নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৯

(১২)


সকালের আলোতে-আমার চোখটায় আরেকটা নতুন দিনের দেখা,আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটা তার প্রতিশোধের আনন্দে।তবে দূর্ভাগ্যের সৌভাগ্যই বলতে হবে-একটা ভাল্লুক আচমকা পাশের গুহা থেকে ঝাঁপিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো,রক্ষা আত্মরক্ষা যেটাই বলা যায়, দিগবিদিক হারানো আমি,তখন ছুটে গেলাম,জানা নেই কোথায়।ক্লান্ত আমি তখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম একা একা-এর ফাঁকে হঠাৎ একজন অজানা লোক এসে আমার পিঠে চড়ে মারতে মারতে আমাকে নিয়ে গেল তার বাড়ির দিকে।

আমার কাছে সে মুহুর্তে সেটা ছিল একটা বিরাট সৌভাগ্যের সময়-অবশ্য দুর্ভাগ্যে পরিবর্তন হতে খুব একটা সময় লাগেনি যদিও।কিছুক্ষণের মধ্যে আমাকে নিয়ে খুঁজে খামারের কজন লোক নিয়ে গেল পুরোনো প্রভুদের কাছে-গরু খুঁজতে গিয়ে আমাকে দেখে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল,পুরোনো জায়গায়।প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলাম, ‘এখানে কোন আইন নেই নাকি,যা ইচ্ছা তাই’?তবে কোন কথা আর মুখ দিয়ে বের হয়নি।

তবে কথা শোনা বলা তো দুরের কথা,মারধর আর সাথে সাথে চিৎকার-‘ দোষ দেয়া,
চীৎকার করা,তোমাকে ঠিক একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার’।


আমার নতুন আরোহীর কথাগুলো কেউ শুনলো না কিছুই-তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আমাকে টেনে নিয়ে ফিরে গেল সবাই।পাহাড়ি রাস্তার একপাশে রাখাল ছেলেটার ছিন্ন ভিন্ন শরীরের অংশ পড়ে ছিল-যতটুকু সম্ভব, একসাথে জড় করে মাটিতে পুতে সবাই ফিরে গেল খামারের দিকে।

আর সকলে রীতিমত ধরেই নিল-আমাকে নিয়ে আসা মানুষটাই,খুনী।বিচারের জন্যে তাকে সবাই নিয়ে গেল,শহরের আদালতে।ছেলেটার বাবা মা আর তাদের কান্না চীৎকার-সে অদ্ভুত এক দৃশ্য।লোকজনের মধ্যে একজনের মন্তব্য ছিল-‘কেটে ফেলা হোক-ওই গাধাটাকে টুকরো টুকরো করে-আমার সাহায্য চাইলে আমিও আছি’।

তবে এ ব্যাপারে কার ও সন্দেহ ছিল না-আজকের এই ঘটনায় আমার কোন অংশ ছিল না, হয়তো এ যাত্রা বেঁচে গেলাম।কিন্ত ছেলেটার মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে চীৎকার করে কেঁদে কেঁদে আমাকে অভিশাপে জর্জরিত করছিল আর বলে যাচ্ছিল শুধু ‘এই জানোয়ারটার জন্যেই হারালাম আমার ছেলে-যে যাই বলুক, ওর জন্যেই আমার এই দুরবস্থা আজ।দেখ সবাই ঐ নিষ্ঠুর জানোয়ারটাকে,খেয়ে খেয়ে পেঠ পুরে যাচ্ছে,ওর পিঠের আরোহীর যে কি হলো কোন চিন্তাই নেই।আমার অবাক লাগছে-জানোয়ারটা ভাবছে ও একেবারেই নিরপরাধ, কোন দোষ নাই যেন ওর।জান,ওটাই তো দোষীদের ব্যাবহার,হতভাগা চারপেয়ে খুনী,তুই যদি কথা বলাও শিখিস,তবুও তোর সাধ্যি হবে না নিজেকে নির্দোষী সাবস্ত্য করা। অন্ততঃ তোর চেষ্টা করতে কি দোষ ছিল।সুযোগ হলেই তো লাথি মেরেই আঘাত করিস অথচ সময়মত শুধু দাঁড়িয়ে দেখে গেলি,হায়রে কপাল।আর কিছু না হোক পিঠে তুলে নিয়ে অন্তন্তঃ ঐ খুনি ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিতে পারতিস আমার ছেলেটাকে।তোর কি জানা নেই বিপদে পড়া একটা মানুষকে ফেলে আসাটাও একটা অপরাধ?



