নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

অতনু কুমার সেন

সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নঃ ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্জের মত স্বপ্ন দেখে যাই। স্বপ্ন দেখি আকাশ ছুবো, মেঘের ভেলায় উড়ে যাব, নিজের রঙে রাঙ্গিয়ে দিব, সত্য ও সুন্দরের আলো ফোটাবো। জানিনা পারব কি ব্যর্থ হবো। চেষ্টা তবু করেই যাবো।

অতনু কুমার সেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার- অনেক আদরের গরু তো।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৩

দামাদামি শেষে গরুর মালিক ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় গরু দিতে রাজি হলেন। রতন সাহেব এবার খুব খুশি। ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। এলাকার সবচে বড় কুরবানিটা উনিই দিচ্ছেন। মনে মনে প্র্যাক্টিস করছেন বারবার, লোকে দাম জিজ্ঞেস করলে কোন স্টাইলে বলবে। হাসিটা কেমন করে দিলে গরুর দামের সাথে মিলবে। এসব ভাবতে ভাবতে গরু নিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।

বাড়িতে ফোন করে বউকে বলে দিলেন, – ‌’হ্যালো শুনছো? গরু কেনা শেষ। সবাইকে বলে দিও, এবারে এলাকার সবচে বড় গরু কুরবানি দেয়া হচ্ছে, লোকে যদি না-ই জানলো। তবে আর লাভ কী!
গরু নিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেলো। ফলে আশপাশের তেমন কেউ গরু দেখতে এলো না।
হঠাৎ শুনলেন, দরজায় ঠক ঠক শব্দ। একখান অপরিচিত একটা গ্রাম্য মানুষ এসেছে। চোখে-মুখে ঘাম, পায়ে জুতা নেই। একটু পর পর চোখ মুছছে লোকটা। গায়ে ময়লা কাপড়। সাথে ১১/১২ বছরে ছোট একটা ছেলে।
রতন সাহেব খুব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– কে আপনি?
– স্যার আমি আফনের গ্যারেজে রাখা গরুটার মালিক!
– মালিক মানে! আমি গত সন্ধ্যায় এত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে এলাম, আর আপনি বলছেন ‘গরুর মালিক!’
– না স্যার, আসলে আমি গরুটার মালিক আছিলাম, মানে গত সন্ধ্যায় আমিই গরুটা আফনের কাছে বিক্রি করছি।
– ও আচ্ছা, তো এত রাতে কেনো আসছো? ভুল করে টাকা কম দিয়েছিলাম? নাকি জাল নোট পড়েছে?
গ্রাম্যলোকটা চুপ করে আছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত।
রতন সাহেব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– আরে কী হয়েছে বলবা তো! কাপড়-চোপড় লাগবে? নাকি আরও টাকা চাও?
– না স্যার, আসলে গরুটারে একটু দেখতে আসছিলাম। আমার পোলাডায় সারা রাইত কিছু খায়নাই। বারবার গরুটারে দেখতে চাইতেছে। তাই এই রাইতে ৯ মাইল হাঁইট্যা আসছি স্যার। যদি কিছু মনে না করেন, আমারে একটু সুযোগ দিলে গরুটারে একটু দেইখ্যা যাইতাম।
রতন সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। গ্যারেজ খুলে দিলেন। গ্রাম্য লোকটা ভেতরে ঢুকেই গরুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। ছোট ছেলেটাও কাঁদছে আর লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ‌’বাজান, ওই স্যাররে ট্যাকা ফেরত দিয়া দেও, আমি গরু নিয়া যামু! বাজান! ও বাজান! আমি গরু নিয়া যামু’
গ্রাম্যলোকটা তার ছেলেকে কোনো উত্তর দিতে পারছে না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। রতন সাহেব দূর থেকে চুপচাপ দেখে যাচ্ছেন সব। বেশ কিছুক্ষণ পরে দুজন বেরিয়ে এলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো,
– স্যার, আফনেরে কষ্ট দিলাম, মনে কিছু নিয়েন না।
– ও কি তোমার ছেলে?
– জী স্যার, একটা পোলাই। এইডারে পড়ালেখা করানোর জন্যই আদরের গরুটা বেইচ্যা দিলাম। গেলাম স্যার…দোয়া রাইখেন…।
– একটু দাঁড়াও,
রতন সাহেব ঘর থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট জোর করে ছোট ছেলেটার হাতে গুজে দিলেন। বললেন, ঈদের দিন এসে বাসায় খেয়ে যেয়ো। বিদায় দিয়ে রতন সাহেব ভেতরে ঢুকতে গেলেন। লোকটা আবার চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে এলো,
– স্যার স্যার, আরেকটা কথা স্যার,
– হ্যা, বলো,
– জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার…অনেক আদরের গরু তো…।
এতটুকু বলেই লোকটা আবার কেঁদে উঠলো। আবার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রতন সাহেবকে সালাম দিয়ে রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করলো গ্রাম্যলোকটা। রতন সাহেব অনেক দিন পরে অনুভব করলেন, নিজের চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।
গেইটের গ্রিলে ভর করে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছেন,
সত্যিকারের কুরবানি দেয়া খালি পায়ের অচেনা মানুষটার দিকে।

