নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am drunk,officer.punish me when I am sober.(Zahir ud din Muhammad,Babur)
(অর্চার যুদ্ধে জয়ী মুঘল সেনাবাহিনী,বিপুল পরিমান অশ্বারোহী সৈনিকের উপস্থিতি লক্ষনীয়)
জীবনে প্রথমবার কোন কিছু অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম।নেই কাজ তো খৈ ভাজ টাইপের চেষ্টা
আফগানিস্থানের বালখ থেকে পুরো পাকিস্থান এবং তামিলনাডু ব্যাতীত সমগ্র ভারত এবং বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত চল্লিশ লক্ষ স্কয়ার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত মুঘল সম্রাজ্য এই উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্তপুর্ন অধ্যায়,মুঘলদের কর,ভুমি সংস্কার,আন্তঃ ও বৈদেশিক বানিজ্যের সুফল এই উপমহাদেশের জনগন যেমন উপকৃত করেছে তেমনি তাদের নেয়া বিভিন্ন ভুল সামরিক ও প্রাশাসনিক পদক্ষেপের ভার এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
এই প্রবন্ধটি দিল্লী ইউনিভার্সিটির হিন্দু কলেজের সহযোগী অদ্ধ্যাপক আর বি আজাদ চৌধুরির,ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হিস্ট্রি এন্ড কালচার স্টাডিস(২০১৪) তে লিখিত মুঘল সম্রাজ্যের সামরিক,বেসামরিক প্রশাসনে ঘোড়া ব্যাবসার প্রভাব ১৫২৬-১৭০৭ শীর্ষক প্রবন্ধের আংশিক অনুবাদ,অনুবাদক আমি নিজেই।এই প্রবন্ধে মুঘল সম্রাজ্যে ঘোড়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক গুরুত্ব এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে ঘোড়ার ব্যাবসার প্রভাব নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে।তিনটি বৃহৎ ইসলামিক গান পাঊডার সম্রাজ্যের অন্যতম মুঘল সম্রাজ্যে ঘোড়া নামক প্রানীটা কতটা গুরুত্তপুর্ন ছিলো সেটা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়।
(ফুল আর্মার্ড মুঘল ক্যাভালরি সৈন্য এবং ঘোড়া)
মুঘল সেনাবাহিনীর মুল শক্তি ছিলো এর ক্যাভালরি বা অশ্বারোহী ইউনিট।মুলত ক্যাভালরির সাহায্যেই মুঘলরা ভারত জয় করে,অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে মুঘল শাসন সংহত করতেও সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছে মুঘল ক্যাভালরি।মুঘল ক্যাভালরি চারিত্রিক ভাবেই বহুজাতিক ছিলো তুর্কো-মঙ্গোল মুঘলরা ছাড়াও মদ্ধ্য এশিয়া,মদ্ধ্যপ্রাচ্য,তুর্কি,ইরানী,আফগান এবং ভারতীয় বিশেষ করে রাজপুতরাও মুঘল ক্যাভালরির অংশ ছিলো।বহুজাতিতেবিভক্ত মুঘল সেনা ও অশ্বারোহী বাহিনীর কারনে মুঘল ক্যাভালরিতে বিভিন্ন জাতের ঘোড়ার দেখা মিলত যা সাধারনত তাদের সওয়ারদের এথনিসিটির সাথে সংযুক্ত ছিলো যেমন তুর্কি ঘোড়া,আরবি ঘোড়া তুজুকি,কাবুলি,কান্দাহারি এবং জংলি ঘোড়া। মুঘল ক্যাভালরির জন্য ভালো জাতের যুদ্ধের ঘোড়াগুলো মুলত আরব,ইরান,তুরান,তুরষ্ক,তুর্কিস্থান,বাদাকশান,শিরওয়ান,কিরঘিজ,তিব্বত এবং কাশ্মীর থেকে আসতো।
সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনের জন্য ঘোড়ার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুঘল সম্রাটগন ঘোড়া আমদানীর রাস্তা এবং ঘোড়া ব্যাবসায়ীদের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।মুঘল ক্যাভালরির জন্য সারা বছরই বিপুল পরিমান ঘোড়া কেনা হতো।আর এই নিরবিচ্ছিন্ন ঘোড়ার সরবরাহই মুঘল ক্যাভালরিকে প্রায় অজেয় বাহিনীতে পরিনত করেছিলো,শুধু তাই নয় মদ্ধ্য এশিয়া,সাফাভিদ এবং আফগানিস্থানের অন্যান্য এলাকার সাথে এই বিপুল ঘোড়া বানিজ্য অন্যান্য ব্যাবসা এবং পন্য আমদানি রফতানিতেও অভুতপুর্ব ভুমিকা রাখে।
