নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১১


(১৫)

লুসিয়াসের রুপান্তর


আমার বৃহন্নলা(হিজড়া) মনিবের দল আরও বেশ কটা দিন কাটালো ঐ সরাইখানায়-খুব খারাপ একটা আয় ছিল না তাদের,ঘুরে ঘুরে বেড়ানো আর হেয়ালী ভাষায় মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়া।নানান মানুষের নানান প্রশ্ন,তবে দেবীর বানী পুরোহিতের স্বরে উত্তর সেই একইঃ
‘বলদের কাঁধে তুলে দাও জোয়াল,

লাঙ্গল টেনে দাও তোমার জমির বুকে,
সোনার ফসল আসছে,স্বপ্ন ভঁরা তোমার আগামীর দিনে’।

যদি কেউ প্রশ্ন করে দেবীকে সংসার ধর্ম নিয়ে,উত্তরটা সেখানে সাজানোই-বিয়ে কর,সংসার কর,আসছে ছেলেমেয়ে নিয়ে সোনালী দিনগুলো তোমার।
কারও যদি প্রশ্ন থাকে কোন একটা জমি সে কিনবে কি না?তবে লাঙ্গলের কথাগুলো তো তারই জন্যে তৈরী করা।
যদি কেউ প্রশ্ন করে ব্যাবসায়ের কারণে বিদেশ যাত্রা নিয়ে,তবে সেখানেও আছে সাজানো কথা-সাজিয়ে নাও গাড়ী তোমার, সোনালী দিন আসছে আবার।
যদি সেনাবাহিনীর কেউ প্রশ্ন করে-চোর ডাকাতে অভিযানে যাওয়া নিয়ে,তখন তাকে বুঝিয়ে বলা তার জন্যে জোয়ালের নিচে টেনে আনতে হবে ডাকাতদের,সফলতার আগামী তার অপেক্ষায়।

এই ধোকাবাজী করে তাদের আয়টা মন্দ ছিল না,কিন্ত একই উত্তর দিতে দিতে মনিবরা আর শ্রোতারাও দু দলই ক্লান্ত হয়ে যায় একসময়,তাই আবার যাত্রা হলো শুরু রাত কাটানো ভোরে।এটাই বোধকরি আমার জন্যে সবচেয়ে কষ্টকর যাত্রা ছিল,সারা রাস্তা ভঁরা কাঁটা গাছ,জায়গায় জায়গায় বিরাট গর্ত,পানি জমে ছিল জায়গায়,হেঁটে হেঁটে যাওয়াটা কত অসহনীয় ছিল,সেটা ব্যাখা করা বেশ কষ্টকরই।

যাওয়ার রাস্তায় হঠাৎ ঘোড়ায় আসা কজন প্রহরী,ফিলেবাস আর অন্যান্যদের ঘেরাও করে মার দিয়ে বলা আরম্ভ করলো, ‘বেধে ফেল এই শয়তানদের,এরা মানুষ নামের যোগ্য না’।তারপর সব মালপত্র দেখে দেখে নিয়ে জিজ্ঞাসা আরম্ভ হলো, ‘সোনার গামলাটা কোথায় যেটা পুজো করার নামে তুমি করে চুরি নিয়ে যাচ্ছ,জুনো দেবীর মন্দির থেকে।ভাবলে কাক ডাক ভোঁরে পালালেই জানবে না কেউ,শাস্তি হবে না,চালাক,শয়তান,ভন্ড’।

একজন প্রহরি ঘোড়া থেকে নেমে আমার পিঠের দেবী মুর্তির পোষাকে লুকানো সোনার গামলাটা বের করে সবাইকে তুলে দেখাল,এতকিছু ঘটনার পরও একটুও বিব্রত হয়নি ঐ শয়তান পুরোহিতরা,হাসতে হাসতে বললো, ‘কি দূর্ভাগ্য আমাদের,সোনার গামলা যেটা দেবী জুনোর উপহার তার বোন সিরিয়ান দেবীর জন্যে,সেটাই চুরির অপরাধে আমরা দায়ী এখন’।
তবুও তাদের অত চালাকীর কথায়ও সেই যাত্রায় আর অব্যাহতি হলো না তাদের,সোজাসুজি সবাই জেলের ঘানিতে আর আমি নিলামের জন্যে আবার বাজারে।



