নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হালিমা খাতুন বেশ ক্লান্ত। রাতের কাজ শেষে বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছেন, দীর্ঘদিনের পিঠের ব্যাথায় বিশ্রামে আরাম আসে না। বড় মেয়ে বীথি এসে বললো, 'মা আসো তোমার পিঠটা মালিশ করে দিই।'
'তুই হিটিং ল্যাম্পটা চালিয়ে দে, মালিশ লাগবে না, একটু হিট দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।'
বীথি ল্যাম্প প্লাগে লাগাতে যেয়ে নিচে পড়ে যায়। মেঝতে পড়ে সেটার কাঁচ ফেঁটে গেলো। বীথির বাবা হিটিং ল্যাম্পটি কিনে দিয়েছিলেন। সেটা দিলে পিঠের ব্যথা কমে খুব আরাম হতো। বীথি মুখ কালো করে বললো, সর্বনাশ মা, ল্যাম্পটা ভেঙে গেলো।
হালিমা মোটেও দুঃখ পেলেন না, স্বাভাবিক গলায় বললেন, রান্নাঘরটা গুছিয়ে রাখিস, আজ আর শরীরে কুলাচ্ছে না।
বীথির চোখে পানি আসবার উপক্রম হলো, সামলে নিয়ে বললো,
'আসো তোমার পিঠটা মালিশ করে দিই।'
'আচ্ছা দে'
বীথি মালিশ করতে করতে বললো,'স্কুলের বড়আপা একজন ভালো ফিজিওথেরাপিষ্টের খোঁজ দিয়েছে, পিঠের ব্যাথার জন্য। তোমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবো।'
'সে তো অনেক টাকা, লাগবে না, যুঁথির পড়াশোনা শেষ হোক।'
দিনশেষে মা ও মেয়ে দুঃখ কষ্টে একে অপরের অবলম্বন হয়ে উঠে। বীথি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
'মা, ভাইয়া কতদিন আসে না। তুমি গহনা বিক্রি করে রিহ্যাবে দিলে, কিন্ত সেখান থেকে সেই যে চলে গেলো আর এলো না।!'
হালিমা চুপ করে থাকেন, ছেলে ঘরছাড়া বহুদিন, ছেলেকে দেখতে না পাওয়ার এক চাপা কস্ট বোবা করে দেয় মুহূর্তগুলো।
এরই মধ্যে যুঁথি এসে বলে, মা একটু চা করে দাও না? আজ অনেক রাত জাগতে হবে, কালকে একটা কঠিন ক্লাস টেস্ট আছে'
হালিমা খাতুন উঠতে যাবেন, সেই সময় বীথি বললো, তুমি শুয়ে থাকো মা আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
রান্না ঘরে যাবার পথে যুঁথি বিথীকে কি যেন একটা বলে নিজেই খিল খিল করে হেসে উঠে। শত দুঃখের মাঝে যুঁথির হাসি হালিমার সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। রান্না ঘরে ঠুন ঠুন হাড়ি পাতিলের আওয়াজ হয়, সেই আওয়াজে হালিমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে।
আজ মা দিবস। বীথি সে উপলক্ষে কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের সমস্ত ছোট ছোট বাচ্চাদের হাগ দিলো। বাচ্চা বাচ্চা ছাত্র ছাত্রী তাঁকে ভীষণ পছন্দ করে, কেউ কেউ দুবার হাগ দিলো। ক্লাসের ফাঁকে ভাবতে লাগলো মাকে কি গিফট দেয়া যায়। হটাৎ ফেসবুকে বড় ভাই রফির নোটিফিকেশন, "মা, আজ মা দিবস, ছোট বেলায় দুধভাত কলা মেখে খাইয়ে দিয়েছো কত, খুব মনে পড়ে সেসব কথা।"
বীথি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সে তো কোনদিন কোন স্ট্যাটাস দেয় না। মেসেঞ্জারে কোন মেসেজ দেখে না, ফোনও ধরে না।
বীথি প্রথম শিফটে পড়ায়, সকাল দশটায় ক্লাস শেষ, তারপর দোকানে যেতে হবে মা দিবসে কিছু একটা কিনতে। কিন্তু ভাইয়ের স্ট্যাটাসে মন বড় অস্থির হয়ে উঠে, ক্লাস শেষে মায়ের জন্য আর গিফট কেনা হয় না, সরাসরি বাসায় ফিরে আসে।
বীথি বাসায় ঢুকেই 'মা মা' ডেকে মায়ের কাছে ছুটে গেলো। মাকে সে স্ট্যাটাস দেখালো, মা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখ বেয়ে পানি পড়ে। মায়ের কান্না দেখে মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়ে, মাকে জড়িয়ে ধরে, সহস্র দুঃখের মাঝে এক টুকরা আশার আলো দেখতে পায় হালিমা, জানালা দিয়ে রোদ বেয়ে আসে, চোখের পানি এক সময় শুকিয়ে আসে।
সারাক্ষণ ছেলের কথাই মনে হতে লাগলো, কতদিন ছেলে বাসায় নেই, ভালোমন্দ শেষ কবে খাইয়েছেন তিনি মনে করতে পারেন না। থেকে থেকে মৃত স্বামীর প্রতি অভিমান চেপে বসে, কেন তিনি এত বড় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়ে পরপারে চলে গেলেন।
হালিমা বিথীকে বললেন, রফিকে আসতে বল্, সে নিজে থেকে আসতে ভয় পাচ্ছে, ওকে আসতে বল্।
'ভাইয়া তো কোন মেসেজ দেখে না, ফোনও ধরে না।'
'ওকে আসতে বল্, আমার মন বলছে আসবে।'
বীথি অনিচ্ছাসত্ত্বেও টেক্সট করলো ফেসবুক মেসেঞ্জারে, "ভাইয়া, মা তোর স্ট্যাটাস দেখে খুব মন খারাপ করেছে। তুই বাসায় ফিরে আয়।" কিছুক্ষন পরেই উত্তর আসলো, "তোরা সব কেমন আছিস? কতদিন দেখি না তোদের, আমি বিকালে আসছি।"
ছেলে ঘরে ফিরে আসছে, হালিমার মন চাপা আনন্দে উদ্বেলিত। তিনি বিথীকে নিয়ে বাজারে যেয়ে ছেলের পছন্দের বাজার করে আনলেন। মা এবং মেয়ে মনের আনন্দে রান্না করতে লাগলেন।
বীথি ফোনে মেসেজ দিয়ে যুঁথিকে তাড়াতাড়ি আসতে বললো, জানালো, রফি ফিরে আসছে। বীথি জানালো তাঁর ফিরতে দেরী হবে, ক্লাস শেষে বিকালে গ্রূপ স্টাডি আছে।
