নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

১১ ই মে, ২০২১ রাত ১:৩৮

(১৮) লুসিয়াসের রুপান্তর

‘এই ঘটনার সাক্ষী গতকালকে আমাকে জানালো তার এক বন্ধু খুবই অসুস্থ,হয়তো বাঁচার কোন আশা নাই,আর ঐ ভাবে অসহনীয় যন্ত্রনায় বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই তার জন্যে আর্শীবাদ।তারপর ২০০টা সোনার মোহর আমার হাতে দিয়ে,বন্ধুর জন্যে একটা বিষের প্যাকেট দেয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করলো,সব কিছু শোনার পর সহানুভুতিতে আমি তাকে একটা প্যাকেটও দিলাম।তবে মনে কিছুটা সন্দেহ হওয়ায় একটা শর্ত ছিল আমার,পরের দিন জহুরীর দোকানে গিয়ে মোহরগুলো দেখে ওজন করে দিতে হবে আর তাই মোহরের ব্যাগটা বন্ধ করে তার আগুলের ছাপ দিয়ে আমার কাছে সে রেখে যায়,সেটা আমার কাছেই আছে’।

‘আদালতে এসে দেখি সেই ক্রীতদাসই প্রধান আসামী,তাই আমি তাড়াতাড়ি আমার এক ক্রীতদাসকে মোহরের ব্যাগটা আনার জন্য বাড়ীতে পাঠালাম।এই যে সবাই দেখেন ওর হাতের ছাপ ব্যাগে,এখন তাকে প্রশ্ন করে দেখা যাক,সত্যিটা স্বীকার করে কি না?তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হোক কেন অযথা সে একজন নির্দোষী মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে’।

কথাগুলো শোনার পর ভঁয়ে কাঁপছিল মিথ্যাবাদী ক্রীতদাস,কি করবে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না সে,তবে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললো-ডাক্তার কেন যে সব মিথ্যা কথা বলছে সে বুঝে উঠতে পারছে না,সে যা বলেছে শপথ নিয়ে সবটুকুই সত্যি,আর বিচারকদের দায়িত্ব এ ব্যাপারে একটা নিরপেক্ষ রায় দেওয়া,প্রমান পরীক্ষা করে,ক্রীতদাস তার দেখাকে এক পাশে সরিয়ে দিলে,সেটা সত্যির অবমাননা করা হবে।ক্রীতদাসকে তার হাতের ছাপ দিতে বললে,গড়িমসি করা আরম্ভ করলো,বাধ্য হয়ে আদালতের পেয়াদাদের সাহায্যে তার হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখা গেল,বুড়ো ডাক্তারের কথাই ঠিক।

আদালতের লোকজন গ্রীক আইন মতে ক্রীতদাসটাকে গাড়ির চাকার সাথে বেঁধে ঘোড়া দিয়ে টেনে র্নিযাতন করা আরম্ভ করলো,কিন্ত কোন ভাবেই তার কাছে সত্যি কথাটা বের করা গেল না।এমন কি তার পায়ের তালুর নীচে আগুন জ্বালিয়ে যন্ত্রনাও কোন লাভ হলো না।সবাই বুঝে উঠতে পারছিল না,কোনটা সত্যি,শুধু ডাক্তারের কথায় আর ওই আনুষাজ্ঞিক প্রমানে কি করা যায়?ডাক্তার তখন মন্তব্য করলো,‘এ ভাবে আমরা নিশ্চয় একজন র্নিদোষী মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে রাজী নই,আর এই শয়তান ক্রীতদাস আদালতকে সম্পুর্ন বোকা বানিয়েই ছাড়লো,এই অবস্থায় তাকে কোন শাস্তি দেওয়াও সম্ভব কি?তবে আমার কাছে যথাযথ প্রমান আছে।

