নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Asif Ajhar

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Asif Ajhar › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-৩১ | পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য: ১১২৫-১২৫৪ সাল

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫০


১. সাপ্লাইনবার্গার রাজপরিবার (১১২৫-১১৩৭ সাল)

১১২৫ সালে স্যালিয়ান রাজবংশের শেষ সম্রাট পঞ্চম হেনরির মৃত্যুর পর জার্মানির রাজা হন স্যাক্সনির ডিউক লোথার অভ সাপ্লাইনবার্গ। তিনি সম্রাট তৃতীয় লোথার নামেও পরিচিত। ১১৩৩ সালে তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ১১৩৭ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তাঁর শাসনামলে সোয়েবিয়ার হোহেনস্ট্যুফেন ডিউক দ্বিতীয় ফ্রেডারিক এবং ফ্রাঙ্কোনিয়ার ডিউক কনরাড তাঁর বিরুদ্ধে লাগাতার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন।


চিত্র: সম্রাট তৃতীয় লোথার

এছাড়াও তাকে দক্ষিণ ইতালির নর্মানদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল। সিসিলির নর্মান রাজার বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান শেষ করে ফিরে আসার পথে তিনি হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সাথে জার্মানি-ইতালিতে বিলুপ্ত হয়ে যায় সাপ্লাইনবার্গার পরিবারের শাসন। তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন ফ্রাঙ্কোনিয়ার ডিউক কনরাড।

২. হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবার (১১৩৮-১২০৮ সাল)

ফ্রাঙ্কোনিয়ার ডিউক কনরাড ১১৩৮ সাল থেকে ১১৫২ সাল পর্যন্ত জার্মানির রাজা ছিলেন। জার্মানির রাজা হওয়ার পর তিনি তৃতীয় কনরাড নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন হোহেনস্ট্যুফেন পরিবারের প্রথম রাজা। তিনি ছিলেন সোয়েবিয়ার ডিউক প্রথম ফ্রেডারিকের পুত্র এবং সম্রাট চতুর্থ হেনরির পৌত্র। সম্রাট পঞ্চম হেনরি তাকে ১১১৫ সালে ফ্রাঙ্কোনিয়ার ডিউক বানিয়েছিলেন। অন্যদিকে তাঁর বড় ভাই ফ্রেডারিক হয়েছিলেন সোয়েবিয়ার ডিউক এবং সোয়েবিয়ার ডিউকের তালিকা অনুযায়ি দ্বিতীয় ফেডারিক নামে পরিচিত হয়েছিলেন।


চিত্র: সম্রাট তৃতীয় কনরাড

সম্রাট পঞ্চম হেনরির মৃত্যুর পর এ দুজনের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করার কথা ছিল। কিন্তু ১১২৫ সালে সম্রাট পঞ্চম হেনরির মৃত্যুর পর জার্মানির অভিজাতরা উত্তরাধিকারের নীতি অমান্য করে স্যাক্সনির ডিউক লোথারকে জার্মানির সিংহাসনে বসায়। ফলে সে বছরের শেষের দিকে ডিউক দ্বিতীয় ফ্রেডারিক এবং তৃতীয় কনরাড বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

১১২৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জার্মানির ন্যুরেমবার্গ শহরে জার্মানির বিদ্রোহী রাজা হিসেবে তৃতীয় কনরাডের অভিষেক ঘটে। এছাড়াও ১১২৮ সালের জুন মাসে তিনি ইতালির মুকুটধারী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১১৩২ সালে তিনি জার্মানিতে ফিরে আসেন এবং ১১৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি লোথারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। লোথারের মৃত্যুর পরবর্তীতে তিনি জার্মানির ক্ষমতা লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। ১১৫২ সাল পর্যন্ত তিনি জার্মানির ক্ষমতায় ছিলেন।


