ম রয়েছে এখানে। তারপর ভিক্ষুদের জন্য স্বতন্ত্র ২২ টি এবং ভিক্ষুণীদের জন্য স্বতন্ত্র ৯৬ টি নিয়ম রয়েছে। ভিক্ষুণীদের ৯৬ টি নিয়মের মধ্যে, এটা লক্ষণীয় যে, অনেক নিয়মই আছে যা উপসম্পদার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এবং সেগুলো ভিক্ষুদেরকেও অনুসরণ করতে হয়, কিন্তু তা ভিক্ষুদের জন্য পাতিমোক্ষে গৃহীত হয় নি। এটাও ভিক্ষুণীদের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে বেশী সংখ্যক পাতিমোক্ষ নিয়ম থাকার অন্যতম কারণ ।
উল্লিখিত কারণসমূহের জন্য ভিক্ষুণীদের পাতিমোক্ষে , ভিক্ষুদের চেয়ে বেশীসংখ্যক নিয়ম বিধিত রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের একই ধরণের নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।



প্রশ্ন-৫ :ত্রিপিটকের পুরুষকেন্দ্রিক বৈশিষ্টের কারণ কী?

উত্তর: আমি আমার উত্তর শুধু থেরবাদী ধারায় আলোকপাত করছি যা পালিতে শিক্ষাগুলো ধারণ করে আছে। থেরবাদীরা বিশ্বাস করেন যে তাদের শিক্ষা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য। আমাদের বোঝা উচিত যে ত্রিপিটক বলে আমরা যা জানি তা বুদ্ধের সময়কালে লিখিত হয় নি। তখনকার সময় ধর্মীয় জ্ঞান অনুশীলন ও হস্তান্তরিত হতো শিক্ষক থেকে বাছাইকৃত শিষ্যদের মধ্যে মুখে মুখে শ্রুতির মাধ্যমে। এই কারণে কোনো ধর্মীয় শিক্ষা তখন লিপিবদ্ধ হয় নি। এমনটি বুদ্ধের শিক্ষার বেলায়ও প্রয়োগ হয়েছিলো। ত্রিপিটক যখন প্রথম শ্রীলঙ্কায় লিপিবদ্ধ হয়েছিলো সেটা অবশ্যই ৪৫০ বুদ্ধাব্দ (প্রায় খ্রি.পূ. ৯০) এর পূর্বে নয়।

তা লিপিবদ্ধ হয়েছিলো ভিক্ষু লিপিকারদের বোধশক্তি অনুযায়ী । তারা যা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন তা ছিলো আত্মপ্রয়োজক, সুতরাং এটা সহজবোধ্য যে কেন ত্রিপিটক পুরুষকেন্দ্রিক। ত্রিপিটক সেই সমস্ত পুরুষ দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়েছিলো যারা ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধে পরিচালিত হতেন। তারা ছিলেন সেই সমস্ত পুরুষ যারা বিনয় দ্বারা পবিত্র জীবন যাপনের প্রত্যাশা করেছিলেন। তাদের বিশুদ্ধিতার পথে সবচেয়ে মুখ্য সমস্যা ছিলো বিপরীত লিঙ্গ। এই পুরুষদের দ্বারা সংরক্ষিত বিভিন্ন শিক্ষা তাই নারীদের অশুভ-অপবিত্র হিশেবে (তাদের বাধাসমূহ মূর্তকরণে) নিরোপিত করেছিলো। এটা হচ্ছে অশুদ্ধ ত্রুটিপূর্ণ গর্তে পতিত হওয়া থেকে বিরত থাকার ও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে দেয়া প্রয়োজনীয় বেড়া। যখন ত্রিপিটক পড়বেন আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এই সীমাবদ্ধতা সামাজিক সীমাবদ্ধতার সার থেকে প্রতিস্থাপিত।

পরমার্থ পর্যায় থেকে দেখতে গেলে যা দৃষ্টিতে আসে তা হলো_ বুদ্ধমতবাদ লিঙ্গ-পক্ষপাত থেকে মুক্ত এবং বিশ্বের প্রথম ধর্ম যা নর-নারীর সমান আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা স্বীকার করেছিলো। বুদ্ধমতবাদের জন্য এটা একটি বিশেষ উচ্চমর্যাদা প্রদান করে যেটির গোষ্ঠি, বর্ণ, লিঙ্গের সীমারেখা ছাড়া বিশ্বের আধ্যাত্মিক পর্যায় উন্নীতকরণে ভারতবর্ষে যাত্রা শুরু হয়েছিলো ।



প্রশ্ন-৬ : এটা কি সত্য যে ত্রিপিটক নারীদের বিকাশ রুদ্ধ করে ?


