নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লুসিয়াসের রুপান্তর-দশম অধ্যায়
ডাকাতদের পরাজয়
ডাকাতরা ফিরে এলো যখন, বেশ কিছুটা অন্ধকার তখন,অনেক লুটকরা জিনিষপত্র তাদের সাথে-তবে অনেক হাতাহাতি মারামারির পর,বেশ কজন ডাকাত আহত।ঠিক হলো আহতরা গুহায় থাকবে সেবা শুশুষ্রার জন্যে-আর বাকীরা চলে গেল লুকানো রেখে আসা লুটের মালপত্র নিয়ে আসার জন্যে।রাতের খাবার সেরে নেওয়ার পর দলের লোকজন আমাকে আর আমার ঘোড়াকে নিয়ে বের হলো,ইচ্ছেমত হাতের লাঠি দিয়ে মেরে পাহাড়ের চড়াই উতরাই ছাড়িয়ে নিয়ে গেল আমাদেরকে,লুটের জায়গায়,সেই একেবারে শেষ আলোর বেলায়।ক্লান্ত ঝিমিয়ে পড়া আমি,আমার ঘোড়া,কিন্ত একটা মুহুর্তের বিশ্রামও ছিল না আমাদের ভাগ্যে।সব লুট চাপিয়ে আবার এত তাড়াহুড়া ফিরে যাওয়ার প্রস্ততি ছিল যে একটা পাথরের ধাক্কায় রীতিমত উল্টে পড়ে গেলাম আমি।তার পর শুধু লাঠি না,লাথথি,ঘুষি কোনটাই বাদ ছিল না,আমার ভাগ্যে।আমার পেছনের পায়ে বিরাট একটা ক্ষত,খুরের কিছু অংশটাও ভেঙ্গে গেছে।একটা ডাকাত চিৎকার করে বললো, “কেন অযথা সময় নষ্ট করছি আমরা,ঐ খোঁড়া গাধাটার পেছনে,ওটাকে একপাশে ফেলে দিয়ে নিস্তার পাওয়াটাই ভাল”।
আরেকজন বললো, “এই গাধাটা আর কিছু না হউক আমাদের জন্যে নিয়ে এসেছে যত দূর্ভাগ্য,আমাদের বেশ কজন বন্ধুও হারালাম আমরা,লূটের মালপত্র ও তেমন পাওয়া যায়নি একটা”।
ডাকাত দলের নেতাও বললো, “ঠিকই বলেছ,আমরা মালপত্র নামানোর পর,ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব ঐ খাদে শকুনের খাবারের জন্যে”।
“না,না এটা খুব সহজ একটা মরণ হবে ঐ জঘন্য পশুটার জন্যে”।
বেশ তর্ক বিতর্ক চললো আমার পরিনতির চিন্তা নিয়ে।এ সব কথা বার্তায় ভঁয়ে আমার খুরগুলোও যেন ভেঙ্গে দু ভাগ।জায়গা মত পৌছানোর পর তাড়াতাড়ি মালপত্র নামিয়ে আহত সঙ্গীদের নামিয়ে দিয়ে আবার ফিরে গেল ডাকাতেরা,সাথে আমার ঘোড়াটাও।সবাই ভুলে গেছে তখন আমাকে মেরে ফেলার কথা,ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দেওয়ার কথা।
মরণের ভঁয়ে আমি অদ্ভুত এক অস্থতিতে,নিজেকে বললাম, ‘লুসিয়াস কেন বোকার মত দাঁড়িয়ে আছ এখানে,কিসের অপেক্ষায়,তোমাকে মেরে তোমার শরীরটাকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলবে?এই ডাকাতেরা তো ঠিক করেই ফেলেছে-তোমাকে নিয়ে,তুমি কি চাও ঐ দূর্বিষহ মৃত্যু।ঐ যে পাহাড়ের খাদ ভঁরে থাকা খোঁচা খোঁচা পাথরে,ওখানে ফেলে দিলে ঐ পাথরগুলো তোমাকে আদর করবে না,বরং ধরে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।যে যাদু দেখে মুগ্ধ হয়ে ছিলে,সেই যাদুতে তুমি শুধু গাধা হলে,একটা গোলামীর গাধা।অন্যান্য গাধাদের মত তোমার পিঠের চামড়াটাও শক্ত না,বরং মসৃন ঘোড়ার মত।বেচে থাকার ইচ্ছা কি একেবারেই নাই তোমার?পালিয়ে যাও সময় থাকতে নিজেকে বাচাও।এটাই ঠিক সময় ডাকাতেরা কেউ নাই,আর এই বুড়ী যার এক পা পরপারে তাকে নিশ্চয় তুমি ভঁয় পাচ্ছ না,তোমার পেছনের পায়ের দুটো লাথিই ওর জন্যে যথেষ্ট, পালাও’।
