নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো মেয়ের পায়ের তলায় আলো - আন্‌ওয়ার এম হুসাইন

২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪১


বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছিল। নম্র, ভদ্র বলে গ্রামে আমার যথেষ্ঠ সুনাম ছিল। । সাতচড়ে রা না করা মেয়ে। সাধারণত এই ধরনের মেয়েদের বিয়ে ভাঙে না। পাড়া-প্রতিবেশি তো বটেই, আমাদের চরম শত্রুও জানে আমি বড় ভাল মেয়ে। তবে কালো। আমাদের গ্রামের ইতিহাসে আমিই একমাত্র আমার টাইপ মেয়ে যার বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙ্গে জীবিত মা ও মৃত বাবার মান ইজ্জত চুনাচুনা করে দিয়েছিল। ঘটনাটা তাই যথেষ্ঠ কুখ্যাতি পেয়েছিল। শুধুমাত্র আমার বাপ-মায়ের দূর্ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করে গ্রামের মেয়েদের বহু বিকেল সন্ধ্যার আড্ডা সারা হত। বাপ-মায়েরা কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা করত, তাদের কারো মেয়ের ভাগ্য যেন আমার মত না হয়। স্বীকার করি দোষটা আমারই।
মায়ের দিক থেকে সেই বিয়ের আয়োজনে কোন ঘাটতি ছিল না। দুটো দুগ্ধবতী গাভী ছিল। সেগুলো বিক্রি হয়ে গেল। বাবার রেখে যাওয়া সমস্ত ধানী জমি বন্ধক দেয়া হল। মাসিক দশটাকা হারে সুদের উপর টাকা সংগ্রহ হল। এমনকি আমাদের বাগানে যে সমস্ত ফলবতী নাকিরেল বিথী তাদেরকে পর্যন্ত বন্ধক দিতে মা আলস্য করেনি। মেয়ে পার করার জন্য মা সমস্ত অসাধ্য সাধনে নেমে ছিলেন।
কারণ ছেলে ভাল। পান বিড়ি সিগারেট কিছু খায় না। এমনকি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা পর্যন্ত দেয় না। এক চান্সে বিএ পাশ করেছে। সে সময় এক চান্সে বিএ পাস করাটাও একটা বিশেষ গুণ ছিল। মাস্টার্স পড়া শেষ, পরীক্ষা হয়ে গেছ। এটাও ভালই ভালই পাশ দিবে। । বাপের একমাত্র পুত্র সুতরাং চাকরি বাকরি হইল কি হইল না সেই নিয়েও কোন চিন্তা নাই। বাপের বেশ জমি-জমা সহায় সম্পত্তি আছে। উঁচু বংশ। চেহারা রাজপুত্রের মত। ছেলেদের চেহারা অবশ্য তেমন কোন ব্যপার না। আমি তখনও তাকে দেখিনি, সেও আমাকে দেখেনি। বাপ-মায়ের পছন্দই তার পছন্দ, এমনি ভাল ছেলে।
ছেলের বাপ নিজে মেয়ে দেখতে এসেছিলেন। সাথে ছেলের বড় মামা। মেয়েদের মধ্যে এসেছিল তার মা আর বড় বোন। তারা আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। দেখে দেখে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল গায়ের রঙ ময়লা। এই নিয়ে আমার মায়েরও ভয়ের অন্ত ছিল না। এর আগে বেশ কটা সম্বন্ধ হয়ে হয়েও হইল না। কালো মেয়ে গ্যগপার করা বেশ কষ্টের। আমার মা অবশ্য কালো বলে না, বলে শ্যামলা। গড়ন সুন্দর। কিন্তু পাত্রপক্ষ সোজাসাপ্টা বলে দেয় গায়ের রঙ মন্দ।
তবে এবারে সুপাত্রের সুপিতা-মাতা আমার গায়ের রঙ কালো হলেও না করলেন না। রাজী হয়ে গেলেন। বাপ-মরা কালো-কুলো মেয়ের এমন কপাল দেখে আমার মায়ের চোখে আনন্দের বন্যা।
সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে ছেলের বাবার কাছে আমার ডাক পড়ল। ছেলের বাবা বললেন, ‘অনেক তো পড়ালেখা করেছ, কোরআন মজিদ পড়তে জান?‘