প্যাকেট দেওয়ার আমার মনে হলো,আমি যদি বিষের প্যাকেট না দেই হয়তো সে অন্য কারও না কারও কাছে কান্নাকাটি করে ঠিকই জোগাড় করবে,না হয় তো চাকু বা তলোয়ার দিয়ে ওর অপকর্ম সারবে।ডাক্তার হওয়ার সময় আমরা শপথ নেই জীবন রক্ষা করার,তাই আমার কাছে ক্রীতদাসটা বিষের প্যাকেট যেটা নিয়ে গেল,সেটা বিষের বদলে একটা ঘুমের ঔষুধ,ম্যান্ড্রাডোরা,এতই শক্তিশালী ঘুমের ওষুধ যে মৃত্যুর সাথে পার্থক্যটা যাচাই করা অনেকটা অসম্ভব।এটা অবাক হওয়ার মত ব্যাপার যে ঐ ধরণের অত্যাচারের জন্যে ক্রীতদাসের মানসিক প্রস্ততি ছিল,কেননা আইনমত তার প্রাপ্য বিচার আরও ভয়াবহ। ছেলেটাকে আমার দেওয়া বিষের প্যাকেট যদি দেওয়া হয়ে থাকে তবে সে ঠিকই সুস্থ শরীরেই আছে।আর তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলে আমাদের এ ব্যাপারে ঠিক মত অনুসন্ধান করা উচিত’।

এ কথা শোনার পর সাময়িকভাবে সবকিছু স্থগিত রেখে,সবাই ছুটে গেল পৌরসভার সদস্যের বাড়িতে,প্রথমেই পৌছালো সদস্য নিজেই এবং ছেলের কফিনের ঢাকনা তুলে দেখে তার ছোট ছেলে যেন তখন ঘুম থেকে উঠে বসার চেষ্টা করছে।আনন্দে উল্লাসে পৌরসভার সদস্য ছেলেকে দৌড়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো,এক্সহেলের শরীরে তখন ও জড়ানো মৃতের জন্যে আনুষ্ঠানিক সাদা পোষাক।আর বড় ছেলেকে র্নিদোষ প্রমান করার কিছু বাকী থাকলো না,পৌরসভার সদস্যের স্ত্রীকে দেওয়া হলো যাবতজীবন কারাদন্ড আর ক্রীতদাসের শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদন্ড।ঘটনাটার মোড়গুলো ছিল সত্যিই অদ্ভুত বড় ছেলের র্নিদোষিতা প্রমান করার জন্যে দেবতা স্বর্গ থেকে নেমে স্বয়ং তার রথ ছেড়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে বসে ছিল।

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

গুরুর সাথে

আমার জন্যে অদ্ভুত এক সৌভাগ্য অপেক্ষা করে ছিল এই সময়টায়, যে সিপাহী আমাকে নিয়ে গেল হঠাৎ তাকে কাজের সুবাদে রোমে পাঠানোর আদেশ,আমাকে বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় থাকলো না তার,দশ ড্রামাকে সে আমাকে বিক্রি করে দিল দুই ক্রীতদাস ভাই এর কাছে।দুজনেই কাজ করতো থেসিয়াস নামে এক ধনী ব্যাবসায়ীর,ব্যাবসায়ের কাজে তখন আসা তার সেই শহরটায়।আমাকে দুই ভাই নিয়ে গেল রান্নাবান্নার হাঁড়িপাতিল,নানান সরঞ্জাম বয়ে নেওয়ার জন্যে,যেন রান্নার কাজের তৃতীয় বাবুর্চি।আমার রূপান্তরের জীবনে ওটাই ছিল বোধকরি সবচেয়ে আনন্দময় পর্ব।প্রতিদিন সন্ধ্যায় তৈরী হতো থেসাইয়াসের রাজকীয় খাবার-কচি শূওরের মাংসের রোষ্ট,মুরগি,সদ্য ধরে আনা মাছ,আরও নানান ধরণের উপাদেয়,সাথে নানান মুখরোচক মিষ্টি।সব কিছু থেসিয়াসের পক্ষে শেষ করা সম্ভব হতো না,তাই বাকী খাবারগুলো আমার দুই ক্রীতদাস মনিব ঘরে নিয়ে আসতো নিজেদের খাওয়ার জন্যে।আর আমার ক্রীতদাস মনিবরা সরকারী হাম্মামে(গোসলখানায়) গেলে আমি আমার ইচ্ছামত আনন্দ করে পেট পুরে খেয়ে নিতাম।

প্রথম দিকে আমি ভিন্ন ভিন্ন খাবারের একটু একটু নিয়ে আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করতাম,
বেশ ভালই চলছিল আমার এই নতুন চালাকির পর্ব।তবে আমার ক্রীতদাস মনিবরা এর মধ্যেই ছিল বেশ একটু সন্দিহান,কোথাও যেন হিসেবে মিল হচ্ছিল না,খাবারগুলো কেমন জানি কমে যাচ্ছিল।

