নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ অংশ
এবার শুঁড়িখানায়
কদিন পর দেবীর আদেশ মত ফিরে গেলাম আমার পুরোনো শহরে,যথাযথ ধন্যবাদ দেওয়ার সূযোগ হয়নি,ইচ্ছা ছিল মাদুরায় পৌঁছানোর পঢ় দেবী আইসিসের যথাযযথ পূজা আচার করার,যদিও আমার এ কদিনের ভাললাগার জায়গাটা ছেড়ে যেতে বেশ একটু কষ্টই হচ্ছিল।
বিদায়ের আগে চোখের জলে দেবী মুর্তির পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলাম-কৃতজ্ঞতার উচ্ছাসে ভরা প্রার্থনা, ‘ওগো দেবী,তুমি দেব দেবীদের মধ্যে সেইপবিত্র মহাশক্তি,পৃথিবীর ভালমন্দের জন্য যার চিন্তার শেষ নাই,তোমার করুনায় বেঁচে আছি আমরা।তুমি আমাদের মা,তোমার আনুকুল্যেই আমরা এড়াতে পারি সমুদ্র যাত্রায় ঝড় ঝাপটা,তুমি একাই আমাদের উদ্ধার কর যে কোন বিপদের হাত থেকে।স্বর্গের দেবতারা তোমাকে পুজো করে-মরলোকের মানুষেরা তোমার ভয়ে মাথা নত করে চলে,তোমার আদেশেই পৃথিবী ঘোরে সূর্যের চারদিকে,তুমিই দিয়েছ সূর্যকে আলো,তোমার আদেশেই চলে ইহলোক পরলোক।
তোমার কথামত নক্ষত্রের যাওয়া আসা,তোমার কথা ছাড়া সারা বিশ্বব্রক্ষান্ড অচল।তোমার এক ইঙ্গিতে বাতাস ছুটে যায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে,বৃষ্টি আসে আকাশ জুড়ে,সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে যায় আকাশের শেষ মাথায়,উড়ে পাখীরা,বনের জন্তরা ছুটে যায়,একেবেকে সাপের দল,সবাই ভয়ে কাতর তোমার।আমার সাধ্যি নেই যথাযথ প্রশংসা করার,প্রতিপত্তি নেই যথাযথ উৎসর্গ করার,যদি থাকতো হাজার মুখ,হাজার সুরে কথা বলার ক্ষমতা তবুও শেষ হবে না তোমার গুণগান গাওয়া।দরিদ্র এই ভক্ত সাধ্যমত করে যাবে তোমার পূজা,সাধ্যমত সোচ্চার হয়ে উঠবে তোমার গুনগানে,তোমার স্বর্গীয় রহস্য চিরদিনই গাঁথা থাকবে আমার মনে’।
তারপর আমার আধ্যাত্মিক গুরু মহাপুরোহিত মিথরাসের,গালে হাতে চুমু দিয়ে বিদায় নিলাম- এটা বলতে ভুলিনি,তার করুনার প্রতিদান দেওয়া কোনদিন সম্ভব হবে না।।মিথরাস আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘চিন্তা করো না,ফিরে যাও তোমার স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়,এটাই দেবীর আদেশ’।
ইচ্ছা ছিল সোজাসুজি ফিরে যাব বাড়ী মাদুয়ারায়,তবে দেবী আইসিসের আদেশ ছিল অন্য,জাহাজে করে রোমে যাওয়ার জন্যে।আশা মতই এ যাত্রায় আবহাওয়া,অন্যান্য সব পরিস্থিতি ছিল আমাদের অনুকুলে,সময়মতই পৌছালাম ওস্ট্রিয়ার নৌবন্দরে,কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়ার পর আবার যাত্রা শুরু হলো দেবি আইসিসের মন্দিরের দিকে,মাসের তের তারিখে মঙ্গল দ্বীপের বাগানে,যার নাম ‘আমাদের মাঠের দেবী’।
যদিও আমি বিদেশি করিনিথিয়ান,তবে দীক্ষীত পুরোহিত হিসেবে কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় আমার কোন বাঁধা ছিল না,সেখানে আমি দেবীর নানান পূজো অর্চনায় উপস্থিত ছিলাম।সুর্য তার দিনের যাত্রা শেষ করে ক্লান্ত হয়ে,ঘরে ফিরছে,দেবী এসে দেখা দিল স্বপ্নে আর আদেশ করলো নতুন আরেক অভিযানের,নতুন আরেক দীক্ষায় দীক্ষিত হওয়ার জন্যে।
ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি দেবীর আদেশটা কি,কি করনীয় আমার নতুন অভিযানে।আমার দীক্ষা পর্ব তো শেষ হওয়ার কথা,আমি তো সম্পূর্ন দীক্ষিত?মহাপুরোহিত মিথরাসের সাথে আলাপ আলোচনা করে বুঝলাম,এ পর্যন্ত আমার যা দীক্ষা সেটা শুধু দেবী আইসিসের আংশিক পুজা আঁচার,আমার অনেক জানা বাকী অন্যান্য দেবতাদের পূজা আঁচার সমন্ধে,
দেবতা ওসাইরাইসের পুজো৪ রহস্য জানার,যদিও তারা জড়িত একে অন্যের সাথে,কিন্ত সেখানে পূজোর আঁচার ধরণ একেবারেই সম্পূর্ন আলাদা।
বোঝা গেল মহাদেবীর পছন্দের এক ভক্ত আমি,স্বপ্নে দেখলাম দেবতা ওসাইরাইসের পুরোহিত সাদা পোশাকে,হাতে হাতীর দাঁতের জপের মালা,আর ও অন্যান্য পূজোর সরঞ্জাম নিয়ে আমার ঘরের অন্যান্য দেবতার মুর্তির মাঝে সাজিয়ে দিয়ে গেল।ঘরের চেয়ারে বসে এক পুরোহিত বললো,বিরাট একটা ভোজের আয়োজন করার জন্যে।বাম পাটা খুটিয়ে খুটিয়ে হাটছিল সেই পুরোহিত-ধরেই নিলাম সেটা দেবতার দেয়া সংকেত,তাকে চিনতে যেন কোন অসুবিধা না হয়।দেবতার র্নিদেশ মত সকালে ছুটে গেলাম মন্দিরে-চারপাশে খোঁজা আরম্ভ করলাম পুরোহিতেকে,স্বপ্নে দেখা সেই খোঁড়া পুরোহিতের মতন।
সে ধরণের কোন পুরোহিত ছিল না মন্দিরে দেখলাম-একমাত্র মন্দিরের বাতি জ্বালানোর মজুরটার সাথে মিল ছিল শুধু আমার স্বপ্নে দেখা খোঁড়া পুরোহিতের সাথে,তার চেহারা অন্যান্য সবকিছুই স্বপ্নের পুরোহিতটার সাথে বেশ মিল ছিল।তার নাম আসিনিয়াস মার্শেলিয়স,আসিনিয়াস অংশটা কিছুটা আমার গাধা রূপান্তরের সাথে জড়িত।কথায় বোঝা গেল-দেবতার আদেশটা জানা তারও,তার কাছেও র্নিদেশ ছিল সব করণীয়গুলো।রাতে দেবতা ওসাইরাইসের মন্দিরে সন্ধ্যাবাতি দেয়ার সময়-দেবতার মুর্তির মুখেই শোনা তার আদেশ, ‘মাদুয়ারা থেকে কেউ একজন আসবে,যদিও তার সম্পত্তি প্রতিপত্তি তেমন একটা নেই,তবুও তাকে পুরোহিত হিসেবে দীক্ষায় যেন কোন দেরী না করা হয়’।দেবতা ওসাইরাইসের আদেশ মত,আমি দেবতার পূর্বর্নিধারিত একজন-দেবতার আর্শিবাদে যার খ্যাতি,প্রতিপত্তি ছড়াবে চারপাশে,আর সেই পুরোহিতও লাভবান হবে আমার লাভে।
এভাবেই স্বপ্নের রহস্যগুলো জানতে পারলাম-তবে দূর্ভাগ্যবশত দীক্ষার নতুন পর্ব এই যাত্রায় হয়নি অর্থাভাবে,আমার কাছে সরঞ্জাম যোগাড় করার মত পয়সাটাও ছিল না।করিনিথ থেকে রোম যাত্রায় হাতে যা পয়সাকড়ি যা ছিল মোটামুটি সব শেষ তখন,রোমের দৈনন্দিনতার খরচপাতি করিনিথ চেয়ে অনেক বেশি।খরচের অভাবে দীক্ষা পূরণ না হওয়ায় মনটা ভেঙ্গে গেছে,অনেকটা যেন সেই প্রবাদের মত। ‘কোথায় দেবতার মুকুট আর কোথায় দেবতার পায়ের জুতো’,আরও দুঃখের কথা দেবতা স্বপ্নে আমাকে বার বার জানাচ্ছিল তার র্নিদেশ।
শেষমেষ দেবতার র্নিদেশ মত পোশাক বিক্রি করে দীক্ষাপর্ব শেষ করলাম।স্বপ্নে দেবতা ওসাইরাসের উপদেশ ছিল,‘প্রচন্ড চাওয়ার কোন জিনিষ যদি তুমি যদি কিনতে চাও,তবে তখন তোমার কোন কার্পন্য হবে কি?তাহলে দীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে তোমার এই দ্বিধা কেন’?