তুই ভাবছিস তুই শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দুঃখে আনন্দে হেসে যাবি সে হবে না,দেখ তোর কি ব্যাবস্থা করছি শয়তান?’ কথাটা শেষ করেই বুড়ী তার জামার ফিতা খুলে নিয়ে আমার পেছনের পাগুলো বেঁধে দিল একটার সাথে আরেকটা এভাবে-যেন কোনভাবেই আমার নড়াচড়া করার আর কোন উপায় ছিল না।এর পর যা হলো তা আমার চিন্তার বাইরে,দরজার চৌকাঠের একটা অংশ খুলে নিয়ে আমাকে সাধ্যমত পিটিয়ে চললো বুড়ি।ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্তি না দিলে হয়তো সেটাই হতো আমার শেষ যাত্রা।ভুলটা ভেঙ্গে গেল আমার বুড়ী থেমে থাকেনি-জলন্ত কাঠের টুকরো এনে ঠেসে দিল আমার দুপায়ের মাঝে,নিজেকে বাঁচানোর জন্যে বাধ্য হয়ে বুড়ীর চোখেমুখে বাতকর্ম করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না-পেশাবের যন্ত্রনায় বুড়ির ছুটে যাওয়া আর কোন উপায় ছিল না।

কাকডাকা ভোরে আমার পুরোনো মালিকের ক্রীতদাস খবর নিয়ে এলো, আমদের পুরোণো কত্রী চারিতে আর তার স্বামী দুজনেই আর নেই-মারা গেছে তারা দুজনেই।শীতের সকালে আগুন পোহাতে পোহাতে ক্রীতদাসটা বলে যাচ্ছিল-‘আপনাদের না বলে পারছি না, এ ধরণের দুর্ভাগ্য যেন কারও শত্রুরও না হয়।হয়তো সবকিছূ সুন্দর করে সাজিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে আমি আমার সাধ্যমত বলে যাচ্ছি,সাজিয়ে নিয়ে কেউ আপনারা এটা লিখে রাখতে পারেন’।


‘এবার বলছি শুনুন-আমাদের শহরটা ছাড়িয়ে পাশের শহরের থানসলিয়াস নামটা অনেকেরেই জানা, চরিত্রের কোন বালাই ছিল না লোকটার।কাজের মধ্যে সারাদিন নেশা করা আর বেশ্যাপাড়ায় বেশ্যাদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করা,ওটাই ছিল তার কাজ।আমাদের মনিবের বিয়ের কথা চলছিল যখন-থানসলিয়াস তার পচ্ছন্দের কথা খুব একটা গোপন রাখেনি,বেশ জোরেসোরেই চেষ্টা চালাচ্ছিল সে, চারিতেকে বিয়ে করার জন্যে।থানসিলিয়াসের দামী দামী অলঙ্কার-নানান ধরনের উপহার নিয়ে যাওয়া ছিল যেন তার প্রতিদিনের কাজের একটা অংশ-আমাদের কত্রীর শেষমেষ তবুও পছন্দ হয়নি,তাকে আর যাই হউক ও ধরণের লোকের সাথে কেই বা সংসার করবে?চারিতে-আমাদের কত্রীর বিয়ে হলো,লিপোলিমাসের সাথে,
থানসলিয়াসের মত প্রতিপত্তিশালী না হলেও আচারে ব্যবহারে কয়েক শত,না বরং হাজারগুন ভাল।বিয়ে হলেও চারিতের জন্যে থানসলিয়াসের আকর্ষন তো কমেনি বরং বেড়ে গেল আরও কগুন।ছলে বলে কৌশলে যে ভাবেই হউক চারিতে কে থানসলিয়াসের চাই-এর জন্যে তার খুন করলেও যেন হবে না কোন অনুতাপ।লিপোলিমাস যে দিন তার সাহস আর বুদ্ধিতে চারিতে কে ডাকাতদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলো-আর কেউ না থানসলিয়াস তার প্রশংসায় ছিল পঞ্চমুখ,অবাক হওয়ারই কথা।থানসলিয়াসের সে দিনের সাজানো কথাগুলো,
চারিতে আর লিপোলিমাসের দীর্ঘজীবন কামনা,শহরবাসীদের পক্ষথেকে অভিনন্দন জানানো,সে গুলো কি ভোলার কথা।