এক বাবুর্চি ভাই আরেক জনকে বলেই ফেললো,‘ আমি সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না,তুমি আমাকে এভাবে ঠকিয়ে যাচ্ছ।প্রতিদিন তুমি আমার পেছনে খাবার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছ,আবার মালিকের বেঁচে থাকা খাবারগুলো থেকে ও অর্ধেক ভাগ নিতে দ্বিধা করছো না।আমাদের দুজনের এই ব্যাবসায়িক সম্পর্কে তোমার যদি পচ্ছন্দ না হয়,বলে ফেল, না হলে তোনার এ ব্যাবহারের কোন কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না’।

‘এটা তুমি আমার মনের কথাটাই বললে’ উত্তর দিল ময়রা ভাইটা।‘শুধু তুমি চুরি করছো না,আবার বেশ চাল চালিয়ে আমাকেই দোষি বানাতেও দ্বিধা হচ্ছে না,তোমার।যাকগে এই নোংরা ব্যাপারটা আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করার চেয়ে আমাদের এটা সমাধান করা দরকার।তোমার নিশ্চয় জানা আছে থিবস শহরের এটোকেলেস আর পলিনেসেস দুই ভাই এর কথা,ভাগাভাগী নিয়ে দুজনে খুনাখুনি করে নিজেদের কি ভাবে শেষ করলো?’

দুজনা তাদের কথা কাটাকাটি আলোচনায় বুঝতে পারলো খাবারটা চুরি হচ্ছে তৃতীয় কোন লোকের মাধম্যে,তবে প্রশ্ন হলো-সেটা কে।দুজনই মন্তব্য করলো এটা তো গাধার খাবার না-তা হলে আর কে হতে পারে।মাছি পোকামাকড় এতগুলো খাবার তো শেষ করতে পারার কথা না,কোন সমাধান ছিল না তাদের মাথায়।

‘মাছি পোকামাকড় হলে সেটা তো হতে হবে বিরাট আকারের,অনেকটা পৌরানিক গল্পের শোষক ডাইনির মত যে রাজা ফিনাসের রাতের চুরি করে খেয়ে নিত’।

এদিকে এসব সুস্বাদু সব খাবার খেয়ে আমার চেহারা সুরত একেবারেই বদলে গেছে,আমি আর আগের সেই শুকনো গাধা না তখন,বেশ মোটাসোটা নতুন আরেকজন।আমার নতুন মনিবদের চোখ এড়ায় নি আমার চকচকে নতুন চেহারাটা,তারা মন্তব্য করলো, ‘চোখের দেখায় তো আর ভুল হয়না,আর তার পেছনে কোন না গল্প তো থাকেই’।একদিন যথারিতি খাবার রেখে তারা হাম্মামে গোসল করার ভান করে বেরিয়ে আড়ি পেতে থাকলো চোর ধরার জন্যে,আর অবাক হয়ে দেখলো তাদের গাধা মনের সুখে খাবারে মত্ত।

এ ঘটনায় তারা রেগে না গিয়ে ভেঙ্গে পড়লো অট্টহাসিতে-এ ধরণের রাজকীয় খাবার খাওয়ার গাধা আর কোথায় বা আছে?তারা ডেকে আনলো অন্যান্য ক্রীতদাসদের,যেই দেখছিল সেই হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছিল, হৈ চৈ খবরটা পৌছালো বাড়ীর মালিক থেসিয়াসের কানে।থেসিয়াস ব্যাপারটা বিস্তারিত জানতে চাইলো,তাকে ডেকে নিয়ে ক্রীতদাসরা দেখালো দরজার ফাঁক দিয়ে আমার আনন্দ ভোজের দৃশ্যটা।

দেখে থেসিয়াসও তার হাসি সামলে রাখতে পারে নি,আমি যখন বুঝতে পারলাম হয়তো ভাগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত,তখন আর কি আমি ইচ্ছেমত খেয়েই চললাম মনের আনন্দে।শেষে থেসিয়াস তার একজন ক্রীতদাসকে আমাকে তার খাবারের ঘরে নিয়ে যেতে বললো-না না মনে হয়,থেসিয়াস নিজেই নিয়ে গেল আমাকে খাবারের ঘরে।টেবিলে সাজিয়ে রাখা নানান ধরণের চমৎকার খাবার,কোনটাই তখন খাওয়া হয়নি।যদিও আমি আমার লুকিয়ে খাওয়ায় বেশ পরিতৃপ্ত,তবুও আমি মনিব থেসিয়াসের আদেশে ইচ্ছামৎ খাওয়া আরম্ভ করলাম।

