নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাওলো কোয়েলহো এর এলেভেন মিনিটস. (ধারাবাহিক)

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৮

দ্বাদশ অংশ

“যাদের বোঝার ক্ষমতা আছে,তাদের জানা,মনের মানুষটার সাথে স্বর্গসুখটা সম্ভব খুঁজে পাওয়া যৌনবিহার ছাড়াই।চরম সুখটা দেহযোগ না,একে অন্যতে মিশে যাওয়াটাও না,ওটা তোমার সেই আরেক মনকে খুঁজে নেয়ার আবেগ।আবেগ যখন চরম,তখন শরীর এসে যোগ দেয় সেই স্বর্গনাচে,তবে শরীর কোন সময়ই মুখ্য নয়”।
“তুমি যেন শিক্ষকের মত আমাকে ভালবাসা শিখিয়ে দিচ্ছ”।

মারিয়া থেমে গেল না,কথাই ছিল তার একমাত্র রক্ষাকবচ।
“যে ভালবাসতে জানে,তারা তো সবসময়ই শরীর রতিতে মত্ত,যদি তারা নাও থাকে একসাথে।দুটো শরীরের যোগাযোগ যখন হয়,তখন উপচে পড়ে হ্রুদয় ভঁরা আলোড়ন।সময়
কেটে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা,দিনের পর দিন আনন্দ যোগে।স্বর্গনাচ আরম্ভ হয় একদিন,
শেষ হয় না পরের দিন,বা তার পরের দিন বা তার পরের দিন-এ এক অভাবনীয় আনন্দ,যার কোন শেষ নেই।কোন এগার মিনিট নেই যেখানে”।

“কি”।
“আমি ভালবাসি তোমাকে”।
“আমি ও ভালবাসি তোমাকে”।
“জানা নেই আমার,আমি কি বলছি”।
“আমি ই বা কি জানি”।
উঠে দাঁড়িয়ে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে এলো সে।এবার দরজাটা নিজেই খুললো,ব্রাজিলে বিশ্বাস
বাড়ীর মালিকের শুধু প্রথমবারই দরজা খোলাটা সুলক্ষন।

মারিয়ার ডাইরী থেকে,লেখা পরের দিন সকালেঃ

“গত রাতে রালফ যখন প্রথম আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো,মনে হলো একটা চোর কিছু একট ছিনিয়ে নিতে এসেছে আমার কাছ থেকে,সে যখন চলে গেলো মনে হলো,সে ফেলে গেছে হাজারো গোলাপের সুবাস,ও তো চোর না,ও যে আমার মনের রাজা।
প্রতিটা মানুষ খুঁজে বেড়ায় তাদের চাওয়াগুলো,লুকিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো সরিয়ে দেয় অনেক
চেনা অচেনা মুখ,আর টেনে আনে যারা সত্যিকারের চরম আপন।ওটা হ্রদয়ের সৃষ্টি আবেগ
যার প্রচন্ডতা ছুঁয়ে যায় চারপাশের সবাইকে।
প্রতিদিন আমার নবজন্ম,আমি বেঁচে থাকি যুদ্ধ করে।আমি কামনাকে চাই চিরন্তন সঙ্গী হিসেবে,একাকীত্ব থেকে সরে আসার জন্যে নয়,প্রয়োজনীয় মনে করেও নয়,ওটা যে আমার
ভাললাগার আকাশ”।


০০০০০০০০০

গড় হিসেবে গোটা ৩৭/৩৮ টা মেয়ে কাজ করে কোপাকাবানায়,তাদের মধ্যে একজন ফিলিপিনো,নায়া,মারিয়া যাকে বন্ধু মনে করে।ছমাস থেকে খুব বেশী হলে তিন
বছর পর্যন্ত কাজ করে,কেননা বিয়ে হয়ে যায়,কেউ হয় কারও রক্ষিতা,তা ছাড়া আর্কষন
ক্ষমতাটাও তো হারিয়ে যায়।মিলান বেশ কায়দা করে তাদের অন্য জায়গায় কাজ খুঁজে নিতে বলে।

