নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আনুমানিক ১৫৬৬ সালে প্রকাশ,লাতিন ভাষায় লেখা
লেখক,গল্প কথক আপুলুয়াস
‘মাদুরার আপুলুয়াসের রুপান্তর’,যাকে হিপ্পোর অগাষ্টিনের নাম দেয়া, ‘The Golden Ass’
(১৬) লুসিয়াসের রুপান্তর
“আজ বিকালে লন্ড্রীওয়ালার সরকারী গোসলখানা থেকে বের হয়ে আমরা গল্পগুজব আর রাতের খাবারের জন্যে লন্ড্রীওয়ালার বাড়িতে গেলাম।লন্ড্রীওয়ালার বৌ তখন ব্যাস্ত ছিল তার প্রেমিকের সাথে যৌনখেলার কামকেলিতে,ভাবতেও পারেনি-হঠাৎ তার স্বামি বাড়ীতে ফিরে আসবে।ভঁয় পেয়ে লন্ড্রীওয়ালার বৌ তাড়াহুড়া করে প্রেমিককে লুকিয়ে ফেললো ঘরগরমের চুলোর উপরে রাখা বেতের ঝুড়িতে,কিন্ত তার মাথায় আসেনি যে চুলো জ্বালানোর সালফারের গন্ধ,আগুনের ধোঁয়ায় প্রেমিকের অবস্থাটা কি হবে?লন্ড্রীওয়ালা,তার বৌসহ আমরা সবাই বসে ছিলাম খাবারের টেবিলে-এদিকে বেচারা প্রেমিক সালফারের গন্ধ,ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে প্রায় মরমর অবস্থা,নিজেকে আর সামলে না রাখতে পেরে,আরম্ভ হলো তার একটার পর একটা হাঁচি।
প্রথমে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি লন্ড্রিওয়ালা,তারপর ছুটে গেল তার শোবার ঘরের দিকে,
টেনে বের করলো বৌ এর প্রেমিককে,প্রেমিক তখন প্রায় তার শেষ অবস্থায়।রাগে দু;খে লন্ড্রীওয়ালা একটা চাকু নিয়ে ঐ দুশ্চরিত্র লোকটাকে খুন করে মারার জন্যে প্রস্তত,কোন ভাবে আমি তাকে বুঝিয়ে ক্ষান্ত করলাম।বুঝিয়ে বললাম,এমন কিছু করাটা ঠিক হবে না, যাতে নিজে সারাজীবন জেলের ঘানি তো টানবেই,সাথে সাথে আমাকেও জড়াবে।দেখ লোকটা তো এমনিতেই মর মর ওকে আর মেরে কি হবে,আর ওটাতে বরং তোমার শতচারিনী বৌ এরই সুবিধাই হবে,তুমি থাকবে জেলে আর বৌ মজাতে সময় কাটাবে,নতুন প্রেমিক খুঁজে নিয়ে’।
গল্পটা শেষ হওয়ার পর পরই রুটিওয়ালার বৌ স্বামীকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে গেল খাবারের টেবিলে,‘চল চল,তোমার খাওয়া হয়নি’-বলে প্রেমিকের জন্যে রাখা খাবারগুলো সাজিয়ে দিল স্বামির জন্যে।ঢং করে আবার মাঝে মাঝে আদরে জড়িয়ে ধরে ভালবাসায় মাতাল হয়ে চুমু খাচ্ছিল,স্বামীকে।এ ধরনের ভন্ডামি অসহ্য ছিল আমার কাছে,ভাবছিলাম মনিবকে যদি দেখাতে পারতাম তার দ্বিচারিণী বৌ এর কান্ড।
বিকাল বেলায় যথারিতি আস্তাবলের সব গাধা,ঘোড়াদের খাওয়ার সময়-অন্যান্য দিনের মত আমাদের সবাইকে নিয়ে যাচ্ছিল আস্তাবলের বুড়ো সহিস।যাওয়ার সময় আমার মন বললো, ‘এ সুযোগ কি আর ছেড়ে দেয়া যায়’,নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পেছনের পা দু্টো দিয়ে ভেঙ্গে দিলাম ময়দা রাখার পিপেটা,যেখানে লুকিয়ে ছিল রুটিওয়ালার বৌ এর প্রেমিক।হতভম্ব,ভঁয়ে যন্ত্রনায় অস্থির,হয়ে দাড়িয়ে ছিল প্রেমিক।,কিই বা আর করার ছিল তার,ভাবলো এটাই শেষ যাত্রা তার।রুটিওয়ালা ঘটনাটা বুঝে ছেলেটাকে বললো, “দেখ তোমার একটা যথাযথ শিক্ষা হওয়া উচিত,সংসার ভাঙ্গছো তুমি,তুমি জাননা এ অপরাধের শাস্তি।ভেব না তবে আমি নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়ে কোন কিছু করতে যাব,যাতে আমার বৌ আমার অর্জন করা টাকাপয়সা,ব্যাবসা নিয়ে আনন্দ করবে প্রেমিকদের সাথে”।
