নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১৭)
আনুমানিক ১৫৬৬ সালে প্রকাশ,লাতিন ভাষায় লেখা
লেখক,গল্প কথক আপুলুয়াস
‘মাদুরার আপুলুয়াসের রুপান্তর’,যাকে হিপ্পোর অগাষ্টিনের নাম দেয়া, ‘The Golden Ass’
তবে বাড়ী না গিয়ে আমার সর্তক মনিব সোজা গেল এক ব্যাবসায়ী বন্ধুর বাসায়,হাত জোড় করে তাকে অনুরোধ করলো, ‘দেখ আমাকে ধরলে ওরা ছাড়বে না মেরেই ফেলবে,দয়া করে আমাকে কটা দিন তোমার এখানে লুকিয়ে থাকতে দাও’।পুরোনো বন্ধুর অনুরোধ অবজ্ঞা করতে পারেনি ব্যাবসায়ী,আমার পা গুলোকে বেধে নিয়ে লুকিয়ে রাখলো বাড়ির উপরতলায় আর মনিবকে লুকিয়ে রাখলো বিরাট একটা বাক্সের মধ্যে।
পরে আমি অবশ্য শুনলাম সেই পাহারাদার তার বিধশ্ত শরীরে লাঠির ওপর ভর করে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল আমার মনিবকে।ব্যারাকের কজন বন্ধু তাকে পরামর্শ দিল কটা দিন হৈ চৈ না করে চুপচাপ থাকার জন্যে,ওতে তার সম্মানও রক্ষা হবে আর শরীরও সুস্থ হবে অনেকটা,এর ফাঁকে আমার আসামী মনিবকে,আমাকে খোঁজার দায়িত্বটা তাদের।
তবে সংসার তো সাজানো বিশ্বাসঘাতক মানুষদের নিয়েই,মনিবের ব্যাবসায়ী বন্ধুর প্রতিবেশী ব্যারাকের কর্মকর্তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করলো,তার প্রতিবেশি একজন চোরকে বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে যারা তার রুপোর বাসনপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে।সব কিছু শুনে ব্যারাকের অফিসার কজন লোক্ নিয়ে হাজির আমার মনিবের বন্ধুর বাসায়,জানালো যে তাদের কাছে খবর আছে-ঐ বাসায় আছে অনেক চোরা মাল আর লুকানো এক দাগী আসামী।
কিন্ত মনিবের বন্ধু ছিল তার সত্যিকারের একজন বন্ধু,ব্যারাকের অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদে সে বললো বেশ কদিন দেখা হয়নি বন্ধুর সাথে,আর বাড়ীতে কাউকে লুকিয়ে রাখার মত আইন বর্হিগত কোন কাজ সে কোনদিনই করবে না।কিন্ত তার কথা কেই বা শোনে,তা ছাড়া ব্যারাকের কর্মকর্তা তার সতীর্থ পাহারাদারের কথা ভেবে ঠিক করলো একটু সরে জমিনে তদন্ত করা দরকার।সারা বাড়ী খোঁজার পরও কোন কিছুর হদিশ পেল না কেউ,বেশ একটু বাদানুবাদ হলো পাহারাদারদের,ব্যারাকের কর্মকর্তার সাথে তাদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না, ঐ বাড়িতেই লুকিয়ে ছিল পলাতক আসামী।
আমার স্বভাবজাত কৌতূহল আবার বিপদে ফেললো আমাকে,বাইরের কথা কাটাকাটি হৈচৈ শুনে-আমি গলা বাড়িয়ে আড়িপাতার চেষ্টা করছিলাম।বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পাহারাদারের চোখ এড়ায় নি আমার মাথা-সে চীৎকার করে আঙ্গুল তুলে বলে চললো, ‘আমি বলিনি,দেখ ঐ তো গাধাটা’।প্রহরীরা ছুটে আমাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে গেল আর আমার মনিব বেচারা তার কি আর রক্ষা ছিল,মারধোর আর একজন সরকারী প্রহরীকে হেনস্থার দায়ে কারাদন্ড।
