নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক বিজ্ঞানীদের প্রতিমহাবিশ্বের চিন্তা রুহানী জগতের সন্ধান দিচ্ছে? (পর্ব-১)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫০

মহামতি প্লেটো তার জীবদ্দশাই ধারনা করতেন এরকম দুপ্রকার জগতের । প্লেটো কল্পনা করতেন আমাদের জগতের বাইরেও একটা স্বর্গীয় জগত আছে, সেখানে সব নিখুঁত গাণিতিক বিমূর্ত ধারণাগুলো বাস করে। আমরা আমাদের জগতে শতভাগ নিখুঁত রেখা, বৃত্ত, ত্রিভুজ, অসীম সংখ্যক সমান্তরাল রেখা দেখতে পাই না। আমাদের জগতে না পাওয়া গেলেও প্লেটো ভাবতেন সেগুলো পাওয়া যাবে সেই স্বর্গীয় জগতে। শুধু জ্যামিতিক অবয়ব নয়, আমাদের সংখ্যা পদ্ধতি, গাণিতিক, অনুপাত, ধ্রুবক সবকিছুরই বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে সেই স্বর্গীয় জগতে। গণিতবিদদের মধ্যে যারা এখনো, প্লেটোর রিপাবলিকের অর্ধশতাব্দী পরেও এই স্বর্গীয় ফ্যান্টাসিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন তাদের বলা হয় ‘প্লেটোনিস্ট’। তারা সত্যই মনে করেন এমন এক জগত আছে যেখানে গণিতের ‘পাই’, ‘সুবর্ণ অনুপাত’,‘ফিবোনাচি রাশিমালা’ এরা সবাই হাত ধরাধরি করে বাস করে। যেমন, কলেজ ডি ফ্রান্সের বিশ্লেষণ এবং জ্যামিতি বিভাগের চেয়ারপার্সন অ্যালেইন কোনস বলেন ‘মানব মনের বাইরেও আদি এবং ইমিউটেবল গাণিতিক বাস্তবতার অস্তিত্ব রয়েছে’। প্লেটনিস্ট গণিতবিদেরা মনে করেন গণিতবিদের কাজ হচ্ছে সেই গণিত বাস্তবতাগুলো ‘ডিসকোভার’ করা,‘ইনভেন্ট’ নয়। অর্থাৎ গণিতের নিয়মগুলো তৈরি করা যায় না, কেবল খুঁজে বের করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোও ঠিক তেমনি, এর বাস করে বিমূর্ত এক কল্পলোকে, আর এরা বাস্তব জগতকে স্পর্শ করে তখনই যখন তারা এর উপর ক্রিয়া করে। এ যেন, অনেকটা নীচের ছবির মতো


মহামতি প্লেটোর অনুমান ছিলো আরেকটি জগৎ অবশ্যই বিদ্যমান যেখান থেকে এই মহাজগৎ পরিচালিত হয়। এই বস্তুজগতের প্রতিটি অনু-পরমানু আরেকটি জগতের গনিত বা কমান্ডিং প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে। অন্য কোন মাত্রায় অন্য কোন মাধ্যমে দুটি জগৎ সামঞ্জস্যর্পূন।

পদার্থবিদ Sakharov এর মতবাদটি হচ্ছে বিশ্বজগত সৃষ্টির শুরুতে অর্থাৎ Big Bang এর সময় পরমাণু এবং প্রতিপরমাণুর পরিমাণ সমান ছিল না । এই বর্তমান কালের Sakharov এর মতো বেশিরভাগ পদার্থবিদরা বিশ্বাস করেন যে Big Bang-ই সময় বস্তু এবং প্রতিবস্তুর সংঘর্ষ ঘটেছিলো যার কারনে সমস্তটা পর্দাথ ধ্বংশ হয়ে গেলেও কিছু পদার্থ অবশিষ্ট ছিল।