নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগামী বৃহস্পতিবার কুরবানির ঈদ। ঈদ এলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। ভীষনভাবে দেশে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্ত বাস্তবতার কারনে যাওয়া সম্ভব হয় না। সারা বছর দেশে থাকা প্রিয়জনদের মিস করি। কিন্ত ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি মিস করি।ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে দেশের বাড়ী যায়। ফেসবুকে দেখি অনেকেই ঢাকা ছাড়ছে। ট্রেন , বাসে চড়ে হাসিমুখে ছবি দিচ্ছে। বড় ভাল লাগে ছবিগুলো দেখতে। ছবিগুলো দেখলে শৈশবের ঈদের কথা মনে পড়ে যায়।
যতদিন দাদু বেচেঁ ছিলেন , ততদিন দুই ঈদই দেশের বাড়ি করতে যেতাম। ঢাকার কাছেই এক জেলাশহরে আমার দেশের বাড়ি। মনে আছে ফুলবাড়িয়া বাস স্টেষনে গিয়ে বাস ধরতে হত। ঈদের সময় ঢাকায় থাকা অন্যান্য কাজিনরাও আমাদের সাথে রওনা হত। বাস জার্নিটা সে কারনে দারুন উপভোগ্য হয়ে উঠত। ঢাকা ছাড়তেই শুরু হত সবুজের মেলা। গ্রাম বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌছে যেতাম মেঘনা নদীর তীরে। মেঘনা ও গোমতি এই দুই নদীতে সেই সময়ে ব্রীজ ছিল না। ফেরী করে পারাপার করতে হত। সে আরেক দারুন অভিজ্ঞতা। ফেরীতে উঠেই আমড়া , চানাচুর , বাদামঅলাদের হাক ডাকে প্রায় সব আইটেমই খাওয়া হত। সে সময়ে এত হাইজেনিক, ননহাইজেনিক বিষয়ে মাথা ঘামাতাম না। কোলাহলমুখর ফেরীতে বসে আমড়া, চানাচুর, খেতে খেতে মেঘনার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতাম। তখন মেঘনা আজকের মত শীর্নকায় খাল সদৃস ছিল না। প্রমত্ত মেঘনার বুকে পাল তোলা নৌকার সৌন্দর্য যারা অবলোকন করেছে , শুধু তারাই জানে মেঘনার অপরুপ সেই সৌন্দর্যের কথা।
বাস কাংখিত গন্তব্যে পৌছুলেই বাস স্টেষনে গিয়ে দেখতাম চাচাতো ভাইয়েরা আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে। সদলবলে কয়েকটা রিকশায় করে দাদুর বাড়ির কাছাকাছি পৌছুলেই দেখতাম পাড়ার অন্যান্য ছেলেমেয়েরা স্বাগত জানাচ্ছে। আমাদের আগমনের খবর তারা আগেই পেয়ে গেছে। নিজেদের বেশ ভিয়াইপি বলে মনে হত। সাধারনত ঈদ উপলক্ষে পাঁচ থেকে সাতদিন থাকা হত। সেই সাতদিন স্বপ্নের মত কেটে যেত। কুরবানির ঈদের আগের দিন সাধারনত গরু কেনা হত। বড়ড়া হাটে যেত। আমাদের ছোটদের কাজ ছিল বিভিন্ন বাসায় গিয়ে গরু দর্শন করা। কাদের গরু কত বড় বা কত দামী তা নিয়ে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত প্রতিবেশিদের মধ্যে।
দাদু বাড়ীর উঠোনে গরু কিনে এনে রাখা হত। আমাদের ছোটদের কাজ ছিল গরুকে পাতা খাওয়ানো। ঈদের দিন যখন সেই গরুকে কুরবানি দেয়া হত , তখন দুচোখে পানি চলে আসত। কুরবানির সময় এলেই তাই ছোটদের বাড়ীর ভেতরে পাঠিয়ে দিতেন বড়রা। কুরবানির পর বড় কাজিনদের মাংশ কাটাকাটিতে বসতে হত। কাজটা কেউই পছন্দ না করলেও বাবা চাচার চোখ রাঙ্গানীতে না করে উপায় ছিল না । আমরা ছোটরা ছিলাম স্বাধীন। নতুন জামা পড়ে বের হতাম পাড়া বেড়াতে। প্রতিবেশিদের বাসায় দলবেধে ঘুরে ঘুরে জর্দা , ফিরনি খেতাম। দল বেধে রাস্তায় ক্রিকেট খেলতাম কিংবা কারো বাসার রোয়াকে ( উচু খোলা বারান্দা) বসে বসে সাত পাথর, মার্বেল আরো অনেক ধরনের খেলা খেলতাম । দুপুর হলেই বাড়ি ফিরতাম । বাড়ীর সবচেয়ে বড় রুমে চাদর পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হত ঈদের দিনে। মা, চাচী ও বড় আপুরা মিলে খাবার সাজাতো। বিশাল হাড়িতে রান্না করা গরুর মাংশের গন্ধে চারিদিকে মৌ মৌ করত। গরুর মাংশ, কলিজা, মগজ ভুনার সাথে পোলাও, খিচুরি , সাদা ভাত ও সালাদ থাকত। সেই মাংশ-খিচুরির স্বাদ ছিল তুলনাহীন, যা আর কোথাও কখনও পাইনি।
মাঝে মাঝে মনে হয় টাইম মেশিনে করে যদি সেই সময়টায় ফিরে যাওয়া যেত! এখনো হয়ত যারা ঢাকা ছেড়ে দেশে গ্রামে ঈদ করতে যায় , তারা হয়ত এরকম আনন্দ করার সুযোগ পায়। কে কোথায় ঈদ করছেন এবার ?
