নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেলাশেষের খেলায়

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:২৫

আরেকটা দিন-নতুন সূর্যের আলোয়,নতুন আরেক আকাশ।এ অভিঙ্গতার আলোর-তৃতীয় পর্ব।সকালটা নতুন যদি ও নতুন-নতুন আলোয়,আর সবকিছুই যেন পুরোনো সোঁদা গন্ধে ভঁরা।বেশ কিছু কথার ঝড় বয়ে যাওয়া আমাদের আকাশে,কফির ধাক্কায়।

আধো ঘুমের গাইড জানান দিল-
‘আজ আমরা Mt.Rushmore চলার পথে।রাতের শহর ছাড়িয়ে আমরা ছোট্ট পাহাড়ী শহর Aurora এর দিকে।বছরের এ সময়টা Aurora তেমন একটা লোকজন নেই,শুধু আশেপাশের
হোটেল-দোকানপাটের কিছু। শী্তের সময় ছোট্ট শহরটাই লোকে ভরপুর-ski এর মাতোয়ারা
লোকজনে।কিছু সময়ের জন্য আমরা থামছি ওখানে’।

Denver –পাহাড়ী উচ্চতা ৫২৩০ ফুট।শহরটার আরেক নাম তাই-Mile high city।
একগাদা সবুজ ছড়ানো একটা শহর-Colorado নদীর ভালবাসায় মাতাল।বড় শহিনটাআধুনিকতার উন্নাসিকতা আছে-আছে সবুজের পরিচ্ছন্নতা ছাড়ানো বর্নবাদ।ইতিহাস ীএখানে
হারানো আদিবাসীদের-ওদের ভাষা,গল্প এখন শুধু গল্পের গল্প।

আমরা এখন চলেছি Colorado ছাড়িয়ে-Wyoming এর দিকে।ছুটে যাওয়া ক্ষেত খামার-আর
মাঝের বেমানান রাজপথ।Cheyenne – Wyoming এর সবচেয়ে বড় শহর আর রাজধানী।
লোকসংখ্যায় এখনও লক্ষের কম।আর কিছু না হউক সরিয়ে তাড়ানো আদিবাসীদের নামটা জড়ানো।হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল আকাশের চেহারা-হাসির সুন্দর মেয়েটা চারপাশের
ধাক্কায় বদলে নেওয়া নতুন মুখে।একগাদা মেঘ রাঙ্গা মুখে-আর তার পর ভেঙ্গে পড়া কান্নায়।ঝমঝম সুর-এলোমেলো বাতাস।

কিছুটা হতাশায় আমাদের গাইড জানালো-‘আকাশের মেয়েটার অভিমানে এখন আটকানো
আমরা ,মেঘের এই এলোমেলোয় পাহাড়ের মুখটা হয়তো হবে না দেখা।তবে হতাশ হওয়ার
কিছু নেই-আকাশের মেয়েটার রাগ পড়তে তেমন একটা সময় লাগে না’।

ছোট্ট মেয়েটা তার বাবার কোন এককথায় অযথাই ভেঙ্গে পড়া হাসিতে।অদ্ভুত এক স্বাধিনতা
ওর আকাশে।প্রয়োজনের কোন যুদ্ধ নেই-শুধু ডানা খুলে দেওয়া স্বাধিনতা।বর্ন নেই-জাতির দলাদলি নেই-শুধু ছুটে যাওয়া মুক্তি।ভাবতে কষ্ট হয় ওর হাসিতে প্রয়োজন আসবে-দুঃখ আসবে-হারাবে ওর আকাশের ঐ স্বাধিনতা।বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকারে-‘হারিও না তোমার হাসি-দু;খের দুঃখে’।


Thailand এর দুই বান্ধবি – বসে থাকার এক ঘেয়েমি ছাড়িয়ে এপাশ ওপাশ আড়মোড়া ভাঙ্গায়।পেছনে Air supply এর ভালবাসার গান ।ক জন সাথে আনা খাবারের আনন্দে মশগুল।পশলা বৃষ্টির সবুজ-থমকে থাকা গরুর পাল,ঘোড়ায় বসা রাখাল,এ যেন অন্য এক োপৃথিবী।

গাইড আবার সময়ের হিসেবটা সাজিয়ে দিল-আমাদের।ছোট্ট শহর Douglas ছাড়িয়ে Black Hill Forest।ঘন্টা খানেকের পাহাড়ী প্তহ।তারপর crazy horse এর পাহাড়ী স্মৃতি।