চারিতে আর লিপোলিমাস কৃতজ্ঞতার বর্হিপ্রকাশ হিসাবে-থানসলিয়াসকে চরম আতিথেয়তার সাথে প্রায়ই ডেকে আনতো তাদের বাড়ীতে।প্রায়ই তাকে আমন্ত্রন করে রাতের বিশেষ খাবারের আয়োজনে ডেকে আনতো-তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শেষ ছিল না কোন।কিন্ত ভালবাসা, ভাললাগায় অন্ধ থানসলিয়াসের তখন শুধু একটাই চিন্তা-কি ভাবে চারিতের মনটাকে বদলানো যায়, কি ভাবে তাকে ভাসিয়ে নেয়া যায় আর্কষনের প্লাবনে।তবে এটুকু বুঝতে তার অসুবিধা হয়নি-চারিতের সাথে পরকীয়া সম্পর্কের কোন সম্ভাবনা নেই-চারপাশের একগাদা চোখে,কোন ছলচাতুরিতে চারিতেকে ভোলানাও অনেকটা অসম্ভব,চারিতে আর লিপোলিমাস একে অন্যের ভালবাসায় ভেসে যাওয়া,মত্ত।ভালবাসার অন্ধত্ব,মানুষকে কোন বেপরোয়া করে দেয়-বাধা বিপত্তির পাহাড় থানসলিয়াসের কাছে ছিল না কোন কিছু’।

‘শিকার কোন সময়েই খুব একটা পচ্ছব্দ ছিল না চারিতের,যদিও খরগোস হয়তো শিকারের
সঙ্গায় পড়ে না।জাল বিছানো ঝোপ-ছুটে যাওয়া শিকারী কুকুরের দল,কোন জন্ত জানোয়ারের
উপায় ছিল না বেরিয়ে যাওয়ার,কোন না কোন শিকারীর ধনুকের শিকার হওয়া ছাড়া।
লুকোনো জন্তগুলোর শরীরের গন্ধ খুঁজে খুঁজে কুকুরগুলো অপেক্ষা করে থাকতো,কখন জন্তগুলো ভয়ে ভয়ে বের হয়ে আসে-তারপর কুকুরের চীৎকার,শিকারীদের ভেঁপুর ডাক আর ঢাক ঢোলের শব্দ।

যাকগে,সে দিন আটকে গেল বেশ বড়সড় দাঁতাল একটা শুওর,চোখে মুখে যেন আগুনের ছটা,বিটকেলে একটা গন্ধ শরীরে,সকলে তো ধরেই নিল ও আর পালাবে কোথায়।কিন্ত সে দিনটায় ছিল আমাদের অবাক হওয়ার পালা-দাঁতাল শুওরটার ক্ষমতাও ছিল যেন অশরীরি,
চারপাশের শক্ত দড়ির জালগুলো যেন সুতোর খেলা তার কাছে।শুওরটা যখন তেড়ে এলো আমদের এপাশ ওপাশ ছুটে পালানো ছাড়া আর কোন চিন্তা ছিল না,কিন্ত থানসলিয়াসের মাথায় তখন দুষ্টু বুদ্ধি,লিপোলোমাসকে ডেকে বললো ‘দেখ এ সময়টাই সত্যিকারের শিকারীর পরিচয়,ছুটে যাও,নাকি ঐ চাকরগুলোর মত তুমিও ভঁয়ে কাতর।তুমি যাও বল্লম নিয়ে,আমি আসছি তীর ধনুক নিয়ে’।