এবার খাবারের মিলে

সাত ড্রামাকে নিলামে একজন রুটিওয়ালা কিনে নিল আমাকে,পিঠে চাপিয়ে দিল ক বস্তা ভুট্টা আর তারপর ভাঙ্গাচুড়া একটা রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল আমাকে তার কারখানায়।

আরও বেশ কটা জানোয়ার ছিল সেই কারখানায় ঘানি ঘোরানোর জন্যে-থেমে থাকা নাই কোনসময়,ঘানি চলছে তো চলছেই,দিন কি রাত্রি ক্ষান্ত নেই কোন সময়।আমার নতুন রুটিওয়ালা মনিব আমাকে সাথে সাথে কাজে লাগাই নি,দিনটা ছুটিতে কাটলো,আর সাথে গামলা ভর্তি ভুট্টা।কিন্ত সুখের দিন শেষ হতে তো আর বেশি সময় লাগে না,পরের দিন সকালেই চোখে ঠুলি বেঁধে আমাকে জুড়ে দেওয়া হলো সব চেয়ে বড় ঘানিটায়,কাজ হলো শুধু চরকির মত ঘুরে যাওয়া।গাধাতে রপান্তরের আগে এরকম আটা পেষার ঘানি দেখা ছিল আমার,তা ছাড়া চৌকিদারের হাতে তার বৌ এর যাতায়(চাকতি)।ঘানি টানতে দিলে আমি তখন না জানার ভান করে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম,ভাবলাম ঠিক এই ভাবে হয়তো এখান থেকে কিছুটা অব্যাহতি পাওয়া যাবে।তা সে কি আর কপালে আছে-আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে লাঠি নিয়ে একজন চাকর এসে ইচ্ছেমত পেটাতে আরম্ভ করলো,দিশেহারা হয়ে ছোটা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।আমার বদলানো আর ছোটার ধরন দেখে চারপাশের সবাই পাগলের মত হাসা আরম্ভ করলো।

দিনের শেষে আমি এতই ক্লান্ত ছিলাম যে একটা পা ও নড়ার উপায় ছিল না,খাবারের গামলার সামনে গলার রশি খুলে দিয়ে দিনের কাজ শেষ করলো রুটির কারখানার লোকজন।যদিও আমি খুবই ক্লান্ত আর বেশ ক্ষুধার্ত,তবু আমার কৌতুহল আর খোলা বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা,রুটির কারখানার জীবনের খবর আমাকে টেনে নিয়ে গেল ঘুরে বেড়ানোর জন্যে।চারপাশের জানোয়ারদের দেখে আমার দুঃখ আর কান্না ছাড়া কোন ভাষা ছিল না।সব জানোয়ারগুলোর চামড়া লাঠির মারের দাগ আর ক্ষতে ভর্তি সারা শরীর।
চামড়া ঝুলে পড়া এখানে ওখানে-সবার শরীরে রুটিওয়ালার মার্কা দিয়ে গরম শিক দিয়ে পোড়ার দাগ দেওয়া।মাথার ঝুটি কাটা সবার আর পায়ে ছিল শিকল।চেহারা হলদে হয়ে গেছে সকলের-চোখে মুখে রুটির চুলার ধোঁয়ার প্রভাবে তারা হয়তো ঠিকমত দেখতেও পেত না, শরীর মাখানো চাকতির আটা।