কটা উপদেশ দিয়ে,রুটিওয়ালা হাতের লাঠিটা দিয়ে ইচ্ছামত ছেলেটাকে পাছায় বেশ কটা বাড়ি দিয়ে তাড়িয়ে দিল।পরের দিন অপেক্ষা না করে আদালতে বৌ এর সাথে সম্পর্ক শেষ করার জন্যে আবেদন,বৌ এর হাজারো কাকুতি মিনতিতে তার মনের রদবদল হয়নি।
রুটিওয়ালার বৌ কিন্ত অত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না,তার শয়তানি বুদ্ধি তাকে নিয়ে গেছে যাদু মন্ত্রের দিকে।ছুটে গেল পরিচিত এক বুড়ির কাছে রুটিওয়ালার বৌ-যাদু টোনা ব্যাস্ত যে সবসময়,অনুরোধ করলো তাকে সাহায্য করতে,যদি কোনভাবে তার স্বামির মনোভাব বদলানো যায়,না হলে মন্ত্র দিয়ে অশরীরী আত্মা ডেকে তার স্বামির জীবন শেষ করে দেয়া।
বুড়ী ডাইনির সাথে অদ্ভুত একটা যোগাযোগ ছিল দেবীদের সাথে,অনেক দেবীর অপকর্মের সহচরী ছিল বুড়ী।বুড়ি নিশ্চিত ছিল,দেবিদের সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই বদলে দিতে পারবে রুটিওয়ালার মন,তবে কাজ হলো না পরিকল্পনা মত,রাগে দেবীদের মনে করিয়ে দিল কথা রাখেনি তারা।বুড়ি এটাও বলে দিল দেবীদের,র্দুঘটনায় মৃত এক মহিলার আত্মাকে ডেকে রুটিওয়ালার জীবন শেষ করবে,সে।
(আমি বুঝতেই পারছি অনেক সতর্ক পাঠকের একগাদা প্রশ্ন, ‘লুসিয়াস,তুমি তো এমনিতেই
তখন গাধায় রূপান্তরিত,তা ছাড়া সবসময় বাঁধা ছিলে ঐ রুটির কারখানায়,কি ভাবে জানলে ঐ মহিলার গোপন রহস্য’? পড়ে যাও বন্ধু,যদিও আমি ছিলাম গাধা তবুও আমার মানুষের জ্ঞান,বুদ্ধি কোনটুকু হারিয়ে যায় নি,পড়ে এগিয়ে গেলে বুঝতে খুব একটা
অসুবিধা হবে না আমার মনিবের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন।)
প্রায় মাঝ দুপুর,বেশ কুৎসিত চেহারার এক বুড়ী গেল কারখানায় রুটিওয়ালার সাথে দেখা করতে,ছেড়া কাপড়,চোখে মুখে অদ্ভুত একভঙ্গী যেন এমাত্র বিরাট কোন এক অপকর্ম সেরে ফিরে আসছে।মুখ ভরা দুঃখের সাজ,পায়ে জুতা নাই,ধূলা ময়লার ্পেছনে রক্তহারানো একটা মুখ।বুড়ী সোজা রুটিওয়ালার সাথে,ফিসফিস করে আলাপ আলোচনা করে দুজনে সোজা চলে গেল শোবার ঘরে,দরজা বন্ধ করে দুজনে বেশ কিছুক্ষন চললো তাদের আলাপ আলোচনা,
তারপর সব চুপচাপ।এর মধ্যে বুড়ী আছে না গেছে খেয়াল করেনি কর্মচারীরা।
চাকতিতে গম শেষ, হয়ে গেলে,একজন কর্মচারী মনিবের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলছিল, “গম শেষ হয়ে গেছে,ময়দার জন্য আরও গম দরকার”,কিন্ত একবার দুবার কোন উত্তর নাই,
আরও জোরে জোরে চীৎকার করা আরম্ভ করলো,তবুও কোন উত্তর ছিল না।