এই ঘটনাটা নিয়ে বেশ একটা কৌতুক প্রবাদ চালু হয়ে গেল সরকারী প্রহরীদের মধ্যে, ‘সবকিছুই ঐ বোকা গাধাটার জন্যে’,শুনেছি সারা দেশ জুড়ে এখন বেশ চালু এই কৌতুকটা।আমার মনিব আর তার বন্ধুর কি হলো আমার ঠিক জানা নেই।তবে অহংকারী আর বেসামাল প্রহরীটা আমাকে নিয়ে গেল তার সাথে,তা ছাড়া তাকে থামানোর তো কেউ ছিল না আর।আমার কাজ হলো তার সম্পত্তি,সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র,বল্লম,তলোয়ার আর ঝকঝকে শিরস্ত্রান বয়ে নিয়ে যাওয়া,রোদের আলোয় আমার চোখটা ঝলসানো একেবারে।ওটা ছিল সেনাবাহীনির যথাযথ অনুমতি ছাড়া,উদ্দেশ্যটা আর কিছু না যাওয়ার সময় আশেপাশের গ্রামবাসীদের মনে একটা সন্ত্রাস তৈরী করা।এবার আমার যাত্রা,নতুন একটা শহরে তবে কোন সরাইখানায় না,সেই শহরের পৌরসভার এক সদস্যের বাসায়।আমাকে এক ক্রীতদাসের কাছে রেখে বেরিয়ে পড়লো প্রহরী তাদের দলের অফিসারকে বিবৃতি দেওয়ার জন্য।
০০০০০০
পৌরসভার সদস্যের বাসায়
তেমন কিছু বলার মত ঘটেনি এর মাঝে,তবে আমার এই বাড়ীতে থাকার সময় একটা চঞ্চলকর খুনের ঘটনা ঘটেছিল যেটা না বললেই চলে না,ঘটনাটা পৌরসভার সদস্য,তার বৌ,দুই ছেলে আর আমার প্রহরী প্রভুকে জড়িয়ে।বাড়ীর বড় ছেলেটা পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিল, দোষগুনের কথা বলতে গেলে তার গুনের মাত্রাই হবে আকাশচুম্বী।বয়স যখন বছর পাঁচেক তখন তার মা মারা যায়,বাবার দ্বিতীয় বিয়ে,ঘরে আসলো সৎমা।ছেলেটার ভাই,তার সৎ ভাই এর বয়স প্রায় বছর বার।পৌরসভার সদস্য বৌ সৌন্দর্য বা গুন যে কারনেই হউক দুই নম্বর বৌ এর ওপর ছিল সম্পুর্ন নির্ভরশিল।কিন্ত সেই মহিলা ছিল যৌনতায় উন্মাদ কলুষিত একটা চরিত্র-সৎ ছেলের প্রেমে উন্মাদ।পাঠকদের সর্তক করে দিতে চাই এই ঘটনাগুলো কোন হাসির গল্প নয়-জীবনের দুঃখের আরেকটা ছবি।
তখনও ছেলেটার তেমন একটা বয়স হয়নি,সৎ মার পক্ষে খুবই সহজ ছিল-সৎ ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কটাকে সকলের চোখের আড়াল করে রাখা।ছেলের বয়স যত বাড়তে থাক্লো সৎ মা এর অবৈধ কামনার প্রচন্ডতা ততই বেড়ে চললো,মনের টানাপোড়েন লুকাতে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তো,পৌরসভা সদস্যের বৌ।তবে শারীরিক চাহিদার অসুস্থতা আর সাধারণ অসুস্থতায় পার্থক্য কি আর ধরা যায়?