নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

অতনু কুমার সেন

সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নঃ ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্জের মত স্বপ্ন দেখে যাই। স্বপ্ন দেখি আকাশ ছুবো, মেঘের ভেলায় উড়ে যাব, নিজের রঙে রাঙ্গিয়ে দিব, সত্য ও সুন্দরের আলো ফোটাবো। জানিনা পারব কি ব্যর্থ হবো। চেষ্টা তবু করেই যাবো।

অতনু কুমার সেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ - হুমায়ূন আহমেদ!!

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:২১

যোগাযোগমন্ত্রী সালাহউদ্দিন খান ভুলু সাহেবের দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমানোর অভ্যাস। মন্ত্রীর কঠিন দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি এই অভ্যাস বহাল রেখেছেন। একটু উনিশ-বিশ অবশ্য হচ্ছে; আগে ঘুমানোর সময় একজন গায়ের ঘামাচি মেরে দিত, এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায়ই ভাবেন, পলিটিক্যাল পিএসকে ঘামাচি মারতে বলবেন। সে আগ্রহ নিয়ে কাজটা করবে। একটাই ভয়, কোনো পত্রিকায় যদি নিউজ চলে যায়! পত্রিকাগুলো চলে গেছে দুষ্টুদের দখলে। তারা সম্মানিত মন্ত্রীদের ওপর টেলিস্কোপ ফিট করে রেখেছে। আরাম করে ১০ মিনিট ঘুমানোর উপায়ও নেই।

সালাহউদ্দিন খান ভুলু দিবানিদ্রা সেরে উঠেছেন। মন-মেজাজ এখনো ধাতস্থ হয়নি। তিনি কয়েকবার হাই তুললেন। এই সময় তাঁর পিএস (সরকারি) ঢুকলেন। বিনীত গলায় বললেন, স্যারের ঘুম ভালো হয়েছে?
মন্ত্রী বললেন, আমি আপনাকে অনেকবার বলেছি, দুপুরে আমি ঘুমাই না। চোখ বন্ধ করে একধরনের যোগব্যায়াম করি। ‘শবাসন’ এই ব্যায়ামের নাম। এতে টেনশন কমে।

পিএস বললেন, স্যার, সরি। আমি যোগব্যায়ামের ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। আপনার নাক ডাকার শব্দে বিভ্রান্ত হয়েছি।
আর বিভ্রান্ত হবেন না। নাক ডাকা না। দ্রুত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ফেলা যোগব্যায়ামেরই অংশ। আমার নাকে পলিপ আছে বলে দ্রুত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নাক ডাকার মতো শব্দ হয়। এখন ক্লিয়ার হয়েছে?
অবশ্যই, স্যার।
কোনো কাজে এসেছেন?
একটা রোড অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। মাইক্রোবাস ভেঙে গুঁড়া হয়ে গেছে। পাঁচজন মারা গেছে।
অ্যাকসিডেন্ট হলে মানুষ মারা যাবে, এটা নতুন কী? এই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আপনি আমার কাছে এসেছেন?
অনেকেই আপনাকে দুষছে। রাস্তাঘাট ভাঙা, খানাখন্দে ভরা। এই কারণেই অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে।
এটা কী মাস?
ভাদ্র মাসের শুরু।
বৃষ্টি হচ্ছে না?
রোজ বৃষ্টি হচ্ছে।
এই বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ঠিক থাকে?
থাকে না, স্যার।
বাস্তবতা বুঝতে হবে। তুচ্ছ বিষয়ে মন্ত্রীকে দুষলে হবে না। বুঝেছেন?
জি স্যার।
খরা মৌসুম আসুক, রাস্তাঘাট ঠিক হবে।
সাংবাদিকেরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চায়।
শুনতে চাইলেই আমি শোনাব না। আপনি বলে দিন, গতবারের সরকারের যোগাযোগ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে রাস্তাঘাটের আজ এমন বেহাল দশা। একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে দিন।
জি স্যার। স্টেটমেন্টের ব্যবস্থা করছি। তবে আপনাকে একটু কষ্ট করে হাসপাতালে যেতে হবে।
কেন?

মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় কিছু বিখ্যাত মানুষ মারা গেছেন। যাঁরা আহত, তাঁদের দেখতে যাওয়া উচিত।
বিখ্যাত মানুষ কে মারা গেল?
পিএস বিখ্যাত মানুষদের তালিকা বললেন।
মন্ত্রী বিরক্ত গলায় বললেন, এরা বিখ্যাত হলো কবে? আমি তো নামও শুনি নাই। মিডিয়া এদের বিখ্যাত বানিয়েছে। সব মিডিয়ার কারসাজি। দেশটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে মিডিয়া।
যথার্থ বলেছেন। তবে মিডিয়াকে অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না।
হাসপাতালে গিয়ে কী বলব, ঠিক করে এনেছেন? উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলতে পারি। মুডি মানুষ তো, মুডের ওপর চলি।
পিএস বললেন, আমি দুই ধরনের বক্তব্য তৈরি করে এনেছি, যেটা আপনার পছন্দ। আপনি বলবেন, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে, আমাদের কী করার আছে?
মন্ত্রী বললেন, ভালো বক্তব্য। আল্লাহর ওপর কোনো কথা নেই। ধর্মভিত্তিক দল আমার এই বক্তব্য পছন্দ করবে।
অথবা আপনি বলবেন, মাইক্রোবাসের চালকের অদক্ষতাই দুর্ঘটনার কারণ। সে ওভারটেক করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে দোষটা ওদের ঘাড়ে গিয়েই পড়বে।
মন্ত্রী বললেন, এটাও খারাপ না। আমি বরং দুটো একত্র করে বলি। প্রথম বলি, মাইক্রোবাস চালকের ভুল। তারপর বলি, আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়েছে। বুদ্ধিটা কেমন বের করেছি?
অসাধারণ। আপনার চিন্তাধারাই বৈপ্লবিক।

আমাদের এই মুডি মন্ত্রী নানা ধরনের কথাবার্তা বলা শুরু করলেন। মিডিয়া তাঁকে নিয়ে কিছু কাজকর্ম করল। মন্ত্রী যখন গাড়ি নিয়ে রাস্তার বেহাল দশা দেখতে গেলেন, তখন বদগুলো তাঁর হাসিমুখের ছবি ছাপাল। রাস্তায় বিশাল এক গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি হাসছেন—এ রকম ছবি। এই অপরাধ ক্ষমা করা যায়, কিন্তু তাঁর পদত্যাগ চেয়ে প্রতিবেদন ক্ষমা করা যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো কোনো মন্ত্রী পদত্যাগ করেছে? মন্ত্রীরা হলেন কচ্ছপ। কচ্ছপের মতো কামড় দিয়ে তাঁরা মন্ত্রিত্ব ধরে রাখবেন। এটাই নিয়ম।
মন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক সচিবের পরামর্শে কিছু জটিল পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন। একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। একটা ছোট্ট সমস্যা তাতে হলো; দেখা গেল, সবাই দুর্নীতিবাজ। রসুনের বোঁটা অবস্থা। একজনকে শাস্তি দিলে বাকিরা খেপে যাবে। ওদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। কাজেই অনেক ঝামেলা করে একজন সৎ কর্মচারী খুঁজে তাঁকে বরখাস্ত করা হলো।

মন্ত্রী মহোদয় সব পত্রিকায় তাঁর একটি ছবি পাঠালেন। সেই ছবিতে তিনি কোদাল হাতে ভাঙা রাস্তার পাশে দাঁড়ানো। নিচে লেখা, ‘মন্ত্রী মহোদয় নিজেই রাস্তা মেরামতে নেমে পড়েছেন’।

কোনো পত্রিকা এই ছবি ছাপাল না, উল্টো এক বদ পত্রিকা এই ছবি নিয়ে কার্টুন বানিয়ে ছাপিয়ে ফেলল। কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, রাক্ষস টাইপ চেহারার এক লোক খালি গায়ে খাকি হাফপ্যান্ট পরে বেলচা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার গায়ের এবং পায়ের বড় বড় লোম দেখা যাচ্ছে। কার্টুনের নিচে লেখা, ‘যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, আমি একাই ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করব, ইনশাআল্লাহ।’
মন্ত্রী তাঁর পিএসকে ডেকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, তিন কোটি টাকার একটা মানহানি মামলার ব্যবস্থা করুন। আমার ছবি বিকৃত করে ছেপে আমার মানহানি করেছে।