সাড়া শব্দ না পেয়ে,বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো সবাই,ঠিক করলো দরজা ভেঙ্গে ঢোকা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে সবাই অবাক,বুড়ীর কোন খোঁজখবর নাই,তবে আরেক দিকে তাদের মনিব গলায় দড়ি দিয়ে ঢুলছে ঘরের কাঠগড়ায়,প্রান হারানো একটা শরীর।
সব কর্মচারীর চোখ ছিল কান্নায় ভঁরা,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলও কজন,সৎকারের ব্যাবস্থা হলো যথারিতি,প্রচুর লোকজন ছিল তার শেষকৃত্যে।পরেরদিন সকালবেলায় রূটিওয়ালার মেয়ে মাত্র কিছুদিন আগেই যার বিয়ে হয়েছিল পাশের শহরে,ছুটে এলো বুক চাপড়াতে চাপড়াতে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,তার জানা ছিল না,বাবা আর সৎমায়ের ছাড়াছাড়ির ঘটনাটা।রাতে ঘুমে তার বাবার অশরীরী আত্মা গলায় দড়িসহ,স্বপ্নে এসে তাকে বলে গেছে সম্পুর্ন ঘটনাটা,আর কি ভাবে সৎমা তাকে খুন করলো।কি ভাবে বুড়ি ডাইনির সাথে চক্রান্ত করে তাকে খুন করা হলো,সব কিছুই বলে গেছে রুটিওয়ালার অশরিরি আত্মা।চাকর বাকর সবাই মিলে সান্তনা দিয়ে কোনরকমে থামিয়ে রাখলো তাকে,সব আনুষ্ঠিনকতা শেষ হলে,দিন আটেক পরে রুটির কারখানা,বাড়ীঘর সব বিক্রি করে দিল মেয়েটা,এমন কি আস্তাবলের সব জন্ত জানোয়ার,ক্রীতদাস সবই গেল নিলামে।কত সহজেই একটা সংসার,ইতিহাস সবকিছু লুটিয়ে গেল মাটিতে।
০০০০০০
বাজারের মালী আর একজন সেনাপতি
এবার,নিলামে আমাকে কিনে নিল একজন মালী,দাম আট ড্রামাক,যদিও সেটা তার কাছে অনেক তবে পরিশ্রম আর সাথে সাথে আমাকে ও খাঁটিয়ে নিয়ে ঐ পয়সা তুলে আনতে খুব একটা অসুবিধা হবে না,এটাই ছিল তার ধারনা।আমার নতুন জীবনের কথা কিছুটা বলছি। প্রতিদিন সকালে পিঠে একগাদা শাকসব্জী নিয়ে আমরা যেতাম শহরের বাজারে,সবকিছু বিক্রি হয়ে গেলে দিনের শেষে আমার পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরে যেত মালিক মালী।কোন সময় তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখিনি,কিছু না কিছু নিয়ে সবসময় ব্যাস্ত,কোন সময় মাটিতে গর্ত খুঁড়ে নতুন কিছু লাগাচ্ছে,না হয় গাছে পানি দিচ্ছে,আর আমি একপাশে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতাম।তবে আনন্দের সময় বোধহয় শেষ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি,আবহাওয়া বদলানোর জন্যে একের পর এক ধাক্কা আমার মনিবের ব্যাবসায়,অবিশ্বাস্য শীত তার সাথে মাটিতে জমে যাওয়া বরফ,মনিবের সার্মথ্য ছিল না আস্তাবলে ভালমত কোন একটা ছাঁদ দেওয়ার।শীতের ধাক্কায় আমি বেশ অসুস্থ,কোন রকমে নিজেকে টিকিয়ে রাখা এ ছাড়া আর কিইবা উপায় ছিল আমার,ঘর বলতে মনিবের ছিল শুধু বাগান করার সরঞ্জাম রাখার ঘরটাই।এমনকি আমার খুরে কোন নালও ছিল না,খাবার মনিব চাকর দুজনের একই,পুরোনো লেটুস অন্যান্য কিছু সব্জী।