তাই একে অন্যকে সম্মান করা উচিত এ ব্যাবসায়,অন্যের খদ্দেরকে নিজের দিকে টেনে নেয়াটা ঠিক না।আগের সপ্তাহে কলম্বিয়ান একটা মেয়ে তার পকেট থেকে ব্লেড নিয়ে এক
যুগোস্লাভ মেয়ের ড্রিঙ্ক ফেলে দিয়ে বেশ ঠাণ্ডা সুরে বললো-ঐ ব্লেডের কাটা দাগ থাকবে তার মুখে চোখে যদি ঐ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার থেকে সে সরে না আসে।যুগোস্লাভ মেয়েটার উত্তর ছিল,কারও ঘরের পুরুষ না লোকটা।সে দিন রাতে ম্যানেজারটা এসে কলম্বিয়ান মেয়েটার সাথে কটা কথা বলে চলে গেল যুগোস্লাভ মেয়েটার কাছে,নাচ ড্রিঙ্ক খাওয়া।আবার যুগোস্লাভ মেয়েটা চোখ টিপে যেন কলম্বিয়ান মেয়েটাকে টিটকারী মেরে বলছিল, “ এখন বুঝতে পারছো,আমি তোমার চেয়ে বেশি সুন্দরী,বয়সটাও কম আমার,তাই আমাকেই বেঁছে নিয়েছে লোকটা”।

ঘন্টা দুয়েক পরে যুগোস্লাভ মেয়েটা ফিরে এলে,কলম্বিয়ান মেয়েটা একটা ব্লেড পকেট থেকে বের করে তার এক কান থেকে আরেক কান পর্য্যন্ত আঁচড় কেটে দিল।আরম্ভ হলো দুজনের মারামারি,চারপাশের মেঝেতে রক্ত ছিটিয়ে পড়া,ক্লাবে আসা লোকজন সব ভঁয়ে ছুটে পাঠালো।

পুলিশের জিজ্ঞাসায় যুগোস্লাভ মেয়েটা বললো,দেয়ালের তাকে রাখা গ্লাসটা পড়ে তার মুখটা কেটে গেছে(কোপাকাবানার দেয়ালে কোন তাক নেই,গ্লাসও নেই সেখানে)।ওটা হলো নিস্তব্ধতার আইন,যাকে ইটালিয়ানেরা বলে,ওমের্তা,রু ডে বার্নে যা ঘটে সেটা থাকবে সেখানেই,ভালবাসা ছাড়িয়ে মৃত্যু পর্যন্ত,সব কিছুর সেখানকার আইনে,বাইরের পুলিশ আইনের লোকজনের প্রবেশ নিষেধ ও এলাকায়।পুলিশদের জানা ছিল ওমের্তা সমন্ধে,বুঝতে কষ্ট হয়নি তাদের যুগোস্লাভ মেয়েটা মিথ্যা কথাবলছে-বাড়াবাড়ি করতে চাই নি তারাও,ও ঘটনায় নিয়ে আর,কাউকে ধরে নিয়ে জেলে রেখে শুধু শুধু সরকারের খরচটাই বাড়বে।

মিলান পুলিশকে বেশ তাড়াতাড়ি আসার জন্যে ধন্যবাদ জানালো,এটাও বললো সম্ভবত সবটুকুই একটা ভুল বোঝাবুঝি,এমনও হতে পারে অন্য কোন ক্লাবের কেউ এসে অযথা একটা গন্ডগোল সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল।পুলিশ চলে যাওয়ার পর সে দুটো মেয়েকেই বলে দিল ক্লাবে আর না আসার জন্যে,আর কিছু না হউক কোপাকাবানার একটা নামডাক আছে,সম্মানিত একটা ক্লাব হিসেবে।

সবাইকে ডেকে মিলান বললো,এ ব্যাবসার প্রথম আইন হলো,নিজেকে সম্মান পেতে গেলে অন্যকে সম্মান করতে হবে।দ্বিতীয় আইন হলো বিচক্ষনতা,সর্তকতা-মেয়েরা বিশ্বাস করে তাদের গ্রাহককে অনেকটা সুইস ব্যাঙ্কের মত,গ্রাহকদেরও প্রচন্ড আস্থা তাদের ওপর।মাঝে মাঝে ভুল যে হয় নি,তা না দু একজন খদ্দের ঠকিয়েছে মেয়েদের,মারধরও করেছে।মিলানের বেশ দক্ষতা আছে লোকচেনার,সে জানে কাকে আমন্ত্রন জানানো যায়,কাকে যায় না।মেয়েদের অনেকেরই জানা ছিল না,সেটার মাপকাঠিটা কি।তারা দেখেছে সুন্দর পোষাক,ছিমছাম চেহারার লোকদেরও ফিরিয়ে দিয়েছে মিলান ক্লাব লোকে ভর্তি বলে,যদিও ক্লাব একেবারেই ছিল খালি,ক্লাব বেশ ব্যাস্ত নতুন খদ্দেরের জায়গা নেই আর।আবার এটাও দেখেছে নোংরা পোষাকে,খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে খদ্দেরকে আমন্ত্রন জানিয়ে মিলান স্যাম্পেন এনে দিয়েছে।শুধু চেহারা দেখে মানুষ চেনা যায় না,এটা বুঝেছে তারা,এটা কোপাকাবানার মালিকের কাছে শেখা তাদের।