গাইডের আবেগের সুরে বলা ছিল-
’আমেরিকান আদিবাসীদের অত্যাচারিত হওয়ার গল্প সকলেরই জানা।নিজের দেশ নিজের জন্মভূমি ছাড়িয়ে বিতাড়িত হওয়ার দুঃখ ছড়ানো আকাশ ছড়ানো
আকাশে।ঐ যে ছুটে যাওয়া কটা ঈগল-ওদের মতই মুক্ত ছিল এই আদিবাসীরা।প্রকৃতির মুক্ত,
ছন্দে সাজানো ওদের জগত।আমাদের এই সভ্যতার ইতিহাসে একগাদা রক্ত-আদিবাসীদের বন্ধুত্বের ছড়ানো হাত দুটো ভেঙ্গে দেওয়া আমাদের মুক্তির গানে।ওদের দেশ-ওদের আকাশ,
কটা এলোমেলো নাম ছাড়া ওদের অস্তিত্ব অনেকটাই হারানো।১৯২৭ সালের দিকে Mt.Rushmore এ সাজানো হলো-এ দেশের ইতিহাসের পাথরের কবিতায়।চার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মুখ সাজিয়ে দেওয়া ঐ পাহাড়টায়।অনেকটা যেন পরিহাসের ইতিহাস।তাই ১৯৪৮ রসালের দিকে কিছু আদিবাসী আর কিছু এলোমেলো বিদ্রোহীদের ফসল-Black Hill Forest এর পাহাড়ের আদিবাসীদের নেতা Crazy Horse এর মূর্তি।পৃথিবীর সবচেয়ে পাহাড়ি স্তম্ভ।
আদিবাসীদের একগাদা রক্তের কান্নার মধ্যে একঝলক হাসির সূর্য।crazy horse এর কাছে
General Custer এর হেরে যাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের ইতিহাসের আকাশে একটা উজ্জল
নক্ষত্র।ক্ষমতাশালীদের হেরে যাওয়ার একটা আরেকটা গল্প।আমরা এসে গেছি Crazy Horse
এর পাহাড়ে।বাসের জানালা দেখা ঐ দূরের পাহাড়টা।আমাদের পৌঁছাতে আরও ঘণ্টা আধেক।
এখানে আমরা দুপুরের খাবারটা সেরে নিব-যদিও খাবারের পর্বে তেমন একটা কিছু নেই,কিছু sandwich,hamburger ।সব মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক’।









বৃষ্টির আকাশটা তখন বেশ কিছুটা বদলানো-সেই গম্ভীর ভাবটা নেই আর,একঝলক মুছকি হাসি আকাশের দেশে।পাহাড়টার পাশেই ছোট্ট একটা balcony –কটা Binocular ফ্রেমে সাজিয়ে
দাড়ানো।গো্টা তিনেক খাবারের দোকান-একপাশে একটা gift shop।একটা হল ঘরে-crazy horse এর একটা মডেল-অসম্পুর্ন পাহাড়টার সম্পুর্ন আগামীকাল।

যেটুকু দেখা-Sphinx এর আঁকারের একটা পাহাড়-একটা জলজলে মুখ আর লম্বা চুলের বিনুনী।কিছু ফ্রেম সাজানো চারপাশ-কাজ চলছে,অনেকটা যেন যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের
অস্তিত্ব-থমকে থাকা,গতি নেই,সুর নেই,ভাষাটাও হারানো।













হল ঘরের একপাশটায় একজন আদিবাসীদের পোষাকে Crazy horse এর গল্প বলছিল দর্শকদের।বেশ অবাক করার মত ছিল ঘটনাটা-আদিবাসীর চেহারায় এক বিদেশী মুখ।
কেড়ে নেওয়া স্বাধীনতায় সাজানো স্বাধীন মনের পরিহাস।বলার নেই কিছু-শুধু শুনে যাওয়া
আর সয়ে যাওয়া।হারানো ভাষা,সংষ্কৃতি-ওদের মানুষ হওয়ার গান।সভ্যতার নামে কেঁড়ে নেওয়া কার ও খোলা আকাশটা-সভ্যতার স্বাধিনতা সাজিয়ে নেওয়া একগাদা কথা।হঠাৎ করেই এক পশলা বৃষ্টি-আর সাথে ছুটে আসা অসময়ের হিমেল বাতাস।এর ফাঁকে আমরা
এখন General Custer আর তার সঙ্গীদের শেষ আস্তানায়-প্রায় ২৩৬ জনের শেষ যুদ্ধের
গল্প।একপাশে আবার প্রথম/দ্বিত্বীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের সমাধি।ইদানীং যেন অনুশোচণায়
নিয়ে আসা Crazy Horse এর মূর্তিগুলো ।তারকাটায় তৈরী crazy horse এর কটা সাজানো ছবি।একপাশের সমাধি ছাড়িয়ে মাটির পাহাড়-আঁকাবাঁকা কোমর জড়ানো একগাদা সিঁড়ি রআর ইতিহাস সাজানো আধুনিক সাজে।