২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনি বারান্দায় বসে রাস্তায় তাকিয়ে থাকেন আর আমি ফেসবুকে তাকিয়ে থাকি ( দীর্ঘশ্বাষের ইমো হইবে )।
২| ২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: কারা এই সন্মুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে
বসে রই আপন মনে
বাতাস বহে সু মন্দ!!!!!!!!!
২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:৫২
ঢাবিয়ান বলেছেন: বাহ বেশ হয়েছে অনুকবিতা
৩| ২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কী সুন্দর লাগলো আপনার শৈশবের বকরি ঈদের কথা।আমি এরকম লিখলে হবে কেবলই হতাশার চাদরে মোড়া। যাইহোক আপনার সুখানুভূতির কথা শুনে মুগ্ধতা রইলো।
ইদুজ্জোহার শুভেচ্ছা জানবেন।
২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:০৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: আহা কতকাল পর শুনলাম '' বকরি ঈদ'' শব্দটা। ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনাকেও ইদের শুভেচ্ছা। ওপারে কেমন করে পালন করা হয় ঈদ ? এবারের ঈদ উপলক্ষে লিখে ফেলুন। অনেক কৌতুহল এই বিষয়ে।
৪| ২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫১
নাহল তরকারি বলেছেন: মেঘনা ও গোমতী ব্রীজ এর নাম শুনেই আমার বুকে প্যাচ করে ওঠলো। আপনার বাসা কই? নরসীংদী হবে না মোটেও। নারায়ণগঞ্জ তো হবেই না। মুন্সীগঞ্জ সদর মোটেও না।
আপনার বাসা হয়তো বা গজারিয়া, দাউদকান্দি, মেঘনা, তিতাস, মতলব হতে পারে। যে ভাবে আপনি সুন্দর করে মেঘনা নদীর বিবরণ দিলেন..।
২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:০৫
ঢাবিয়ান বলেছেন: হুম আপনার অনুমানের ধারে কাছেই । তবে আপনার বয়স কম। প্রমত্ত মেঘনা মনে হয় না আপনি দেখেছেন। বছর দুয়েক আগে মেঘনা দেখে প্রচন্ড হতাশ হয়েছিলাম।
৫| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:০০
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: এটা শোনেন ভাইজান হা হা
২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:১২
ঢাবিয়ান বলেছেন: আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ ----- আপনার আনন্দ আর আমার কষ্ট । প্রবাসী ব্লগাররা আমার কষ্ট বুঝতে সমর্থ হবে ।
৬| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৬
কামাল১৮ বলেছেন: এই ঈদে গরু কাটা দেখে আনন্দের বদলে বিষাধেই কাটে দিন।এটা প্রায় ছোট বেলা থেকেই।এমনিতে গ্রামের বাড়ী গেছি।ঈদে কখনো যাওয়া হয় নাই।
২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫১
ঢাবিয়ান বলেছেন: মিস নিশ্চই করেন দেশের ঈদ। প্রবাসের বাঙ্গালীর বাসা বাড়ির ভেতরেই শুধু ঈদ। বাসার বাইরে আর দশটা সাধারন দিনের মত।
৭| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:০৩
শেরজা তপন বলেছেন: আমার ছোটবেলা মফস্বলেই কেটেছে। কোরবানি ঈদ আপনার মত এত আনন্দমুখর আর রঙ্গীন ছিল না।
তবে আজ ভাবতে বসলে মনে হয় কতই না সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।
২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:১৬
ঢাবিয়ান বলেছেন: ঈদ মুবারক। দেশে থাকাবস্থায় আমার সবগুলো ঈদই রঙীন ছিল। প্রবাসের ঈদ বড় মেকি ও পানসে।
৮| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১০:১০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ঈদ মুবারাক ভাই। আপনার নস্টালজিয়া ভালো লাগলো। আগে দাউদকান্দি এবং মেঘনা ফেরিতে পাড় হওয়া লাগতো। আমারও মনে আছে। গ্রামের ঈদের আমেজ অন্য রকম।
