নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লুসিয়াসের রূপান্তর
আনুমানিক ১৫৬৬ সালে প্রকাশ,লাতিন ভাষায় লেখা
লেখক,গল্প কথক আপুলুয়াস
‘মাদুরার আপুলুয়াসের রুপান্তর’,যাকে হিপ্পোর অগাষ্টিনের নাম দেয়া, ‘The Golden Ass’
(১৪)
তবে তাদের আনন্দ হতাশায় বদলাতে খুব একটা বেশি সময় নেয়নি,অনেকটা সেই আরোনিয়ার লোকজনের আউলিসে যেয়ে অবাক হওয়ার মত,যখন টাকাপয়সার বদলে তারা দেখলো,তাদের জন্যে রাখা আগামেননের মেয়ে ইপিমেসিয়া।বৃহন্নলারা(হিজড়ারা) ঠাট্টা করে বলছিল, ‘না না ফিলোবাস আমাদের জন্যে কি ঐ সুপুরুষ,ওটা তো তোমার স্বামী।শোন ফিলোবাস একা একা ওকে নিয়ে মজা করো না,আমাদেরো মাঝে মাঝে একটু ভাগ দিও, তোমার সুপুরুষ স্বামীর।আমরাও তো তোমার ভালবাসার ছোট্ট পাখির দল’।তারপরই আমাকে নিয়ে বেঁধে ওরা রাখলো একটা খুঁটির সাথে।
বৃহন্নলাদের(হিজড়া)দলে ছিল আর ও একজন ক্রীতদাস,একজন কাজের মানুষ।ক্রীতদাসটা ওদের কেনা ভিক্ষার টাকায়,ধর্মের ভিক্ষা করে বেড়াতো,তারা।ভিক্ষা করার সময় দেবীর মুর্তির পেছনে ক্রীতদাসটা বাশি বাজিয়ে নেচে নেচে যেত প্রথমে,তারপর বৃহন্নলার(হিজড়া) দল।রাতে আবার সব বৃহন্নলাদের(হিজড়াদের) শরীরের চাহিদা মেতাণড় করার দায়িত্বতাও ছিল ঐ মানুষটার।আমাকে দেখে বেশ খুশী হয়ে সে বললো, ‘যাক কিছুটা বিশ্রাম হবে এবার।বন্ধু আমার দীর্ঘজীবি হও,দেখ এদের তুমি খুশি করতে পার নাকি?আমাকে ওরা চুষে চুষে শেষ করে ফেললো একেবারে’।তার কথাগুলো আমাকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিল,শেষে এই কাজ ছিল ভাগ্যে আমার?
সকাল হতেই বৃহন্নলারা(হিজড়ারা) সবাই নানান রকমের পূজার পুরোহিতের পোশাক,অলঙ্কার, পরে ভিক্ষার শোভাযাত্রার জন্যে প্রস্ততি শুরু করলো।মুখে রুজ পাউডার,ঠোঁটে রং দিয়ে ওরা ছিল যেন এক একেকজন-এক একটা কিম্ভুতিকার চেহারার কিছু একটা।চোখ ভঁরা কাজল দেখে অবাক হওয়া দূরের কথা বরং ভঁয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।কারও মাথায় পুরোহিতদের টুপি,কারও সোনালী জরিতে সাজানো পোশাক,গরদের উত্তরীয়,সোনালী জুতো।কারও কারও গলায় জড়ানো ছবি সাজানো গরদের কাজ করা রুমাল।পুজার শোভা যাত্রায় দেবীকে একটা গরদের কাপড়ে মুড়ে আমার পিঠে চাপানো হলো,বাশীর সুরে আর নাচে শোভা যাত্রা শুরু হলো।বৃহন্নলারা(হিজড়ারা) কেউ তলোয়ার,কেউ রুপায় সাজানো লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে হেঁটে যাচ্ছিল শোভা যাত্রার পেছন দিকে।
কতগুলো ছোট ছোট কুড়ে ঘর ফেলে আমরা পৌছালাম-বিরাট এক প্রাসাদের মত বাড়ির সামনে,বাড়ীর গেটের সামনে যেয়ে নাচ গানে আরও বেশী মত্ত হয়ে গেল বৃহন্নলার