মোটাদাগে বলতে গেলে মুঘলদের ঘোড়ার আমদানি হত মুলত তিনটি অঞ্চল থেকে যথাক্রমে অটোম্যান,সাফাভিদ এবং উজবেকিস্থান এসব এলাকা থেকে সড়ক পথে ঘোড়া আসতো কাবুল এবং কান্দাহার এর ঘোড়ার আড়ৎ এ এবং এখান থেকেই মুঘল ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সেগূলো বিলিবন্টন করে দেয়া হত,এছাড়া সমুদ্র পথেও ঘোড়া আসতো সুরাট,ক্যাম্বে,থাট্টা,লাহোরি এবং সোনারগাঁ বন্দর এ বিদেশি ঘোড়ার বৃহত্তম আড়ৎ গুলো অবস্থিত ছিলো।ঘোড়ার নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুঘল সম্রাট গন ঘোড়ার এই বানিজ্য পথ নিয়ত্রনকরা শাসকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পুর্ন কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।ঘোড়া চলাচলের সুবিধার জন্য সম্রাজ্যের দূর দুরান্ত পর্্যধন্ত সড়ক নির্মান করা হয় এসব সড়কের পাশে গড়ে ওঠে মুঘল সম্রাজ্যের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম চমৎকার নিদর্শন ক্যারাভানসরাই গুলো যা আন্তঃসম্রাজ্য যোগাযোগ ও ব্যাবসা বানিজ্যের অভুতপুর্ব উন্নতি সাধন করে।সরকারি ভাবেও ঘোড়া ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা লাভ করতো এবং ঘোড়া বানিজ্যপথের ডাকাতি এবং চুরি কঠোরভাবে নিয়ত্রন করায় সম্রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি হয়।মুঘলদের কিংবদন্তি তুল্য সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাফল্য ঘোড়ার কাছে অনেকটাই ঋণী।
(আরবি ঘোড়া)
মুঘল সেনাবাহিনীর সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ ছিলো মুঘল ক্যাভালরি যা সম্পুর্নভাবেই ঘোড়ার উপর নির্ভরশীল।এমনকি মনসবদারী প্রথা যা ছিলো সম্রাজ্যের সামরিক ও অর্থণৈতিক ভিত্তি সেটাও ঘোড়সওয়ার ও জাট এর সন্মিলিত সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হত।মনসবদারদের মালিকানাধীন ঘোড়ার সংখ্যা দিয়েই নির্ধারিত হতো তার প্রদেয় কর যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে তার অবদান এবং সরকার থেকে দেয়া বিভিন্ন ভাতা।মনসবদারী প্রথার সাফল্যের উপরেই সম্রাটের সামরিক ও অর্থনৈতিক সাফল্য নির্ভর করতো।ঐতিহাসিক উইলিয়াম আরভিন এর সুত্রানুসারে মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ(১৭০২-৪৮)এর বাহিনীতে ২০০০০০ ঘোড়সওয়ার ছিলো যা তার পুর্বপুরুষ আকবর দ্যা গ্রেট এর তুলনায় অর্ধেকেরও কম।তবে মুঘল আমলের স্বর্ণযুগে(১৫২৬-১৭০৭) মুঘল সম্রাটরা বিশাল ক্যাভালরি ফোর্স রাখতেন যেমন তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরি এর বর্নানুসারে জাহাঙ্গীরের শাহী ফৌজ এ শুধুমাত্র সেন্ট্রাল এশিয়ান ঘোড়সওয়ার এর সংখ্যা ছিলো দেড় লাখ
(সম্রাট আওরঙ্গজেব ফুল ব্যাটেল ড্রেসে)
