নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দেব করের লেখাজোকা

জয়দেব কর

অন্ধ আমি অন্ধকারে আলো কুড়াই,গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল জীবন পোড়াই!

জয়দেব কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি আর কবিতা // জয়দেব কর

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩


০১।
আমি একজন পাঠক।শেলেটে পেন্সিল ঘষে যেদিন অ,আ লেখা শুরু করি সেদিন থেকেই আমার পাঠক হিশেবে যাত্রা শুরু হয়, যৌবনে এসেও আমি পাঠ করছি ভালো এবং মন্দ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যদি আমার শরীর পাঠ করার মতো উপযুক্ত থাকে তবে আমি থামবো না _ আমার যাত্রা অব্যাহত থাকবে। জন্মগতভাবেই কবিতার প্রতি আমার প্রবল ঝোঁক। একটা সময় কবিতা ভেবে কবিতার মতো অবিকল পঙক্তির স্তুপ পড়েছি, যা আমার কবিতার তৃষ্ণা মোটেও নিবারণ করে নি, বরং দিয়েছিলো ফালতু উত্তেজনা। আসল নকল বোঝার মতো বোধ আসার পর থেকে বুঝতে পারছি কবিতাবিমুখ করতে এই দেশের শিক্ষাপদ্ধতির অবদান কতো বিশাল! অন্য দশজনের মতো বিদ্যালয় জীবনে কবিতার সারমর্ম আর ব্যাখ্যা লিখে হাঁপিয়ে ওঠার দিনগুলো মনে হলে পীড়িত হই। পাঠ্য পুস্তকের সীমানা অতিক্রম না করলে পৃথিবীকে নিজের মতো করে জানতে পারতাম না, জানতে পারতাম না চিনতে পারতাম না কবিতার আসল রূপ-রস-গন্ধ। সিংহভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কবিতাভীতির মূল কারণ হলো বিদ্যালয়জীবনে চাপিয়ে দেয়া শিল্পবিবর্জিত পঙক্তিমালার আধিক্য।


০২।
কবিতা কী? কবি কী? সহজ ভাষায় কঠিন করে বললে, কবির সৃষ্টিকর্ম কবিতা,আর কবিতার স্রষ্টা কবি! কিন্তু কবি চিনবো কী করে? আর কবি না চিনলে কবিতাই বা চিনবো কীভাবে? চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, কৃষক চেনা তো কঠিন মনে হয় না। কিন্তু, কবি ও কবিতা জানতে , চিনতে বুঝতে গিয়ে যে কেউ প্রাথমিক অবস্থায় হিমশিম খায়, ঠিক যেভাবে সাঁতার শিখতে গিয়ে নাকে মুখে পানি ঢোকা খুবই মামুলি বিষয় । কবি যেহেতু বস্তুজগতের বাইরের কেউ নন সেহেতু বস্তুজগতকে জানার পরিধিটা বাড়ালে হয় তো একটা সময় কবিকে জানা যাবে, এটাই মনে করতাম, এবং এখনো মনে করি জ্ঞানার্জন অপরিহার্য; তবে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও কল্পনার বিস্তৃতি ছাড়া কবি ও কবিতা অধরাই রয়ে যায়। কবিতা আর যাই হোক দলবদ্ধভাবে সৃষ্টি করা হয় না। একটা কবিতার স্রষ্টা তো একজনই। তাহলে অবশ্যই কবিতা ঐ একজন কবির অভিজ্ঞতা আর কল্পনার শিল্পিত প্রকাশ।অভিজ্ঞতা ও কল্পনা সবার আছে, তাই বলে তো সবাই কবি নয়,এখানে প্রয়োজন নিজস্বতার। নিজের প্রতি সততা ছাড়া আন্তরিকতা ছাড়া নিজস্বতা আসে না । নিজস্বতা না থাকলে সৃষ্টি সম্ভব নয় । একটা মানুষের সততা আন্তরিকতা অভিজ্ঞতা ও কল্পনার রসায়নই তাকে কবিতার উদার ও অফুরান গুপ্তধন বের করে নিয়ে আসার শক্তি যোগায়, আর তা ধারণ করার জন্য ঐ মানুষটি হন কবি। এই কবিকে কবিকে চাক্ষুস দেখে তার কবিতার সন্ধান সবসময় পাই না আমরা, তবে কবিতাই কবির সাথে সম্বন্ধ ঘটায় । কিন্তু কবিতা পাঠের বেলায় কল্পনায় ঠিকই ওই কবিকে সৃষ্টি করা ছাড়া উপায় নেই এবং এটাই উত্তম পাঠকের বৈশিষ্ট্য। কারন অনেকসময় কবিতার কবির সাথে বাস্তবের কবির দিনরাত ফারাক থাকে।এদের অনেকেই একটা সময়ে এসে ভ্রান্ত হয়ে যায়। কবিতার জন্য কাউকে কবি বলা কঠিন। কবিতা তো মানুষ নয়, মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ কবিতার সৃষ্টি করে। কবিতা সৃষ্টির চাইতে কবি হয়ে ওঠা দুঃসাধ্য।