(হিজড়ার) দল,যেন দেবীর ডাকে সমাধিস্থ অন্য এক জগতে তারা।মাঝে মাঝে চীৎকার করে হাতের চাকু দিয়ে হাতের তালুর অংশ কেটে দিচ্ছিল,একজনের ভাবটা ছিল আর ও অদ্ভুত-যেন স্বর্গ থেকে কোন দেবী এসে তাকে ভর করে,অবোধ্য ভাষা চলনে বলে দিচ্ছে অজানা সবকথা,তাদের ভব্যিষত,যার যা জানার আগ্রহ।তার মাঝেই সে আবার চাকু দিয়ে নিজের হাত কেটে কেটে যেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছিল।মানুষের বিশ্বাস নিয়ে এ ধরণের ভড়ং করা কোন ভাবেই যুক্তিযুক্ত না।(দেবতার প্রভাব মানুষের ভাল করার চেয়ে তাকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে,মানুষের ক্ষতির কল্পনা স্বর্গীয় দেব দেবীরা কোনদিনই সহজ ভাবে মেনে নেয় না।তার প্রমান দেখা যাবে পরে)।রাস্তার চারপাশের রাস্তা ছিল বৃহন্নলাদের(হিজড়া)রক্তে রাঙ্গানো-পিচ্ছিল।দৃশ্যটা দেখে আমিও বেশ অস্থির বোধ করছিলাম,ভাবছিলাম সিরীয়ান সেই দেবীর যদি গাধার রক্ত মাংসের আসক্তি থাকে,তাহলে আমার অবস্থাটা কি হবে,অনেকে যেমন গাধার দুধ পচ্ছন্দ করে।
একসময় ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্ত দিল বৃহন্নলা(হিজড়ার) দল-চারপাশের দর্শকেরা ধীরে ধীরে খোঁজাদের টুপিতে টাকা পয়সা দিচ্ছিল,কেউ কেউ দিল রুপার মোহর,এমনকি কজন দিল সোনার মোহরটাও।কেউ এনে দিল পিপেতে মদ,কেউ দিল খাওয়ার জন্যে যব,পনির,এমন কি একজন দিল দেবীকে বয়ে নেওয়া গাধার জন্য কিছু খাবার।দেবীর অর্ঘের জন্য সাজানো সব কিছু সাজিয়ে উঠালো হিজড়ারা বস্তায় বস্তায় আমার পিঠে,আমি তখন একটা চলন্ত মন্দির।
এ ভাবেই আমরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে আনুষ্ঠানিকভাবে দেবীর অর্ঘের জন্য নানান জিনিষপত্র সংগ্রহ করার পর আমার কর্তা বা কত্রীর দল যেটাই বলা যায়,তারা সবাই বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।প্রথম তারা জোগাড় করলো কাছের একটা খামার থেকে দেবীর অর্ঘের নামে একটা মোটাসোটা একটা ভেড়া,তারপর সবাই ছুটে গেল কাছের হামামে,
গোসল করে সাথে এক তাগড়া জোয়ান কাজের লোক নিয়ে ফিরে আসলো।
সবাই একসাথে বসলো খাওয়ার টেবিলে-তবে বৃহন্নলা(হিজড়া)পুরোহিতদের খাওয়ার আগ্রহ আর কোথায়,কিছু একটা মুখে বা দিয়েই সবাই ঘিরে বসলো,হামাম থেকে আসা জোয়ান লোকটার চারপাশে।এলোমেলো কথাবার্তা প্রথমে-তারপর তার গায়ের পোশাক টেনে তাকে উলঙ্গ করে সবাই মত্ত।আমি চীৎকার করে বলার চেষ্টা করলাম, ‘ধর্ষন,ধর্ষন। এই মাতাল বৃহন্নলাদের(হিজড়ারা) কেউ এসে ধরে নিয়ে যাও,এদের শাস্তি হওয়া উচিত’।কিন্ত গলা দিয়ে কোন কথা বেরোলো না,শুধু অদ্ভুত একটা শব্দ, ‘বেহ,বেহ’ অন্য যে কোন গাধার কাছে হয়তো বা যা ঈর্ষার ব্যপার।
কি এক অদ্ভুত কাকতালীয় যোগাযোগ-আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে,কজন কমবয়সী ছেলে তখন তাদের চুরি হয়ে যাওয়া গাধার খোঁজে সরাইখানাগুলো এক এক করে খুঁজে বেড়াচ্ছিল,