চিত্র: সম্রাট ফ্রেডারিক বার্বারোসা

১১৫২ সালে তৃতীয় কনরাডের মৃত্যুর পর জার্মানির ক্ষমতায় আসেন তাঁর ভাতিজা ফ্রেডারিক বার্বারোসা। ফ্রেডারিক বার্বারোসা ছিলেন তৃতীয় কনরাডের বড় ভাই অর্থাৎ সোয়েবিয়ার ডিউক দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের পুত্র। জার্মানির রাজা হওয়ার পূর্বে ১১৪৭ সালে তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে সোয়েবিয়ার ডিউক হয়েছিলেন। সোয়েবিয়ার ডিউকের তালিকা অনুযায়ী তিনি ছিলেন ‘তৃতীয় ফ্রেডারিক’ এবং জার্মান রাজাদের তালিকা অনুযায়ী তিনি ছিলেন ‘প্রথম ফ্রেডারিক’। তাঁর মায়ের নাম ছিল জুডিথ।

জুডিথ ছিলেন বাভারিয়ার ডিউক চতুর্থ হেনরির কন্যা। এ সুবাদে ফ্রেডারিক বার্বারোসা ছিলেন জার্মানির দুটি নেতৃস্থানীয় পরিবারের বংশধর। এজন্য জার্মানির রাজা নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজপুত্রদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পছন্দের তালিকায় প্রথম। ১১৫২ সালের ৪ মার্চ জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে তাকে জার্মানির রাজা নির্বাচিত করা হয়। এর পাঁচদিন পর ৯ মার্চ আখেন শহরে আয়োজিত অন্য এক অনুষ্ঠানে তাঁর মাথায় জার্মানির রাজমুকুট তোলে দেওয়া হয়।

১১৫৫ সালে ফ্রেডারিক বার্বারোসা ইতালির সিংহাসনে বসেন। এরপর তাকে ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। ১১৫৫ সালের ১৮ জুন পোপ চতুর্থ আদ্রিয়ান তাঁর মাথায় ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ মুকুট তোলে দেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল ফ্রেডারিক বার্বারোসা ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সম্রাট হওয়ার দু’বছর পর এ সাম্রাজ্যের নামের সাথে ‘পবিত্র’ শব্দটি যুক্ত হয়েছিল।

এর পূর্বে এ সাম্রাজ্যের নাম কেবল ‘রোমান সাম্রাজ্য’ হিসেবেই প্রচলিত ছিল। ল্যাটিন ভাষায় ‘পবিত্র’ মানে হল ‘স্যাক্রাম’। এ সাম্রাজ্যের নামের সাথে ‘স্যাক্রাম’ শব্দটির সংযুক্তি প্রথম দেখা যায় ফ্রেডারিক বার্বারোসার অভিষেকের দু’বছর পরের একটি দলিলে। তবে ঐতিহাসিকরা সম্রাট শার্লামেনের সময় থেকেই এ সাম্রাজ্যের নামের সাথে ‘পবিত্র’ শব্দটি ব্যবহার করেন। সম্রাট শার্লামেনের সময় থেকেই এ সাম্রাজ্যকে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ বলে অভিহিত করা হয় এ কারণেই যে এতে পূর্ববর্তী রোমান সাম্রাজ্য থেকে এ সাম্রাজ্যকে পৃথকভাবে চেনা সহজ হয়।

সম্রাট ফ্রেডারিক বার্বারোসা ১১৯০ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সম্রাটের আসনে বহাল ছিলেন। এর পূর্ববর্তীতে তিনি বারগান্ডির সিংহাসনও অধিকার করেছিলেন। ১১৭৮ সালের ৩০ জুন আরলেস শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মাথায় বারগান্ডির রাজমুকুট তোলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ‘বার্বারোসা’ নামটি পেয়েছিলেন উত্তর ইতালির মানুষের কাছ থেকে।

উত্তর ইতালির বিভিন্ন শহরের মানুষ তাকে ‘বার্বারোসা’ নামে ডাকত। ইতালীয় ভাষার ‘বার্বারোসা’ শব্দের অর্থ হল ‘লাল দাড়ি’। তাঁর লাল দাড়ির জন্য তাকে লোকজন এ নামে ডাকত। জার্মান ভাষায় তাঁর নাম ছিল ‘কাইজার রবার্ট’। এ নামের অর্থও একই অর্থাৎ ‘লাল দাড়ির অধিকারী’।