‘কিন্ত কোথায় যাব আমি,কে ঘরে নেবে আমাকে”? নিজেকে প্রশ্ন করলাম ,ও প্রশ্নটা একটা গাধার মতই,রাস্তায় পাওয়া একটা গাধার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ কার নাই’।আর চিন্তা না করে সমস্ত শক্তি নিয়ে বাঁধা দড়িটা ছিড়েই ছুটে গেলাম আমি।
বুড়ীটার চোখদূটো ছিল যেন ঈগল পাখীর চোখ-আমাকে ছুটতে দেখে,ছিড়ে যাওয়া দড়িটা টেনে আমাকে গুহাতে নিয়ে যাওয়ার যথসাধ্য চেষ্টা করলো,বুড়ী।তবে ডাকাতরা আমার ভাগ্য তো নির্ধারন করেই রেখেছে-কোন ভাবে নিজেকে বাচাতেই হবে,পেছনের পা দুটো দিয়ে লাথি মেরে ছুড়ে ফেললাম বুড়িকে।বুড়ী চিৎকার করেই চললো,দড়িটা তখন ও তার হাতে-আশেপাশে কেউ ছিল না,শুধু চারিতে মেয়েটা ছুটে এলো বাইরে।অদ্ভুত এক দৃশ্য-অনেকটা যেন ডারসীর চেহারাটা চুল বাধা একটা পাগলা গরুর লেজে, যেসুস আর এমফিয়ন এর প্রতিশোধ নেওয়া তাদের বিমাতার নিষ্ঠুরতার।চারিতে,তখন এক নতুন চারিতে,বুড়ির হাত থেকে দড়িটা টেনে নিয়ে আমার পিঠে চড়ে,সোজা বের হয়ে গেল।আমার নিজেকে রক্ষা করার ইচ্ছাটা আরও দৃঢ হয়ে উঠলো-চারিতে কে রক্ষা করার জন্যে।নতুন উদ্দীপনায় ছুটে চললাম আমি,যেন রেসের এক ঘোড়া প্রথম হতে হবে আমাকে,কিছুটা চারিতের মিষ্টি কথায় আর কিছুটা তার লাঠির মারধোর।মাঝে মাঝে চারিতের পায়ে চুমু খাওয়া, যেন আমি আমার পাশে কামড়ানোর চেষ্টা করছি।
চারিতে আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনা করলোঃ ‘স্বর্গের দেবতারা,এটাই সেই সময় আমাকে সাহায্য কর,না হলে আর সাহায্য দরকার কি আমার?আর ভাগ্য দেবতা তুমই তো সবসময়ই নিষ্ঠুর আমার সাথে,অন্তত বদলাও এ বার,তোমার রাগের বিষ অনেককাল ছেড়েছ আমার দিকে।আমি এবার সত্যি সত্যিই প্রচণ্ড বিপদে”।
চারিতে এরপর মাথা নামিয়ে বললো আমার কানে, “আমার জীবন,স্বাধীনতা সব কিছু তুলে দিচ্ছি তোমার হাতে,ভাল গাধা আমার,আমাকে বাঁচাও।নিয়ে যাও আমার মা বাবা,আমার স্বামীর কাছে,চিরঋনী থাকবো আমরা সবাই।তুমি হবে আমাদের কাছে চরম সম্মানের একজন,তোমার চাওয়া মত সব ভাল ভাল খাবারগুলো তৈরী থাকবে যে কোন সময়।তোমার ঘাড়ের কেশর নিজের হাতে আচড়ে বিনুনি করে দেব আমি,মাথার সামনের চুল কোকড়া করে সুন্দর ভাবে সাজাবো।তোমার লেজের চুলগুলোতে জটা পড়ে গেছে অনেক,পরিষ্কার করে দেব সব আমি।অলঙ্কার,দামী জিনিষপত্র দিয়ে সাজিয়ে দেব সারা শরীর তোমার,রোদের আলোয় ঝিকমিক করে ঝাঁঝিয়ে দেবে সবার চোখ।আমার সব ক্রীতদাসেরা সারি বেঁধে রাস্তায় তোমার গুনগান গাইতে গাইতে হেটে যাবে বিজয়ের শোভাযাত্রা নিয়ে সারা শহরে।