নিঃসন্দেহে একটা সুস্থ কাজের পরিবেশ-মালিক এবং কাজের মেয়ের কার ও অভিযাগ ছিল না কোন।বেশীর ভাগ খদ্দেরই যারা আসে,বিবাহিত-বেশ নামীদামী কোম্পানীর কর্মকর্তারা,নামকরা ব্যাবসায়ী-মেয়েরাও ছিল কজন বিবাহিত,ছেলেমেয়েদের স্কুলের যাতায়াতও ছিল তাদের,জানা ছিল তাদের ভঁয়ের বা কেলেঙ্কারীর কিছু নেই।

কাজের মেয়েদের সকলের মধ্যেই একটা সহকর্মীসুলভ ভাব ছিল,তবে বন্ধুত্ব যাকে বলা যায় তা না,খুব একটা আলাপ আলোচনা হতো না তাদের ব্যাক্তিগত কথাবার্তা নিয়ে।অবশ্য মারিয়া তার সহকর্মীদের চোখে ভাবে ভঙ্গীতে তেমন একট্যাঁ কোন মানসিক সংঘাত দেখেনি,সবাই যেন চারপাশের পৃথিবীটাকে আঙ্গুল দেখিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্যে।

কাজ আরম্ভ করার সপ্তাহ খানেক পর নতুন আসা কাউকে সহকর্মী হিসেবে গন্য হয়,পরামর্শ দেয় সবাই যেন কার ও সাংসারিক জীবনে কোন সমস্যা না হয়।নিয়মগুলো মেনে চলাঃ
কোন দিন বাইরের কারও আমন্ত্রন গ্রহন না করা,মানুষের সমস্যা শোনাটা ঠিক আছে,তবে কোন মন্তব্য না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।যৌনবিহারে সীৎকারের ভান করা(মারিয়ার প্রথমেই শেখা এই চালাকিটা),রাস্তাঘাটে পুলিশ দেখলে হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলা,
কাজের অনুমোদনপত্র,হেলথ সার্টিফিকেট ঠিক রাখা,আর শেষ যেটা নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধ না করে যাওয়া।

ক্লাবে ব্যাস্ততার আগের সময়গুলো মারিয়া কাটায় বই নিয়ে,অন্যান্য মেয়েদের কাছে সে ছিল বুদ্ধিজীবী।প্রথমে সবাই ভাবতো যে সে হয়তো প্রেম বা ঐ ধরণের সরস কোন বিষয়ের বই নিয়ে,তবে অর্থনীতি,মনবিজ্ঞান,খামার পরিচর্যার বই দেখে,তারা আর কোন দিন মন্তব্য করেনি।বই পড়াটা ছিল মারিয়ার শুধু সময় কাটানোর উপায় না,যেহেতু তার অনেক খদ্দের ছিল যারা তার সাথে নানান ধরণের আলাপ আলোচনায় করতে আনন্দ পেত।মিলানেরও অনেক আস্থা ছিল মারিয়ার উপরে,সহকর্মীদের কাছে সে ছিল ঈর্ষার পাত্র,অহংকারী,উচ্চাশী একটা একটা চরিত্র।

