নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

অতনু কুমার সেন

সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নঃ ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্জের মত স্বপ্ন দেখে যাই। স্বপ্ন দেখি আকাশ ছুবো, মেঘের ভেলায় উড়ে যাব, নিজের রঙে রাঙ্গিয়ে দিব, সত্য ও সুন্দরের আলো ফোটাবো। জানিনা পারব কি ব্যর্থ হবো। চেষ্টা তবু করেই যাবো।

অতনু কুমার সেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপমান ও তাঁর মেধার মূল্য না পাওয়ার বোঝা নিতে না পেরে ডাঃ সুভাষ আত্মহত্যা করেন

২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০২

কথা বলবো #টেস্ট_টিউব_বেবী নিয়ে।
সাথে বলবো টেস্ট টিউব বেবীর আবিস্কারক ডাঃ সুভাষ এর আত্মহত্যার গল্প।
জাতিগত ভাবে বাঙালীদের যে নাট-বল্টু তে সমস্যা আছে তা ডাঃ সুভাষের মৃত্যুর ঘটনা শুনলে বুঝবেন।

প্রথমেই জানতে চাই,
আচ্ছা সবাই কি জানেন টেস্ট টিউব বেবী কি জিনিস?

এ পর্যন্ত কিছু কিছু বুদ্ধিমান(!) মানুষের মুখে এটা সম্পর্কে যা যা ধারনা শুনেছি তা নিম্নরুপ,

- ইহা টিউব এর ভিতর বড় হওয়া আর্টিফিশিয়াল বাচ্চা।

-ইহা আধা মানব আধা রোবট।

- এরা অসম্পূর্ন মানুষ। মানুষের মত সব কাজ করতে পারে না, কিছু কিছু করতে পারে।

- এদের অনেক রোগ শোক হয়... এদের অনেকেই স্বাভাবিক হয় না।

- বড়লোক দের শখ আরকি। শখ করে তারা টিউবের ভিতর বাচ্চা পালে। মনে চাইলে লাড়ে চাড়ে খেলে।

ইত্যাদি ইত্যাদি..

এহেন ভুল ধারনা নিয়ে অনেকে আবার টেস্ট টিউব বেবী সঠিক না বেঠিক এই তর্কে ঝাপিয়ে পড়েন।

যাক, মানুষ তো ভুল বুঝবেই।
এখন আমি ব্যাপারটা গুছিয়ে এবং সহজ বাংলায় বলার চেষ্টা করি।
নীচের ৭ টি ধাপ পড়ুন।

১. পুরুষ এর ভিতর থেকে বের হয় শুক্রানু।
২. নারীর ভেতরে তৈরী থাকে ডিম।
৩. নারী পুরুষ এর শারিরীক মেলামেশা হলে পুরুষের বীর্য্য থেকে সেই শুক্রানু গিয়ে নারীর ভেতরের সেই ডিম এর ভেতর প্রবেশ করে।
৪. সেই ডিম টাই তখন হয়ে যায় ভ্রুণ।
৫. সেই ভ্রুন টা তখন তাদের মিলনস্থান থেকে গড়িয়ে এসে জরায়ূ তে অবস্থান নেয়। ওখানে বাসা বাধে।
৬. সেখানে ধীরে ধীরে সেই ভ্রুন বড় হয় এবং মানুষের আকার ধারন করে।
৭. এভাবে প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর জন্ম হয় একজন মানুষের।

এভাবেই জন্ম হয়েছে আপনার, আমার এবং এভাবেই জন্ম হবে আপনার সন্তান ও।

এখন শোনেন ভাই,
আপনি আর আপনার স্ত্রী শারিরীকভাবে স্বাভাবিক। আপনারা যৌন মিলন করলেই আপনার স্ত্রী এর ভেতরে শুক্রানু আর ডিমের মিলনে বাচ্চা হবে।

কিন্তু আমাদের মাঝে কেউ কেউ আছেন স্বাভাবিক না। কোন একটা সমস্যা আছে তাদের।
হয়তো শুক্রানুর সংখ্যা কম.. হয়ত স্ত্রীর ডিম নেই..
হয়তো ডিম আর শুক্রানুর মিলনস্থলে সমস্যা আছে.. হয়তো জরায়ু তে সমস্যা আছে.. বীর্য্য বের হবার পথে সমস্যা আছে..
ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক ধরনের সমস্যাই হতে পারে।

সে ক্ষেত্রে কি করনীয়??