উত্তর : ত্রিপিটক, বুদ্ধমতবাদের ধর্মীয় গ্রন্থের বৃহৎ সংকলন, তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। শিক্ষা লিপিবদ্ধ করে তিনটি ঝুড়িতে রক্ষিত করা হয়েছিলো যেগুলোকে বলা হয় পিটক । প্রথম অংশ, বিনয়, ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের বিধি-নিষেধসমূহ নিয়ে আলোচনা করে। দ্বিতীয় অংশ, সুত্ত, বুদ্ধ ও তাঁর প্রধান শিষ্যদের শিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করে। কেউ কেউ যখন সামাজিক প্রেক্ষাপটের উর্ধে উঠে মনের উন্নতি নিয়ে কাজ করেন তখনও অন্যদের দেখা যায় ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধের দ্বারা আবৃত। জাতক বা বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী, ভারতীয় মাটি থেকে বোনা জনপ্রিয় গল্প এরই অংশ। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের তিনমাস পর প্রথম সঙ্গায়নে ত্রিপিটকের এই দুই অংশ আবৃত্তি করা হয়েছিলো। অভিধর্ম, ত্রিপিটকের তৃতীয় অংশ, চিত্ত ও এর কার্যক্রমের দার্শনিক ব্যাখ্যা যা পরবর্তিকালের ভাষ্যকারদের দ্বারা রচিত। ত্রিপিটকের সকল অংশ প্রথম লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিলো ৪৫০ বুদ্ধাব্দ (প্রায় খ্রি.পূ.৯০) এর পূর্বে নয় কোনোভাবে।

ত্রিপিটকে উপাদানসমূহ দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:লোকোত্তর ও লোকীয়। লোকোত্তর নামক অংশটি মানসিক মুক্তির দিকে লক্ষ্য রেখে বিশুদ্ধ ধর্ম নিয়ে কাজ করে। তার প্রকৃতি অনুযায়ী, চিত্তের কোনো লিঙ্গবৈষম্য নাই। লোকোত্তর ধর্ম তাই লিঙ্গবৈষম্য ও পক্ষপাত মুক্ত।

লোকীয় নামক পরবর্তী অংশ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত শিক্ষা। সুতরাং, এর মূল্য সামাজিক ও ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই অংশটিকে আরো দুইভাগে ভাগ করা যায়। যার প্রথম ভাগ, ভারতীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে গৃহীত; তাই তা ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধ বহন করেছে এবং চাঙ্গাও রেখেছে। যদি আমরা গঠন-কাঠামো না বুঝে ত্রিপিটক অধ্যয়ন করি, তাতে পাওয়া উপাদানের বিশাল অংশের জন্য ত্রিপিটককে নারীর বিকাশরোধী বলে মনে হতে পারে।

অন্যদিকে অপর ভাগ সুস্পষ্টভাবে বুদ্ধমতবাদের মনোভাব, ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা, উপস্থাপন করে, যেমন:বর্ণপ্রথা। বুদ্ধ পরিষ্কারভাবে বর্ণপ্রথা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যা ছিলো জনগণকে বিভিন্ন বর্ণে বিভক্ত করার সামাজিক মাপকাঠি। তিনি , এর পরিবর্তে, জোর দিয়েছিলেন যে, কেউ ব্রাহ্মণ পিতামাতার ঘরে জন্ম নিলেই ব্রাহ্মণ হতে পারেন না কিন্তু কুশল কর্ম দ্বারা যে কেউ তা হতে পারেন।

তারপর তিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্বচ্ছ করে ঘোষণা করেছিলেন যে, নারী ও পুরুষ আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভ করে আলোকিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা রাখেন। একজন নারীর পারমার্থিক অর্জন তার নিজ কর্ম দিয়ে আসে, স্বামীর প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে নয়। বুদ্ধের সময় নারীরা সঙ্ঘে যোগদান করে ধর্মানুশীলনের সমান সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেক বিনয়-বিধান আরোপিত হয়েছিলো যাতে ভিক্ষুগণ ভিক্ষুণীদের কাছ থেকে যেন কোনো সুবিধা গ্রহণ না করেন, যেমন:ভিক্ষুরা যেন ভিক্ষুণীদেরকে তাদের চীবর, কম্বল প্রভৃতি ধৌত করার আদেশ প্রদান না করেন।