সারাটা জীবন আমার রেশমি রাতের পোষাকটায় নিয়ে আসবো,তোমার জন্যে রকমারী খাবার।আমাদের বাড়িতে তোমার মার্বেল পাথরের মুর্তি থাকবে,আমাকে রক্ষা করার জন্যে,
শুধু তাই না আমি নামকরা এক লেখককে ডেকে বলবো এই উদ্ধারের কাহিনী,লেখা থাকবে ভবিষৎ এর পাঠকদের জন্যে।নামটা কি হবেঃ “গাধার পিঠের যাত্রা বা রাজকুমারীর বন্দীদশার কাহিনী”,ঐ ধরণের কিছু একটা।কাহিনী যদি ও হয়তো বা বিরাট কিছু একটা না,তবে তোমার নাম থেকে যাবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে,তুমি হবে আধুনিক পুরানের নতুন কথা।যেমন রাজা বয়েওটিয়ার ছেলে ফ্রিক্সাস ভেড়ার পিঠে ডারডেনেলাস পার হওয়ার কাহিনী,এরিয়নের ডলফইনকে তার কথামত চালিয়ে নেওয়ার গল্প,ইউরোপা ষাঁড়ের পিঠে সমুদ্র ছাড়িয়ে ক্রীটে পৌছানোর ইতিকথা।যদিও এটা সবাই জানা সেটা জুপিটারের আরেক রুপ।
এমন ও হতে পারে,যে তুমিই হয়তো এক দেবতা,হয়তো মানুষ একজন বদলে গেছে গাধায়’।
সারাটা পথ প্রার্থনায় না হয় কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল মেয়েটা,পৌঁছালাম আমরা রাস্তার চৌমাথায়।আমার রশিটা টেনে নিয়ে আমাকে রাস্তার ডানদিকে নিয়ে গেল,মেয়েটা,যেটা তার বাড়ির দেকে যাওয়ার রাস্তা,কিন্ত আমার আগেই জানা ছিল এই রাস্তা দিয়েই ডাকাত দলের যাওয়া আসা তাদের লুটের মালপত্র আনার জন্যে।আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না ঐ রাস্তায়,মনের কথাগুলো কই ভাবে বোঝাবো চারিতেকেঃ “বোকা মেয়ে কি করছ তুমি এটা?এ ভাবে আমরা দুজনেই পৌছাবো পরপারের রাস্তায়,এই রাস্তায় গেলে”।
মেয়েটার চেষ্টা সেই রাস্তায় যাওয়ার,আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না সেদিকে।চারিতের টানাটানি আর আমার আটকে রাখা,অনেকটা সম্পত্তি নিয়ে উত্তরাধিকারীদের ভাগাভাগি,কোথায় কে যাবে।ঠিক সেই সময় ডাকাতদল ফিরে আসছিল একই রাস্তা দিয়ে,চাঁদের আলোয় তাদের কষ্ট হয়নি আমাদের চিনে ফেলতে।ঠাট্টা করে ডাকাতদলের একজন বললো, “বেশ ভাল মেয়ে তুমি,সুযোগ পেয়েই ছুটে যাচ্ছ বাপের বাড়ীর দিকে,কিন্ত একা তো তোমার যাওয়াটা তো ঠিক হবে না।,আমরা আসছি তোমার সাথে”।আমার ঘাড়ের দড়িটা টেনে,লাঠি দিয়ে রীতিমত মারধর।আস্থানায় ফিরে গেলে সাথে সাথে মৃত্যু,এ চিন্তায় বিপর্যস্ত মন আমার,সাথে আবার ভেঙ্গে যাওয়া খুরের ব্যাথা,হেটে যাওয়ার শক্তিটাও ছিল না।খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না,এক ডাকাত লাঠির মার বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠলো, “তোমার পায়ের খুরগুলো আর হাঁটার যোগ্য নেই তাই না?কিছুক্ষণ আগেই তুমি দৌড়াচ্ছিলে রেসের ঘোড়ার মত,এমন কি উড়ে যাওয়া পেগাসাস হয়তো হার মেনে যেত তোমার কাছে”।