প্রস্ততি আরম্ভ হলো আবার,দশ দিন উপবাস শেষ করে,মাথাটা নাড়া করতে হলো নিয়মমত।
দেবতা ওসাইরাইসের রাতের নাচের পর্বের নতুন মুখপাত্র হলাম আমি।নতুন দীক্ষায় আমাকে দিল নতুন ক্ষমতা-অচেনা এক দেশেও আমি ক্ষমতাশালী একজন।দেবতার আর্শীবাদে মন্দিরের নতুন পুরোহিত আমি-যদিও আমাকে নানান আচার পর্ব,বলা করা সবকিছুই করতে হতো ল্যাটিনে,গ্রীক ভাষায় না।
হয়তো বা বিশ্বাস করার মত নয়-তবে আবার স্বপ্নে আদেশ পেলাম,তৃতীয় দীক্ষা নেয়ার জন্যে।বোধগম্য হচ্ছিল না-আবার দীক্ষা পর্ব কেন,এর আগে তো দুবার শেষ করলাম দীক্ষা,আঁচার পর্ব,মনে মনে বললাম ,‘নিশ্চয় কোথাও একটা ভুল আছে’, হয়তো ঐ পুরোহিতরা স্বপ্নের কোন ভুল ব্যখা করছে নিশ্চয়,হয়তো কোন কিছু ঠিকমত লুকিয়ে রেখেছে’।এটাও আমার মনে হচ্ছিল,এমনও হতে পারে,পুরোহিতরা হয়তো আমাকে অন্য কিছু বোঝাচ্ছে,যা স্বপ্নের আদেশের উল্টো কিছু।দন্দে যখন এপাশ ওপাশ করছি,তখন স্বপ্নে এক দেবতা এসে আমাকে সবকিছুর ব্যখা দিল,যদিও দেবতার নামটা আমার ঠিক জানা নেই। ‘তোমার এই অযথা সন্দেহের কোন কারণ নাই,তোমার এই ধারণাগুলোও ভুল যে তোমাকে সম্পুর্ন দীক্ষা দেয়া হয়নি,এটাও তোমার বোঝার ভুল,যে পুরোহিতরা দীক্ষা পর্বের অনেক কিছু লুকিয়ে রাখছে।তুমি ভাগ্যবান,দেবতাদের বিশেষ পচ্ছন্দের একজন যাকে স্বয়ং ওসাইরাইস স্বপ্নে দর্শন দিয়ে দীক্ষা নেওয়ার কথা বলছে।জান অনেকের ভাগ্যে দেবতার একবারই দর্শন হয় না,তুমি এমন সৌভাগ্যবান যে সেই মহাদেবতার দেখা তোমার বেশ কবার।তোমার কটা উত্তরীয় আছে এখনও করিনিথের মন্দিরে,আরেকটা উত্তরীয় যেটা তুমি এখানে নিয়ে এসেছ সেটাতো এখানে অচল।তুমি তো জানই গ্রীক দীক্ষা আঁচার এখানে চলে না,এখানকার নিয়মমত সবকিছু পালন করার জন্যেই দেবতার র্নিদেশ দেওয়া নতুন দীক্ষা পর্বের’।
স্বপ্নে দেবতার কথায় দূর হলো আমার মনের সন্দেহ,মহাপুরোহিতকে আমার স্বপ্নের কথা জানালাম।প্রথামত আরম্ভ হলো আবার উপবাস পালন,কোন মাংস,মাছ খাওয়া নাই,দীক্ষার সমস্ত খরচ আমার।আঁচারের সাজ সরঞ্জাম আনলাম আমার ধর্মীয় বিশ্বাসমতে,মন্দিরের কোন আয়োজন প্রয়োজন মত নয়।
এই খরচ আর কষ্টের জন্য আমার দুঃখ করার কোন কারণ ছিল না দেবতার আর্শীবাদে আমার প্রতিপত্তির কোন অভাব ছিল না।কদিন পর আবার স্বপ্নে দেখা পেলাম দেবতা
ওসাইরাইসের,দেবতাদের দেবতা,মহা শক্তিশালী,ইহলোক পরলোকের সব শক্তির শাসক।দেবতা ওসাইরাইসের স্বপ্নে দেখা হলো এবার আসল রুপে আমার,অন্য কোন ছদ্মবেশে না।
দেবতা ওসাইরাইসের ভবিষ্যত বানী ছিল,আইনজীবী হিসেবে আমার খ্যাতি প্রতিপত্তি খুব শীঘ্রই পৌঁছাবে তুঙ্গে,তবে মাঝের দীক্ষা পর্বে আসবে বেশ কিছু ধাক্কা।দেবতা ওসাইরাইস স্বপ্নে বললো-মন্দিরের সব পুরোহিতদের সাথে দীক্ষার পরে জানতে পারবো, আমি মন্দিরের আলোবাহক না,সেখানকার মহাপুরোহিত,মাথা নাড়া করে আমার দায়িত্ব পালন করে চললাম,যেটা সৈরাচারী সুল্লার সময় থেকে প্রচলিত,আমার কোনই লজ্জা ছিল না আবার এভাবে দায়িত্ব পালনে।
000000000000000
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ২:০৭
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: এই তর্জমার অর্থ কি ?
...................................................
আপনার নিজস্ব চিন্তা চেতনায় ব্লগ লিখুন
আমরা জ্ঞান অর্জন করি ।