বস্তু সম্পূর্ণ রুপে বিলুপ্ত হয়নি কিছু পরিমাণ অবশিষ্ট ছিল আর তাই দিয়েই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি । তাদের মতে ঐ বিলুপ্তির সময় সম্পূর্ণ প্রতিবস্তুর মহাবিশ্ব হারিয়ে যায়নি । প্রতিমহাবিশ্বের অস্তিত্ব প্রমানের প্রয়োজনে শুরু হয় প্রতি কনা নিয়ে গবেষনা। গবেষনাগারে প্রতিকনা নিয়ে বিভিন্নভাবে গবেষনা করা হয়েছে। Cloud chamber এ ইলেকট্রনের প্রতিকনা পজিট্রনের চলাচলের পথ খুব সহজেই দেখা যায়, গবেষনাগারে একটি শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে গামা রশ্মি পাঠিয়ে দেখা যায় ইলেকট্রন ও প্রতিকণা পজিট্রনের চলার পথ পরস্পর হতে বিপরীত দিকে বেকে যায়। ১৯৫৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Particle Accelerator Bevatron (Emilio Segrè ও Owen Chamberlain এন্টি-প্রোটন আবিষ্কার করেন এবং এর জন্য তাঁরা ১৯৫৯ সালে নোবেল পুরস্কার পান) এর মাধ্যমে সর্ব প্রথম এন্টি-প্রোটন কণা আবিস্কার হয়, আর এই কণার চার্জ (ঋণাত্মক চার্জবাহী) ব্যতিত সব ধর্মই প্রোটনের মত । এই সকল প্রতিকনা আবিস্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করতে থাকেন যে প্রতি-পরমাণু বা anti-atom (পজিট্রন, এন্টি-প্রোটন কে কেন্দ্র করে ঘুরবে ) বলে কিছু থাকা সম্ভব । শুধু তাই নয় Anti-elements , Anti-Chemistry , Anti-People, Anti-Earth এমনকি Anti-Universe ও থাকা সম্ভব। ফিজিক্স এর গ্রামাটিক্যাল বা তাত্তীকভাবে এটাই থাকা সম্ভব। যখন ইলেকট্রন এবং প্রতিইলেকট্রন পরস্পর সংস্পর্শে আসে তখন এরা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গামা রশ্মি উৎপন্ন করে যার শক্তি হচ্ছে ১.০২ মিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট বা তারও বেশি । ইদানিং কিছু কিছু বিজ্ঞানী ধারনা করছেন প্রতিমহাবিশ্ব আমাদের এই মহাবিশ্বের ব্লাকহোলের সাথে কানেকটিং কোনভাবে। আর এই কারনে আমাদের ব্লাকহোলের মধ্য থেকে হোয়াইট হোল দিয়ে ক্রমাগত গামা রশ্নির ঝর্না অতিবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি কনিকাসমূহেরর প্রতি কনিকা উদ্ঘাটন হওয়ার পর আধুনিক বিজ্ঞান প্রতি মহাবিশ্ব বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। ইতিমধ্যে বিজ্ঞান প্রমান করে দেখিয়েছি একটি বস্তুর উপর যেকোন ক্রিয়া প্রতি বস্তুর উপর প্রভাবিত ঘটাতে পারে। বিজ্ঞানীরা ফোটন কনার মাধ্যমে এ প্রমান পেঝেছেন। আলোর কনা ফোটন। এক জোড়া ফোটন কনা থেকে যদি ১ টি ফোটন কনা দুরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বিভিন্ন অবস্থায় নড়াচড়া করা হয় তাহলে অপর ফোটন কনিকাটিও একইভাবে নড়ে চড়ে ওঠে। যদিও তাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব বজায় থাকে। এতে প্রমানিত হয় পৃথিবীর মানুষ যাই করুক তার প্রতিচিত্র তার প্রতিজগতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তার বিপরীত সত্তার উপর হুবহু প্রতিফলিত হবে। এতে কোন প্রকার ব্যতিক্রম ঘটবেনা। কারন এ মহাবিশ্বের মানুষ সহ প্রতিটা বস্তুই আলোর কনিকা ফোটন দিয়ে উতপত্তি যা বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত সত্য ।