তাই ডাক্তাররা চোখ মুখের ঐ ধরণগুলো দেখে নিয়ে ধরেই নিচ্ছিল জ্বর সর্দি কাশির প্রভাব-না হয় হয়তো ইনফ্লুয়েঞ্জার আসর।হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সব ব্যাবহার-ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আর চীৎকার করে বলা। ‘ভার্জিলের কথাই ঠিক-ঐ বোকা দেবতাদের কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই,আর জ্ঞানও নেই এই বোকা ডাক্তারদের’।
ডাক্তারদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না নাড়ির অস্বাভাবিক গতির কারণ,অযথা বিছানায় এপাশ ওপাশ করা-ঘুমের অভাব,যদি ভালবাসাকে রোগ হিসেবে গন্য করা যেত,সাধারণ ডাক্তারও হয়তো সহজেই বের করে ফেলতো রোগের কারণটা।হ্রদয়ের যন্ত্রনা একেবারেই অসহনীয় ছিল সেই মহিলার জন্য-তর সইছিল না তার,তাই সে ডেকে পাঠাল তার বড় ছেলেকে,(তাকে ছেলে বলা যায় কি)।যদি কোন ভাবে বলতে পারতো তার মনের কথা।
ছেলে বাড়ীতে এসেই সোজা ছুটে গেল তার সৎমায়ের ঘরে-বিধস্ত চেহারা,চিন্তায়,মানসিক যন্ত্রনায় বুড়িয়ে যাওয়া অনেকটা,মহিলা।কোন কিছুই বোঝার উপায় ছিল না তার,যত কিছুই হউক ও তো তার সৎ মা,বাবার দ্বিতীয় বৌ,তার ভাই এর মা।এত অপেক্ষা যার জন্যে সে আসার পর কোন কিছুই বলতে পারলো না সেই মহিলা,শুধু লজ্জায় মনের দুঃখে একপাশে,
নিজেকে সরিয়ে নিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকলো।ছেলে কোনকিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো, ‘মা,কি ব্যাপার কোথায় ব্যাথা তোমার,আমি এখনই কি ডাক্তার ডেকে আনবো,বলো আমাকে কি করতে হবে?’
হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো পৌরসভা সদস্যের বৌ, ‘তুমি,তোমার কারণেই অসুস্থ আমি।একমাত্র তুমিই আমাকে সুস্থ করতে পার,তুমি ছাড়া আমার কোন গতি নেই আর।‘
‘আমি’ অবাক হয়ে উত্তর দিল ছেলেটা,‘কি করলাম আমি?’
‘তোমার চোখ,তোমার তাকানোর ভঙ্গী,আমার বুকে কামনার আগুন জ্বেলে আমাকে ছারখার করে দিচ্ছে।দয়া করো আমাকে,বাবার অজুহাত দিয়ে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করছো তুমি,আমি যা বলছি তুমি যদি তা করো,তাতে তোমার বাবার ও উপহার হবে,তার বৌ এর জীবন রক্ষা করছো।আমি যে তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি এটা তো কোন অন্যায় না,তুমি তো তোমার বাবার ছোট্ট আরেক সংষ্করণ।ভালবাসা আমার,প্রেমিক আমার এখন বাড়ীতে কেউ নেই,জীবনের এই চরম আনন্দ থেকে কেন নিজেকে বঞ্চিত করছো,তুমি।হয়তো বলবে এটা অবৈধ একটা সম্পর্ক,অজাচার,তবে এটাই জীবনের বিশাল একটা আনন্দ,এটাই বেঁচে থাকার আকাশ সুখ,তা ছাড়া কথায় তো বলেই, “‘যদি না পড়ে ধরা,তবে সেখানে চোরই বা কে আর চুরিই বা কোথায়?’