“দু জনেই তাদের ঘোড়ায় চড়ে গেল শুওরটার পেছনে-কিন্ত দাঁতাল শুওরটাও পিছিয়ে
যাওয়ার নয়, যেন চোখে চোখ রেখে সে ঠিক করে নিল কে হতে পারে তার শিকার।
লিপোলোমাস তার বল্লম ছুড়ে ধাওয়া করলো শুওরটার দিকে-থানসিলিয়াস ও ছুঁড়ল তার ধনুক কিন্ত সেখানেই ছিল আমাদের অবাক হওয়ার পালা-ধনুকটা সোজা গিয়ে লাগলো লিপোলোমাসের ঘোড়াটাকে,রক্তাক্ত ঘোড়াটা মাটিতে পড়ে ছটফট যন্ত্রনায় অস্থির।হঠাৎ মাটিতে পড়ে যাওয়া অপ্রস্তত লীপোলোমাসকে দাঁতাল শুওরটা এসে ইচ্ছেমত আক্রমন করলো্‌,লিপোলোমাসের আত্মরক্ষার উপায় ছিল না কোন।লিপোলোমাস-ছিন্নভিন্ন পোষাক,সারা শরীর জুড়ে আক্রমনের ছাপ,থানসিলিয়াস যেন ছুটে গেল লিপোলিমাস্ কে সাহায্য করার জন্য,বন্য শুওরটা তখনও তার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে,হাতের শুওরটার দাঁতের আঘাতের সাথে খুব একটা পার্থক্য ছিল না-তার পর বল্লমের আঘাতে শেষ হল বন্য শুওরটা’।

‘এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর থানসিলিয়াস লুকোনো সব চাকর বাকরদের চীৎকার করে ডেকে আনলো।আমাদের মনিব তখন আর নেই-ছেড়ে যাওয়া এ পৃথিবী,তার।থানসিলিয়াসের মনের ইচ্ছা পূর্ন-তার চাতুরীরও তো কোন তুলনা হয় না,হাউমাউ করে কান্নাকাটি আর মাঝেমাঝে ছুটে লিপোলিমাসের মৃতদেহ কে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছিল সে,দুঃখে হতহারা,এক চেহারা।তার মানসিক হাভভাব দেখে চাকরবাকর সবাই তাকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে গেল-কিন্ত ভাবে ভঙ্গীতে থানসিলিয়াস তখন দুঃখ বেদনার সমুদ্র হারিয়ে যাওয়া একটা মানুষ’।

‘লিপোলিমাসের মৃত্যুর খবর পৌছালো তার মা বাবার কাছে,পৌছালো আমাদের কত্রী চারিতের কাছে।সেটা ছিল সত্যিই এক মন ভাঙ্গা দৃশ্য-চারিতে পাগলের মত এলোথেলো কাপড়ে রাস্তার এদিক ওদিক লিপোলিমাসের নাম ডেকে ছুটে বেড়াছিল,লোকজন তাকে জোর করেও বাড়িতে ফিরে আনতে পারছিল না।রাস্তার চার পাশটায় এ দৃশ্য দেখে দুঃখে কেউ যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি,সবাই যেন ছিল ভেঙ্গে পড়া চোখের জলে।ক্লান্ত চারিতে শেষমেষ এসে তার স্বামী লিপোলিমাসের মৃতদেহের পাশে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলো।
চারিতের বাবা মা তাকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে গেল কোন ভাবে-চারিতের সে মানসিক যন্ত্রনা কার না মনে ছুয়ে যায়নি,সেদিন’।

‘আমাদের সারা শহরটা ভেঙ্গে পড়া লিপোলিমাসের শবযাত্রায়-উপস্থিত ছিল থানসিলিয়াসও।
থানসিলিয়াসের বুক চাপড়ে হাহাকারও ছিল দেখার মত-কিন্ত ওটা তো কান্না ছিল না,ছিল আনন্দের সীৎকার।শুধু কান্না না-দুঃখের ভাষার কোন কমতি ও ছিল না,ক্ষনেক্ষনে চীৎকার করে বলছিল সে ‘লিপোলিমাস,আমার বন্ধু,আমার খেলার সাথে এ ভাবে ছেড়ে গেলি আমাকে,এত নিষ্ঠুর হলি কেমন করে?আমি যে একেলা হয়ে গেলাম,তোকে ছাড়া’।থানসিলিয়াস এর ফাঁকে ফাঁকে চারিতেকে হাত বাড়িয়ে তাকে সান্তনার কথায়ও জড়িয়ে ধরছিল বারে বারে-চারিতের বুক চাপড়ে কান্নায় ছুটে যাচ্ছিল থানসিলিয়াস,তাকে জড়িয়ে বলে যাচ্ছিল সান্তনার হাজারো কথা।কিন্ত নিষ্ঠুর মানুষটার উদ্দেশ্য তো ছিল,শুধু তার পাশবিক কামনার সাফল্য’।

