নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

অতনু কুমার সেন

সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নঃ ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্জের মত স্বপ্ন দেখে যাই। স্বপ্ন দেখি আকাশ ছুবো, মেঘের ভেলায় উড়ে যাব, নিজের রঙে রাঙ্গিয়ে দিব, সত্য ও সুন্দরের আলো ফোটাবো। জানিনা পারব কি ব্যর্থ হবো। চেষ্টা তবু করেই যাবো।

অতনু কুমার সেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিওলিথিক যুগের এই খুনের রহস্যটা এখনো পর্যন্ত উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি বিজ্ঞানীদের পক্ষে। অদূর ভবিষ্যতেই হয়ত আমরা পৃথিবীর প্রাচীনতম এই মমির খুনের রহস্যটাও জানতে পারব

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

ওৎসি দ্য আইসম্যান: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রাকৃতিক মমি
.
সালটা ১৯৯১। ১৯ সেপ্টেম্বর; দুইজন জার্মান পর্বতারোহী আল্পস পর্বতমালায় হাইকিংয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠার পর যখন নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই বেশ কিছুটা দূরে বরফের আস্তরণের নিচে উল্টোনো অবস্থায় একটা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। প্রথম দেখাতেই তারা ভেবেছিলেন কোনো পর্বতারোহীর মৃতদেহ হয়তো সেটা। দুইদিন পর বরফের আস্তরণ থেকে মৃতদেহটা খুঁড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রিয়ার ইনসব্রাকের স্থানীয় একটা হাসপাতালে। হাসপাতালের মেডিকেল এক্সামিনার মৃতদেহটি দেখে বুঝতে পারেন কোনো সাধারণ মৃতদেহ নয় সেটা।পরবর্তীতে এই মৃতদেহ গবেষণার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইনসব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
.
মৃতদেহটি গবেষণার পর চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মত তথ্য দেন ইনসব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক কনরাড স্পিন্ডলার। মৃতদেহের সাথে পাওয়া কুড়ালটির ধরণ দেখে তিনি ধারণা করেন মৃতদেহটি প্রায় চার হাজার বছর ধরে আল্পস পর্বতমালার তুষারে আবৃত ছিল!
.
অবাক করা বিষয়টা হল, মৃতদেহটির শরীরের চামড়া তখনও পর্যন্ত অক্ষত ছিল। তাহলে আমরা কি এই মৃতদেহটাকে মমি হিসেবে ধরে নিতে পারি? তার জন্য আরো বেশ খানিকটা গবেষণা করা দরকার!
.
শুরু হয় গবেষণা। মৃতদেহটির টিস্যু, প্রোটিন আরো ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওজন পরিমাপ করা হয়; এক্স-রে রশ্মির মাধ্যমে বারবার পরীক্ষা করা হয় । বলা চলে, একেবারে উঠেপড়ে লেগে যান গবেষকরা। যে করেই হোক সমাধান করতে হবে এই বরফ মানুষের রহস্য!
.
গবেষণায় উঠে আসে, মারা যাওয়ার সময় এই বরফ মানুষের বয়স হয়েছিল প্রায় ৪৫ বছর। কিন্তু, তখনও পর্যন্ত এই মমিটা কয় হাজার বছর ধরে আল্পসের বরফ শীতল পরিবেশে আটকা ছিল সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়নি। কার্বন ডেটিং সিস্টেম সেই চাঞ্চল্যকর সত্যটা উদ্ঘাটন করে। পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, এই মমির বয়স প্রায় ৫৩০০ বছর! অর্থাৎ, দ্য গ্রেট পিরামিড নির্মাণেরও প্রায় এক হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়িয়েছিলেন এই বরফ মানুষটি! ম্যামথরা তখনও পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, সাইবেরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তখনও পর্যন্ত টিকে ছিল ম্যামথদের শেষ জনগোষ্ঠী। আর, চাকা তো আবিষ্কার হয়েছিল তারও প্রায় একশো বছর পর! নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমানে সংরক্ষিত সবচেয়ে প্রাচীন মমিগুলোর মধ্যে একটি এই বরফমানুষ।