ছেলেটা তার সৎ মায়ের কথায় অভিভুত,কি তার করা উচিত আর কি করা ঠিক না,সেটা বোঝা,যাচাই করা ছিল তার চিন্তার সম্পূর্ন বাইরে।সেই মূহুর্তে যথাযথ ভাবে প্রত্যখান করে সে তার সৎ মাকে বললো, ‘মা আমিও তোমাকে চাই,তবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ,বাবা যখন ঘোড়ায় বাইরে যাবে,ঠিক সে সময় আমি আসবো’।
এরপর তড়িঘড়িতে বের হয়ে গেল ছেলেটা সোজা বাড়ীর বাইরে,মনে শুধু একটাই চিন্তা এই দুরুহ পরিস্থিতির একটা সমাধান না হলে তাদের পুরো পরিবারটা একেবারেই তছনছ হয়ে যাবে,সে ছুটে গেল তার বিশ্বস্ত স্কুল মাষ্টারের কাছে,সম্পুর্ন ঘটনাটা বলে তার কাছ থেকে বুদ্ধি নিয়ে কোন একটা সমাধান খুঁজে বের করা।
বুড়ো মাষ্টারের উপদেশ ছিল একটাই,ঝড় আরম্ভ হওয়ার আগেই পালাও বাড়ি ছেড়ে,এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই।বাড়ী গিয়ে যখন পালানোর প্রস্ততি নিচ্ছিল ছেলেটা,তার সৎ মা কামনার উন্মাদনায় তড়িঘড়ি করে স্বামিকে পাঠিয়ে দিল দুরের এক খামার তদারকের জন্য,আর একটা চিরকুট পাঠিয়ে ছেলেটাকে তার প্রতিজ্ঞার কথা বলে ডেকে পাঠাল।
কিন্ত ছেলেটার কোন ইচ্ছাই ছিল না এই অবৈধ সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে,সে একটা উত্তর দিয়ে জানালো,সেই মুহুর্তে তার পক্ষে কোনভাবেই যাওয়া সম্ভব না।তবে কামনায় উদ্বুদ্ধ সেই মহিলা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না,আবার দুটো চিরকুট পাঠালো,ছেলেটা উত্তর দিয়ে এড়ানোর চেষ্টা করলো আবার।শেষমেষ প্রত্যাখানের আক্রোশে সেই মহিলার আর্কষন দাঁড়ালো বির্কষনে, প্রতিশোধের চিন্তার স্রোতে ভেসে যাওয়া তা মন।মহিলা ডেকে পাঠাল বাবার বাড়ির যৌতুকের বিশ্বস্ত এক ক্রীতদাসকে,সম্পুর্ন ঘটনা তাকে বলে জানতে চাইলো তার মতামত।
কিছুক্ষন আলাপ আলোচনার পর তাদের মতামত ছিল সৎ ছেলেকে বিষ দিয়ে মারা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।মহিলা ক্রীতদাসকে দোকানে পাঠাল বিষের একটা প্যাকেট কিনে আনার জন্যে,ফিরে আসার পর মহিলা একটা মদের গ্লাসে মিশিয়ে রেখে দিল তার সৎ ছেলের জন্যে।
অনেকটা মাঝ দুপুর তখন,শয়তান মহিলার আপন ছেলে স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়ার পর একপাশে রাখা মদের গ্লাশটা নিয়ে শেষ করে ফেললো,তার তো আর জানা ছিল না সেটা রাখা তার সৎ ভাই এর শেষ যাত্রার জন্য।বিষের প্রতিক্রিয়া হতে খুব একটা সময় নেয়নি,ছেলেটার প্রানহীন শরীরটা লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।যে ক্রীতদাসের দায়িত্ব ছিল ছেলেটাকে দেখার,সে চীৎকার করে সবাইকে ডাকাডাকি আরম্ভ করলো,সবাই একমত ছিল মদটা ছিল বিষ মেশানো,কোথা থেকে এলো,কেন এল এ ব্যাপারে কারও ধারণা ছিল না।