আমার ডাক শুনে,তাদের একজন ধরেই নিল,আমিই তাদের চুরি যাওয়া গাধা।আর অপেক্ষা না করে তাড়াহুড়া করে ঢুকে পড়লো সবাই বৃহন্নলা(হিজড়ারা)পুরোহিতদের সরাইখানায়-অবাক হয়ে গেল সবাই,পুরোহিতদের সেই বিভৎস কামকেলির দৃশ্য দেখে।হৈ হুল্লোড়ে আশেপাশের লোকজন সবাই জেনে গেল পুরোহিতদের ব্যাভিচার-দেবতার অর্ঘের নামে এ যৌনখেলা একেবারেই অসহনীয় ছিল সবার কাছে।পুরোহিতদের দলের আর কোন উপায় ছিল না সেখান থেকে রাতারাতি পালানো ছাড়া।
শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুদূর রাস্তা পার হয়ে ফাঁকা এক মাঠে দাড়ালো বৃহন্নলার(হিজড়ারা) দল-আমার পিঠ থেকে দেবীর মুর্তি নামিয়ে আমাকে এক এক গাছের সাথে বেঁধে ইচ্ছেমত মারধর চললো,তাদের অপমানের প্রতিশোধের তাড়না,আর মারে আমি মরমর।একজন তো কুড়াল নিয়ে আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করতে চাচ্ছিল-তার সতীত্বের অবমাননার জন্যে,কিন্ত আমি ছাড়া তাদের পুজোর দেবী বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না তখন।আবার আমার পিঠে চাপানো হলো দেবীর মুর্তি,আর আমি তলোয়ারের মার খেতে খেতে আমরা পৌছালাম পাশের শহরটায়।সেখানকার বেশ সম্ভ্রান্ত ধার্মিক এক নাগরিক আমাদের ঢাক ঢোলের শব্দ আর শাস্ত্রীয় গানের সুর শুনে,দেবীর থাকার সাথে সাথে আমাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিল তার নিজের বাড়িতেই।দেবীর আর্শিবাদের সুবাদে আমরা সবাই এক এক তার বাড়িতে।সেখানেই জীবনের এক চরম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলাম আমি।
ঘটনাটা এরকম-আমাদের জন্য গ্রামের এক চাষী আনলো বেশ মোটাসোটা একটা হরিন, তার নিজের শিকার করা।হেপাসিয়াটন-বাড়ীর বাবুর্চি অনেকটা অবহেলা করেই হরিনটা বাইরেই ফেলে রাখলো।মাংসের গন্ধ পেয়ে কতগুলো বুনো কুকুর দলবেধে এসে সম্পুর্ন হরিনটাকেই টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল জঙ্গলের দিকে-হেপাসিয়াটনের অজান্তে।মনিবের কাছে খাবার প্রস্ততির ফরমায়েস নিয়ে এসে হেপাসিয়াটন অবাক,রাতের ভোজের হরিনের কোন অস্তিত্বই নেই।রাগে দুঃখে হেপাসিয়াটন তার একমাত্র ছেলেকে আদরের একটা চুমু দিয়ে নিল শেষ বিদায় মনিবের হাতে অত্যাচার অপমানের চেয়ে মৃত্যুই ভাল।হাতে দড়ি নিয়ে আত্মহত্যার প্রস্ততি নিচ্ছিল হেপাসিয়াটন,সবকিছু দেখে হেপাসিয়াটনের বৌ তকে ডেকে বললো, ‘তোমার কি বুদ্ধিশুদ্ধি নাই,দেখছ না বাড়ির সামনে ঐ গাধাটা ওটাকে নিয়ে ওটার মাংস সুন্দর করে মশলা দিয়ে
রান্না করে দাও,কারও বোঝার উপায় থাকবে না,এমনিতেই সবাই তো সোমরসে টলমল,
একেবারে মাতাল’।