২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:১৯
ঢাবিয়ান বলেছেন: ঈদ মুবারক । দাউদকান্দিতে ছিল গোমতি নদি ।সেই সময়ে ছয় সাত ঘন্টা লেগে যেত পৌছাতে। এখন যানজট না থাকলে দুই ঘন্টায় পৌছানো যায়।
৯| ২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর স্মৃৃতিচারন করেছেন।
লেখাটায় আবেগ আছে। কিছুটা হাহাকার আছে।
২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:২২
ঢাবিয়ান বলেছেন: ভাল ও উন্নত জীবনের সন্ধানে মানুষ দেশ ছাড়ে ঠিকই, কিন্ত অন্তরে দেশের জন্য, প্রিয়জনদের জন্য সবসময় একটা হাহকার থাকে। বয়স যত বাড়ে এই অনুভুতি আরো তীব্র হতে থাকে।
১০| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমাদের ঈদের আনন্দ ও আপনার মতোই।
ঈদ শুভেচ্ছা!
২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:২৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: ঈদ মুবারক আপু। বুঝতে পারছি অনেক আত্বীয় স্বজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন।
১১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:০৫
সোহানী বলেছেন: তোমার মতো আমরাও যেতার ঈদে বাড়ি। বিশেষকরে কোরবানী ঈদে কোনভাবেই মিস হতো না। তবে যদি সত্যটা বলি, আমার কোনভাবেই কোরবানী ঈদ ভালো লাগতো না। আমি খুব কাঁদতাম পশুগুলোর জন্য, বিশেষকরে ঈদের আগের রাতে। ওদের সাথে কথা বলতাম আর কাঁদতাম। যার কারনে আমার মা আমাকে কোরবানীর পশু নিয়ে যখন সবাই আনন্দে মেতে উঠতো আমার মা আমাকে অন্য কাজে ব্যাস্ত রাখতো। পশুর আশে পাশে যেতে দিতো না আর ঈদের সকালে বের হতে দিতো না।
আমি এখনো সে সব ট্রমা থেকে বের হতে পারিনি। আমি কোনভাবেই কোরবানী ঈদে আনন্দ পাই না। এখন শুধু ঈদে নামাজটা পরি, তেমনভাবে কোথাও যাই না। পশুগুলোর কষ্টে সবসময়ই কষ্ট পাই। কিন্তু সবার শেষে রান্নার পর একসাথে চালের রুটি আর কলিজা ভুনা খাওয়ার তুলনা চলে না।
১২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩০
খায়রুল আহসান বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। পাঠকের মনে নস্টালজিয়ার উদ্রেক করে। + +
গত ক্বুরবানীর ঈদ কাটিয়েছিলাম কানাডার রিজাইনা শহরে। সেখানে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বাস করেন। সকালে একটি ইনডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নাতনিটার স্কুল ঈদের দিনেও খোলা ছিল বলে ঈদের জামাতে যোগদানের পরে একটু বিলম্বে ওকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসি। দুপুরে ওকে স্কুল থেকে উঠিয়ে দাওয়াত খেতে যাই। সেখানে সাধারনতঃ মানুষজন ক্বুরবানীর পশু চোখে দেখেন না। অনলাইন অর্ডার দিতে হয়, গোশত বাসায় পৌঁছে যায় সন্ধ্যায় কিংবা পরের দিন। যারা অত্যুৎসাহী, তারা অবশ্য দূর দূরান্তে ফার্মে গিয়ে নিজে পশু নির্বাচন করে বসে থাকেন কিংবা একটু এদিক ওদিক ঘুরে আসেন। ৫/৬ ঘণ্টা বসে থেকে জবাই, কাটাকুটি ইত্যাদির পর গোশত নিয়ে বাসায় ফিরেন। এ নিয়ে এতটা সময় ব্যয় করার মত সময় ও সুযোগ অবশ্য সবার থাকে না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: আহা আমারও এমন ইচ্ছে করে।
অপু ভাইয়ার বাড়ি যাওয়া দেখলে মনে হয় ভাইয়ার সাথে ঐ বনানী ঘেরা বাড়িটাতে বেড়াতে যাই।
রাস্তা দিয়ে কত মানুষ চলে যায়..... আমরা দাঁড়িয়ে থাকি......