‘জ্বী জানি’
‘খুব ভাল, খুব ভাল। এই বিদ্যাই হল আসল বিদ্যা, মা।‘
‘সূরা ইয়াসীন মুখস্থ পার?’
‘জ্বি না’।
‘এইটা কি বললা? সূরা ইয়াসীনের কত ফজিলত তুমি জান না? এ সূরাকে কোরআন মজিদের হৃৎপিন্ড বলা হয়েছে আহা! বিয়ের আগেই সূরাটা মুখস্থ করে নেবে। সকাল বিকাল পড়বে। মনে থাকবে?’
‘জ্বী, মনে থাকবে।‘
‘বেশ বেশ।‘
তাদের দাবী দাওয়াও খুব একটা ছিল না। কিন্তু পাত্রপক্ষকে তো আমাদের সম্মান করাই লাগে। বিশেষ করে, তাদের আত্মীয় স্বজন আছে, বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী আছে। পাঁচজনে যখন জিজ্ঞেস করবে ছেলে বিয়ে করিয়ে কি পেলে তখন তারা কি জবাব দেবে।
‘বুঝলেন, বেয়াইন সাহেব, আমি যৌতুক প্রথা একদমই পছন্দ করি না। একটা মেয়ের জন্য এটা মস্ত একটা অপমানজনক বিষয়। বিয়ের পরে আপনার মেয়ে মানে আমার মেয়ে, আর মেয়ের জামাই মানে তো আপনার ছেলে। আর আপনারও তো আর ছেলেপেলে নাই। সেই জন্য আমি বলি কি আপনি ছেলের জন্য একটা মোটর সাইকেলের ব্যবস্থা করে ফেলেন। বুঝেন তো, না হলে গ্রামবাসীর কাছে আমার মুখ থাকে না। শিক্ষিত একটা ছেলে। একেবারে খালি হাতে বউ নিয়ে গেলে নানান জনে নানান কথা বলবে।‘
মা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।‘ হাসিমুখেই বলেন।
ছেলের বাবাও বলেন, ‘মাশা আল্লাহ, বেয়াইন, মারহাবা।‘
ছেলের মামার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি মারহাবা বল না কেন? তোমার মন খারাপ হইতেছে নাকি?’
ছেলের মামা বলল, ‘মারহাবা’।
তোমরা তো শুধু একটা ম্যানা গরু হাতে ধরিয়ে দিয়ে বোনকে পার করছিলা। আজীবনতো আমারটাই তো খেয়ে গেলা। কোনদিন তো দুই পয়সা বাইর করলা না।‘
ছেলের মামা কিছু একটা বলতে নিয়েছিল, তিনি থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওসব কথা থাক। যে কাজে আসছি, সেটাতে মনযোগ দাও।‘
ছেলেদের একটা সাদাকালো টেলিভিশন ছিল। তাদের গাঁয়ের আরো কারা যেন একটা রঙিন টেলিভিশন কিনে এনেছে। এখন তাঁদের ঘরে রঙিন টিভি না হলে তাদের মান-ইজ্জত থাকে না। আমার মার উচিত তাদেরকে একটা রঙিন টিভির ব্যবস্থা করা। বেয়াইর ইজ্জত মানে আমার মায়েরও ইজ্জত। বিয়ের পরে জামাই-বউ একসাথে নাটক-সিনেমা দেখবে এতে মিল মহব্বত বাড়বে। বড় আধুনিক শ্বশুর।
এভাবে মারহাবা লম্বা থেকে লম্বাতর হতে থাকে।
এছাড়া তারা বড় ঘর। সুতরাং আত্মীয় স্বজনের লিস্ট অনেক লম্বা। পাঁচশ বরযাত্রীর আয়োজন করা প্রয়োজন। মেয়ের হাতে কানে গলায় কিছু স্বর্ণ গয়নাও লাগে। কালো মেয়ে, খালি গা ভাল দেখায় না। আপনারই মেয়ে। স্বর্ণগয়না, জেওরপাতি তো তারই থাকবে। টাকাপয়সা আর কার জন্য? আমরা আর কয়দিন।
মা সকল কিছুতেই বলেন আলহামদুলিল্লাহ। কালো মেয়ে নিয়ে তিনি বড়ই বিপদে ছিলেন। ছেলের বাবার আজীবন গোলামী করতেও যেন রাজী ছিলেন।
ছেলের বাবা জানেন ফেয়ার এন্ড লাভলি কোন দিনই কালো মেয়ে ফর্সা করে না। কালো মেয়ে ফর্সা করতে উপযুক্ত দান-সামগ্রীর কোন বিকল্প নাই। তবে জাতের মেয়ে কালো ভাল।
ছোট মামা উপস্থিত ছিলেন। তিনি সোজা-সরল মানুষ। তাও মানতে পারছিলেন না। এত কি সম্ভব! কিন্তু আমার মা মরিয়া। মামাকে চোখ রাঙানি দিলেন। তিনি চুপ করলেন।