শয়তান বাবুর্চি,চালাক বৌ এর কথা শুনে চাকুতে ধার দেওয়া আরম্ভ করলো,আর কিছু না হোক তার জীবনটা তো রক্ষা হবে।আর আমার জীবনের শেষ,জন্যে তখন সময় আর কোথায়-নিজেকে বাঁচানোর জন্যে কিছু একটা করা দরকার,পালানোর প্রস্ততি নিতে হবে,ঐ চাকুর কোপে নিজেকে তো আর শেষ হতে দিতে পারিনা।ঠিক করে ফেললাম বাঁধা দড়িটা ছিড়ে কোন না কোনভাবে ঐ মুহুর্তেই আমাকে ছুটতে হবে,যতদূর নিয়ে যায় আমার পাগুলো।পালানোর প্রথম পরিকল্পনা ছিল খাবারের ঘরে যাওয়া-সেখানে চলছে তখন বাড়ীর মনিবের ভোজের আসর।আর তো কোন উপায় নাই-সোজা খাবারের আসরে গিয়ে তছনছ করে দিলাম সাজানো খাবার আমার ছোটাছুটিতে,এমনকি টেবিল চেয়ারগুলোও বেশ কটা ভেঙ্গে গেল।বাড়ীর মালিক ক্ষেপে গিয়ে চীৎকার চাকরদের ডেকে বললো, ‘এই অসভ্য জানোয়ারটাকে এখনই নিয়ে যাও এখান থেকে,বেঁধে রাখবে একপাশে,কোন খাবার দাবার দিবে না’।আর কিছু না হোক আমার নিজের বুদ্ধিতে উদ্ধার হলো সে যাত্রা আমার।
তবে ভাগ্য যখন বিপাকে তখন সবকিছুই ভেসে যায় প্রতিকুলে-ওটাই কপালে লেখা আমার।নিজেকে বাঁচিয়ে আনলেও তখন পড়লাম আরেক বিপদে-বাড়ির এক চাকর এসে চীৎকার করে বললো, ‘গতকালকে পেছনের দরজা দিয়ে একটা পাগলা কুকুর কোন ভাবে ঢুকে ছিল বাড়িতে।পাগল কুকুরটা এর মধ্যেই আস্তাবলের কটা ঘোড়াকে কামড়েছে,একটা ঘোড়ার তো পা টাই ভেঙ্গে গেছে,মারটিলিয়াস সহিসও পাগলা কুকুরটার হাত থেকে রক্ষা পায়নি।হেপাসিয়াটন বাবুর্চি,হাইপারটারিয়াস খানসামা,এমনকি এপোলিয়াটাস বাড়ীর ডাক্তার,আর বেশ কজন চাকর মিলে সবাই ছোটাছুটি করে চেষ্টা করছে-কুকুরটাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্যে।আবার কুকুর কামড় খাওয়া আস্তাবলের কটা জানোয়ারের মধ্যে জলাতঙ্ক আছে বলে মনে হচ্ছে’।
এই ঘটনার পর আমার বৃহন্নলা(হিজড়া) মনিবরা ধরেই নিল-কুকুরটা আমাকেও ছাড়েনি,
তারা চীৎকার করে বললো, ‘আর অপেক্ষা করে লাভ নেই,ঐ গাধাটাকে মেরে ফেল,আর কারও কিছু ক্ষতি করার আগে’।সবাই চাকু,বল্লম নিয়ে ছোটাছুটি আরম্ভ হলো-নিজেকে বাচানোর আমি ছুটলাম,আমার বৃহন্নলা(হিজড়া)মনিবদের শোবার ঘরে।সাহস ছিল না তাদের কিছু করার,আমাকে সেই ঘরটাতে আটকে রাখলো।ভাবলাম,এ যাত্রা রক্ষা,তা ছাড়া আরেকটা সুবিধা হলো বিছানায় শোবার সুযোগ পেলাম অনেকদিন পর।
সকাল সুর্যের আলোর ছটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার-দরজার বাইরে আমার মনিবদের মধ্যে তখন তর্ক বিতর্ক চলছে আমার ভবিষৎ নিয়ে।একজন মন্তব্য করলো, ‘মনে হয় এর মধ্যে ঐ গাধাটার জলাতঙ্কের কোন অস্তিত্ব থাকার কথা না,ওটাই তো সবাই বলে’।আরেকজন মন্তব্য করলো, ‘এ ধরনের বিপদ জেনেশুনে নেওয়ার দরকারই বা কি,ওকে শেষ করে ফেললে ঝামেলা চুকে যায়’।
দরজার ফাঁক দিয়ে সবাই এক এক করে আমার অবস্থাটা পরখ করে দেখছিল-যে টুকু দেখা যাচ্ছিল,তাতে তারা বুঝলো আমি চুপচাপ দাঁড়ানো,কোন অস্থিরতা নাই,জলাতঙ্কের কোন সম্ভাবনা থাকার কোন কথাই না।শেষমেষ সবাই একমত হলো যে দরজা খুলে আমাকে কাছের থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা উচিত।একজন,হয়তো যাকে বিধাতার পাঠানো আমার রক্ষাকর্তাই বলতে পারি-তার মন্তব্য ছিল একটা বড় গামলায় পানি নিয়ে আমাকে দেওয়ার জন্যে,আমি যদি র্নিবিঘ্নে পানি খেয়ে নিই,তাহলে তো সেটা প্রমানই করে আমার কোন জলাতঙ্কের প্রভাব নেই।তার জানা চিকিৎসা শাস্ত্রের অনেকগুলো বইপত্রেই এই পদ্ধতির কথা বলা আছে।
গামলায় পানি ভর্তি করে দেওয়া হলো আমাকে-আমি তো গামলায় মুখ চুবিয়ে এক চুমুকেই পানি খেয়ে নিয়ে চুপচাপ এপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম।আমার বৃহন্নলা(হিজড়া) মনিবদের তখন আর কোন সন্দেহ ছিল না যে আমি সম্পুর্ন সুস্থ।পরের দিন সকালে দেবীর মূর্তি আর পুজোর সরঞ্জাম পিঠে নিয়ে আমার আবার যাত্রা হলো শুরু-ঢাক ঢোল চীৎকার আর পেছনে ফেলে আসা আমার কটা দুর্ভাগের ইতিহাস।কটা র্নিজন গ্রাম,ভেঙ্গে পড়া বাড়ি ঘর ছাড়িয়ে আমরা এলাম ছোট্ট এক শহরে,যা পুরোনো ঐতিহাসিক এক শহরের ধবংসের ওপর গড়ে ওঠা নতুন সুরে।শহরের ঢোকার পরপরই একটা সরাইখানা-সেখানে রাত কাটানোর বন্দোবস্ত আমাদের।সরাইখানার একজন দুঃখ করে শোনাচ্ছিল আমাদের তার দুর্গতির কথা-কি ভাবে তার বৌ এর হাতে সে প্রতারিত হয়ে সবকিছু হারালো সে।
সে গল্পটাই বলছি এখনঃ
ঘটনাটা এরকম-লোকটার তেমন কোন সম্পত্তি বা জায়গা জমি ছিল না,বাড়িতে বাড়িতে টুকিটাকি মেরামত,দিন মজুরের কাজকর্ম করে চলতো তার,বৌ এর ও ছিল না তেমন কোন সম্পত্তি বা উর্পাজন,তবে আর যাই হোক বৌ এর খাঁই আর শারীরিক চাওয়ার ব্যাপারটা মোটামুটি জানা ছিল সবারই।এক সকালের কথা বলছি-অন্যান্য যে কোন সকালের মতই কাজে বেরোলো,আমাদের গল্পের দিনমজুর।আর বাড়ি থেকে বেরোনোর পর পরই বৌ তার
এক প্রেমিক নিয়ে যথারীতি তাদের কামকেলিতে মত্ত,কোন একটা কাজে দিন মজুর হঠাৎ দিনমজুরটাকে বাসায় ফিরতে হলো।বাসায় ফিরে সে দেখে বাড়ীর দরজা বন্ধ-খুশীই হলো সে চিন্তা করে তার বৌ বেশ সর্তক,বাইরের চোর ডাকাতদের থেকে।অন্যান্য দিনের মত জানালার কাছে শিষ দিয়ে সে জানালো–তার বাড়িতে ফিরে আসার কথা।প্রেমিকের সাথে থাকা বৌ কিন্ত কোনরকম বিব্রত হয় নি-প্রেমিককে লুকিয়ে রাখলো সে এক পাশে পড়ে থাকা বড় একটা পিপের মধ্যে।নোংরা, পচা গন্ধে ভরা,সেখানেই লুকানো প্রেমিক তখন।এর পর দরজাটা খুলে দিয়ে বৌ বেশ রেগে স্বামিকে বকা আরম্ভ করলো, ‘কাজকর্ম করে পকেটে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে বাড়িতে আসবে তা না শুধু শুধু ঘুরে বেড়ানো।কবে তুমি শিখবে বাড়িতে খাওয়ার জন্য টাকা পয়সা লাগে,আমার আঙ্গুলগুলো ব্যাথা হয়ে গেল চরকি ঘোরাতে ঘোরাতে।অন্তত আমি তো বাড়ির কিছু খরচ চালিয়ে নিচ্ছি।মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি যদি আমার বান্ধবী ডাফনির মত একা থাকতাম,খাওয়া দাওয়া আর ইচ্ছেমত প্রেমিক খুঁজে নেওয়া।না,না আর সহ্য হয় না আমার’।