প্রায় ঘণ্টাআধেকের গল্প আমাদের-এবার আমরা Mt.Rushmore এর দিকে।যুক্তরাষ্ট্রের চার ঐতিহাসিক রাষ্ট্রপ্রতি সময়ের খাতায় ধরে রাখা চিরন্তন সুরে-পাহাড় কেটে সাজিয়ে দেওয়া
মুখগুলো-ওদের ঐতিহাসিক অবদান অতুলনীয়।Washington,Jefferson,Lincoln আর Roosevelt।পৃথিবী ছড়িয়ে দেওয়া কটা নাম-তবে আদিবাসীদের একটা লজ্জার আবরণ।

যদিবা চার রাষ্ট্রপতির অবদান যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার আকাশে জলজলে তবুও কি ভুলে যাওয়া যায় না বলা বলাগুলো।












Jefferson এর লেখা স্বাধিনতার সনদ অতুলনীয়-তবে ওটাতো শুধু লেখার লেখায়,তার কতটুকুই বা মেনে নেওয়া স্বাধিন মানুষের ভবিষৎ দষ্ট্রাদের।দাসপ্রথা-বর্নবাদ-পুরূষত্বের
সোচ্চার ভোলা যায় কি?

আমরা স্বাধীনতার গান গাই-চীৎকার করি স্বাধীনতায়,ভুলে যাই আমরা অজান্তেই চাপিয়ে দিয়ে যাই পরাধীনতা চেনা অচেনা মুখে।যাকগে,পাহাড় ছড়ানো চারমুখ স্বাধীনতা,সভ্যতার নামে।সারি সারি সাজানো স্তম্ভ-আর এক একটা রাষ্ট্র আর তাদের যুক্তরাষ্ট্রে সংযোগের সময়-ক্ষন।বিভিন্ন রাজ্যের পতাকা।দেখা-অবাক হওয়া।ক্যামেরার ছোঁয়ায় এলোমেলো ভাবে একগাদা ছবি,সময়কে সময়ের খাতায় ধরে রাখা।আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া মুখগুলো গান গাইছে
স্বাধীনতার গান।অনেক ছুটে আকাশটার পৃথিবী ফুরিয়ে গেল ক্ষনকয়েকের স্মৃতির পাতায়।
বলে যাওয়া গল্পের কথায়-সাজানো গল্পে,ইতিহাস বদলায় বলে যাওয়ায়।


কটা রং বদলানো মেঘের দল-ক্ষনকয়েকের মধ্যে বদলে দিল আকাশের চেহারা।আবার আমরা ছড়ানো ছিটানোতে এক-ফিরে যাওয়ার সময়।এবার Gillette এর দিকে,Montana এর
সবচেয়ে বড় শহর।Mt.Rushmore থেকে ফিরে যাওয়ার রাস্তাটা বেশ ভঁয়ের-আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা,নিশ্বাস মুখে এনে চুপচাপ বসে থাকা।একটা tunnel এ ঢোকার সময় ড্রাইভার বেশ বিপদে পড়ে গেল-বাসটার পেছন কেমন জানি আটকে যাচ্ছে।ওপাশ দিয়ে সাইকেলে যাওয়া দুটো যুবক যুবতী নেমে ড্রাইভারকে সামনে পেছনের কিছু দিক নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পার পাইয়ে দিল।ড্রাইভারের চেয়ে যাত্রীরাই ছিল বেশী কৃতঙ্গ-জীবনের ভালবাসা,
হাজারো দুঃখ লুকিয়েও বেঁচে থাকার আনন্দ।পূজো করা ভগবান শুধু পূজো করায় আনন্দ- ওই ভালবাসা মানায় হাজার যোজনের দূরত্বে।এলোমেলো ছন্নছাড়া সুরে আমরা শেষমেষ Gillete শহরে।
রাত প্রায় সাড়ে আটটা,আমাদের নাবিক(গাইড) জানান দিল এ শহরের ঘুমের সময়টা নটার মধ্যে-তাই খাবারদাবারের আস্তানা এই Chinese buffet না হয় McDonald।চোখে দেখায় খেয়ে নেওয়ার কিছুটা ছোঁয়াচ বেশীর ভাগ সবাই Buffet টে।খাবারের শেষে হোটেল-
দোতলা হোটেল তবে সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হবে।সারা শহর ঘুমিয়ে পড়া-ক্ষনকয়েকের জন্যে আমরা ব্যাস্ততায় ঘুম ভাঙ্গানো চোখের হোটেল ম্যানেজারকে আমাদের এটা ওটা জানাতে ব্যাস্ত।চলে যাওয়া আরেকটা-সময়ের আরেকটা ছেঁড়া পাতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.