বনজঙ্গল দিয়ে ঢাকা,আস্থানায় পৌছে ডাকাতরা দেখে ঝুলে পড়ে আছে বুড়ীর শরীরটা,
আত্মহত্যা করে উদ্ধার পেয়েছে বুড়ীটা।ডাকাতেরা দড়ি কেটে বুড়ীর শরীরটা কেটে নামালো,
টেনে খাদে শরীরটা ফেলে দিল ডাকাতরা।মেয়েটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে আরম্ভ হলো খাওয়া দাওয়া,বুড়ীর স্মৃতিতে,তার তৈরী করা খাবারে।মুখ ভঁরা খাওয়া নিয়ে আলোচনা কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় সম্ভব তাদের সাথে এই বিশ্বাসঘাতকতার,যদিও সবাই একমত মৃত্যুই প্রযোজ্য,আলোচনা কি পদ্ধতিতে।
“পুড়ে মারা হোক ওদের সবাই”-একজন প্রস্তাব দিলল।
“জঙ্গলে বেঁধে ফেলে দিলে কেমন হয়,জঙ্গলের জন্তরা ছিড়ে ছিড়ে খাক ওদের”।
“বরং ক্রসে বেঁধে পেরেক মেরে ফেলে দেওয়া হোক রাস্তায়”।
“না না আমাদের,অত্যাচার করার খেলনাগুলো সব পরীক্ষা করা হউক ওদের দিয়ে”।
সব চিৎকারের মধ্যে বেশ শান্ত গলায় একজন বললো-“বন্ধুরা,অযথা কাউকে কষ্ট দেওয়া আমাদের আদর্শের বাইরে,তা ছাড়া ওদের অপকর্মের এ সাথে এ শাস্তি একেবারেই বেমানান।মেয়েটার শাস্তি যেটা প্রাপ্য সেটাই দেওয়া উচিত তাকে-তাকে মেরে ফেলবো না,আমরা।গাধাটা এখন অক্ষম,খোড়া ওকে দিয়ে কোনও কাজও হবে না আর,ওর পছন্দ মেয়েটাকে,ওর গলা কেটে নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিয়ে মেয়েটাকে ওর মধ্যে সেলাই করে বড় রাস্তার পাথরের পাশে ফেলে দেওয়া হঊক রোদ্দুরে,শুধু মাথাটা থাকবে বাইরে।আমার প্রস্তাবে আছে সকলের যন্ত্রনার প্রস্তাব।গাধাটার যে ভাবে মৃত্যু হওয়া উচিত ঠিক ও ভাবেই মরবে সে,আর মেয়েটা বন্যপশু পাখীদের খাবার হয়ে শেষ হবে পোকা মাকড়ের খাবার হয়ে।রোদে পুড়বে মেয়েটা গাধার পচা শরীরে,নাকেমুখে গন্ধ,তার মনে হবে এর চেয়ে ক্রসবিদ্ধ হয়ে মরাই ছিল ভাল।সব মিলিয়ে অনেক সুবিধা এটায়,প্রথমত গাধার শরীরের মাঝে বেচে থাকবে
মেয়েটা,দ্বিতীয়ত নাক ভঁরা অসহ্য পচা গন্ধে দুর্বিষহ এক অবস্থা,তৃতীয়ত রোদে পিপাসায় ক্ষিধায় কাতর একটা চেহারা,তার হাত দুটো ছাড়াই থাকবে,চাইলে নিজের জীবন নিজেই শেষ করতে পারবে”।
কারও দ্বিধা ছিল না এই প্রস্তাবে,সবারই সম্মতি ছিল।মনের দুঃখে বললাম, “হায়রে শরীর আমার,কাল তো তুমি হবে পচা লাশ একটা”।
রাতের অন্ধকার প্রায় শেষ,সূর্যের চাকায় নিয়ে সকালের লাল আলোটা চারপাশে,দৌড়ে হাঁপিয়ে একজন লোক এসে ঢুকলো আস্থানায়,কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিল সে ডাকাত দলের একজন ছদ্মবেশে।একটু সুস্থির হয়ে বলা আরম্ভ করলোঃ ‘শেষ পর্যন্ত ঠিক করা হলো,মিলোর বাড়ী,হাইপাতায় খুব একটা বাঁধা পাবো না,আমরা।সকলের মনে আছে তো কি বলা ছিল, ডাকাতির পর লুট করা মালপত্র নিয়ে চলে যাবে তোমরা,আমি আশেপাশের লোকজনদের সাথে থেকে খোঁজখবর নিব।আমার দায়িত্ব খোঁজ নেয়া,লোকজন কি করছে ডাকাতদের ধরার জন্যে,কেউ ডাকাতদের কাউকে দেখলো নাকি?গুজব হলো সবাই জানে,লুসিয়াস নামের এক ডাকাত সেই দায়ী হাইপাতার ডাকাতির জন্যে,একেবারেই পরিষ্কার সকলের মনে,সন্দেহ নেই কারও’।