থেসিয়াস,অন্যান্য সবাই বেশ কৌতুহলী হয়ে উপভোগ করছিল আমার খাবার পর্ব,আনা হলো বেশী করে মশলা দেওয়া মাছ,রোষ্ট করা মুরগি,হিং দিয়ে বিশেষভাবে তৈরী করা গরুর মাংস যেটা কোন গাধার পছন্দ হওয়ার কথা না,কিন্ত আমি এসব মুখরোচক খাবার ছেড়ে দিতে রাজী না একে একে সব খেয়ে পেট পুরে চললাম আর এদিকে হাসিতে ফেটে পড়া উপক্রম,উপস্থিত সবাই।
শেষে একজন বলেলো,‘সবই তো খেল,গাধাটাকে এখন কিছু মদ দিয়ে দেখা যাক না,কি করে’?
থেসিয়াস উত্তর দিল, ‘মন্দ না প্রস্তাবটা,এই শোন কেউ একজন,ঐ সোনালি গ্লাসটা ধুয়ে মুছে আমার মেহমানকে কিছু মদ দাও,আমি আর আমার অতিথি আমরা দুজনে এই স্মৃতিকে আনন্দের খাতায় সাজিয়ে রাখবো’।
উপস্থিত সবাই অপেক্ষা করে ছিল আগ্রহে আমার প্রতিক্রিয়াটা দেখার জন্যে-আমিও বোকার মত গ্লাসের মদ গড়িয়ে ফেলে না দিয়ে পুরোটাই গিলে ফেললাম,একেবারেই একটা মাতালের মত।
হাততালি,হৈচৈ আর হাসিতে ভরে গেল ঘরটা,আমার মনিব ক্রীতদাস দুজনকে ডেকে বললো,আমার ভালমত দেখাশোনা করার ব্যাপারে কোন গাফিলতি না হয় যেন।
থেসিয়াসের কথায় ক্রীতদাসরা আমাকে নিয়ে বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়লো-আমাকে শেখানো হলো কি ভাবে চেয়ারে হেলান দিয়ে খাওয়া দাওয়া করতে হয়,কি ভাবে নাচতে হয়,কি ভাবে এক কনুই এ ভর দিয়ে বসে থাকা যায়।শুধু তাই না আমাকে শেখানো হলো=কি ভাবে শরীরের ভঙ্গীতে প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়,এমন না যে এগুলো আমার শেখার দরকার ছিল,তবে আপাত দৃষ্টিতে সেটাই দেখা,সেটাই মনে হওয়ার কথা।আমি যদি এ ধরণের ব্যাবহার নিজে নিজে করতাম-সাধারণ চিন্তায় সবাই ধরেই নিত আমি হয়তো কোন অশরীরি দানবের জাগতিক চেহারা,আর পরিনতি যা হতো,তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে-অচিন্তনীয় যন্ত্রনায় ভঁরা মৃত্যুদন্ড।

আমার বিশেষ ক্ষমতার কথা ছড়িয়ে পড়লো চার পাশে,লোকজন মন্তব্য করতো, ‘থেসিয়াস সত্যিই অদ্ভুত এক চরিত্র,তার গাধাটাকে সে বন্ধুর মত আদর করে,এক সাথে বসে খাওয়াদাওয়া করে।আবার গাধাটা নাকি নাচতেও পারে,কুস্তি করতে পারে,একেবারেই চিন্তার বাইরে।আবার গাধাটা নাকি বুঝতেও পারে লোকজনের কথাবার্তা-উত্তরও দেয় নাকি শোনা যায়,শরিরের ভঙ্গীতে’।