কিন্ত কিইবা যায় আসে,কথার তীরে কেউ মারা যায়নি কোনদিন,সার্থকতা জাগায় বিদ্বেষ,ও নিয়ে চিন্তা করে কিই বা লাভ,তার দরকার লক্ষ্যে পৌছানো-ব্রাজিলে ফিরে যাওয়া আর তার ভবিষৎ এর খামার বাড়ী নিয়ে পরিকল্পনা করা।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রালফ হার্টের চিন্তা বেশ বিচলিত করে রেখেছে তাকে,প্রথম বারের মত সে সুখী শুধু একজনের কথা ভেবে-কিছুটা বিচলিত শুধু ভালবাসা নিবেদনের কথা ভেবে,হয়তো সবই হারাতে হতে পারে তাকে।তবে কিইবা হারাবে সে,তার চাওয়ার তো কিছুই নেই?মিলান রালফের কথা বলায় তার হার্টের গতির দ্রুততা বেড়ে গিয়ছিল,নাকি সেটা ছিল, ‘বিশেষ খদ্দের’ এর কথাটা বলায়।কি বোঝা যায় তাতে?তার মনটাই যে ঠকিয়ে দিচ্ছে তাকে।ওটাই স্বাভাবিক,ভালবাসা যায়,তবে কেউ তোমার একার নয়,ওটা বিশ্বাস করাটাই বোকামী।এটা ভেবে সে ছিল কিছুটা এলোমেলো,কোন কিছুতেই কি স্থিরতা নেই তার?

“ভালবাসা প্রচন্ড যখন হারানোর ভঁয়টা ছাপিয়ে থাকে মনে।আমার ভালবাসায় যদি কোন খাঁদ না থাকে(শুধু বলার জন্যে না,নিজেকে সান্তনা দেয়ার জন্যে না),ভালবাসার স্বাধীনতা সরিয়ে নিয়ে যাবে কোন ঈর্ষা,অযথার ব্যাথা,বেদনা-আর ব্যাথা,বেদনা তো ভালবাসারই একটা অংশ।যারা খেলাধুলা করে তাদের জানা এটাঃলক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে প্রতিদিনের ব্যাথা,অস্বস্তিসেখানে কিছুই না।প্রাথমিক ব্যাথা বেদনার পর্বটা এনে দেয় না জানা এক আনন্দ,জয়ের আলোয়,ব্যাথার অনুপস্থিতি মনে করিয়ে দেয় যে সাধনায় লুকোনো ব্যার্থতার কথা”।

বিপদ টেনে আনা তখন বিশেষ কাউকে উদ্দেশ্য সাজিয়ে নেয়া কল্পনার দেশটা,বিশেষ একজন
ছাড়া পৃথিবীতে কিছু নেই আর।মারিয়া নিজেকে ধন্যবাদ দিল,তার স্বপ্ন বিশেষ কাউকে জড়িয়ে নয়।তবুও মাঝে মাঝে সে চিন্তা করে,কোথায় তার মনের মানুষটা,কেন সে এতদিনও আসেনি তাকে একবার খুঁজে নিতে,যদি জানা থাকতো ট্রেনের সত্যি গল্পটা,সুপ্ত কামনাগুলো,হয়তোভালবাসা নিবেদন দূরে সরিয়ে নিয়েছে তাকে।এটুকু জানা আছে তার মনের সুন্দর চিন্তাগুলো ব্যাথায় যেন্ রুপান্তরিত না হয়,তাই বিশেষ একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় মারিয়া রালফ হার্টের কথা ভেবে,হতে পারে সেটা মদ,আগুনের ছটা,হয়তো অপেক্ষা তার ফিরে আসার।সব কিছু থেমে যাবে তার আসার পর,আকাশের দিকে হেসে ধন্যবাদ জানাবে অজানা কাউকে,প্রিয়জন যে ফিরে আসা ঘরে।

আর যদি অভিযোগ থাকে তার মনের কোনায় বলা না বলাগুলো নিয়ে,নিজেকে বলবে সে,
“তুমি শুধু ঐ কথাগুলো ভাবতে চাও,তুমি যদি চাও,জীবনের সবকিছু ফেলে দিয়ে নিজেকে
ঠেলে দিতে ঐ ভাবনায়,তবে তাই কর,দ্বিধা কেন আবার”।

বইপত্র পড়ে যাবে সে,চারপাশের লোকজন,নাচগান,রং এর বাহার-বিশেষ করে নিজের কথাগুলো,তার মনটাকে নিয়ে সহজভাবের আলোতে।এ ভাবেই নিজেকে সাজিয়ে নেবে সে।
তার চিন্তায় লুকিয়ে থাকবে তার সাথে কোনদিন আর না দেখা হওয়াটা।অনেক ধৈর্য চিন্তায়
সে এ ভাবধারাকে একটা সবুজ আকাশে নিয়ে গেছে,তার জেনেভা ছেড়ে যাওয়ার পরের দিনগুলোর,একটা ছবি তৈরী করেছে সে মনের খাতায়,পুরোনো দিনের একটা মুখ,লম্বা চুলে,সরলতার হাসি ছড়ানো,আর আকাশ ভেঙ্গে দেয়া কথার সুর।অনেকদিন পর যদি কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করে,তার যৌবনের দিনগুলোর কথা,সে বলবে,
“চমৎকার স্বপ্নিল দিনগুলো,সময় ছিল একটা ভালবাসার”।