এর উত্তর তো "এক্কেরে" সোজা। সহজ সরল সমাধান আছে।

বউ কে দোষ দাও সে বন্ধ্যা। জামাই কে আরেকটা বিবাহ দিয়ে দাও। জামাই আরেক খান ফুট ফুটে বউ এনে বাচ্চা ফুটাবে। যদি সেই দ্বিতীয় বউ দিয়েও না হয়, তাইলেও কোন সমস্যা নাই। লাগলে বিয়ে আরেকটা করা যাবে। দানে দানে তিন দান।

কি বলেন? তাই না??

জ্বী না ভাই। সমাধানের চেষ্টা করার চিকিৎসা আছে উপায় আছে।
সেই উপায়গুলোর শেষ পর্যায়ের চেষ্টা হলো টেস্ট টিউব বেবী।

সে পদ্ধতি তে আসলে কি করা হয় বলি,
একজন স্ত্রী এর শরীরের কোথায় ডিম তৈরী হয় আমরা জানি।
সেখান থেকে ডিম টা কালেক্ট করলাম।
আর মাস্টারবেশনের মাধ্যমে বা অন্য মাধ্যমে পুরুষের কাছ থেকে স্পার্ম টা কালেক্ট করলাম।

নারী পুরুষের শুক্রানু ডিম্বানুর মিলন টা ল্যাবরেটরী তে ঘটিয়ে দিলাম একটা বিশেষ পাত্রে (উপরের ৩ নং ধাপ এর বিকল্প)।

মিলনের ফলে ভ্রুন তৈরী হলো। সেই ভ্রুন টাকে অতি যত্নের সাথে মায়ের জরায়ূ তে বসিয়ে দিলাম (উপরের ৫ নম্বর ধাপ এর বিকল্প)।

এরপর উপরের ৬ ও ৭ নাম্বার ধাপ মায়ের পেটেই কমপ্লিট হয়। অর্থাৎ ওখানেই ভ্রুন থেকে ৪০ সপ্তাহ পর একজন মানুষ বেরীয়ে আসে।

আচ্ছা উপরে ব্যাখ্যা টা কি জটিল হয়ে গেলো?
আরো সহজ করে বলবো?

ধরুন আপনি আপনার বাগানে গাছ লাগাবেন। এখন আপনি বাগানের মাটি তে সরাসরি বীজ বপন না করে আলাদা কোন যায়গায় স্বল্প মাটি তে আগে গাছের চারা টা তৈরী করলেন। এরপর চারা টা এনে বাগানে বপন করলেন।
টেস্ট টিউব বেবীর ব্যাপার টা সরাসরি বীজ বপন না করে ঐ চারা বপন করার মতই।

বুঝাতে পেরছি কি? এখনো না বুঝলে কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করবেন। সব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি আগ্রহী।

আর যদি বুঝতে পারেন, তাহলে নিশ্চই সবার এখন জানা হয়ে গেছে যে একজন টেস্ট টিউব বেবীর সাথে আপনার, আমার, পাশের বাড়ির বাবলু, বিল গেটস, শাহরুখ খান, লিওনেল মেসি বা ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মাঝে গঠনগত কোন পার্থক্য নেই।
হয়তো আপনার আশেপাশে আছে টেস্ট টিউব বেবী, আপনি জানেন ও না।