.
পরবর্তীতে গবেষণার সুবিধার্তে বরফমানুষটির নাম দেওয়া হয় ওৎসি (ötzi)। কেন এই নামকরণ? কারণ, এই বরফমানুষের মমিটা পাওয়া গিয়েছিল অস্ট্রিয়া-ইতালি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ওৎসাল আল্পসে (Otztal Alps)। ধারণা করা হয়, মৃত্যুর সময় ওৎসির শারীরিক উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ওজন ছিল প্রায় ৬১ কেজি।
.
২০০৯ সালের দিকে প্রকাশিত একটি ডিএনএ এনালাইসিস রিপোর্টে দেখানো হয়, মৃত্যুর আগে ওৎসির শেষ খাবার ছিল বন্য হরিণের মাংস৷ বেশিরভাগ গবেষকদের মতেই ওৎসি মেষপালন এবং হরিণ শিকারের মাধ্যমেই তার জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু ওৎসির সাথে পাওয়া কুড়ালের ব্লেড এবং তার চুল পরীক্ষা করে অধিক পরিমাণ কপারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যার ফলে অনেক বিজ্ঞানীই ধারণা করেন ওৎসি মূলত কপার বিগলন পেশার সাথে জড়িত ছিল। এই কপারের অস্তিত্বটা অবশ্য আরো একটা ব্যাপার প্রমাণ করে। আর তা হলো: ওৎসি ক্যালকোলিথিক বা কপার যুগেরই মানুষ এবং ওৎসিই হলো এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন মমি।
.
ওৎসিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলতেই থাকে। ২০১২ সালের মে মাসের দিকে এসে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখতে পান যে, ওৎসির শরীরের বেশ কিছু রক্তকোষ এখনো অক্ষত আছে। ওৎসির শরীর হতে সংগৃহীত এই রক্তকোষগুলোই হলো এখনো পর্যন্ত পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মনুষ্য রক্তকোষ!
.
এত এত আবিষ্কার-উদ্ঘাটনের পরও ওৎসির মৃত্যু নিয়ে আজও পর্যন্ত রহস্য রয়ে গেছে। শুরুতেই বলেছিলাম, ওই দুইজন পর্বতারোহী ওৎসির মৃতদেহটি পেয়েছিল প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতায়। বিজ্ঞানীদের মতে, অধিক উচ্চতায় অত্যধিক শীতল পরিবেশের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাইপোথার্মিয়া হয় আর, ওৎসির ক্ষেত্রেও এই হাইপোথার্মিয়াই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। আবার অনেকেই ধারণা করেন, ওৎসি রিচুয়াল স্যাক্রিফাইস বা নরবলির শিকার। এসবই আসলে ধারণাগত ব্যাখ্যা। মূল সত্যিটা জানা যায়নি তখনও পর্যন্ত।
.
প্রায় ৫৩০০ বছর আগের সেই দিনটায় ফিরে যাওয়া যাক। প্রচন্ড তুষার ঝড়ের মাঝে কাঁধে তীর বোঝাই একটা ছোট্ট বোঁচকা নিয়ে পা দিয়ে বরফ খুঁড়ে খুঁড়ে এগুতে থাকে ওৎসি। প্রচন্ড বাতাসে অস্পষ্ট হয়ে আসতে থাকে চোখের দৃষ্টি। পায়ের তাল সামলানো দায়! কিন্তু, দিনের খাবারটা যে তখনও জোগাড় করা বাকি! ফিরে গেলে পুরো দিনটা উপোস থেকেই কাটিয়ে দিতে হবে৷ প্রচন্ড ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসতে শুরু করে পায়ের শিরা উপশিরাগুলো। পা যেন আর চলতেই চায় না। ঠিক যে মুহূর্তে ওৎসি হাল ছেড়ে দিবে ভাবছিল তখনই সামনে বেশ খানিকটা দূরে একটা বন্য হরিণ দেখতে পায় ও। তুষারে আবৃত একটা ঢিবির পেছনে লুকিয়ে নিজেকে আড়াল করে নেয় ওৎসি, ধনুকটা হরিণটার গলা বরাবর তাক করে ধরে আস্তে আস্তে কাঁধের পেছনের বোঁচকা হতে একটা তীর বার করে নেয়। নিশানা ঠিক করে ধনুকটা টান টান করে তীরটা ছুঁড়ে দিতেই কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সেটা হরিণটার গলায় বিঁধে যায়। তীব্র যন্ত্রণায় হরিণটার গলা থেকে একটা আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসে, বাতাসের প্রচন্ড শব্দে সে শব্দটা মুহূর্তের মাঝেই মিলিয়ে যায়, কয়েক পা সামনে এগিয়েই তুষার ঢাকা বরফে আচড়ে পড়ে হরিণটা।