১১৯০ সালে সম্রাট ফ্রেডারিক বার্বারোসার মৃত্যুর পর জার্মানির রাজা হন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ষষ্ঠ হেনরি। ১১৯১ সালে তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১১৯৭ সালে তাঁর মৃত্যু অবধি তিনি ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সম্রাট পদে বহাল ছিলেন। জার্মানির সিংহাসনে বসার পরবর্তীতে ১১৯৪ সালে তিনি সিসিলির সিংহাসনও অধিকার করেছিলেন। ১১৮৬ সালে ষষ্ঠ হেনরি কনস্ট্যান্স অভ সিসিলিকে বিয়ে করেছিলেন।


চিত্র: সম্রাট ষষ্ঠ হেনরি

কনস্ট্যান্স ছিলেন সিসিলির নর্মান রাজা দ্বিতীয় রজারের কন্যা। দ্বিতীয় রজারের মৃত্যুর পর তাঁর এই কন্যা ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। কনস্ট্যান্স তাঁর পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর ভাতিজা কাউন্ট ট্যানক্রেডের পরিবর্তে তাঁর স্বামীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এর ফলে ষষ্ঠ হেনরি জোরালোভাবে সিসিলির সিংহাসন দাবী করতে পেরেছিলেন। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম রিচার্ডের মুক্তিপণ হিসেবে ষষ্ঠ হেনরি ১১৯৪ সালে সিসিলি দখল করেছিলেন। অবশ্য ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সাথে সিসিলির এই অন্তর্ভূক্তি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেনি।

১১৯৭ সালে সম্রাট ষষ্ঠ হেনরির মৃত্যুর পর জর্মানির ক্ষমতায় আসেন জনৈক হোহেনস্ট্যুফেন রাজপুত্র ফিলিপ অভ সোয়েবিয়া। ১১৯৮ সাল থেকে ১২০৮ সাল পর্যন্ত তিনি জার্মানির রাজা ছিলেন। তাঁর সময়কালে হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবারের সাথে ওয়েল্ফ রাজপরিবারের সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। ষষ্ঠ হেনরির মৃত্যুর পর থেকে জার্মানির সিংহাসন দখলের জন্য হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবারের সাথে ওয়েল্ফ রাজপরিবারের লাগাতার সংঘাত চলতে থাকে।


চিত্র: সম্রাট ফিলিপ অভ সোয়েবিয়া

এ সংঘাতের এক পর্যায়ে ষষ্ঠ হেনরি আততায়ীর আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। এটি ছিল ১২০৮ সালের ঘটনা। ১২০৮ সালের ২১ জুন তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। জার্মান রাজাদের মধ্যে ষষ্ঠ হেনরিই ছিলেন প্রথম রাজা যিনি আততায়ীর আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জার্মানিতে ওয়েল্ফ রাজপরিবারের শাসন শুরু হয়।

৩. ওয়েল্ফ রাজপরিবার (১২০৮-১২১৫ সাল)

সম্রাট ষষ্ঠ হেনরির মৃত্যুর পরে ১১৯৮ সালে জার্মানির সিংহাসনে হোহেনস্ট্যুফেন রাজপুত্র ফিলিপ অভ সোয়েবিয়া অধিষ্ঠিত হলেও তাঁর দুজন শক্তিশালী প্রতিদ্ধন্দ্বী তাঁর বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছিলেন। দুজনই জার্মানির সিংহাসনের দাবীদার ছিলেন। এ দুজনের একজন ছিলেন ব্রুনসউইকের ডিউক চতুর্থ অটো। ১২০৮ সালে ফিলিপ অভ সোয়েবিয়ার মৃত্যুর পর তিনি জার্মানির সিংহাসন অধিকার করেন।


চিত্র: সম্রাট চতুর্থ অটো

১২০৯ সালে তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হলেও এর পরের বছর তিনি পোপ তৃতীয় ইনোসেইন্ট এর রোষের শিকার হয়েছিলেন এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বয়কটের মুখে পড়েছিলেন। তবে ১২১৫ সালে উৎখাত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ পদে বহাল ছিলেন। তিনি ছিলেন ওয়েল্ফ রাজবংশের একমাত্র সম্রাট। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১২১৮ সালে।

৪. হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবার: দ্বিতীয় ফ্রেডারিক (১২১১-১২৫০ সাল)