সুতরাং এ বিষয়ে সব কুসংসকার, ভুল ধারনা দূরে ফেলে দেন।
আপনার আমার মাঝে যদি এমন কোন কাপল থাকেন, যাদের দীর্ঘদিন বাচ্চা হচ্ছে না, অনেক ধরনের ঔষধ, দেশ বিদেশ, কবিরাজ(!) , ঝাড়ফুক(!) সব চেষ্টা করা শেষ।
তারা শেষ অপশন হিসেবে IVF করে সন্তান গ্রহন (এটার ই অপর নাম টেস্ট টিউব বেবী) করে দেখতে পারেন।

ও হ্যা, আরেকটা জিনিস নিয়ে সবাই কনফিউশন করে, সেটা হলো সারোগেট মাদার (Surrogate Mother)।
এটা আসলে সহজ ভাষায় বললে বলবো "অন্য কারো জরায়ূ ধার করা"।
উপরে বর্ননায় কিভাবে স্বামীর শুক্রানু ও স্ত্রী এর ডিম্বানু নিয়ে টেস্ট টিউবে ভ্রুন তৈরী করা হয় তা তো বুঝেছেন। ঠিক সেভাবেই ভ্রুন তৈরী করে এরপর সেটি আপনার স্ত্রী এর গর্ভে না বসিয়ে অন্য কোন মহিলার গর্ভে স্থাপন করে দেওয়া হয়। সেই মহিলার গর্ভেই বাচ্চা বড় হয়। পরে জন্ম দেবার পর স্বামী এবং স্ত্রী তাদের বাচ্চা নিয়ে যান।

এরকম উদাহরন পৃথিবীতে অসংখ্য। এমন ও আছে, যে বড় ভাই আর ভাবী সন্তান নিতে পারছে না, ছোট বোন ভাই ভাবীর জন্য স্বার্থত্যাগ করে ভাই ও ভাবীর IVF ভ্রুন টি তার গর্ভে পালন করে সন্তানের জন্ম দিয়ে দিয়েছে।

আমাদের খালা ফুপু রা যেমন বলে যে "তোকে তো আমি কোলে পিঠে করে পেলে দিয়েছি, তোর মা বাপ তো আমার কাছে রেখে শহরে ছিলো এক বছর"
তেমনি এখানে সেই ফুপু বলবে, "তোকে তো আমি গর্ভে ধরে দিয়েছি রে, তোর মা বাপ তো পারে নাই, তাদের প্রবলেম ছিলো"..

সারোগেট মাদারের স্বার্থত্যাগ টা অনেক বড় স্বার্থত্যাগ। তবুও টাকার জন্য অথবা পরিবার বা বন্ধুর জন্য এই ত্যাগ অনেকেই করে।

অনেক বড় লিখে ফেললাম।
টেস্ট টিউব বেবীর আবিস্কারক শ্রদ্ধেয় বাঙালী ডাক্তার সুভাষ এর আত্মহত্যার কথা বলে শেষ করি,

#ডাঃসুভাষ ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাধর। বড় বড় দেশে বড় বড় ল্যাবরেটরী তে বড় বড় যন্ত্রপাতি নিয়ে যখন বিজ্ঞনীরা টেস্ট টিউব বেবী গবেষনায় হিমশিম খাচ্ছে, কুল কিনারা করতে পারছে না,
তখন ডাক্তার সুভাষ তার দেশে, কলকাতায় তার বাড়িতে বসে নিজস্ব ছোট ল্যাবোরেটরী তে কয়েকটা মামুলি ফ্লাক্স, ডিশ, টিউব এবং তার বাসার ফ্রীজ ব্যবহার করে প্রথম টেস্ট টিউব ভ্রুন তৈরী করেন।
১০ মাস পর সেই বাচ্চা জন্মগ্রহন করে।
তার নাম দেওয়া হয় #দূর্গা।

কিন্তু তৎকালিন তার আশেপাশের বাঙালি ডাক্তার এবং বৈজ্ঞানিকরা তাকে স্বীকৃতি দেয় নি। বলেছেন যে এটা ভুয়া। এরকম কৃত্তিম ভাবে ভ্রুন তৈরী সম্ভব না। দূর্গা আসলে টেস্ট টিউব বেবী না। দূর্গা তার মা বাবার দৈহিক মিলনেই হয়েছে। সুভাষ মিথ্যা বলছে..