সৎ মা এর অত্যাচারের কথা কারই বা অজানা-তবে কোন মা তার ছেলের মৃত্যুকে অবজ্ঞা করে যৌনকামনার প্রত্যাখানের প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তায় এত উন্মাদ হতে পারে,এটা অচিন্তনীয়।পৌরসভার সদস্যের বৌ স্বামীকে ছেলের দূর্ঘটনার কথা বলে ডেকে পাঠালো।
অচিন্তনীয় শয়তানী মহিলা,স্বামীকে কেঁদে কেঁদে বললো,কি ভাবে বিষ দিয়ে হিংসায় মেরে ফেলতে দ্বিধা করেনি-বড় ছেলে তার সৎ ভাইকে।একটুকু দ্বিধাও করলো না,আরও যোগ দিতে,বড় ছেলের অবৈধ যৌন সম্পর্ক প্রত্যাখান করার জন্যেই সে তার ভাইকে বিষ খাইয়ে মারলো,যথাযথ বিচার হওয়া দরকার ঐ খুনের।শুধু তাই না বড় ছেলে তলোয়ার নিয়ে তাকেও খুন করতে চাচ্ছিল,কোনভাবে এড়িয়ে সে নিজেক রক্ষা করেছে,সে।
পৌরসভার সদস্যের মনের অবস্থা তখন অভাবনীয়-এক ছেলে খুন আরেক ছেলের হাতে,সেই ছেলে আবার সৎ মা এর সাথে যৌন সম্পর্ক না করতে পেরে তাকে খুন করতে চাচ্ছিল,
যথাযথ শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।ছেলের জন্য তার কোন স্নেহ,ভালবাসা ছিল না সেই মুহুর্তে-শুধু ঘৃনা আর কি ভাবে তাকে শাস্তি দেওয়া যায়।ছোট ছেলের শেষ কৃতকর্ম করে সে ছুটে গেল জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অফিসে-সেখানে হাঁটু গেড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া পৌরসভার সদস্য বিচার চাইলো বড় ছেলের বিরুদ্ধে,এটাও অনুরোধ করলো মৃত্যুদন্ড ছাড়া আর কোনবিচারই যথাযথ না,ঐ ধরণের অপকর্মের।
জেলা ম্যাজিষ্টেট এর অফিসে উপ্সথিত লোকজনের সকলেরই মন্তব্য ছিল,ও ধরণের অমানবিক কাজের জন্যে কোন বিচার ছাড়াই ঐ ছেলেকে জনসমক্ষে পাথড় ছূড়ে চরম যন্ত্রনার মৃত্যুদন্ডটা দেয়াটাই ঠিক বিচার।তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অনেক চিন্তা করে বললো, ‘কোন বিচার ছাড়া রায় দেওয়া একটা চরম অন্যায় হবে আর দোষি সাবস্ত্য করার আগে পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য সবকিছু জানা দরকার,না হয় শুধু এক তরফা কথায় নির্দোষি ও দোষী সাবস্থ্য হতে পারে না’।
জেলা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা সবাই একমত হলো ম্যাজিষ্ট্রেটের কথায়।ম্যাজিষ্ট্রেট অফিসের কেরাণিকে ডেকে পৌরসভার আইনমত বাদী বিবাদী দু জনকে বিচারের জন্যে অফিসে সাক্ষী প্রমান নিয়ে ডেকে পাঠাল।যেহেতূ আমি উপস্থিত ছিলাম না ঘটনাস্থলে,দড়ি দিয়ে আমার যে টুকু জানা,সেটা সৈনিক মনিবের খুঁটিতে,কথায় কথায় আমি যে টুকু শুনলাম সে টুকুই বলছি,আর যেটুকু পরে পরিবেক্ষন করা সম্ভব তার বাইরে কোন কিছুই নয়।