বেশ অন্ধকার ছিল রাতটা,চাঁদও ছিল না আকাশে,রাস্তা হারিয়ে পাশের গ্রামের এক কৃষক ক্লান্ত ঘোড়া নিয়ে হাজির আমার মনিবের খামারে।যদিও প্রাচুর্যতা ছিল না মনিবের,তবে কার্পন্যতা ছিল না কোন তার আতিথেয়তায়।ক্লান্ত মানুষটাকে যা ছিল খাবার দিয়ে শোবার বন্দোবস্ত করে দিল,ক্লান্ত পথিকের কাছে ঐ খারাপ আবহাওয়ায় রাতের ঘুমটা ছিল অভাবনীয় স্বর্গ সুখ।পরের দিন সকালে ফিরে যাওয়ার সময় কৃতজ্ঞতায় আমন্ত্রন জানালো রাতের পথিক,আমার মনিবকে তার খামারে,কিছু ভুট্টা,জলপায়ের তেল আর পিপে দুয়েক মদ নিয়ে আসার জন্যে।মনিব গোটা দুয়েক বস্তা,তেলের বোতল আনার জন্যে ছুটলো আমার পিঠে মাইল কয়েক দুরের খামারে।
রাতের অতিথি তার খামারে আমাদের পৌঁছানোর পর আমার মালিককে আদর করে নিয়ে গেল বাড়ীতে রাতের খাবারের জন্যে।খাবারের সাথে মদের আসর আর হৈচৈ এর ফাঁকে বেশ অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো,আপাতদৃষ্টিতে যদিও সেটা অবিশ্বাস্য ছাড়া আর কিছু মনে করার কথা না।একটা মুরগি ডিম পাড়ার শব্দ করতে করতে ছুটে গেল খামারের মালিকের কাছে,
যেন তার ভাষা বুঝে নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে মালিক উত্তর দিল,
“ তুমি তো তোমার আজকের ভাগের ডিম দিলে,এখন কি অতিথিকে দেখে আবার মনিবকে সাহায্য করতে চাও?ঠিক আছে আমি কাউকে ডেকে বলছি”,তারপর তার একজন চাকরকে ডেকে বললো মুরগীটাকে একটা ডিম পাড়ার বাক্সে বসিয়ে দিতে।
বাক্সটা আনা হলো,তবে মুরগীটা বাক্সে বসতে রাজী হলো না,ছুটে গেল তার মনিবের পায়ের
কাছে,তবে যা বেরোলো ডিম না সম্পুর্ন একটা মুরগী,সেটা আবার চিপ চিপ শব্দ করতে করতে ছুটে গেল মুরগীটার পেছন পেছন।এর পরে যা ঘটলো সেটা দেখে যে কোন সাহসী মানুষও ভঁয়ে কাতর হয়ে যাবে,খামারের মালিক আর আমার মনিবের বসে থাকা মেঝেটা ফাঁক হয়ে গিয়ে,সেখান থেকে একটা ফোয়ারা থেকে রক্ত বের হয়ে খাবারের টেবিল, আসবাব পত্র যা ছিল সব্কিছু ভিজে গেল।সবাই যখন ভঁয়ে হতভম্ব আর র্নিবাক,একজন ক্রীতদাস মাটির নীচের মদ রাখার ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে বললো যে নিচের ঘরের পিপে থেকে বোতলে মদ ভর্তি হওয়ার যন্ত্রটা কাজ করছে যদিও,তবে কিছু মদ উপচে পড়ছে যেন সারা মেঝেতে আগুন লেগেছে।এদিকে কটা বেজী ছুটে গেল একটা মরা সাপ নিয়ে,একটা ভেড়া চরানোর কুকুর দৌড়ে এসে উগলে দিল সবুজ একটা ব্যাঙ,একপাশে দাঁড়ানো ভেড়াটা ঝাঁপ দিয়ে কুকুরটার গলায় কামড় দিয়ে টুকরা টুকরা করে দিল,কুকুরটাকে।
সবই যেন একটা বিদঘুটে স্বপ্ন,কারও মুখে কথা ছিল কোন।সবাই ধরে নিল নিঃসন্দেহে সবকিছুই দেব দেবীদের অভিশাপ,অসন্তষ্ট দেবীদের অর্ঘ,পুজো দেওয়া দরকার,কিন্ত কেউই বুঝে উঠতে পারছিল না-কোন দেবী বা দেবতার আক্রোশ।কোন কুল কিনার না পেয়ে সবাই শুধু চরম র্দুভোগের অপেক্ষায় থাকলো,আরেকজন ক্রীতদাস এসে জানালো খামারের মালিকের ছোট ছেলে,এক অত্যাচারী সরকারী কর্মচারীর হাত থেকে তার প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে খুন হয়ে গেছে।