কিছুটা অবাক হয়েই দিনমজুরটা বললো, ‘আবার এটা কি? এই অযথার চীৎকার করার কোন মানে আছে,আমি কি কোন কিছুই করি না বাড়ির জন্য।ঠিকাদার আজ আসেনি,কোর্টে তার কাজ কিছু ছিল বলে,তাই আজ আমাদের কাজও নেই।আর দেখ না ঐ যে ময়লা,জং ধরা গোসল করার পিপেটা দেখছ,ওটা একজনের কাছে বিক্রি করে দিলাম,পাচ ড্রামাক দিয়ে।আমাকে একটু সাহায্য কর ওটা বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে’।
কিন্ত মজুরের বৌটা চোখেমুখে কোন চিন্তার আভাস ছিল না,সে ভেবে নিয়ে বললো, ‘এই হলো আমার বুদ্ধিমান স্বামী,পিপেটা বিক্রি করলো পাচ ড্রামাকে,সেটা ঘরের বাইরে নিয়ে পৌঁছে দিতে হবে।আর আমি ঘরে বসেই ওটা বিক্রি করলাম সাত ড্রামাকে,লোকটা আবার নিজে নিয়েও যাবে’।মজুরটা অবাক হয়ে বললো, ‘বাহ এতো অবাক কাণ্ড,কোন বোকা আবার এই পড়ে থাকা মালের দাম দিল সাত ড্রামাক’।
বৌটা বেশ রাগের সাথে বললো, ‘চুপ করো বেকুফ,লোকটা তো ঐ পিপেতে ঢুকে ওটা পরখ করে দেখছে এখনও’।প্রেমিকার কথা শুনে পিপেতে লুকানো লোকটা বের হয়ে এসে বললো, ‘দেখুন আপনি পিপেটা বিক্রি করছেন ওটা বেশ পুরানো,জংও পড়ে গেছে জায়গায় জায়গায়,আমাকে দেখতে ওটা ভেঙ্গে গেছে নাকি আবার।এই যে ভাই আপনি কে জানিনা,একটা বাতি দেন ওর ভেতরটা যেন পরখ করে দেখতে পারি,আমার তো ছুড়ে ফেলার মত টাকা পয়সা নাই’।সরলমনা মজুরটা বললো, ‘চিন্তা করবেন না আমি ওটা সুন্দ্র করে পরিষ্কার করে দিচ্ছি,একেবারে ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে’।
লোকটা পিপে থেকে বের হয়ে আসার পর,মজুরটা পিপের মধ্যে ঢুকে পরিষ্কার করা আরম্ভ করলো।প্রেমিক লোকটা মজুরের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে আবার রত্ত তার কামকেলিতে,ছূয়ে যাচ্ছিল তার শরীরে কখনও স্তনে,কখনও যোনীতে,আর বৌটা পিপেতে মাথা ঢুকিয়ে মাঝে মাঝে স্বামিকে বলে দিচ্ছিল, ‘এ জায়গায়,হ্যা হ্যা ঐ এখানে’,আর সেটা ছিল তার প্রেমিকের জন্যে একই সাথে তার কামনার ইঙ্গিত-এ ভাবেই তার দূটো কাজই সেরে নিল চালাক বৌটা।মজুরটাকে সাত ড্রামাক দিয়ে সেটা পিঠে করে তার বাড়িতে পৌছে দিতে বললো মজুর বৌ এর প্রেমিক।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১৩
ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
লাতিনো বলেছেন: এটা কি একটা গাধার আত্মকাহিনী?
১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১৬
ইল্লু বলেছেন: অনেকটা তাই,যাদুতে লুসিয়াসের গাধাতে রুপান্তর হওয়া আর তার দেখা গল্পকথা।
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর ঝরঝরে অনুবাদ।