পিএস বললেন, বিকৃত করে তো ছাপে নাই, স্যার। কার্টুনে আপনাকে চেনা যায়।
আমাকে চেনা যায়?
জি স্যার।
আমার গা-ভর্তি লোম?
লোমের পয়েন্টে মামলা করতে পারেন। তবে এখন নতুন ঝামেলায় যাওয়া ঠিক হবে না। এরপর এরা নিউজ করে দেবে—কার্টুন ছবিতে মন্ত্রীর গায়ের লোম দেখানোয় এক কোটি টাকার মানহানির মামলা।
এক সকালবেলার কথা। মন্ত্রীর স্ত্রী সালমা বানু (বিশিষ্ট সমাজসেবী, পরিবেশ রক্ষাকর্মী, বিপন্ন হনুমান বাঁচাও আন্দোলনের সভানেত্রী) তাঁর স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তীক্ষ� গলায় বললেন, আমাকে না জানিয়ে, আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে তুমি কী করে এই কাজ করলে?
মন্ত্রী বললেন, কী কাজ করলাম?
পদত্যাগ করেছ, আমাকে না জানিয়ে।
পদত্যাগ করব কোন দুঃখে?
পত্রিকায় নিউজ এসেছে। এই দেখো।
মন্ত্রী মহোদয় হতভম্ব হয়ে পড়লেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী মহোদয় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।’

হতভম্ব মন্ত্রী তাঁর পিএসকে টেলিফোন করলেন। অনেকবার রিং হলো, পিএস ধরলেন না। তিনিও নিউজ পড়েছেন। এখন যে মন্ত্রী নন তাঁর টেলিফোন কেন ধরবেন! আমজনতার টেলিফোন ধরার কিছু নেই।
মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক পিএসকে টেলিফোন করলেন। পিএস তাঁর কোনো কথা না শুনেই বললেন, পদত্যাগ করে ভালো করেছেন। দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আচ্ছা রাখি।
মন্ত্রী লাইন কেটে দেওয়ার পর অনেকবার চেষ্টা করলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব টেলিফোন ধরলেন না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লক্ষ করলেন, পত্রিকার এই বানোয়াট খবর সবাই বিশ্বাস করে বসে আছে। তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সাব-ইন্সপেক্টর সিগারেট ফুঁকছিল, তাঁকে দেখে সিগারেট ফেলে না দিয়ে শুধু পেছনে আড়াল করল।

মন্ত্রী মহোদয় প্রধানমন্ত্রীকে ধরার অনেক চেষ্টা করলেন। তাঁর চেষ্টা দেখতে পেলে রবার্ট ব্রুসও লজ্জা পেত। একসময় চেষ্টা সফল হলো। প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন ধরলেন এবং বললেন, আপনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। মন্ত্রী না থেকেও জনগণের সেবা করা যায়। জনগণের সেবা করুন।
প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন রেখে দিলেন।

[গল্পের মোরাল: মন্ত্রীদের বুকে এবং পায়ে লোম না থাকা বাঞ্ছনীয়।]
হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২): কথাসাহিত্যিক।

২০১১ সালের ২৮ আগস্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের এই লেখাটি একই শিরোনামে ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর ‘ঈদ উপহার’ সংখ্যায়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:২৫

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: রম্য লেখা সব সময় ভালো লাগে।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:০০

হাঙ্গামা বলেছেন: আহ !! হুমায়ূন আহমেদ :(

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: শাওন ম্যাডাম তার ফেসবক স্ট্যাটাসে দিয়েছিলেন- সেখানে পড়েছি।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

নূর আলম হিরণ বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ অনেক বই না পড়া যুবক যুবতীকে বই পড়তে আগ্রহী করে গড়ে তুলেছেন।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২

কেতন বলেছেন: আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী পদত্যাগ করুক এটা আমি চাইনা। তাকে এবং তার কর্মকান্ডকে আমি খুব পছন্দ করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.