তবুও ছোটমামা সাহস করে একটা কথা পাড়লেন। বললেন, যুথী তো ডিগ্রী ক্লাসে ভর্তি আছে। সে কি পরীক্ষা দিতে পারবে? ছাত্রী ভাল ছিল। সুযোগ পেলে এক চান্সে পাস করে ফেলবে।
ছেলের বাবা সেটা হেসেই উড়িয়ে দিলেন। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের আর পড়ার দরকারই বা কি! কালো বলেই না মেয়েকে এতগুলি ক্লাস গুণতে হয়েছে। নইলে তো ম্যাট্রিকের পরেই বিবাহ হয়ে এত দিনে বাচ্চা-কাচ্চার মা হয়ে যেত।
সবাই চলে গেলে মাকে বললাম, ‘তুমি যে বড় রাজি হয়ে গেলে? এইসব জোগাড় করবে কি করে?’
মা আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন। ছোট মামাকে ডেকে তাঁকে দিয়ে সব আয়োজন করছেন।
বিয়ের দুদিন আগে, ছোটমামা নিজেই মুষড়ে পড়লেন। তিনি খবর পেয়েছেন, ছেলে সম্পর্কে যা শুনেছেন তার মধ্যে অনেক কিছুই ভুল আছে। ছেলে মাস্টার্সে পড়ে না। বিএ পাস করেই পড়ালেখা শেষ। কাজকর্ম কিছু করে না। বাপের হোটেলে খায়। বাপের যে খুব আহামরি অনেক কিছু আছে তা না। গ্রামে একটা মুদি দোকান আছে। খুব বেশি বেচাবিক্রি নাই। চেহারাও নাকি অত ভাল না। মাথায় চুল কম।
মা বিচলিত হন না। মেয়ে পার করা অতি জরুরি। বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কালো মেয়ে পার করা অত সহজ না।
মামা তবু সাহস করে বলে, নিজের মেয়েকে অমন কালো কালো করছ কেন? যুথী কি কাল? ও তো শ্যমলা।
তুই আর আমি শ্যামলা বললে তো হবে না। আর দশজনে বললেও হবে না। পাত্রপক্ষ বলতে হবে। আর শ্যামলা বলানোর জন্য যা করা দরকার তাই করছি।
বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে কবুল বলার আগে, আমি বললাম, ‘আমার একটা কথা আছে।’ কাজী সাহেব অনুমতি দিলেন। আমি বললাম, ‘আমার সূরা ইয়াসীন মুখস্থ করার কথা ছিল। আমি মুখস্থ করেছি।‘ ছেলের বাবা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আমি সূরাটা শোনাতে চাই।
তার আর দরকার নেই মা। তোমাকে বাড়িতে নিয়ে একবারেই শুনব। কাল সকালে ফজরের নামাযের পরে তোমার মধুর সুরে তেলাওত শুনব, ইনশা আল্লাহ।
দরকার আছে বাবা। ঠিকমত হল কিনা সেটা যাচাই করা দরকার। আপনি মুরুব্বী মানুষ একটা আবদার করেছিলেন। বলেই আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আবৃত্তি করা শুরু করলাম। ইয়া-সীন---‘
কেউ কেউ মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। কেউ কৌতুহল নিয়ে শুনছে। কাজী সাহেব খাতায় নাম ঠিকানা লিখছেন। বরের বাবার চেহারায় অধৈর্য। আমি কোন দিকে কিছু ভ্রুক্ষেপ না করে পড়ে যেতে লাগলাম। বর মুখ থেকে রুমাল নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি করবে বুঝতে পারছে না।
শেষ হয়ে গেলে বরের বাবা মারহাবা বলতে ভুলে গেলেন। তিনি হয়ত অন্য কিছু ভাবছিলেন। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম ঠিকমত হয়নি বাবা? তখন তাঁর সম্বিত ফিরে এল। তিনি বললেন। হ্যাঁ, হ্যাঁ। অবশ্যই। কাজী সাহেব এবার শুরু করেন।
বললাম, আরেকটা কথা আছে। বরের বাবা অস্থির হয়ে বললেন, আবার কি?
সেদিকে না তাকিয়ে সরাসরি বরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি সূরা ইয়াসিন পারেন?’