আমার সহকর্মী গাধা আর খোজা করা ঘোড়াদের ঠিক করে খাওয়ার শক্তিও ছিল না-আর ঘানি টেনে নেওয়ার ঘা সকলের কাঁধেই।ভেঙ্গে পড়া শরীরে একটানা কেশে যাচ্ছে সবাই-নাক দিয়ে পানি ঝরছে সবসময়,সকলের শারীরিক অবস্থা ছিল সত্যি সত্যিই বেশ করুন।
চারপাশটা দেখে রাগে দুঃখে নিজের ভবিষৎ ভাবছিলাম-কোথায় ছিলাম রাজ বংশের লুসিয়াস আর এখন রুটির কারখানার ঘানি টানা একটা গাধা।একটাই সান্তনা যা ঘটছে শুধু চারপাশে কোনটাই আমার অজানা না।হোমারের কাব্যে যেমন বলা আছে-ওডিসাসের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশী তার ভ্রমনের অভিজ্ঞতায়।আমার এই অভিজ্ঞতাগুলো হয়তো আমাকে ওডিসাসের মত জ্ঞান না দিলেও-অবশ্যই এ কারণে আমার জানা বিচিত্র এক জীবনের নতুন অংশ।

আমার রুটিওয়ালা মালিক-মানুষ হিসাবে খুব একটা খারাপ ছিল না,তবে তার সংসার জীবন ছিল চরম অশান্তির।তার বৌটা ছিল এতই শয়তান যে মনে হয় না আমার অভিজ্ঞতায় এরকম কোন শয়তান মহিলা আমার চোখে পড়েছে,স্বামীর সাথে তার র্দুব্যবহার দেখে আমার চোখেও কান্না আসতো।খারাপ দোষগুলোর কথা বলতে গেলে-কোনটারই অভাব ছিল না মহিলার,মাতাল,হিংসুটে, নিষ্ঠুরতার চরম।শুধু তাই না ধর্মের ব্যাপারেও তার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অদ্ভুত-সব দেব দেবীরা তার কাছে একটা কুসংষ্কার ছাড়া আর কিছু না।পুজার দেবতার অর্ঘের নামে,অদ্ভুত কতগুলো চলন ছিল তার,ধর্মের নামে দিন দুপুরেও মাতাল হতে কোন বাধা ছিল না তার।দেবতার নামে যৌনখেলায়,আশেপাশের লোকজন এমনকি নিজের স্বামীকেও বেশ বুদ্ধু বানিয়ে রেখেছিল মনিব রুটিওয়ালার বৌ।

ঐ দুশ্চরিত্রা জানি না,কেন অযথাই আমার উপরে ক্ষেপে ছিল-সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজের লোকজনকে ডেকে বলতো, ‘ঐ গাধাটাকে নিয়ে আস্তাবলে বেধে রাখ’।তার কিছুক্ষন পর আস্তাবলে যেয়ে আমাকে ইচ্ছেমত পেটাই।সকালে খাওয়ার সময় আমাকে খাবারের গামলার থেকে দূরে একপাশে বেধে রাখতো চাকরেরা,অন্যান্য জানোয়ারদের খাবার শেষ হলে তখন যদি কিছু পড়ে থাকে সেটাই আমার খাবার।

তার এই নিষ্ঠুর ভাবটায় আমার কৌতুহলটা আর ও বেড়ে গেল জানার জন্যে,কে ঐ মানুষটা যার সাথে দুশ্চরিত্রা সকালে রুটিওয়ালা কাজে যাওয়ার সাথে সাথেই শুরু করে দেয় তার যৌনখেলার যাত্রা।রুটিওয়ালার কাজের এক বুড়ি ছিল,যার কাজ ছিল নানান কলাকৌশল,আর মিথ্যে গল্প বলে আমার মনিবকে বোকা বানানো।