আমরা জানি, আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগৎ যা কিছু নিয়ে তৈরি, তার সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে ইলেক্ট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়ে। ইলেক্ট্রনের প্রতি পদার্থ যেমন পজিট্রন, ঠিক তেমনি প্রোটন এবং নিউট্রনেরও প্রতি পদার্থ রয়েছে, যাদের নাম যথাক্রমে এন্টি-প্রোটন এবং এন্টি-নিউট্রন। যদি বিগ ব্যাঙ এর সময় এই ১২ টি মৌলিক কণিকা এবং একই সাথে তাদের প্রতি-কণা সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে তো ইলেক্ট্রন, আপ কোয়ার্ক এবং ডাউন কোয়ার্কেরও অবশ্যই প্রতি-কণা রয়েছে। আর তাদের সমন্বয়ে পৃথিবীতে উপস্থিত প্রতিটি পদার্থেরই প্রতি-পদার্থ সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা জানি, পদার্থ এবং প্রতি পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে আসা মাত্রই একে অপরকে ধ্বংস করে দিয়ে আইনস্টাইনের E=mc^2 সূত্র অনুযায়ী শক্তিতে পরিণত হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পৃথিবী এখনো দিব্যি টিকে আছে! তবে কী সেই প্রতি-পদার্থগুলো এমন কোথাও আছে, যেখান থেকে তারা পদার্থকে প্রভাবিত করতে পারছে কিন্তু কোনভাবেই সংস্পর্শে এসে নিজেদের ধ্বংশ করতে পারছে না? আমরা সমগ্র বিশ্বের শতকরা মাত্র ৪ ভাগ সম্বন্ধে জানি, সেই ৪ ভাগ হচ্ছে আমাদের দৃশ্যমান জগৎ। আর বাকি ৯৬ ভাগই আমাদের অজানা! এই ৯৬ ভাগ আমাদের দৃশ্যমান জগতের বহির্ভূত এক অজানা জগৎ। হয়ত প্রতি-পদার্থগুলো সেই অজানা জগতেরই কোনো এক কোণে আত্মগোপন করে রয়েছে! কিন্তু কেমন হতে পারে সেই অজানা জগৎ। প্রতি-পদার্থগুলোকে দৃশ্যমান জগতের বাইরে পাঠিয়ে দিলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কোনো কারণ নেই। বিগ ব্যাং এর আগে পৃথিবীতে কোনো পদার্থ ছিল না, ছিল শুধু শক্তি। আর সেই শক্তি পুন্ঞ্জীভূত হতে হতে এক পর্যায়ে ঘটে মহাবিস্ফোরণ বিগ ব্যাং, এবং এর ফলে সমপরিমাণ পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ সৃষ্টি হয়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীদের মনে যদি সমপরিমাণ পদার্থ এবং প্রতি-পদার্থ যদি একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে তো সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই আবার পরস্পরকে ধ্বংস করে দিয়ে পুনরায় শক্তিতে পরিণত হওয়ার কথা। কিন্তু পৃথিবী তো কোটি কোটি বছর ধরে টিকে আছে!! তবে কী প্রতি-পদার্থের তুলনায় পদার্থ বেশি পরিমাণে সৃষ্টি হয়েছিল? তারপর সব পদার্থ এবং প্রতি-পদার্থ পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর বাড়তি পদার্থগুলো পৃথিবীতে রয়ে গেছে? নাকি সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতি-পদার্থগুলো কোনো এক অজানা জগতে চলে গেছে? পাঠক আধুনিক বিজ্ঞানীদের দুইটি অনুমানের মধ্যে দ্বিতীয়টিই গ্রহণযোগ্য। কারন মহাবিশ্ব ফিজিক্স এর সুত্র মতে প্রতিমহাবিশ্ব থাকতেই হবে। বস্তু জগতের সকল কার্যক্রম প্রতিবস্তু প্রভাবিত করে। ইতিমধ্যে বিজ্ঞান প্রমান করে দেখিয়েছি একটি বস্তুর উপর যেকোন ক্রিয়া প্রতি বস্তুর উপর প্রভাবিত ঘটাতে পারে। বিজ্ঞানীরা ফোটন কনার মাধ্যমে এ প্রমান করেছেন। এক জোড়া ফোটন কনা থেকে যদি ১ টি ফোটন কনা দুরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বিভিন্ন অবস্থায় নড়াচড়া করা হয় তাহলে অপর ফোটন কনিকাটিও একইভাবে নড়ে চড়ে ওঠে। যদিও তাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব বজায় থাকে। সেই সুত্র ধরে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এই মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে তার প্রতিটির ঘটনা সংরক্ষনের জন্য প্রতিমহাবিশ্ব নিয়োজিত শুধু তাই নাই এই মহাবিশ্ব পরিচালনাতে প্রতিমহাবিশ্বের যোগফলের উপর ভিত্তি করেই সম্ভব। অথাৎ এই বস্তুজগতের কমান্ডিং প্রক্রিয়াটা প্রতিমহাবিশ্বের তরঙ্গ দ্বারা নির্ধারিত। আধুনিক নিউরো সাইন্টিস্টরা যেমন মানবদেহের দুইটি স্নায়ুর সংযোগ স্থল হিসেবে নিউরোট্রান্সমিটার খুজে পেয়েছে।এক স্নায়ু থেকে অন্য স্নায়ুতে সংকেত পাঠানোর জন্য দুই স্নায়ুর সংযোগস্থলে নিউরোট্রান্সমিটার নামক উপাদান দরকার হয়। সিনাপ্সে নিউরোট্রান্সমিটার লেনদেনে দুই স্নায়ুর মাঝে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা পরিবহন নিয়ন্ত্রিত হয়। ঠিক তেমনি মহাবিশ্ব এবং প্রতিমহাবিশ্ব এর সংযোগ স্থল হিসেবে এমন কোন কিছু আছে যা দুটি জগতের সংযোগ স্থল। কি হতে পারে? ডার্ক ম্যাটার অথবা ডার্ক এনার্জি? কিংবা ব্লাক হোল? বিজ্ঞানীগণ ধারণা করছেন নিশ্চয় আবিষ্কৃত ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি আমাদের বস্তুজগতে (দৃশ্যমান বস্তুর জগতে) এতোটা প্রভাবশালী হতে পেরেছে তাহলে আমদের জগতের সমান্তরালে দৃশ্যমান বস্তুর বিপরীতে অদৃশ্য বস্তু ও শক্তি দিয়ে প্রতিবস্তুর জগৎ সৃষ্টি হয়ে থাকতেই পারে। এবং সেই জগৎ এই জগতের উপর যথেষ্ট প্রভাব দেখায় কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারিনা। ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির প্রভাব বিদ্যমান থাকায় আমরা সেই প্রতিজগতকে কখনো দেখতে পাবো না, কখনই বুঝতে পারবো না।