‘সৎকর্ম শেষ হওয়ার পরও চারিতের মনটা থেমে থাকেনি,খাওয়া দাওয়া ঘুম ছিল না আমাদের মনিব স্ত্রী, চারিতের।প্রতিদিন শুধু ছুটে যাওয়া লিপোলিমাসের কবরের পাশে-আর বসে বসে ভেসে যাওয়া কান্নার সমুদ্রে।থানসিলিয়াস শতেক চেষ্টা করেও চারিতেকে খাওয়া দাওয়া করাতে পারছিল না-চারিতের কাছে খাওয়া দাওয়া ঘুমের পর্বটা ছিল অপ্রয়োজনীয়।
শেষে বাবা মার কথায় কিছুটা নম্র হলো চারিতে-বাবা মার চোখের জল সেটাতো ফেলে দেওয়ার নয়।কিন্ত চারিতের দেহমন ছাপিয়ে ছিল শুধু একজন-লিপোপোলিমাস।চারিতে দেবতা ডিয়নসাইস এর পুজোর মুর্তি লিপোলিমাসের আদলে তৈরী করে আনলো-তার স্বর্গ মর্ত্য সবই যে লিপোলিমাস’।

‘থানসিলিয়াস তখন তার সহ্য সীমা ছাড়ানো,আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তাকে-চারিতের মানসিক ভারসাম্যতা যে ফিরে আসবে কখন। ভেঙ্গে পড়া চারিতের কোন বদল হয়নি তখনও-তার কাছে লিপোলিমাস ছাড়া আর কিছুiই নেই,কথায় কথায় সেই বুক চাপড়ান,কাপড় চোপড় ছিড়ে ফেলা,এর মাঝে থানসিলিয়াস বিয়ের প্রস্তাব দিল ।বেশ অভাবনীয়-থানসিলিয়াসের চরিত্রের,অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে থাকেনি আর,ভালবাসা তো তার কাছে শুধু একটা খেলা।

আমার মনিব স্ত্রী চারিতে থানসিলিয়াসের বিয়ের প্রস্তাবে এমনই অভিভুত-জ্ঞান হারিয়ে ধপাস করে পড়ে গেল মেঝেতে,যেন আচমকা বজ্রপাতে আলো হারানো মৃত একটা নক্ষত্র।জ্ঞান ফিরে এলে চীৎকার করে আরেক ঘরে ছুটে গেল চারিতে-থানসিলিয়াসের জন্য কোন উত্তর ছিল না তার,ছিল আকাশ ছড়ানো মৌনতা।লিপোলিমাসের অশরীরি আত্মা ঘুমন্ত চারিতের পাশে বসে বসে দুঃখ করে বলছিল ‘চারিতে,আমার মন-আমার প্রাণ,কেউ ভালবাসবে না তোমাকে আমার মত,হয়তো কেউ ডাকবে না তোমাকে প্রিয়া বলে আর।তবে এ বয়সে একাকীত্ব অসহনীয় হবে তোমার জন্যে-ঐ অসহনীয় পীড়নের চেয়ে তুমি খুঁজে নিও সঙ্গী,যতই যাই হউক ঐ খুনী থানসিলিয়াসকে আসতে দিও না তোমার কাছে।আমি জানি,আমার জন্যে অটুট থাকবে-ভালবাসা তোমার।কথা বলো না ঐ খুনীর সাথে-ভুলেও যেও ওর সাথে অনুষ্ঠানে।ওর হাতে আমার রক্ত-ওর তথাকথিত বন্ধুর রক্ত ছড়ানো ওর পোশাকে।আমার শরীরের যে ক্ষতগুলো তোমার চোখের জলে ধোয়া-তার মাঝে যা আমার মৃত্যুর কারন সেটাতো ওই নিষ্ঠুর থানসিলিয়াসের,হয়তো জানা হবে না তোমার কোনদিন’।লিপোলিমাসের অশরীরি আত্মা ব্যাখা করে তার সম্পুর্ন মৃত্যুর ঘটনা জানালো চারিতেকে।ঘুমে চারিতে ঘুমের মাঝেই চোখের জলে ভেজা তার বালিশ-হঠাৎ যেন দুঃস্বপ্নে ঘুমটা ভেঙ্গে যাওয়া তার,চারিতে দুঃখে যন্ত্রনায় ভেঙ্গে পড়লো।কান্নায় কান্নায় আচড় কেটে ছিঁড়ে ফেললো তার কাপড় চোপড়-আচড়ে রক্তাত্ত শরীর এখানে ওখানে।