যদিও আমি ফটিসকে ক্ষমা করিনি আমার এই দূরবস্থার জন্য-কিন্ত আমার লম্বা লম্বা গাধার কানে শোনার ক্ষমতার একটা সুবিধা কথাবার্তা সহজেই শোনার।
একদিন শুনি বুড়ী মনিব বৌকে ফিসফিস করে বলছে, ‘তোমার নতুন প্রেমিকটা খুব একটা ভাল হয়নি,বেশ র্দুবল মনে হয় আমার কাছে,মনে হয় না তোমার শরীরের খাইটা ও মেটাতে পারে। ও তো তোমার স্বামিকেও বাঘের মত ভঁয় করে,তুমি তো ফিলসেটারোসকে চেন,লম্বা চওড়া,সুন্দর একজন সুপুরুষ,মনে হয় গ্রীসের যে কোন মহিলার কামনার মানুষ মনে মনে সবাই ওর সাথে বিছানায় যেতে চায়।দেখ না এইতো কদিন আগে ফিলসেটারোস প্রেমিকার সাথে দেখা করে জন্যে,প্রেমিকার স্বামিকে কত কায়দা করেই না ধোঁকা দিল,ওটাই তো প্রেমিক আর কাপুরুষের মধ্যে পার্থক্য।

‘আরে বাবা গল্পটা বলই ফেল,যা বলতে চাও বল,এত ভড়ং করছো,কিসের জন্য’?
‘তুমি তো বারবারাসকে চেন,তাই না?ঐ যে,আমাদের মিউনিসিপালটির মেম্বার,যাকে অনেকে
বলে, ‘বিচ্ছু’ ওর খারাপ ব্যাবহারের জন্য,এই তো কিছুদিন আগে নতুন বিয়ে করলো।জান বৌকে বাড়ীতে শুধু তালা দিয়ে রাখতো না লোকটা,আরও কি কি সব নানান ধরনের ছলচাতুরী ছিল যাতে তার বৌ কোন পরকীয়া সর্ম্পক তৈরী না করে’।
‘আমি তো আরিতে কে ভাল করেই চিনি,একই স্কুলের ছাত্রী ছিলাম আমরা’।
‘তা হলে আর বলার কি আছে,তুমি তো হয়তো ঘটনাগুলো সম্পুর্নটাই জান’।
‘আরে না আমি কিছুই জানিনা,তুমি একেবার প্রথম থেকেই সবকিছু খুলে বল,বুয়া’।কাজের বুড়ি,তার গল্পের ভান্ডার খুলে বলা আরম্ভ করলো।
‘বারবারাসকে কাজে যেতে হবে শহরের বাইরে, আরিতে তার অবর্তমানে কোন ফষ্টিনষ্টি না করে,সে জন্য ডেকে পাঠালো তার বিশ্বস্ত ক্রীতদাস মারমেক্সকে।
“মারমেস্ককে,আমার বৌকে ঠিকমত দেখবি,আর শোন ওকে ছোঁয়া তো দুরের কথা,ওর আঙ্গুলটাও যদি কেউ ধরে,তোকে আমি না গর্তে ফেলে রেখে না খাইয়ে মারবো”।
‘এতই ভয় তখন মারমেস্কের মনে,সে প্রতিজ্ঞা করলো আরিতেকে কোন সময়ই চোখের আড়াল করবে না কোন ভাবেই।আশ্বাস ভঁরা মনে বারাবারাস চলে গেল তার যাত্রায়।এদিকে
মারমেস্ক সারাদিন আরিতেকে বাড়িতে আটকে রাখে।আরিতে চরকিতে সুতা কাটে সারাদিন আর সন্ধ্যায় সরকারী গোসল খানায় যাওয়ার সময়ও মারমেস্ক যায় পেছন পেছন।
ফিলসেটারোসের জানা ছিল আরিতেরনরুপ গুনের কথা,ঐ সুন্দরী মহিলার সঙ্গ পাওয়ার জন্য তার মনটা ছিল উচাটন,কি ভাবে পাওয়া যায় আরিতেকে।তবে ঐ দুর্গের মত বাড়িতে ঢুকে সম্পর্ক তৈরী করা ছিল এক দুর্গম অভিযান’
‘তবে ফিলসেটারোসের অজানা ছিল না মানুষের চরিত্রের র্দুবলতা,জানা ছিল চকচকে সোনার মোহর সহজেই ভেঙ্গে দিতে পারে অন্তরায়ের লোহার শিকল।মারমেক্সকে একা পেয়ে সে কাকুতি মিনতি করে বললো,আরিতেকে সে পাগলের মত ভালবাসে মারমেক্স যদি তাকে সাহায্য না করে,“আমি সত্যি মারা যাব প্রতীক্ষায় বারাবারাস আসার আগেই,আর তা ছাড়া তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই,আমি রাতের অন্ধকারে চুপিচাপি বাড়িতে ঢুকবো আর সাথে সাথেই বের হয়ে আসবো ক্ষন কিছুর মধ্যেই”।