০৩।
কবি সুনির্মাতা । শব্দের পর শব্দ দিয়ে নির্মাণ করেন কবিতার শিল্পিত ভুবন। একটি কবিতার একেকটি শব্দের পেছনে থাকে অজস্র অদৃশ্য সুসংহত সারিবদ্ধ সজীব শব্দবহর। একেকটা শব্দ অজস্র শব্দের প্রতিনিধিত্ব করে, একটা বাক্য অজস্র বাক্যের, একটা প্রতীক অজস্র প্রতীকের, একটা দৃশ্য অজস্র দৃশ্যের_ এভাবেই কবিতার ভেতরে জন্ম নেয় কবিতা।

কবির পথচলা তাই বুঝি এতো দীর্ঘতর! হ্যাঁ তাকে পাড়ি দিতে হয় একসাথে অজস্র পথ! এভাবেই তার স্রষ্টা-রূপ বের করে নিয়ে আসতে হয় । কবিতার বিশাল ভূখণ্ডে মনোযোগী হয়ে খুঁজলেই পাওয়া যায় কবির শ্রম আর ঘামে মূর্ত হয়ে ওঠা হিসেবী পায়ের চিহ্ন যেখানে সুপ্ত রয়েছে অজস্র কবিতার বীজ! প্রতিটি কবিতায় কবির ঘটে একেক রকমের মুক্তি! তাই যেন নিজেকে ধন্য করার জন্য চৈতন্যের সুরভিত পথ অবুঝ প্রণয়াকাঙ্ক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে চায় একটা জীবন! কবি যেদিকে যায় সেদিকেই সুন্দর; দুঃখের কাছে গেলে সুন্দর,সুখের কাছে গেলেও সুন্দর আবার প্রেমের কাছে গেলেও সুন্দর, অপ্রেমের কাছে গেলেও সুন্দর। তার প্রেমময় দৃষ্টিতে নরকেও ফোটে ওঠে শান্তির পারিজাত, দ্রোহে স্বর্গও পোড়ে হয় ছারখার। কবি কাঁদলে সমুদ্রকে হতে হবে লজ্জিত। কবি আর কবিতা অদ্বৈত সত্তা। কখনও কবি হয়ে ওঠে কবিতা আবার কখনও কবিতা হয়ে ওঠে কবি।


০৪।
নিঃসঙ্গতার অমৃতলোকের বাসিন্দা কবি মহাকাল-রূপী অজগরের বিশাল হা করা মুখ বন্ধ করে দেয় তার ছায়ায়। এই ছায়াটুকু তার যাপিত জীবন , আর বিচ্ছিন্ন অংশটুকুই কবিতা। যার যাপিত জীবন যত গভীর সে কবির শিল্পবোধ তত স্বতন্ত্র ও উন্নত। বিচ্ছিন্নতাকে উপভোগ করা যেনতেন বিষয় নয়। নান্দনিকতার বিশাল সরোবরে ধ্যানী বলাকার মতো ইন্দ্রিয়ের বিপুলতা উপলব্ধি করতে হয় , বিনির্মাণ করতে হয় আপনার বিশ্ব, যে বিশ্ব সাধারণের কাছে কখনই কাম্য নয় বলা যেতে পারে কাল্পনিক। তাই কবি সবার কাছে প্রিয় নন, এবং কবিতা অন্যান্য সাহিত্য-শাখার মতো জনপ্রিয় নয়। একথা সত্য যে , সবাই চেনাজানা পথে হাঁটতে অভ্যস্ত হলেও কবি অভ্যস্ত অজানা-অচেনা পথে, ঠিক চেনা-জানা পথের মতো!


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: কবিতা নিয়ে চমৎকার একটি লেখা।অনেক ভালো লাগলো

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪

জয়দেব কর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.