প্রতিটি কনিকাসমূহেরর প্রতি কনিকা উদ্ঘাটন হওয়ার পর আধুনিক বিজ্ঞান প্রতি মহাবিশ্ব বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। ইতিমধ্যে বিজ্ঞান প্রমান করে দেখিয়েছি একটি বস্তুর উপর যেকোন ক্রিয়া প্রতি বস্তুর উপর প্রভাবিত ঘটাতে পারে। বিজ্ঞানীরা ফোটন কনার মাধ্যমে এ প্রমান পেঝেছেন। আলোর কনা ফোটন। এক জোড়া ফোটন কনা থেকে যদি ১ টি ফোটন কনা দুরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বিভিন্ন অবস্থায় নড়াচড়া করা হয় তাহলে অপর ফোটন কনিকাটিও একইভাবে নড়ে চড়ে ওঠে। যদিও তাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব বজায় থাকে। এতে প্রমানিত হয় পৃথিবীর মানুষ যাই করুক তার প্রতিচিত্র তার প্রতিজগতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তার বিপরীত সত্তার উপর হুবহু প্রতিফলিত হবে। এতে কোন প্রকার ব্যতিক্রম ঘটবেনা। কারন এ মহাবিশ্বের মানুষ সহ প্রতিটা বস্তুই আলোর কনিকা ফোটন দিয়ে উতপত্তি যা বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত সত্য ।

সুধী পাঠক আপনারা যারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিগব্যাংগ তত্ব সম্পর্কে সামান্যটুকু ধারনা রাখেন তারাই জানেন মহাবিশ্ব এক কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে শুন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শুন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শুন্য নয়। শুণ্যদেশ বলে যাকে আমরা মনে করি সেই রহস্যময় জিরো পয়েন্ট এনার্জির মধ্যে সুক্ষস্তরে সবসময় নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি হতে পদার্থকনা তৈরী হচ্ছে আবার তারা সেই শক্তিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রহস্যময় জিরো পয়েন্ট এনার্জি থেকে পর্দাথ এবং প্রতিপর্দাথ যুগলের অসদ কনিকা Virtual Particles তৈরী হচ্ছে এবং মাত্র ১০-২১ সময় টিকে থেকে আবার তা জিরো পয়েন্ট এনার্জিতে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে একটি ভারচুয়াল কনিকা উৎপন্ন হয় এ বিষয়টিই প্রতিমহাবিশ্বের ধারনার র্পূণতা এনে দেয়। জিরো পয়েন্ট এনার্জিতে যখন ফ্লাকচুয়েশন হয় তখন ভারচুয়াল পর্দাথ এবং প্রতি পর্দাথের যুগল মাত্র ১০-২১ সময় টিকে থেকে আবার হারিয়ে যায়। পর্দাথ ও প্রতিপর্দাথ এর উৎপন্ন হয় ১০-২১ সময় টিকে থেকে আবার শুন্যতার মাঝে হারিয়ে যায়। যদি পর্দাথ এবং প্রতিপর্দাথ একই সাথে উৎপন্ন হয় একই সাথে শুন্যতায় বিলীন হয়। যে ভাচূয়াল কনা দ্বারা মহাবিশ্ব উৎপন্ন হয় ১০-২১ সময় টিকে থাকলেও কিন্তু এই মহাবিশ্ব তেরো হাজার বিলিয়ন বৎসর টিকে আছে। ভাচুয়াল কনাটির পদার্থের দ্বারা মহাবিশ্ব উৎপন্ন হলেও প্রতি পদার্থ গেলো কই?