মারিয়ার ডাইরীর লেখা,কোপাকাবানার ব্যাস্ততা হারানো একটা সন্ধ্যাঃ

“আমার এ কদিনের অভিজ্ঞতায় এটুকু বুঝতে পেরেছি,শরীরের খেলা,যৌনবিহার এক ধরণের নেশা,মানুষের নিজের দৈন্দিনতা,টানাপোড়েন থেকে কিছুটা অবকাশের কটা মুহুর্ত,অন্যান্য যে কোন নেশার মত সেটা একই ভাবে ক্ষতিকারক।একজন মানুষ যদি নেশা করতে চায়,সেটা যৌনসঙ্গম বা অন্য যা কিছুই হউক না কেন,তার ফলটা যা হয় সেটা তার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।তবে জীবনের চলার পথে এটুকু আমাদের সকলেরই শেখা, “ভাল” আর “শ্রেষ্ঠ”,দুটোর মাঝে পার্থক্যটা অনেক।

এটুকুও জানি আমি যৌনতা,শরীরের খেলার জন্যেও বিশেষ একটা সময় দরকার,ওটা যে কোন সময়,যে কোন ভাবে উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়,ঘড়ির কাটাদুটো যখন ছুঁয়ে যাবে একে অন্যকে,শরীর যখন হয়ে যায় একে অন্যের।সেটা সবসময় খুঁজে পাওয়া যায় না,সবসময় খুঁজে পাওয়া সম্ভব না,তা ছাড়া ভালবাসার মনটা তো দেহসুরে উন্মাদ নয়।

দুটো মন,দুটো পৃথিবী,তাদের সময়ের হাতগুলো সাজিয়ে নেয়,মনের খেলা,ধৈর্যের সুরে,জীবনের নাটকে-জানাচেনা তাদের চরম সুখানন্দ যা প্রতিনিয়ত খুঁজে পাওয়া যায় না,ও যে একটা “ঘটনা”,দুই লিঙ্গের মিলন উচ্ছাস।জীবনে কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় না,বেঁচে থাকায় আনন্দ ছুঁয়ে যায় মনটাকে অহরহ,খুঁজতে হয় না যৌনসঙ্গমের সুখ,আর যখন লিঙ্গসঙ্গম হয় তার আনন্দ উপচে পড়ে চারপাশটায়,যৌনতার সুখ যে তখন আকাশ ছোঁয়া,সেই মুহুর্তে মানুষ হারিয়ে ফেলে তার নিজেকে,আত্মসর্মপণ করে,একে অন্যকে খুঁজে পায় তাদের স্বপ্নের আকাশ।আমার লেখাগুলো পড়ে দেখলাম,বেশ বিজ্ঞ মনে হচ্ছে নিজেকে”।


০০০০০০০০


এটা লেখার কদিন পর মারিয়া প্রস্ততি নিচ্ছিল তার অভিনয়ের,নিষ্পাপ এক মেয়ের চরিত্র, না হয়তো অজানা এক মা,কোপাকাবানার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো,টেরেন্স,তার বিশেষ খদ্দের।বারের পেছনে মিলান বেশ খুশী,মারিয়া হতাশ করেনি তাকে।মনে পড়লো মারিয়ার সাজানো কথাগুলো, “ব্যাথা,বেদনা আর আনন্দের চরম সুখ”।
“আমি লন্ডন থেকে এসেছি শুধু তোমার কথা ভেবে,তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আমার”।
একটু হাসলো সে,তবে তেমন কোন উচ্ছাস উপচে পড়া ছিল না হাসিতে।কিন্ত যথাযথ নিয়মটা পালন করেনি,কোন ড্রিঙ্কের অর্ডার না দিয়েই টেবিলে বসে পড়েছে।
“জান শিক্ষক তার ছাত্রদের শেখানোর সময়,নিজেও শেখে অনেক কিছু”।
“আমি জানি তুমি কি বলতে চাচ্ছ”?মারিয়া রালফের কথাটা মনে করে বললো,কিছুটা বিচলিত ছিল মনটা তার।
সে তো আরেকজন খদ্দের এর সাথে,খদ্দের কথাবার্তাগুলোকে তার প্রাধান্য দেয়া দরকার,তার ভাবা উচিত খদ্দের এর কথা।
“তুমি কি আমার সাথে যাবে”।