সংগৃহীত

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৩০

কিশোর মাইনু বলেছেন: সত্যি কাহিনী এটা?!?!?

১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৯

অতনু কুমার সেন বলেছেন: হুম :(

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০৮

বনসাই বলেছেন: গল্পটি আগেই পড়া, সামুতে না কি প্রথম আলোতে পড়েছিলাম? ভাবছি।

প্রতিটি কুরবাণীর পশুর সাথে এ রকম একটি গল্প আছে, আমরা জানি অথবা জানি না।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সত্যিকারের কোরবানী যদি সকলেই অনুভব করতো !!!!

+++

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:১৮

রাকু হাসান বলেছেন: জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার- |-) কত আদর ,ভালবাসা লুকিয়ে আছে এতটুক লাইনে । খারাপ লাগলো ।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩১

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আজ মনষা পুজোয়ও এমন কত অশ্রু ঝরেছে কে জানে?

৭| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪১

মুরাদ মুরসাল বলেছেন: হার্ট টাচিং!
সহজে মুছে যাওয়ার নয়।
ভালোবাসার প্রকারভেদ করা যায় না। :(

১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৯

অতনু কুমার সেন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৬

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আহা! মহেশ গল্পের গফুরের কথা মনে পড়লো।


এটা গল্প হলেও, এমন হাজারো লোক আছে যারা পোষা প্রাণীকে নিজের পরিবারের একজন মনে করে।

৯| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০৬

মলাসইলমুইনা বলেছেন: অতনু কুমার সেন,
বাংলাদেশের প্রাণটা ঠিক দেখতে পেয়েছেন |বাস্তবেও এটাই ঘটে আমি জানি I গ্রামে মেয়েরা বিক্রির জন্য গরু আনার সময় এখনো তার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদে আদরের গরুর জন্য ভালোবাসায় | সেই ভালোবাসাটা ব্যস্ত শহরে এখন আর নেই নেই | সেখানে টাকার প্রতিযোগিতা কত বড় গরু কত বেশি টাকায় কেনা যাবে I শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার "মহেশ" গল্পে এই রকম মায়া ভরা একটা ভালোবাসার গল্প বলেছিলেন গফুর, আমিনা আর মহেশকে নিয়ে আর অনেক দিন পরে আপনার এই লেখাটা পড়লাম I অনেক ভালোলাগা নিয়ে পড়লাম অনেক ভালোবাসার একটা গল্প I ব্লগে অনেকদিন এতো সুন্দর মায়াভরা, প্রতিদিনের জীবনের ভালোবাসার গল্প পড়িনা I ভেরি ওয়েল ডান I অনেক ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটা গল্প বলার জন্য (এটা সত্যি কাহিনী হতেই পারে আমি জানি কিন্তু)I

১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৮

অতনু কুমার সেন বলেছেন: অনেক গুছিয়ে এবং বিনয় এর সাথে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.