উপরের চিত্রের দিকে লক্ষ্য করুন ভারচুয়াল পারটিক্যাল কিভাবে গতিময়তা পায়। পর্দাথ এবং প্রতিপর্দাথ কিভাবে উৎপত্তি এবং বিনাশ ঘটে। ডি শিটার স্পেশ থেকে ঠিক এইভাবেই র্ভাচুয়াল পদার্থ টি এক বিস্ফোরনের মাধ্যমে মহাবিশ্বে রুপে বের হয়ে যায় কিন্তু এন্টি পার্টিকেল টি কোথায় গেলো? সৃষ্টির শুরুতে যে প্রতিপদার্থ ছিলো তা নিঃসন্দেহে হারিয়ে যেতে পারে না। তবে এটা মেনে নিতে হয় যে এই মহাবিশ্ব যেহেতু ভারচুয়াল কনা থেকে উৎপত্তি সেহেতু এর প্রতিপর্দাথ থেকে নিশ্চিত ভাবেই প্রতিমহাবিশ্বের উৎপত্তি ঘটেছে যে সম্পর্কে আমরা ধারনা রাখি না। উপরের চিত্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন ভার্চয়াল পার্টিকেল যেদিকে গতিশীল এ্যান্টি পার্টিকেল ঠিক তার উল্টা দিকে গতিশীল। এই বস্তুময় মহাবিশ্ব যেমনভাবে একদিকে গতিময় হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এবং ঠিক তেমনি এই প্রতিমহাবিশ্ব উল্টা দিকেই গতিময় হয়েই সৃষ্টি হতে হবে। প্রতিমহাবিশ্বটিই আধুনিক বিজ্ঞানীদের নতুন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরী করেছে। প্রথম এই বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরেন ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং। তিনি তাই লেখায় বোঝালেন প্রতি মহাবিশ্ব থাকতে পারে। এবং এই প্রতিমহাবিশ্ব এই মহাবিশ্বের সাথে কানেকটেড।


বিশিষ্ট পর্দাথবিজ্ঞানী মিশিও কাকু তার “ফিজিক্স অফ দি ইমপোসিবল” বইতে উল্লেখ করেছিলেন “এটা চিন্তা করে বিস্মিত হতে হয় যে প্রকৃতি যথার্থ কোন কারণ ছাড়াই সাব-অ্যাটমিক কণাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছিল । আমরা এতোদিন জেনে এসেছিলাম প্রকৃতি সম্পূর্ণ মিতব্যয়ি, কিন্তু এখন আমরা প্রতিকণার কথা জানি আর তাই প্রকৃতিকে মনে করা হয় (অপ্রয়োজনীয়) বস্তুকে সবচেয়ে বেশি অপব্যয় করেছে। প্রশ্ন আসে যদি প্রতিবস্তু থেকে থাকে তাহলে কি প্রতিমহাবিশ্বও আছে?” আধুনিক বিজ্ঞান আজ চূড়ান্তভাবে বিশ্বাস করে প্রতিমহাবিশ্ব আছে। এবং এটা আরো বেশি প্রমান করছে ষ্ট্রিং থিওরি। ষ্ট্রিং তাত্ত্বীকদের ভাষায় আমাদের পর্যবেক্ষন করা সকল বস্তুু কনিকা ও বল কনিকা আর কিছুই নয় শুধু ষ্ট্রিং এর বিভিন্ন রুপের কম্পনের প্রতিফলন। গীটার এর তারে কম্পনের ফলে যেমন বেজে ওঠে এক একটি সুর ঠিক তেমনি ষ্ট্রিং বা তন্তুু গুলোর কম্পনের ধরন অনুসারে এক একটি কনিকার আবির্ভূত হয়। কম্পনের ফলে বিভিন্ন রকম কনিকা যেমন দেখা যায় তেমনি তন্তু গুলোর কম্পনের ধরন অনুসারে কনিকাগুলোর ভর ও চার্জ নিধারিত হয়। একটি ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে ষ্ট্রিং গুলো কাপছে একরকম আর কোয়ার্কের ক্ষেত্রে কাপছে আরেক রকম। কাজেই ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রিনো এ জাতীয় কনিকা গুলি একই মৌলিক তন্তুসমূহের বিভিন্ন মোডের কম্পনের প্রকাশ’।