থেসিয়াস সমন্ধে কিছু কথা বলে নেয়া দরকার,থেসিয়াসের আসা করিনিয়াথ থেকে।
করিনিয়াথ আচাইইয়া প্রদেশের রাজধানী,আর থেসিয়াস সেখানকার বিচার দপ্তরের প্রধান হিসাবে কাজ করে।আর নানান আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহনের সময় তিনদিন ব্যাপী যত সাষ্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয় তার দায়িত্বটাও ছিল থেসিয়াসের হাতে,যার বিরাট একটা অংশ ছিল মল্লযুদ্ধ।থেসিয়াস এক অনুষ্ঠানের জন্য নানান ধরণের জন্ত,খেলোয়াড়দের যোগাড় করে বেড়াচ্ছিল সারা থেসালী জুড়ে।কাজের শেষে করিনিয়াথের ফিরে যাওয়ার পথে,তার সুন্দর থেসিলিয়ান ঘোড়াদের পিঠে না চড়ে থেসিয়াস ঠিক করলো আমার পিঠে চড়ে ফিরে যাবে।আমাকে সাজানো হলো লাল চামড়ার জিনে,লাগানো হলো পেতলের ঘন্টা গলায়,নতুন আরেক চেহারার আমি।যেতে যেতে আমার সাথে বেশ গল্প করছিল থেসিয়াস,আমাকে পেয়ে কত আনন্দিত সে,অন্তত কথা বলার মত সত্যিকারের এক বন্ধু আছে তার।আইকোলোস বন্দর নেমে আমাদের সব জিনিষপত্র নামিয়ে নেওয়া হলো,বোয়েটিকা আর এট্টিকা দিয়ে সমুদ্র যাত্রার শেষে আমরা পৌছালাম করিনিথে।প্রচুর লোকজন দাঁড়িয়েছিল চারপাশটায়,তবে আমার মনে হয় সবাই দেখতে এসেছে আমাকে থেসিয়াসকে না,অবশ্যই।

এত লোকজন আমাকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল আমাকে যে আমার ওস্তাদ ক্রীতদাস, লোকজনের কাছে পয়সা নেওয়া আরম্ভ করলো,আস্তাবলে একেক জনের ঢোকা আর পয়সা দেওয়া।মনে হয় ভালই পয়সা পেয়েছিল আমার গুরুর সেদিন।

দর্শকদের মধ্যে ছিল শহরের এক প্রতিপত্তিশালী এক মহিলা,আমাকে দেখে তার কৌতূহল এতই বেশি ছিল যে,আমাকে আরও কাছের থেকে জানার জন্যে সে আমার ওস্তাদকে বেশ কিছু পয়সা দিয়ে রাত কাটানোর বন্দোবস্ত করলো।অনেকটা পৌরানিক পাসিফেয়ারের এক ষাঁড়ের প্রেমে পড়ে যাওয়ার গল্পের মত।

আমাকে থেসিয়াসের সাথে রাতের খাবারের পর যখন আস্তাবলে নিয়ে আসা হলো,সেই মহিলা বসে ছিল আমার অপেক্ষায়।আমার সাথে রাত কাটানোর জন্য তার এক রাজকীয় ব্যাবস্থা,চারজন খোজা নরম তুলতুলে বিছানা সাজালো,চাদরটা টাইরিয়ান শহরের তৈরী,বিশেষ ভাবে কাজ করা সোনার পালঙ্ক,নরম বালিশ সাজিয়ে রাখা মাথার দিকে আর দু পাশটায়।
অন্ধকার কিছুটা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য গোটা দুয়েক মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল খোজারা।

মহিলা ঘরে ঢুকে ধীরে ধীরে এক এক করে তার সব কাপড়চোপড় খুলে ফেললো,বুকের বাধন, অর্ন্তবাস কোনটাই বাদ পড়লো না,আলোর সামনে দাঁড়ানো অদ্ভুত সুন্দর এক চেহারা,স্বর্গিয় দুটো স্তন।ছোট্ট একটা বোতল থেকে সুগন্ধি তেল সারা শরীরে মাখিয়ে নিয়ে দাঁড়ানো স্বর্গীয় এক রুপ।আমার কাছে এসে আমাকে মাখিয়ে দিল সেই সুগন্ধি তেলটা,বিশেষ করে আমার নাকের এলাকায়।আমাকে আমাকে জড়িয়ে চুমু খেল,চুমুটাও যেন সাজানো তার ভালবাসার চেহারায়,কোন বেশ্যাঘরের রাতের সাজানো চুমু না।




০০০০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে অনুবাদ।

১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩১

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.