রান্না শেষে মা ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন, কিন্ত মনে হলো ছেলের সেমাই খেতে খুব পছন্দ, সেটা করতে ফের রান্না ঘরে গেলেন। বীথি ঘরে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো, মাঝে মাঝে রান্নাঘরে যেয়ে দেখে ভাইকে খুশি করার জন্য কোথাও কোন ত্রুটি আছে কিনা।
অবশেষে, দরজায় নক করার আওয়াজ এলো, বীথি দৌড়ে যেয়ে দরজা খুললো, ভাইযের প্রতি নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো, ভাই তাঁর একা আসেনি, আরেক বন্ধুর কাঁধে ভড় করে এসেছে, নেশাতুর চোখ ঢুলুঢুলু, মাথা বারবার বন্ধুর কাঁধে হেলে পড়ছে। রফি জড়ানো গলায় বললো, আমার ব্যাথাটা খুব বেড়েছে রে বীথি, ডাক্তারের ওষুধে এমন হচ্ছে। আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।
রফি রিহ্যাবে যাবার আগের দিনগুলোতে এভাবে এসেছিল, নেশা ছাড়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে, একবার যাচ্ছেতাই ব্যাবহার করে তার কানের দুলটাও খুলে নিয়ে গিয়েছিল। এসব দুঃসহ স্মৃতি মুহূর্তের মধ্যে মূর্ত উঠে। বিথীকে এখন মহাবিশ্বের কঠিন এক ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে দরজা বন্ধ করে মায়ের সামনে কেউ না আসার নাটক সাজাবে নাকি মা'র চলমান দুঃখ যন্ত্রণা আরো বাড়ানোর সাক্ষী হবে!
২| ১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:৪৩
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ধন্যবাদ সময় করে পড়বার ও মতামত দেবার জন্য। সমস্যার আরেকটু গভীরে যেতো হতো, তাড়াহুড়ো হয়েছে সম্ভবত।
৩| ১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১১:১৪
শেরজা তপন বলেছেন: আপনি আপনার মত লিখতে থাকুন। আমরা এমন কোন হাতি-ঘোড়া লিখি না।
১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ৩:৫১
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ সাথে থেকে উৎসাহ দেবার জন্য।
৪| ১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ১২:৩০
স্মৃতিভুক বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। তবে হ্যাঁ, আরেকটু যদি যত্ন নিয়ে লিখতেন......এত ভালো যখন আপনার লেখার হাত! লেখকের কোনো নির্দিষ্ট লেখার প্রতি ভালোবাসা কম থাকলে যা হয় আর কি|
কারো কোনো লেখা যখন ভালো লাগে, আমি চেষ্টা করি তার সব লেখাই পড়ে ফেলতে। আপনার সব পোস্ট'ই আমার মোটামুটি পড়া।
ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ৩:৫৬
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, আমার সব পোস্ট পড়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আপনার মন্তব্য আমি যত্নে রাখলাম।
৫| ১৬ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৪১
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: গল্পের প্লট সুন্দর ।
১৬ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৮
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য।
৬| ১৬ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: মন্দ নয়।
১৬ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৯
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
৭| ১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ৮:৫০
করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার গল্প। শেষ হইয়াও হইল না শেষ!
সমাপ্তি ভালো হয়েছে।
১৭ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:৫৪
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ সময় করে পড়বার ও মন্তব্যের জন্য।
৮| ২০ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:০১
মিরোরডডল বলেছেন:
লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে।
শেষটা পাঠকের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো, যে যেভাবে দেখতে চায়।
মা যদি জানে ছেলে আসেনি, স্বাভাবিক কষ্ট পাবে এতো আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে।
কিন্তু এই কষ্টের চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পাবে ছেলেকে ওভাবে দেখে।
তাও ধরে নিচ্ছি মা ছেলেতে দেখা হবে না।
ইদার ওয়ে, মায়ের জন্য অনেক কষ্টকর!!!
বিথীর জন্যও।
৯| ২১ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:৫৯
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্য করবার জন্য। সুন্দর বিশ্লেষণ, একটি দেখা ঘটনা, দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়া এক ছেলে এভাবেই তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে গেছিল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ৮:২৫
কিরকুট বলেছেন: চালিয়ে যান। অভ্যাস মানুষ কে অনেক কিছু বানিয় দেয়। একদিন আপনিও লেখক হবেন। তবে এই সব ফেইসবুক মার্কা লেখা থেকে বিরত থাকুন।