কিন্তু প্রশ্ন থাকে প্রতিটি কনিকা তার কম্পনের মোডের বর্হিপ্রকাশের তথ্য পাচ্ছে কোথা থেকে? কোয়ার্কের কনার কম্পন কোয়ার্কের ধরনের। কিন্ত্র এই কম্পনের বা সুরের ভিন্নতার নির্দেশ আসছে কোথা থেকে। কিভাবে কনাটি জানছে তাকে কোয়ার্কের মতো কাঁপতে হবে। তাহলে নিশ্চয় আরেকটি প্রতি কোয়ার্ক রয়েছে। এবং তাদের দুটির সামঞ্জস্যতা এবং ঐক্যমিত আচরন বস্তুটির স্বভাব নির্ধারণ করে থাকে।বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ষ্টিফেন ডব্লিউ হকিং প্রথম ধারনা দেন প্রতিমাহাবিশ্ব থাকতে পারে । যা ব্লাকহোলের সাথে কানেকটেড। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে এখন দাবী করছে বস্তুজগতের পাশাপাশি সমান্তরালে বিপরীত জগৎ সৃষ্টি হয়ে আছে। আর সেই জগতে এ পৃথিবীতে যতো প্রকার সত্তা আছে,তার প্রতিটিরই বিপরীত সত্তা সৃষ্টি হয়ে বিদ্যমান আছে। অর্থাৎ আমাদের মানব সমাজের প্রত্যেকেরই একটি করে বিপরীত সত্তা তৈরী হয়ে আছে যাকে বলে ‘আইডেনটিক্যাল টুইন’। আগামীতে যতো মানুষ আসবে পৃথিবীতে,ঠিক ততোজনেরই বিপরীত সত্তা ঐ বিপরীত জগতে তৈরী হবে। ইদানিং এই ধারনাটি চমকপ্রদ ধারনা হিসেবে প্রতিষ্টিত। আইডেন্ক্যিাল টুইন যা দ্বারা অনুমিত হচ্ছে মহাবিশ্বে আরেকটি মহাবিশ্ব আছে, আমার মতো আরেকটি মানুষ আছে যা বস্তুজগতে প্রতিকনিকা সমূহ দ্বারা নির্মিত যা দ্বারা এই মহাবিশ্ব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এবং এই বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা ঐ বিশ্বের উপর প্রভাবিত হয়। মানুষ এখানে যাই করুক তা তার প্রতিজগতকে প্রভাবিত করে। আধুনিক বিজ্ঞান অনেকটাই এগিয়ে গেছে এই বিষষটি নিয়ে।

আমরা যদি গভীরভাবে উপলদ্ধি করি যে এ বস্তুজগতের বাইরে আরেকটি জগৎ বিদ্যমান আর সে জগৎ রুহানী জগৎ। যাকে আমরা বলতে পারি আত্মার জগৎ বা রুহানী জগৎ। এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আত্মা কি? আত্মাকে বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে মানুষকে। মানুষ জ্ঞানের প্রধান অংশ হলো অনুভূতি। বিভিন্ন তরঙ্গই মানবদেহে অনুভ’তী সৃষ্টি করে। বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আমাদের অক্ষিপটে আঘাত করে। অথচ মস্তিস্কে পৌছায় স্নায়ু স্পন্দন। এই স্নায়ু স্পন্দনই আমাদের মধ্যে বিভিন্ন অনুভ’তী সৃষ্টি করে। কখনও দৃষ্টির অনুভ’তী সৃষ্টি করে, দেহপটে আঘাতের অনুভ’তী সহ সুখ দুঃখ ভালবাসা কষ্ট ভালোলাগা, কখনও খাবারের স্বাদ, কোন কিছুর গন্ধ। এসকল অনুভ’তী সমূহ বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের প্রভাবে ঘটলেও মস্তিস্কে পৌছায় স্নায়ু স্পন্দন। এতেই মস্তিস্ক বুঝে যায় এটা কি জাতীয় মানসিক ক্রিয়া। ফলে মানুষ অনুভ’তী উপলদ্ধি করে থাকে। এসকল মানসিক ক্রিয়াগুলোই মনের কর্মকান্ডের মধ্যে পড়ে সত্য তারপরও মনের প্রধান ক্রিয়া হচ্ছে আদেশ ঘটিত ক্রিয়া। অথাৎ মানব দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় অনুভুতীর উপর নির্ভর করে মানুষ মস্তিস্ক যে আদেশ ক্রিয়া চালায় তাই হলো মানুষের মন। যেমন শরীরে মশা কামড়াচ্ছে মস্তিস্ক হাতকে আদেশ করলো হাত তুমি মশাকে আঘাত কর, আর অমনি হাত