খামারের মালিকের তিন ছেলে ছিল,লেখাপড়া করে সবাই মোটামুটি বেশ প্রতিষ্টিত,ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশির সাথে তাদের বেশ মধুর একটা সম্পর্ক ছিল।প্রতিবেশী গরীব,তেমন একটা প্রতিপত্তি ছিল না,বাড়িটা আর অল্পসল্প কিছু জমিজমা,যা অনেকটা না থাকার মতই,নিয়ে তার সংসার চালানো।তার বাড়ীর পাশেই ছিল উচ্চ পদস্থ এক সরকারী কর্মচারীর বাড়ি,এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গরীব প্রতিবেশির ভাঙ্গা বাড়ী,আশপাশ বেশ কিছুটা দৃষ্টিকটু ছিল সরকারী কর্মচারীর চোখে।সরকারি কর্মচারী,প্রাচুর্যতা,দাসদের পাশে বেমানান,
অসহনীয় ছিল গরীব প্রতিবেশির বাড়ী।সরকারী কর্মকর্তার মনে সবসময় ছিল আর কিছু না শুধু একটা চিন্তা,কি ভাবে,কোন ভাবে প্রতিবেশীর জমিগুলো দখল করে নেওয়া।ঠিক সেই ভাবেই পরিকল্পনা করে মোটামুটি সবকিছুই নিজের দখলে নিয়ে গেল ক্ষমতাশালী সরকারী কর্মচারি,দুঃখ আর হতাশা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না গরীব প্রতিবেশির।
অনেক কাকুতি মিনতি করলো গরীব মানুষটা,আর কিছু না হোক অন্তত তার শেষকৃত্যের জন্যে না হয় কিছুটা জায়গা যদি ছেড়ে দেয়,তবে সব যুক্তিই অচল ছি্ল ঐ অবুঝ মানুষটার কাছে।এমন কি আশেপাশের লোকজন ও এসে অনেক অনুরোধ করেও কোন লাভ হয় নি,কোন কিছু শোনা তো দুরের কথা,বরং রাগের চোটে সরকারী সেই কর্মকর্তা তার চাকরদের ডেকে বলতো, ‘বলে দাও এই মুহুর্তে ওরা যদি আমার বাড়ী থেকে চলে না যায়,ঐ শিকারী কুকুরগুলো ওদের পেছনে লেলিয়ে দিতে দ্বিধা করবে না,তোমরা’।
বাদানুবাদ আরও বেড়ে গেল,চীৎকারের পর চীৎকার-ছুটে আসলো ছাড়া কুকুরের দল,আরম্ভ হয়ে গেল এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি দৌড়াদুড়ি।খামারের মালিকের ছোট ছেলেটা কিছুদুর গিয়েই হোচট খেয়ে পড়ে গেল,মাথাটা গিয়ে লাগলো একটা পাথরে,দরদর করে বের হচ্ছিল রক্ত,আর ছুটে আসা কুকুরগুলো এক এক করে তার শরির থেকে মাংস টেনে টেনে ছিঁড়ে খাওয়া আরম্ভ করলো।সবাই ছুটে গেল যখন তাকে বাঁচানোর জন্য-তবে বড় দেরী হয়ে গেছে,তখন।ভাইদেরকে কাছে খামারের মালিকের ছোট ছেলেটার শেষ কথাটা ছিল,‘আমার মৃত্যুর শোধ নিও,তোমরা।ছেড়ে দিও না ঐ শয়তান মানুষটাকে’।
বড় দুভাই তাদের বল্লম হাতে নিয়ে সোজা ছুটে গেল সেই সরকারি কর্মচারীর বাড়ীর দিকে,কিন্ত সরকারী কর্মকর্তা এসব ব্যাপারে বেশ দক্ষ।তারা ছুটে আসার আগেই কর্মকর্তার বল্লমে এক ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো,লোকজন তাকে থামানোর আগে তার হাতের তলোয়ারে জীবন হারালো আরেকজন,রক্তের স্রোত তখন চারপাশে।