এই অংশে আমরা এমন উপাদান পাই যাতে ত্রিপিটক নারীদের সমর্থন ও উৎসাহ প্রদান করে। আমাদের উচিত এটাকে প্রকৃত বৌদ্ধিক মানস হিশেবে গ্রহণ করা। এটা প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধমতবাদের উত্থান বা পতনে বৌদ্ধিক চার পরিষদের এক অংশ হিশেবে দায়-দায়িত্ব ভাগ করে নিতে নারী উন্নয়নের প্রয়াসে সামাজিক পুনর্গঠন।

উপসংহারে, আমরা বলতে পারি যে এটা সত্য যে ত্রিপিটকে কিছু অনুচ্ছেদ আছে যা নারীর বিকাশরোধী কিন্তু তা প্রকৃত বৌদ্ধিক মানসের পরিচায়ক নয়।










[শ্রদ্ধেয় ড.ধম্মানন্দা ভিক্ষুণীর গৃহী নাম ড.চাৎসুমন কবিলসিং। ৬ অক্টোবর ১৯৪৪খ্রিস্টাব্দে, ভোরমাই কবিলসিং এবং ককিয়াত শাৎসেনার ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর মা ভোরমাই কবিলসিং (মৃত্যু :২০০৫ খিস্টাব্দ ) যাকে তা তাও ফা জু বলেও ডাকা হতো, তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তাইওয়ানে ধর্মগুপ্ত ধারায় প্রথম আধুনিক থাই ভিক্ষুণী হিশেবে উপসম্পদা গ্রহণ করেন।
পূজনীয় ধম্মানন্দা ভিক্ষুণী ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক, কানাডার ম্যাক-মাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মে স্নাতকোত্তর, এবং ভারতের মগধ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর ব্যাংককে থম্মাসট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ বছরেরও অধিক ধর্ম ও দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন । তিনি বুদ্ধমতবাদের বিভিন্ন দিক ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে সুপরিচিত; অনেক গ্রন্থই তাঁর উপসম্পদা গ্রহণের পূর্বে তাঁর জন্মনামে (চাৎসুমন কবিলসিং) রচিত। Women in Buddhism (Question and Answers ) বা বুদ্ধমতবাদে নারী (প্রশ্নোত্তরসমূহ) উপসম্পদার পূর্বে রচিত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন সন্তানের জননী।
২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি শ্রীলঙ্কায় আর. সদ্ধা সুমনা ভিক্ষুণী ও টি. ধম্মালোকা ভিক্ষুর নিকট হতে সামনেরী প্রবজ্জা গ্রহণ করেন। তারপর ২০০৩ সালে থেরবাদী ধারায় প্রথম থাই নারী হিশেবে শ্রীলঙ্কায় পূর্ণ ভিক্ষুণী উপসম্পদা গ্রহণ করেন । ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি থাইল্যান্ডের প্রথম পবত্তিনী নিযুক্ত হন। বর্তমানে শ্রদ্ধেয় ড. ধম্মানন্দা ভিক্ষুণী থাইল্যান্ডের নাখনপাথোম প্রদেশে মুয়াং জেলার সংধম্মকল্যাণী বিহারে বাস করছেন ।
তিনি ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকভাবে বুদ্ধমতাবলম্বী নারীদের কার্যক্রমের উপর পত্রিকা যশোধরা প্রকাশ করা শুরু করেন যা প্রায় ৪০ টি দেশে পাওয়া যায়। বুদ্ধমতবাদ ও দারিদ্র্য, বুদ্ধমতবাদ ও প্রকৃতি, নারীবাদ ও বুদ্ধমতবাদ, পতিতাবৃত্তি (থাইল্যান্ডে), বুদ্ধমতবাদ ও শিক্ষা (গৃহী-সন্ন্যাস জীবনে) প্রভৃতি বিষয়ে লেখালেখি করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ হলো : #A Comparative Study of Bhikkhuni Patimokkha. Chaukambha Orientela : India 1981; A Cry From the Forest 1981; #Bhikkhuni Patimokkha of the ix Existing Schools. tr. Bangkok, 1991; #Buddhism and Nature Conservation. Bangkok, Thailand: Thammasat University Press, 1998; #Thai Women in Buddhism. Berkeley, CA : Parallax Press 1991; #Women and Buddhism . Institute of Women Studies(St. Scholastica’s College) Isis International (Manila, Philippines ): Isis International, 1996; # Women in Buddhism (Questions and Answers). 1998; etc.]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.