অনেক লান্ছিত হয়েছেন ডাঃ সুভাষ।

এমনকি সায়ন্টেফিক সেমিনারে তার এই আবিস্কারের জার্নাল টাও তাকে দিতে দেওয়া হয় নি। আশেপাশের বাঙালি বৈজ্ঞানিক রা তো তার বিরুদ্ধে ছিলোই, ভারত সরকারও তাকে মর্যাদা দেয় নি।

টেস্ট টিউব বেবী বা IVF পদ্ধতির আবিস্কারক হিসেবে আজ Dr. Robert G Edward কে স্মরন করা হয়। নোবেল পুরুস্কারও পেয়েছেন তিনি এ আবিস্কারেে জন্য। অথচ একই বছরে, একই কাজ করেও ডাঃ সুভাষ স্বীকৃতি আর পুরস্কার পাওয়া তো দূরের কথা, অপমান ছাড়া আর কিছু জোটে নি তাঁর কপালে।

এ অপমান ও তাঁর মেধার মূল্য না পাওয়ার বোঝা নিতে না পেরে ডাঃ সুভাষ আত্মহত্যা করেন ১৯৮১ সালের ১৯ জুন।

পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ১৬ বছর পর তার রিসার্চ পেপার গুলো ঘেটে প্রমান করা হয় যে ডাঃ সুভাষও টেস্ট টিউব বেবী পদ্ধতির একজন পথ প্রদর্শক। পরে তাকে #পৃথিবীর_দ্বিতীয় এবং #ভারতের_প্রথম টেস্ট টিউব বেবীর আবিস্কারক হিসেবে সম্মান এবং স্বিকৃতি দেওয়া হয়।

কিন্তু ততদিনে আর কি লাভ?
আভিমানী মেধাবী সুভাষ তো আর জানতে পারলেন না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: এই ঘটনা নিয়ে একটা মুভি হয়েছে তা জানেন?

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০২

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আহারে!!

সুভাষ নামের হিরোটা এভাবে অকালে ঝরে গেল????:(

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০০

আহমেদ জী এস বলেছেন: অতনু কুমার সেন ,



"টেষ্ট টিউব বেবী" এবং তদসংক্রান্ত বিষয়ে চমৎকার করে সহজ কথায় বলে গেছেন ।

আর ডাঃ সুভাষ সম্পর্কে আগে কখনও কোথাও পড়িনি । ডাঃ সুভাষ এর বেলায় যদি সত্যিই তেমনটা হয়, তবে সেটা মর্মান্তিক ।
এমনি বাঙালীদের অনেক কিছু আবিষ্কারই নাকি লোপাট করে সাদা চামড়াদের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে ! বেতার আবিষ্কার থেকে স্যার জগদীশ বসুকে সরিয়ে মার্কনীর নাম বসানো হয়েছে । সত্যেন বসুর আবিষ্কার " ঈশ্বর কনা " - " বোসন" কে আর অতটা মারতে পারেনি । তার সাথে হিগস সাহেবের নাম জুড়ে " হিগস-বোসন" কনা বানিয়ে দিয়েছে ।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৩

একদম_ঠোঁটকাটা বলেছেন: একজন ডাক্তারের মৃত্যু

তাঁকে নিয়ে আমার একটা পোস্ট আছে। পড়ে দেখার অনুরধ রইল।

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৩০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ডাঃ সুভাষ সম্পর্কে জানতাম না। যদিও টেস্ট টিউব বেবী, স্যারোগেসি - এগুলো জানি। অনেক তথ্যই এখন বের হচ্ছে বিভিন্ন আবিস্কার নিয়ে। কিছুদিন আগেই এক ভারতীয় ছবির মাধ্যমে জানা গেল রাইট ব্রাদারের আগে নাকি এক ইন্ডিয়ান প্লেন বানানোর চেষ্টা করেছিল...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.