ছেলেদের মৃত্যুর কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি খামারের মালিক, আমার মালিক কিছু করার আগেই টেবিলের চাকু দিয়েই আত্মহত্যা করলো লোকটা।আমার মনিব কিছুটা হতভম্ব-তবুও নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে সান্তনা দিল সবাইকে। অনেক আশা
ছিল আমার মনিবের খামারের মালিকের কাছ থেকে ক বস্তা চাল,ক বোতল জলপাই এর তেল,শেষ মেষ কিছু না নিয়ে আমার পিঠে চড়ে ফিরে গেল বাড়ির দিকে।
কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তায় এক রোমান সৈনিক আমাদের থামিয়ে বেশ রুঢ়,কর্কশ স্বরে প্রশ্ন করলো, ‘ঐ গাধার পিঠে চড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’
প্রশ্ন ছিল লাটিন ভাষায় আর আমার মনিবের লাটিন সমন্ধে কোন জ্ঞানই ছিল না,তাই প্রশ্নের কোন উত্তর দিয়ে যথারীতি চলে যাচ্ছিল,আমার মনিব।ক্ষেপে গিয়ে হাতের লাঠি দিয়ে পেটানো আরম্ভ করলো রোমান পাহারাদার আমার মনিবকে।
হতভম্ব মনিব হাতজোড় করে বললো, ‘আমি কিছু বুঝলাম না,তুমি কোন ভাষায় কথা বলছ?’
এবার গ্রীক ভাষায় প্রশ্ন করলো রোমান সৈনিক, ‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে,গাধার পিঠে চড়ে?’
আমার মনিব উত্তর দিল, ‘এই পাশের গ্রামটায়’।
‘যাকগে শোন,তোমার গাধাটা আমাদের দরকার,কর্নেলের আসবাবপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হবে পাশের দূর্গে,আমাদের হাতে মাল নেওয়ার জন্য কোন গাধা নাই এখন’।
আমার মনিব তার কপালের রক্ত মুছে নিয়ে বললো, ‘এ ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নাই,তবে গাধাটার অদ্ভুত একটা অসুখ আছে,যেতে যেতেই অনেক সময় সে রাস্তায় পড়ে যায়,আর অনেক জিনিষপত্র নষ্ট হয় অনেক সময়।খুব বেশি হলে কটা বস্তা নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ওর,বেশি জিনিষপত্র চাপিয়ে দিলে গাধাটা মাঝ পথেই ভেঙ্গে পড়বে’।
কিন্ত কোন কিছুই যেন কানে গেল না ঐ পাহারাদারের,আমার মনিবের যুক্তি শোনার পর
সে আরও ক্ষেপে গিয়ে তার লাঠি নিয়ে ছূটে এলো।আমার মনিব পাহারাদারের হাঁটু জড়িয়ে ধরে কাকুতি মিনতি করে কান্নার সুরে ক্ষমা চাওয়া আরম্ভ করলো,তবে পাহারাদার কিছু বলার আগেই তার পা দুটো টেনে নিয়ে মাটিতে তাকে ইচ্ছে মত লাথি আর ঘুষি মারা আরম্ভ করলো।রক্তাত্ত পাহারাদার ও বলে চললো, ‘তুমি ভেব না,তুমি ছাড়া পাবে,আমার তলোয়ার তোমার মাথাটা মাঠিতে ফেলবে,কিছুক্ষনের মধ্যেই’।
কথাগুলো শোনার পর আমার মনিব পাহারাদারের তলোয়ারটা বের করে ছুড়ে ফেলে দিল একপাশে,আর তার বুকে বসে ইচ্ছেমত আরম্ভ করলো মারের ঝড়।মারের চোটে পাহারাদারের আর ওঠার কোন উপায় ছিল না,আমার মনিব তলোয়ারটা তুলে নিয়ে আমার পিঠে ফিরে গেল বাড়ীর দিকে।
০০০০০০০০০০০০০০০০০
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই ধারাবাহিকটি মনে হয় আমি ছাড়া আর কেউ পড়ে না।