মারমেক্সের হাতে তিরিশটা সোনার মুদ্রা তুলে দিয়ে বললো, “বিশটা তোমার মনিব স্ত্রী আরিতের জন্য আর দশটা তোমার জন্য,জানি তোমার সাহায্যের দাম কোন কিছু দিয়ে
শো্ধরান যাবে না”।
ফিলসেটোরাসের প্রস্তাবটা শুনে বেশ ভয় পেয়ে দৌড়েই পালাল মেরামেক্স,তবে মন থেকে কোন ভাবেই মুছে ফেলতে পারেনি ঝকঝকে সোনার মোহরের ছবি।সারাটা দিন মেরামেক্সের কাটলো দোটানায়-একদিকে তার মনিব বাসবারাসের কাছে তার প্রতিশুতি,মনিবের অত্যাচারের ভঁয়,আর অন্যদিকে একগাদা সোনার মোহর নিয়ে হাতে সামনের আনন্দের দিনের স্বপ্ন।
ঝকঝকে সোনার মোহরের ডাক উপেক্ষা করা মেরামেক্সের কাছে অভাবনীয়,তার মন তাকে বলছিল “কি ব্যাপার,কি ভাবছ এমন সুযোগ পাবে না আর”,আর কোন দ্বিধা ছিল না তার মনে।সকাল হতে না হতেই মেরামেক্স ছুটে গেল তার মনিব স্ত্রীর কাছে,সাথে ফিলসেটোরাসের সোনার মোহর আর ভালবাসার আকুতি।
আরিতে এমন মেয়ে ছিল না যে ভেসে যাবে ভালবাসায়-তবে সোনার মোহরের বদলে শরীর দেয়া,সেটাতে কোনই আপত্তি ছিল না তার,আর ক্ষতিটাই বা কি।আরিতের উত্তর নিয়ে ছুটলো মেরামেক্স তর সইছিল না তার,ছুটলো ফিলসেটোরাসের কাছে,চকচকে সোনার মোহর আসছে আর শেষ হবে হয়তো যন্ত্রনার দিনগুলো তার।মেরামেক্সের আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না কোন ভাষায়,সোনা তো দুরের কথা সে তো দুটো তামার পয়সাও হাতে ধরে দেখেনি কোনদিন।


‘দিনের আলোর ফুরোতে রাতের আঁধারে ফিলসেটোরাসকে কাপড়ে ঢেকে মুড়ে আরিতের শোবার ঘরে নিয়ে পৌঁছে দিল মেরামেক্স।নগ্ন শরীরে-ভালবাসার দেবীর পুজোয় মত্ত হয়ে
উঠলো আরিতে আর ফিলসেটোরাস,নতুন দুই পুজারী।অপ্রত্যাশিত ভাবেই হঠাৎ ফিরে আসলো বারবারাস,দরজায় কাউকে না দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়েই চীৎকার করে মেরামেক্সকে ডাকা আরম্ভ করলো।আবার জোর গলায় বারবারাস জানিয়ে দিচ্ছিল,মেরামেক্স যেন ভুলে না যায়
তার কপালে কি অত্যাচার আছে।মেরামেক্স তখন ভঁয়ে ভঁয়ে লুকিয়ে রীতিমত কাপুনিতে,তবে বুদ্ধি করে জরুরি অবস্থার জন্য চাবিটাকে সে লুকিয়ে রখেছিল আগেই।
‘হৈ চৈ চীৎকার শুনে ফিলসেটোরাস তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় পরে নিয়ে কোনরকমে সেখান থেকে পালালো,তবে ভুলে গেল তার জুতার জোড়া।মেরামেক্স বাড়ীর পেছনের দরজা চাবি দিয়ে খুলে দিল বারবারাসকে।