ওয়েল্ফ রাজপরিবারের সংক্ষিপ্ত শাসনের পর জার্মানিতে আবারও হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবারের শাসন ফিরে আসে। এ পর্যায়ে জার্মানির ক্ষমতায় আসেন প্রাক্তন সম্রাট ষষ্ঠ হেনরি এবং রানী কনস্ট্যান্স এর পুত্র ফ্রেডারিক। জার্মানির রাজাদের তালিকা অনুযায়ী তিনি ‘দ্বিতীয় ফ্রেডারিক’ নামে পরিচিত। তাঁর পূর্ববর্তী ‘প্রথম ফ্রেডারিক’ ছিলেন ফ্রেডারিক বার্বারোসা। দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ছিলেন মধ্যযুগের সবচেয়ে শক্তিশালী পবিত্র রোমান সম্রাটদের একজন।


চিত্র: সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক

দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের জননী কনস্ট্যান্স ছিলেন সিসিলির নর্মান রাজা দ্বিতীয় রজারের কন্যা। ১১৮৬ সালে সম্রাট ষষ্ঠ হেনরি কনস্ট্যান্স অভ সিসিলিকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর রানী কনস্ট্যান্স তাঁর পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর ভাতিজার পরিবর্তে তাঁর স্বামীকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং এর পরবর্তীতে একপর্যায়ে তাঁর স্বামী ষষ্ঠ হেনরি সিসিলির সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। এটি ছিল ১১৯৪ সালের ঘটনা।

১১৯৭ সালে সম্রাট ষষ্ঠ হেনরির মৃত্যুর পর তাঁর তিন বছর বয়সী শিশুপুত্র ফ্রেডারিকের মাথায় সিসিলির রাজমুকুট তোলে দেওয়া হয়। তখন সিসিলির হাল ধরেছিলেন রানী কনস্ট্যান্স। রানী কনস্ট্যান্স এর সহ-শাসক হিসেবে শিশু ফ্রেডারিককে সিসিলির রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে তখন জর্মানির ক্ষমতায় এসেছিলেন জনৈক হোহেনস্ট্যুফেন রাজপুত্র ফিলিপ অভ সোয়েবিয়া।

১২০৮ সালে ফিলিপ অভ সোয়েবিয়াকে হত্যার পর জার্মানির ক্ষমতায় এসেছিলেন ওয়েল্ফ রাজপরিবারের সদস্য অটো অভ ব্রুনসউইক। এই অটো অভ ব্রুনসউইককে ১২১৫ সালে উৎখাত করে জার্মানিতে পুনরায় হোহেনস্ট্যুফেন শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। হোহেনস্ট্যুফেন রাজপরিবারের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা।

তাঁর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে ছিলো সিসিলি। এখান থেকে ইতালি হয়ে পুরো জার্মানি এবং অন্যদিকে জেরুজালেম পর্যন্ত তাঁর প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল। তবে তাঁর শত্রুরও অভাব ছিল না। বিশেষ করে কয়েকজন পোপের সাথে তাঁর গভীর বিরোধ ছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পর খুব শীঘ্রই তাঁর রাজবংশের পতন ঘটেছিল।

ঐতিহাসিকরা তাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে সেরা বিশেষণগুলোই ব্যবহার করেছেন। প্রফেসর ডোনাল্ড ডেটওয়াইলার তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন: অসম্ভব শক্তি ও সামর্থের অধিকারী এবং সংস্কৃতিবান একজন মানুষ ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক যাকে নীৎসে ইউরোপের প্রথম আধুনিক শাসক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং আরও অনেক ঐতিহাসিক যাকে পৃথিবীর সর্বপ্রথম আধুনিক শাসক হিসেবে চিহ্নিত করেছন। সিসিলি এবং দক্ষিণ ইতালিতে প্রতিষ্ঠিত তাঁর রাজ্যটি ছিল অনেকাংশেই একটি আধুনিক রাষ্ট্রের মতো যেখানে একটি সার্থক আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিক নিজেকে সরাসরি প্রাচীন রোমান সম্রাটদের উত্তরসূরি মনে করতেন। সম্রাট হিসেবে তাঁর পোপীয় অভিষেক হয়েছিল ১২২০ সালে। তবে এর অনেক আগে থেকেই তিনি নিজেকে রোমানদের রাজা ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১২১২ সালে ওয়েল্ফ রাজপরিবারের অটো অভ ব্রুনসউইক ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ থাকাকালীন অবস্থাতেই তিনি নিজেকে ইতালির রাজা ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১২১৫ সালে অটো উৎখাত হওয়ার পর তিনি এ রাজ্যের নিরংকুশ অধিকার লাভ করেন। তিনি ইতালি, জার্মানি এবং বারগান্ডি- এ তিনটি রাজ্যেরই সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। পোপীয় অভিষেকের পর তিনি রোমানদের খাঁটি সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন। ১২২০ সালে তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ১২৫০ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