বাদী আর বিবাদীর উকিলেরা মক্কেলের পক্ষে যুক্তি দাড় করলো,ম্যাজিষ্ট্রেট বললো শুধু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন রায় দেওয়া সম্ভব না।ডেকে পাঠালো,সেই মহিলার ক্রীতদাসকে যে বাদী পক্ষের উকিলের মতে এই ঘটনা সমন্ধে সবচেয়ে বেশী অবহিত।কোর্ট ভর্তি লোকজন কিন্ত কোনরকম ভয় ছিল না সেই ক্রীতদাসের মনে,তার বিবেকে একটুকুও বাঁধেনি সাজানো গল্পগুলো বলতে।শুধু সে পৌরসভার সদস্যের স্ত্রীর সাজানো গল্পটাই বলেনি তার সাথে সাজালো আরও একগাদা মিথ্যা গল্প।বানিয়ে বানিয়ে ক্রীতদাসটা বললো যে বড় ছেলেটার সৎ মায়ের প্রতি যৌন আকর্ষন এতই প্রখর ছিল,তার সৎ মা তার শারিরিক চাহিদা মেটাতে রাজী না হওয়ার জন্যে,বিষ কিনে ছোট ভাইকে মারার প্রস্তাব দিয়ে সে ক্রীতদাসকে অনেক টাকা ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব দিতে দ্বিধা করেনি,কিন্ত ও ধরণের পাশবিক কাজে সে জড়াতে চায়নি,‘আমি রাজী হইনি তার প্রস্তাবে,বার বার করে বলেছি এই অপকাজ আমি করতে পারবো না।আমার সামনে বসে মদের সাথে বিষ দিয়ে ঐ খুনী ছেলে আমাকে বললো,যদি কথামত কাজ না করি আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলতে তার একটুও দ্বিধা হবে না।আমি মদের গ্লাশ হাতে ধরে বসে ছিলাম,কিন্ত সে ভেবেছে আমি তার বাবাকে দেখানোর জন্য রেখে দিয়েছি,তাই জোর করে আমার হাত থেকে নিয়ে নিজের ছোট ভাইকে খাইয়ে দিল,আমার কোন কিছু করার উপায় ছিল না হুজুর’।
ক্রীতদাসের অভিনয় এতই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে শোনার পর আদালত মামলার শুনানি শেষ বলে ঘোষনা করলো ম্যাজিষ্ট্রেট,বড় ছেলে তার বুড়ো স্কুল মাষ্টারকে সাক্ষী হিসেবে সাবুদ করেছিল তার শুনানী নেওয়া আর দরকার মনে হলো না।তখন শুধু রায়ের পালা,আইন মত ছেলেটাকে চামড়ার বস্তায় সেলাই করে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে,চামড়ার বস্তার মধ্যে থাকে কুকুর,গরিলা,বিষাক্ত সাপ আর মোরগ।শুধু আদালতের সব বিচারকদের মতামত নেওয়া বাকি।বিচারকেরা একটা পেতলের বাক্সের মধ্যে মতামত জানাবে আর মৃত্যুদন্ড হলে অভিযুক্তকে জল্লাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শেষ মুহুর্তে শহরের বৃদ্ধ নাম করা এক ডাক্তার এসে পেতলের বাক্সে ভোট দেওয়া থামিয়ে দিল-বেশ সম্মানিত আর সবার প্রিয় সেই ডাক্তার।‘সম্মানিত বিচারক আর বন্ধুরা আমি আপনাদের রায়ের ব্যাপারে নাক গলাতে চাইনি,তবে একজন নিরপরাধকে আমার চোখের সামনে এক ক্রীতদাসের বানানো গল্পে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা চরম এক অন্যায় হবে।আমাদের সকলের শপথ রায় হবে নিরপেক্ষতায়,প্রমান সাপেক্ষে।তাই আমার অনুরোধ রায় দেয়ার আগে ভাল করে এই মামলার আসল ঘটনাটা বিশ্লেষণ করে দেখা’।
০০০০০০০০
১১ ই মে, ২০২১ রাত ১:৩৪
ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:২০
রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন পর পড়লাম। ভালো লাগলো।