‘এই লুসিয়াসের কাছে একটা নকল করা চিঠি ছিল,চিঠিতে বলা সে বেশ সম্মানিত একজন লোক।মিলোর সাথে জানাশোনার পর,মিলোর আমন্ত্রনে বাড়িতেই ছিল তার থাকার ব্যাবস্থা।মিলোর বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে প্রেমের ভনিতা করে লুসিয়াস জেনে নেয় বাড়ির অলঙ্কার,দামী জিনিষপত্র রাখার জায়গাটা।ডাকাতির দিনের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি লুসিয়াসকে।লোকজনের তার সাদা ঘোড়াটায় চড়ে পালিয়ে যাওয়াটা খুব একটা কষ্টকর ব্যাপার ছিল না তার জন্যে।তার সহকারীকে মিলোর বাড়িতে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ডাকাতির আসামী হিসেবে।পরের দিন শহরের কর্মকতার আদেশে ওকে জেলে পাঠিয়ে অত্যাচার করা হয় স্বীকারোক্তির জন্যে,যদি ও ওর কাছে নতুন কোন খবর পাওয়া যায়নি।অবশ্য লুসিয়াসকে ধরে আনার জন্যে লোক পাঠানো হয়েছে থিসালীতে’।
আমি বেশ কিছুটা উত্তেজিত কথাগুলো শোনার পর,ভাবছিলাম কই অবস্থা আমার,পুরোনো আমি আর এই নতুন,কোথায় সেই সম্ভান্ত্র লুসিয়াস,আর কোথায় মাল বয়ে যাওয়া মরণের মুখের হতভাগা এই গাধা।মনে হলো মুনি ঋষিদের বলে যাওয়াগুলো আসলে বড়ই সত্যি,
নিয়তি,অন্ধ দুচোখেই,হয়তো দেখার অনুভূতিটাই নেই কোন,না হলে কি ভাবে প্রাচুর্য ঢেলে দেয় অযোগ্য,বদমাশদের হাতে,কোন দেখার অনুভূতি থাকলে অবশ্যই লজ্জায় মাথা গুটিয়ে নিত।তার সবচেয়ে বড় দোষ শয়তানদের দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সমাজে আর শান্তিপ্রিয়,ভাল মানুষদের ছুঁড়ে ফেলা শাস্তি আর ভোগান্তি।আমার কথাটাই ধরা যাক না,আমি এক এখন সাধারন এক বোঝা বয়ে যাওয়া গাধা,শুধু তাই না আমার বিরুদ্ধে ডাকাতির অপবাদ।অপবাদ আমার বিরুদ্ধে,আমি যার অতিথি তারই ঘর ভেঙ্গে ডাকাতি,এর চেয়ে গুরুতর আর নেই কোন অপরাঁধ।উপায় ও নেই আমার নিজের পক্ষে কোন কিছু বলার।আমি চীৎকার করে বলতে চাই, ‘no fei,no feiঃআমি তো দোষী নই’।
আমি চীৎকার করে বলার চেষ্টা করলাম, ‘না, না’ বারে বারে,কিন্ত কোন ভাবেই আমার পক্ষে বলা সম্ভব হলো না, ‘আমি দোষী না,আমি দোষী নই’।তাই আমি শুধু ব্যা, ব্যা করেই গেলাম।
‘নিয়তির বিরুদ্ধে অভিযোগে,কিই বা লাভ’?নিজেকে বললাম, ‘কত নোংরা তার খেলা আমাকে নিয়ে,আমার নিজের ঘোড়ার পাশে মাল বয়ে নেওয়া গাধা আমি,একই আস্তাবলে’।