এসে মশার উপর আঘাত করলো। এই যে দেহ অভ্যন্তরে কমান্ডিং প্রক্রিয়া তাই আত্মার কর্মকান্ড। এই যে স্বল্প সময়ে মানুষের মানসিক ক্রিয়া টার প্রভাব এক সুক্ষ কমান্ডিং প্রকিয়ার মাধ্যমে ঘটে। দেহ অভ্যন্তরে এই কমান্ডিং বিষয়টাই মন, আত্মা বা আল কোরআনের ভাষায় যা “আদেশ ঘটিত ব্যাপার”। আল কোরআন এ আত্মা সম্পর্কে বলা আছে “ হে মুহাম্মদ উহারা তোমাকে আত্মা সম্পর্কে প্রশ্ন করে তুমি উহাদের বল আত্মা একটি আদেশ ঘটিত ব্যাপার” মূল কথা হলো চেতনাই হলো আত্মার স্বরুপ। চিন্তা হলো আত্মা হতে উদ্ভুত একটি কার্যক্রম। আাত্মা নামক কোন বিষয় নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞান অস্বীকার করে। আর আল কোরআন এ সকল নাস্তিকদের সম্পর্কে বলে “তাহারা যে বিষয়ে জ্ঞান র্অজন করে নাই –তাহা অস্বীকার করে”(১০:৩৯)। আল কোরআনে রুহু বা আত্বা সম্পর্কে বলছে “ রুহ এবং উহাকে সুগঠিতরুপে সুষ্টিকারীর শপথ’ যিনি তাদের অন্তরে ভালো ও মন্দ ঢেলে দিয়েছেন। ” (সুরা শামস:৭-৮) অতএব রুহু সৃষ্টিশীল একটি বিষয়। এ আয়াতটি আপনাকে নতুন চিন্তার পানে অবশ্যই ধাবিত করবে। রুহু এবং উহাকে। এখানে দুটি বিষয়। আধুনিক ধর্মীয় তাফসীরকারীগণ এখানে মানুষ বোঝাচ্ছেন। রুহু এবং নফস এর সমন্ময়। নফস বলতে মানবদেহের জৈবিক কাঠামোকে বোঝানো হয়। রুহু আলাদা একটি বিষয় যার একটি জগৎ আছে এবং সেখানে রুহু অবস্থান করে যাকে রুহানী জগৎ বলা হয়। মানুষের জীবনের সকল পাপ রুহুর উপর প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞানীরা ফোটন কনার মাধ্যমে এ প্রমান করেছেন। এক জোড়া ফোটন কনা থেকে যদি ১ টি ফোটন কনা দুরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বিভিন্ন অবস্থায় নড়াচড়া করা হয় তাহলে অপর ফোটন কনিকাটিও একইভাবে নড়ে চড়ে ওঠে। যদিও তাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব বজায় থাকে। সেই হিসাব করলে আমাদের স্বীকার করে নিতে হয় প্রতিজগৎ বা আত্মার বিষয়টি। সকল বস্তু যেহেতু ফোটন কনা দিয়ে তৈরী তাহলে একজন মানুষের প্রতি জগৎ বা আত্মার উপর মানুষের সেই প্রভাব পড়তে পারে। যদিও আমরা জানি রুহু বা এ জগৎ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এর পরিধি খুবই কম। হয়তো খুব সামান্যই জানবে। তারপরেও রুহানী জগৎ কি? এ প্রশ্নের কাছাকাছি সময়কালে আমরা চলে এসেছি। এ বিষয়ে আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে সূরা ‘নামল’-র ৬৫ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন এভাবে-“বল আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কেউ মহাবিশ্বে অদৃশ্য বিষয়সমূহের পূর্ণ জ্ঞান রাখে না।”

(চলবে......। পরবতীতে ২য় সংখ্যা)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: এক অনুচ্ছেদ পড়েছি। ভালো লেগেছে। আস্তে আস্তে সব পড়ব আশাকরি।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৫

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। সাথেই থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.