‘মেরামেক্স বিপদ কেটে গেছে ভেবে শান্তির সাথে ঘুমিয়ে পড়লো।বারবারাস রাত যাওয়া ভোরে উঠে দেখে বিছানার নীচে অচেনা জুতার জোড়া,দুয়ে দুয়ে চার করতে বেশী সময় লাগেনি বারবারাসের।বারবারাস আরিতে বা বাড়ীর চাকর বাকর কাউকে বললো না তার
অভিজ্ঞতার কথা,শুধু একজন চাকরকে ডেকে বললো মেরামেক্সকে নিয়ে তার হাত দুটো পেছনে বেঁধে রাখতে।জুতা দুটো সাথে বাজারের বড় রাস্তাটায় বারবারাস রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে হেঁটে বেড়াচ্ছিল।বারবারাস মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে রেখেছিল জুতোর সুত্রে দুশ্চরিত্র পুরুষটাকে খুঁজে বের করে যথারীতি শাস্তি দিবে।মেরামেক্স ছিল বারবারাসের পেছনে পেছনে,কেঁদে কেঁদে সে বলছিল কোন দোষ ছাড়াই তার শিকলে বাঁধা পা,হাত দুটো দড়িতে,কিন্ত তার নিজের মনে সে তো অপরাধী,তাই ভঁয়টাও ছিল মনে।

‘ঘটনা চক্রে ফিলসেটোরাস ঠিক সে সময় হেঁটে যাচ্ছিল বাজারের রাস্তা দিয়ে,হাত পা বাঁধা
মেরামেক্সকে দেখে সে আন্দাজ করে ফেললো,ঘটনাটা।রাতে পালানোর সময় ফেলে আসা জুতার কথা মনে পড়লো,তার।তবে ভঁয়ে হতবাক না হয়ে,ফিলসেটোরাস চট করে
পরিকল্পনা মত মেরামেক্সকে ধরে ছিল যে চাকরকে তাকে সরিয়ে,মেরামেক্সকে লোক দেখানো বেশ কটা ঘুষি মেরে চীৎকার করে বললো,“কালো জানোয়ার তুমি,গোসলের পর আমার জুতাটা চুরি করে নিয়ে গেলে,শাস্তি তোমার পাওয়াই উচিত।উচিত তোমাকে কোন গর্তে সারা
জীবনের জন্য বন্দী করে কোন খাবার দাবার না দেয়া”।

‘ফিলসেটোরাসের কাজকর্মে বারবারাস একেবারেই র্নিবাক,জুতা মেরামেক্সের হাতে দিয়ে বললো, “এখনই দিয়ে আস জুতাটা,জীবনে এ ধরনের ভুল করবে না আর,এবারের মত ক্ষমা করে দিব তোমাকে”।

গল্পটা শেষ হওয়ার আমার মনিব বৌ মন্তব্য করলো,“আরিতে আসলেই খুব ভাগ্যবতী
ফিলস্টোরাসের মত প্রেমিক আছে তার,আর আমার কি র্দুভাগ্য এক ভীতু কাপুরুষ আমার প্রেমিক।শুধু আমার স্বামীকেই সে ভঁয় পায় না,ঐ চোখে ঠুলি পড়া বুড়ো গাধাটাকে দেখলেও
সে ভঁয়ে কাপে”।