ঘটনাগুলো মিলিয়ে যা মনে হলো আমার,ডাকাতেরা চারিতেকে নিজেরা মারতে রাজী না এই ভঁয়ে,যে তার অশীরিরি আত্মা যেন ফিরে না আসে সেখানে।আমার পেটের দিকে তাকিয়ে কষ্ট হচ্ছিল,হতভাগা মেয়েটাকে ওর মধ্যে সেলাই করা হবে।
আমার বিরুদ্ধে অপবাদের খবর আনা ছদ্মবেশী ডাকাতটা,তার জামা ছিঁড়ে বের করলো প্রায় হাজার খানেক লুকানো সোনার মোহর,ফেরার পথে অসহায় পথচারীদের কাছ থেকে লুট করা।ভাগাভাগির সময় জানতে পারলো সবাই দলের অনেকেই মারা গেছে এর মাঝে,নানান জায়গায় ডাকাতি করতে গিয়ে।তার উপদেশ ছিল কিছু সময় ডাকাতি থেকে ছুটি নিয়ে লোকজন জোগাড় করা দরকার দলের।স্থানীয় কমবয়সী ছেলেরা বেশ কিছু এই সব ঘটনায় আগ্রহী হয়ে ডাকাতদলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করবে,আগ্রহী হবে লুটপাট করে প্রাচুর্যতার জীবনের কথা ভেবে,খেঁটে খেঁটে কষ্টের জীবন এড়ানোর জন্যে।আসার সময় তার দেখা এক ভিখারির সাথে,ভিখারীকে কয়েকটা সোনার মোহর দিয়ে বোঝানোর পর সেও রাজী তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্যে,এখন শহরের বাইরে অপেক্ষা করছে।
সবাই রাজী হলো প্রস্তাবে-কিছুদিনের ছুটি,বিশ্রাম আর নতুন সঙ্গী যোগাড়,দলের পুরো শক্তি ফেরানোর চেষ্টা।শহরের বাইরে তাদের নতুন সঙ্গী সাথে দেখা করার জন্যে বেশ আগ্রহীও ছিল সবাই।
ছদ্মবেশি ডাকাতটা শহরের বাইরে যেয়ে ফকিরকে সাথে নিয়ে গেল দলের সকলের সাথে পরিচয় করানোর জন্যে,বিশাল চেহারার একজন,চওড়া কাধ,লম্বায় দলের সবচেয়ে ডাকাতের চেয়েও বেশ কিছুটা লম্বা।বলিষ্ঠ চেহারাটা-চওড়া বুক,ফুটে দেখা যাচ্ছে তার ছেঁড়া কাপড় ভেদ করে।
আস্থানায় ঢুকে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে সে বলা আরম্ভ করলো, ‘সুপ্রভাত বন্ধুরা,আমি খুবই আগ্রহী এ দলে যোগ দিতে,তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে আর মারস,যুদ্ধ দেবতার সহানুভুতি নিয়ে।আমি বেশ সাহসী আর হাতে সবার মোহর দিলে,সাহসটা আমার, বেড়ে যায় আর ও।এই ছেঁড়া,নোংরা কাপড় দিয়ে আমাকে বিচার করো না,আমি ভিখারি না কাঙ্গাল ও না,আমার আসল পরিচয় আমি নাম করা এক ডাকাতদলের নেতা,যাদের ভঁয়ে সারা মাসেডোনিয়া এক সময় ছিল তটস্থ।আমি হায়েমুস,থারেসে আমার বাড়ী,বাবার নাম থেরো,তার ও বেশ নামডাক ছিল ভঁয়ঙ্কর ডাকাত হিসেবে।রক্তের খেলায় জন্ম আমার,
মোটামুটি পাহাড়ি গুহায় কাটানো আমার সারা জীবন,পেশা হিসাবে আমিও বেছে নিলাম আমার বাবার পদক্ষেপ।আমি আমার সমস্ত ধনসম্পত্তি,আমার দলের লোকজন,সবাইকে হারালাম হয়তো যুদ্ধ দেবতা মারসকে ঠিকমত পূজা না করার জন্য,খেপিয়ে দিয়ে।
মাসেডোনিয়ার সম্রাটের দপ্তরের এক কর্মকর্তার বাড়ি আক্রমন করায় ক্ষেপে গেছে মারস আর আমার অধঃপতন।তোমরা কি শুনবে দুঃখের কাহিনী আমার’?
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো হচ্ছে। লিখে যান।