মুঘল সেনাবাহিনীর ঘোড়ার জন্য মদ্ধ্য এশিয়া ও ইরান নির্ভরতা কাটানোর জন্য মুঘল সম্রাটরা ভারতেই ঘোড়ার প্রজননের উপর বিশাল আকারের বিনিয়োগ করেন,কিন্তু ভারতের আবহাওয়া ঘোড়া প্রজননের উপযোগী না হওয়ায় এই পরিকল্পনা সাফল্যের মুখ দেখে নি শুধু তাই নয় ভারতের উষ্ণ আবহাওয়ায় আমদানি করা ঘোড়ার জীবনকালও অনেক কমে যেত।ভারতের অল্প কিছু এলাকায় ঘোড়া প্রজননের রিতী থাকলেও সেগুলো আরবি,ইরানী অথবা তুরানী ঘোড়ার তুলনায় একেবারেই নিম্নস্তরের এবং অপ্রতুল সংখ্যার কারনে কখনোই মুঘল সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিলো না।
ঐতিহাসিক ফ্রান্সেস্কো পেলসায়ের্ত এর বর্নানুসারে মুঘল ক্যাভালরির ৭৬% ঘোড়াই আরবি,ইরানি অথবা তুর্কি জাতের এবং মুঘলদের সামরিক বাজেটের সিংহ ভাগই ঘোড়া কেনা এবং তার রক্ষনাবেক্ষনে খরচ হত।এছাড়াও ঘোড়ার এই বানিজ্য সম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সাফল্য এবং সম্রাজ্য বিস্তারেও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে।
ঘোড়া সরবরাহের রাস্তা নির্বিঘ্ন রাখতে মুঘল সম্রাট গন বছরের উল্লেখযোগ্য সময় কাবুল লাহোর আগ্রা ঘুরে কাটাতেন এর ফলে এই এলাকা গুলোতে সম্রাটের কর্তৃত্ব আরও পাকাপোক্ত হয় এবং এই এলাকাগুলোর পন্য উৎপাদনের কারখানা ও শস্য উৎপাদনে মুঘল সম্রাটের সরাসরি কর্তৃত্ব থাকায় মুঘল রাজকোষ গুলো ধনসম্পদে পরিপুর্ন হয়ে ওঠে। এই এলাকাগুলোর বাসিন্দারাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়,এইসমস্থ এলাকা থেকে মুঘল সেনাবাহীনীর জন্য সৈন্য রিক্রুট করা হত যার ফলে দ্বৈত সুবিধা পাওয়া যেত এক ঘোড়ার নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সরবরাহ দুই ভারতের দূর দুরান্ত পর্্যন্ত মুঘল শাসন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সৈন্য।
২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৭
এইচ তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ,ভবিষ্যতে এদিকে খেয়াল রাখবো
২| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার অনুবাদ।
সহজ সরল সুন্দর।
২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৯
এইচ তালুকদার বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ,
৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫৫
শের শায়রী বলেছেন: বিষয় আমার খুব প্রিয়, কিন্তু পড়তে গিয়ে বার বার আটকে যেতে হয়েছে কারন প্যারাগ্রাফ ছিল না, ছোট ছোট প্যারায় লিখে এক স্পেস বিরতি দিয়ে লিখলে পড়তে সুবিধা হয়, কিছু টাইপো ছিল, এছাড়া অনুবাদ ভালো হয়েছে। ভালো লাগা জানবেন।
২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩১
এইচ তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ,ভবিষ্যতে এদিকে খেয়াল রাখবো।
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার ও উপভোগ্য আলোচনা ।
২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৯
এইচ তালুকদার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৪৫
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রথম হলেও আপনার অনুবাদ কর্ম যথেষ্ট প্রাণবন্ত লেগেছে। কিন্তু আপনি কিসের অনুবাদ করলেন বা কোন বিশেষ ঘটনা অনুবাদ করলেন সেটি প্রথমে দিলে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হত।
পাশাপাশি আরেকটা বিষয় বলার যে প্রচুর টাইপো আছে। সম্ভব হলে এগুলো এডিট ঠিক করে দিয়েন।
শুভেচ্ছা রইলো।