‘যদিও স্বপ্নের কথা তবুও চারিতে ভুলে যায় নি স্বপ্নে বলা লিপোলিমাসের যন্ত্রনার কথা।ঘৃন্য পাশবিক থানসিলিয়াসকে তার প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে তার শান্তি নাই-পরলোকে গিয়েও লিপোলিমাসের সাথে মিলনে।আবার এলো থানসিলিয়াস,সেই পুরোনো কাকুতি মিনতি আর বিয়ের প্রস্তাব।তবে চারিতের সাজানো অভিনয়টা ছিল,থানসিলিয়াসের চিন্তা ধারণার বাইরে।
চারিতে ঠোঁটের কোনে মেকী হাসি সাজিয়ে বললো, ‘থানসিলিয়াস,আমার স্বামী,তোমার বন্ধু,তোমার ভাই এর মত-তার শরীরের গন্ধ,তার ছোঁয়া এখনও ছুয়ে আছে আনার মন।দয়া করে কটা দিন সময় দাও আমাকে ভুলে যাওয়ার।তা ছাড়া কারও মৃত্যুর এত কাছাকাছি বিয়ে করাটা ঠিকও হবে না,লোকে শুধু আমার বদনাম করবে না,তোমার মত নামীদামী লোকের সম্মানও মাটিতে লুটিয়ে দিতে কেউ ছাড়বে না।বছরটা কাটুক,আর তা ছাড়া তুমি তো জানই সামাজিক সংষ্কারমত মৃত আত্মার শান্তি না হলে অশরীরি আত্মা এসে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করতে দ্বিধা বোধ করবে না’।

‘চারিতের কিছুটা সময় চাওয়ার যুক্তিটা মেনে নিলেও দুশ্চরিত্র থানসিলিয়াস ক্ষান্ত দেয় নি,তার তর সইছিল না আর।চারিতের মুখটা মনে করে লম্পট থানসিলিয়াসের পক্ষে অনেকটা অসম্ভব ছিল-এই অযথার অপেক্ষা।সুযোগ পেলেই চারিতেকে যখন তখন চুমু-যৌন চাহিদার কথা জানান দেওয়া কোন কিছুই ছাড়ে নি থানসিলিয়াস।শেষমেষ চারিতে না পেরে থান্সিলিয়াসকে ডেকে বললো, ‘দেখ তুমি যদি বিয়ের আগে শারীরিক সঙ্গম চাওই,তবে
আমার এই কথাটা অন্তত রাখ,আমাদের বিছানায় যাওয়ার কথা যেন আর কেউ না জানে’।


‘চারিতের প্রতি অন্ধ থানসিলিয়াস তখন শুধু ভাবছে কখন আসবে,সন্ধ্যার ঢলে আসা অন্ধকার,স্বপ্নের চারিতের শরীর জুড়ে ভেসে যাবে কামনার সমুদ্রে,আর কিছু চাই না তার।চারিতের ছলা কৌশল কোনটাই তার চোখে ধরা পড়ে নি’।
‘শোন,মাঝরাত্রি হলে চলে এসো আমার ঘরে,এমন ভাবে কাপড়চোপড় পরবে যেন কেউ না চিনতে পারে,তোমাকে।আর হ্যা শোন,বাড়ির গেটের কাছে এসে একটা শিষ দিও,আমার কাজের মেয়েটা অপেক্ষা করবে ঘরের বাইরে অন্ধকারে সে নিয়ে আসবে তোমাকে আমার ঘরে,’।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো ধারাবাহিক। সুন্দর ঝরঝরে লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.