‘আরে শোন,পুরোনো কথা ভুলে যাও,একটু নতুন তো ছেলেটা অনেক কিছুই জানা নাই ওর,আমার হাতে ছেড়ে দাও,দেখ আমি ওকে সবকিছু শেখাবো।রাতে তুমি যাকে পাবে নতুন সাহসী প্রেমিক এক রাজকুমার’।

সন্ধ্যায় রুটিওয়ালার বৌ নানান ধরণের মুখরোচক খাবার তৈরী করে টেবিল সাজালো,দামী নরম মাংস,নানান সবজির ঝোল,দামী মদের বোতল,আর অপেক্ষা করছিল প্রেমিকের।সেদিন রুটিওয়ালার নিমন্ত্রন ছিল পাশের লন্ড্রীওয়ালার বাসায়-নানান রকমের মদ,সাথে খাওয়া দাওয়া।আমাকে সেদিন খাবারের কাছে ছেড়ে দেওয়া হলো,দড়ি দিয়ে বাঁধা নেই,ইচ্ছেমত
খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো।অন্ধকার জায়গা করে নিল পৃথিবী জুড়ে,সুর্য ধীরে ধীরে লুকিয়ে পড়লো সমুদ্রের আড়ালে,ছুটে গেল পৃথিবির ওপাশটার আলো সাজানোর জন্যে,বূড়ী প্রেমিককে সাজিয়ে নিয়ে এলো রুটিওয়ালার বৌ এর কাছে।ছেলেটার বয়স খুব একটা না,তখনও গোঁফ দাঁড়ি দেখা দেয়নি,রুটিওয়ালার বৌ তাকে আদর করে কাছে টেনে ইচ্ছেমত চুমু খেতেখেতে খাওয়ার টেবিলে নিয়ে গেল।কিছুটা সময় যেতে না যেতেই রুটিওয়ালা হঠাৎ ফিরে এলো বাড়িতে,বৌটা ক্ষেপে যেয়ে চীৎকার করে বলে উঠলো, “শয়তানটা আর বাড়ি ফেরার সময় পেল না,ও যেন দরজায় হোচট খেয়ে পা টা ভেঙ্গে ফেলে”।

প্রেমিক ছেলেটার চোখ মুখ তখন ভঁয়ের চোটে রক্তশুন্য,বৌটা অবশ্য আমার খাবার গামলার পেছনে রুটির ময়দা রাখার বিরাট পিপেতে ছেলেটাকে ঢুকিয়ে ছুটে গেল স্বামীর কাছে।আদর
করে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “কি ব্যাপার তুমি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে,লন্ড্রীওয়ালার
সাথে আজ আড্ডা জমে নি”?

রুটিওয়ালা কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়েই বললো, “তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না যা দেখে এলাম,
মানুষের বাইরেরটা দেখে বোঝা যায় না তার ভেতরের চেহারাটা।দেখ না আমার বন্ধু লন্ড্রিওয়ালার বৌ কত সুন্দরী,সুন্দর ব্যাবহার,সে যে এমন কান্ড করতে পারে চিন্তার বাইরে।প্রমান না দেখলে আমি হয়তো নিজেই বিশ্বাস করতাম না”।
“আচ্ছা বলো দেখ কি ব্যাপার”?
“না না বাদ দাও,ওগুলো নিয়ে অত নাড়া চাড়া করে কি লাভ”?
“আরে বাবা বলই না,কি ব্যাপার।আমাকে যদি না বলো,খুবই রাগ করবো আমি”।
শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত দিল রুটিওয়ালা,বলা আরম্ভ করলো পাশের বাড়ীর সেই করুন ঘটনা,অথচ অজানা ছিল তার কাছে নিজের বাড়ীর কান্ড।



০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লাগলো।

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:০১

ইল্লু বলেছেন: ধৈর্য ধরে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.