১০০০ ফ্র্যাঙ্ক।হেঁটে যাওয়া কোন এক অজানা পৃথিবীতে,কি লুকোনো জানা নেই তার।তার মালিক তাকিয়ে ছিল।অবশ্যই সে তার খুশীমত বেছে নিতে পারে,কি করবে না করবে।ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে,তার মনের মানুষটা যে আজও খুঁজে নেয়নি তাকে।
“কোন রকম তাড়াহুড়া তো নেই তোমার”।
সে মাথা নেড়ে,না বললো।
“আমার ড্রিঙ্ক,নাচ,কাজের প্রতি কিছুটা সম্মান দেখানো এটা তো তেমন একটা বেশী চাওয়া কি?”।
কিছুটা থমকে গেল সে,তবে এগুলো সবই তো নাটকের একটা অংশ,আদেশ দেয়া আবার আদেশ পালন করা।ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল সে,নাচের পর্বটা শেষ করে,ট্যাক্সি ভাড়া করে গেল তারা সেই আগের হোটেলটায়,এর মাঝে ১০০০ ফ্যাঙ্কও তুলে দিল টেরেন্স মারিয়ার হাতে।
যথারীতি উর্দিপরা লোকটা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল,সেই একই নদী ছোঁয়া ঘরে দাঁড়ানো দুজন।

টেরেন্স উঠে পকেট থেকে লাইটার বের করলো,মারিয়ার সেই সময় চোখে পড়লো,ঘরটায় সাজিয়ে রাখা বেশ কটা মোমবাতি।এক এক করে মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো টেরেন্স-“কি জানতে চাও,তুমি?কেন আমার স্বভাবটা এ ধরণের?আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে,তুমি এর আগের সন্ধ্যাটা বেশ তৃপ্তিতেই কাটিয়েছ।তুমি কি জানতে চাও তোমার মনোভাবটাই বা ও ধরণের,কেন”?

“আমি ভাবছিলাম,ব্রাজিলে একটা সংষ্কার আছে,তিনটা জিনিষে কোনদিন আগুন জ্বালিও না একসাথে।তুমি ওটা মেনে চলছ না”?
কথাটা গায়ে না লাগিয়ে টেরেন্স বললো,
“তুমি অনেকটা আমার মত।শুধু ১০০০ ফ্র্যাঙ্কের জন্যে তুমি এখানে আসনি,তুমি এসেছ,
তোমার বিবেকের যুদ্ধে,নির্ভরতা খুঁজতে,তোমার অসহায়তার জন্যে।ওটা ভালও না,খারাপও না,ওটাই স্বাভাবিক”।

টিভির রিমোটটা হাতে নিয়ে বেশ কটা চ্যানেল বদলাতে বদলাতে মারিয়া খুঁজে নিল খবর-যুদ্ধ আর উদ্ধাস্তদের পালানোর দৃশ্য।
“দেখছ।তুমি কি কোন সময় দেখেছ মানুষকে তার ব্যাক্তিগত সমস্যাগুলো সবার সামনে আলাপ আলোচনা করতে?খবরের হেডলাইন দেখেছ?পৃথিবীর আনন্দটাই অতাচারে,ব্যাথা,
বেদনার গল্প।একদিকে পীড়নের আনন্দ-অন্যদিকে উন্নাসিক ভাব,সবকিছুর জানার দরকার নেই জীবনের আনন্দে,তবু আমরা দেখে যাই অন্যের কষ্টটা,হয়তো তাদের দুঃখের সাথী হওয়াটাও”।

মারিয়ার আপত্তি থাকা সত্বেও,টেরেন্স দুটো গ্লাসে শ্যাম্পেন ঢেলে টেলিভিশনটা বন্ধ করে,মোমবাতি জ্বালাতে ব্যাস্ত হয়ে গেল।
“তোমাকে বলেছি না,এটাই আমরা-মানব জাতি,সেই যে আমাদের স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা কষ্ট পেয়েছি,না হয় কষ্ট দিয়েছি,কেন না ওটা আমাদের আয়ত্বের বাইরে”।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: কেন জানি এই ধারাবাহিকটা পড়ে আমার পাচ্ছি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.