.
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে যখনই উঠে হরিণটার মৃত দেহটা পরখ করতে যাবে ঠিক তখনই একটা তীরের ফলা এসে ওৎসির বাঁ কাধে বিঁধে যায়। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও; হাত দিয়ে বের করে আনতে চায় কাঁধের স্ক্যাপুলায় গেঁথে যাওয়া তীরের ফলাটা। কিন্তু সেটা বের করে আনার আগেই মাথার পেছনের দিকটায় প্রচন্ড জোড়ে আঘাত অনুভব করে ওৎসি। কয়েকমুহূর্ত..... আর তাতেই সব শেষ!
.
পুরো ব্যাপারটা কল্পনা হলেও ২০০১ সালের দিকে এসে এই কল্পনাটিই যেন সত্য বলে প্রমাণ হয়! বিজ্ঞানীরা ওৎসির শরীরের বেশ কিছু এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান করেন৷ ওই রিপোর্টগুলোতে ওৎসির বাম কাঁধে তীরের ফলা বিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে, এই ক্ষতস্থান থেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলেই ওৎসির মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে আরো ব্যাপকভাবে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা ওৎসির কব্জি, হাত এবং বুকে বেশকিছু ক্ষতচিহ্ন এবং কাটা দাগ দেখতে পান। এই ক্ষত এবং আঘাতের স্থানগুলো থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণের ফলেও ওৎসির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা।
.
প্রায় বেশ কয়েক বছর আগে করা একটা সিএটি স্ক্যান ( CAT - Computerized Axial Tomography Scan) পরীক্ষায় মমির সেরেব্রামের পেছনের দিকটায় বেশ বড়সড় একটা কালোদাগ দেখতে পাওয়া যায়। যেটা প্রমাণ করে যে, মৃত্যুর আগে ভারি কিছু দ্বারা ওৎসির মাথার পেছনের অংশে আঘাত করা হয়েছিল। এদিকে বেশ কিছুদিন আগে প্রকাশিত একটা নতুন গবেষণাপত্র হতে জানা যায়: বিজ্ঞানীরা ওৎসির ব্রেন টিস্যুর বেশ কিছু নমুনা পরীক্ষা করেছেন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা ওৎসির মাথায় আঘাতের স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, বাম কাঁধে ঐ তীরের ফলা বিদ্ধ করার পর মাথায় ভারী কোনো হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করেই খুন করা হয়েছিল ওৎসিকে। তবে প্রশ্নটা এখানেই:
তাহলে কে ওৎসির শরীরে তীরের ফলা ছুঁড়ে দিয়েছিল?
আর কেই বা ওৎসির মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করে তাকে খুন করেছিল?
নিওলিথিক যুগের এই খুনের রহস্যটা এখনো পর্যন্ত উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি বিজ্ঞানীদের পক্ষে। অদূর ভবিষ্যতেই হয়ত আমরা পৃথিবীর প্রাচীনতম এই মমির খুনের রহস্যটাও জানতে পারব!
.
বর্তমানে ইতালির সাউথ টাইরোল মিউজিয়াম অব আর্কিওলজিতে সংরক্ষিত আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এই প্রাকৃতিক মমি। ওৎসির মমি হতে সংগৃহীত নমুনাগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে নিওলিথিক বা নব্য-প্রস্তরযুগের আরো আরো রহস্য উদ্ঘাটনের নেশায় এখনো পর্যন্ত গবেষণায় বুঁদ হয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা। হয়তো এই ক্ষুদ্র নমুনাগুলোই জানান দিবে প্রাচীন ইউরোপিয়ান জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ধরণ, সংস্কৃতি আর তাদের মৃত্যু রহস্য!

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
ছবিসূত্র: South Tyrol Museum of Archaeology.
সংগৃহীত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.