ছেলে থতমত খেয়ে বলল, জ্বী।
‘সূরা ইয়াসীন পারেন?’
এইবার চারিদিকে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল। ছেলে চুপ। ছেলের বাবা বলে, ‘এইসব কি শুরু হইছে? বিয়ের পরে তোমরা সারাদিন কোরআন মজিদ নিয়ে আলোচনা করতে পারবা। তোমার ধর্মভক্তিতে আমরা মুগ্ধ। এখন আগে বিয়ের ঝামেলাটা শেষ করি।
মা আমাকে বারবার চিমটি চিমটি দিতে দিতে সেটাকে খামচিতে রূপান্তর করে ফেললেন। এবার দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললেন, কি শুরু করলি। মাথা ঠিক আছে?
কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘জানেন কি জানেন না?’
ছেলে বলল, ‘না’।
জানা উচিত ছিল। এটা অনেক ফজিলতপূর্ন সূরা। এ সূরাকে কোরআন মজিদের হৃৎপিন্ড বলা হয়েছে।
এইসব আজাইরা কথা বন্ধ কর। কাজী সাহেব শুরু করেন।
না। উনি সূরা ইয়াসীন না মুখস্থ করলে হবে না। আগে উনি সূরা ইয়াসীন মুখস্থ করবেন তারপরে আমি কবুল বলব।
বেয়াইন সাহেবা, আপনার মেয়ের এই বেয়াদবী কিন্তু সহ্যের বাহিরে। আমার মা পারলে আমার দুই গালে দুইটা চড় দেন। নিজের দূর্ভাগ্যের জন্য আমাকে মনে মনে শত টুকরা করে দরিয়ায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন।
আমি আমার কথায় অটল। এত টাকা দিয়ে মা যে ছেলে আমার জন্য কিনে নিচ্ছে সে সূরা ইয়াসীন পারে না, তা কি করে হয়। এত ফজিলতপূর্ন একটা সূরা না জানলে হবে কি করে?
বরের বাবার মাথায় যেন বজ্রপাত হল। তিনি হুংকার দিয়ে কি বললেন আমি ঠিক বুঝলাম না। উঠান থেকে লোকজন ঘরে ঢুকে পড়ল। চারিদিকে একটা হট্টগোল। হৈ হৈ রৈ রৈ। ধর-মার-কাট। কে একজন যেন আমার দিকে তেড়ে আসল। আমার মা টেনে আমাকে ভেতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দুই গালে ইচ্ছে মত কষালেন। আর একটু হলে আমার দু-একটা দাঁত পড়ে যেত। মা একটু শান্ত হলে মাকে বললাম, যা হয়েছে ভাল হয়েছে। তিনি শুরু করে দিলেন, বিলাপ করে কান্না। আত্মীয় স্বজন পাড়াপ্রতিবেশি কেউ সান্তনা দিচ্ছে, কেউ গঞ্জনা।
মা পারলে আমার গলাটিপে শেষ করে দেন।
উঠানে বরযাত্রীরা সাজ-সজ্জা, হাড়ি-পাতিল, সামিয়ানা, তেরপাল যেখানে যা পাইল ইচ্ছে মত ভাঙচুর করল। বিকট সাইজের পোলাও, মাংসের ডেকচি উলটে ফেলে পথ ভাসিয়ে দিল। সেই অঢেল মাংসের সন্ধানে গ্রামের যত অনিমন্ত্রিত বেওয়ারিশ কুকুর ছিল তারা নিজেদের সৌভাগ্যে ঘেউ ঘেউ ঝগড়া পর্যন্ত ভুলে গেল।
উঠানে বড়সড় একটা কাগুজি লেবুর গাছ ছিল। আমার বাবার হাতে লাগানো। বাবা থাকতে সেই লেবু পেড়ে নিয়ে বলতেন, যা তো মা, চট করে শরবত করে নিয়ে আয়। শরবত নিয়ে এলে বলতেন, ‘আহ, আমার মায়ের হাতে জাদু আছে।‘
সেই লেবু গাছটা ভেঙেচুরে নাই করে দিল।
বরের বাবা বার বলতে লাগল, ‘বিষাক্ত সাপিনী। কাল নাগিনী। আল্লায় বাঁচাইছে। আমারে আল্লায় বাঁচাইছে। এরকম বেয়াদপ বেতমিজ মেয়েকে কোথায় বিয়ে দেয় দেখে নেব।‘
মা কখনো এত বিপন্ন এত শোকাক্রান্ত হন নাই। বাবা যখন মারা গেল তখনও না।
শুধু আমার মনে হল রাক্ষসের হা করা মুখ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।
--কালো মেয়ের পায়ের তলায় আলো
--আন্‌ওয়ার এম হুসাইন

[অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হচ্ছে আমার গল্পগ্রন্থ 'প্রত্যুষের গল্প'। প্রকাশ করছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স।]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




আপনার গল্প ৫০ বছর আগেকার প্রেক্ষাপট, আপনি নিশ্চয় সেই আমল দেখেন নি। আপনার গল্প ৫০ বছর আগে সচল ছিলো, এখন এই গল্প অচল।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪৫

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। কষ্ট করে পড়েছেন এবং মতামত জানিয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই এই বাস্তবতা বিরাজমান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আর যাদের বাড়ি চট্টগ্রামে, তা গ্রামে কি শহর্‌ তারা জানে যৌতুক এখনো কত দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী। আবারো ধন্যবাদ।

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১৮

রানার ব্লগ বলেছেন: ঠাকুর ভাই একেবারে অচল না আজো গ্রামে এমন হয়। কিছু বেয়াক্কেল মুরুব্বি আছে যারা এই সকল কান্ড করে শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয় অন্যের বিয়েতে দাওয়াত দিলে সেখানে গিয়েও এমন করে।

ভাই সুন্দর গল্প ভালো লাগছে, বই প্রকাশের জন্য আপনার জন্য শুভকামনা রইলো!! বইয়ের সেল হোক!!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫০

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় রানার ব্লগ।
ঠিক বলেছেন, এখনো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বাস্তবতা বিরাজমান। বিশেষ করে চট্টগ্রামে শহর গ্রাম সব জায়গাতেই যৌতুক এখনো রাজত্ব করে চলেছে।
আপনার শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা। ভালো থাকবেন সব সময়।

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি দুবার এসেছে।
এডিট করে ঠিক করে নিন।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় রাজীব নুর।
ভুল ধরিয়ে দিয়ে খুব কাজের কাজ করেছেন, আমি ঠিক করে নিয়েছি। আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুরা ইয়াসীন পড়ে আপনার পোষ্টে ফুঁ দিলাম সামনে যেন ঠিকমত পোষ্ট দিতে পারেন।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫৭

আনু মোল্লাহ বলেছেন: কষ্ট করে ফুঁ দিয়েছেন সে জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। অনেক কষ্ট করেছেন।
আপনার এই পরপোকারী মনোভাব বজায় থাকুক সবসময়।
শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.