দ্বিতীয় ফ্রেডারিক ষষ্ঠ ক্রুসেডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এ সুবাধে তাকে ‘জেরুজালেমের রাজা’ উপাধী দেওয়া হয়েছিল। তবে পোপতন্ত্রের সাথে তাঁর সম্পর্ক ভালো যায়নি। তিনি বারবার পোপতন্ত্রের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছেন। চার্চ তাকে চারবার ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে বহিস্কার করেছিল। তৎকালীন পোপীয় উপাখ্যানে তাকে ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। পোপ নবম গ্রেগরি তাকে প্রায় খ্রিষ্টবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।


চিত্র: শিল্পীর তুলিতে মধ্যযুগের শহর

দ্বিতীয় ফ্রেডারিক কেবল সফল শাসকই ছিলেন না; অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি ছয়টি ভাষা জানতেন। ল্যাটিন, সিসিলিয়ান, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, গ্রিক ও আরবী ভাষায় তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। বিজ্ঞান ও শিল্প চর্চায় তিনি আগ্রহের সাথে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। সিসিলিয়ান কাব্যসাহিত্যের উন্নয়নে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সিসিলিয়ান রাজদরবার ছিল পালেরমো শহরে অবস্থিত। ১২২০ সাল থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ রাজদরবারে সিসিলিয়ান ভাষা ব্যবহৃত হয়েছিল।

এ সময়ের মধ্যে সিসিলিয়ান ভাষা ইতালীয়-রোমান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম সাহিত্যের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সিসিলিয়ান কাব্য সাহিত্যের ধারা তৎকালীন ইউরোপের সাহিত্যজগতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছিল এবং এ ধারা থেকেই পরবর্তীতে আধুনিক ইতালীয় ভাষা জন্ম নিয়েছিল। মহাকবি দান্তে এবং তাঁর অনুসারীরা সিসিলিয়ান কাব্য সাহিত্যের ধারাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এরপর প্রায় এক শতাব্দীকাল ধরে ইতালিতে অভিজাত সাহিত্যের ভাষা হিসেবে তুসকান ভাষারীতি ব্যবহৃত হয়েছিল।

১২৫০ সালের ১৩ ডিসেম্বর সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর বংশধরদেরও মৃত্য ঘটে। এর ফলে তাঁর বংশধরদের কেউ আর তাঁর উত্তরাধিকারী হতে পারেনি। সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের মৃত্যুর সাথে সাথে হোহেনস্ট্যুফেন রাজবংশের গৌরবের দিন ফুরিয়ে যায়। তাঁর মৃত্যুর অল্পকালের মধ্যেই হোহেনস্ট্যুফেন রাজবংশের পতন ঘটেছিল।


চতুর্থ কনরাড (১২৫০-১২৫৪ সাল)

১২৫০ সালে সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের মৃত্যুর পর কনরাড নামে একজন হোহেনস্ট্যুফেন রাজা সিসিলির সিংহাসনে বসেন। ১২৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি সিসিলি, জার্মানি ও জেরুজালেমের রাজা ছিলেন। জার্মানির শাসকদের তালিকা অনুযায়ী তিনি ছিলেন ‘চতুর্থ কনরাড’। ১২৩৫ সাল থেকে ১২৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি সোয়েবিয়ার ডিউক ছিলেন। ১২২৮ সালে তিনি জেরুজালেমের রাজা হয়েছিলেন এবং ১২৩৭ সালে তিনি জার্মানির রাজা হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১২৫৪ সালে।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৮

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো ।সেভ করলাম।আপনার লেখা গুলো সময় নিয়ে পড়ি।সময় করে পড়বো।ধন্যবাদ

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: রকমারি না, বইমেলা থেকে সংগ্রহ করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.