নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আকাশের থাকলে তারকা সব সময় সুন্দর দেখায় (Halo Effect) - আন্‌ওয়ার এম হুসাইন

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৫৯

সিলিকন ভ্যালীর একটা ফার্ম, সিস্কো, একসময় ছিল নতুন অর্থনীতির বরপুত্র। সাংবাদিকরা এর সর্বসাফল্য নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা করতঃ এর চমৎকার গ্রাহক সেবা, নির্ভুল কৌশল, দক্ষ অধিগ্রহণ, অদ্বিতীয় কারবারী সংস্কৃতি, সহজাত দক্ষ ক্যারিশমাটিক সিইও। দুই হাজার সালের মার্চমাসে এইটা ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে দামী কোম্পানী।

পরের বছর সিস্কোর শেয়ারের দাম ৮০% পড়ে গেলে, সাংবাদিকরা সুর পালটানো শুরু করে। হঠাৎ করে কোম্পানীর প্রতিযোগীতামূলক সুবিধাগুলোকে ধ্বংসাত্মক ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করা হলঃ বাজে গ্রাহক সেবা, ধূমায়িত কৌশল, বেকুবমার্কা অধিগ্রহণ, পঁচা কর্পোরেট সংস্কৃতি এবং একজন বেকুব সিইও। এসব যখন বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু কোম্পানীর না কোন কৌশল বদলানো হয়েছে, না সিইও পালটানো হয়েছে। যা পাল্টেছে তা হল কোম্পানীর চাহিদা, সেটা হয়েছে ডটকম ক্রাশের ফলশ্রুতিতে, তা কিন্তু কোম্পানীর কোন ভুল-ত্রুটির জন্য নয়।

যখন কোন বিষয়ের কোন একটা দিক আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় আর সেটা পুরো বিষয়টার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করে সেটাকেই আমরা বলি হেয়লো এফেক্ট (Halo effect) বা জ্যোতিষ চক্কর বলতে পারি। সিস্কোর ক্ষেত্রে এই জ্যোতিশ্চক্র বিশেষভাবে উজ্জ্বল ছিল। সাংবাদিকরা সিস্কোর শেয়ার মূল্য দেখে টাস্কি খেয়েছে আর কোন ভেতরের কোন খবর না নিয়েই ভেবেছে পুরো বিজনেসটা নিশ্চয়ই চকচকে আর টকটকে।

হেয়লো এফেক্ট সব সময় একইভাবে কাজ করে, আমরা কোন সহজলভ্য বা উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য বা বিবরণ নিয়েই পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে ধারনা করে ফেলি। যেমন কোন কোম্পানীর আর্থিক অবস্থা থেকে বাড়তি যাচাই বাচাই ছাড়াই আমরা খুব সহজে কোম্পানীর ব্যাবস্থাপকদের পরিচালনা ক্ষমতা বা এর কোম্পানির বিজনেস কৌশলের সম্ভাব্যতা নিয়ে উপসংহারে চলে যাই। আমরা প্রায়শই সফলতা বা শ্রেষ্ঠত্ব আরোপ করি যেখানে এগুলো খুব সামান্যই আছে, যেমন, আমরা যখন শুধু খ্যাতির উপর ভিত্তি করেই কোন ম্যানুফ্যাকচারার থেকে পন্য কিনি। . হেলো এফেক্টের আরো একটা উদাহরণ হল, আমরা ধরে নিই এক ধরনের ব্যবসায়ে সফল সিইওরা অন্য যেকোনে ব্যবসায়েও সফল হবে, এবং আরেকটা বিষয় হল, তারা তাদের ব্যক্তি জীবনেও নায়ক বনে যায়।

মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড লী থর্নডাইক প্রায় শত বছর আগে, এই হেলো এফেক্ট আবিষকার করেন। তাঁর উপসংহার ছিল, যে কোন একটি গুণ ( উদাহরণস্বরূপঃ সৌন্দর্য, সামাজিক অবস্থা, বয়স) ইতিবাচক বা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে এবং তা পুরো ব্যাপারটাতে এর একটা অসমান প্রভাব থাকে। সৌন্দর্য হল সবচেয়ে বেশি গবেষনা করা উদাহরণ। ডজন ডজন গবেষণা দেখিয়েছে যে, আমরা দেখতে ভাল লোকদেরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই/ এমনি এমনিই ধরে নিই যে তারা সুপ্রিয়, সৎ এবং বুদ্ধিমান। আকর্ষনীয় লোকজন তাদের পেশাগত জীবনে সহজেই এই সুবিধা পেয়ে থাকে এমনকি স্কুলেও এই হেলো এফেক্ট দেখা যায় যেখানে শিক্ষকরা অসচেতনভাবেই দেখতে ভাল বাচ্চাদেরকে বেশি মার্ক দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপনের সাথে এই হেলো এফেক্টের এর দারুন সংযোগ আছেঃ টিভিতে, বিলবোর্ডে, ম্যাগাজিনে যেসব সেলিব্রেটিরা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসে তাদের দিকে একবারটি দেখুন। কিভাবে রজার ফেদেরারের মত একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় কিভাবে একজন কফি মেশিন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, যদিও সেটা সফল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয়। আমরা সেলিব্রেট্রিদেরকে এতবেশি বিজ্ঞাপনে দেখি যে, আমরা কখনো চিন্তাও করি না কেন এটা-সেটার বিজ্ঞাপনে তাঁদেরকে দেখানোটা আদৌ আমাদের জন্য কোন গুরুত্ব বহন করে কিনা। কিন্তু এটাই হল হেলো এফেক্টের সবচেয়ে সেয়ানা পার্টঃ এটা আমাদের অবচেতন মনে কাজ করে। যা কিছু রেকর্ড করা দরকার তা হল, আকর্ষণীয় মুখ, আকর্ষনীয় জীবনধারা (লাইফস্টাইল) এবং ঐ নির্দিষ্ট পণ্য।

জোরালো নেতিবাচক প্রভাবের সাথে সাথে হেলো এফেক্ট বড় ধরনের অবিচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং এমনকি যখন জাতীয়তা, লিঙ্গ, অথবা বর্ণ সবকিছুর ব্যাপারে বাঁধাধরা চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। কেউ বর্ণবাদী কিংবা লিঙ্গ-বিদ্বেষী না হয়েও এসবের স্বীকার হতে পারে। হেয়লো এফেক্ট আমাদের দৃষ্টি মেঘাচ্ছন্ন করে দেয় যেমনটা দেয় সাংবাদিক, শিক্ষক এবং ভোক্তাদের।

কদাচিৎ এই প্রভাবের নির্মল দিক দেখা যায় – হতে পারে সেটা স্বল্পমেয়াদী, আপনি কখনো প্রেমের সাগরে ভেসেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি জানেন, কতটা নিখুঁত মনে হতে পারে একজন কে। আপনার মনের মানুষকে মনে হবে পুরো একটা প্যাকেজ, আকর্ষণীয়, বুদ্ধিমান, পছন্দনীয় এবং উষ্ণ। এমনকি আপনার বন্ধুরা অনেক কিছু নেতিবাচক দিক পয়েন্ট আউট করতে পারে, আপনি এর কোন কিছুই দেখেন না, বরং মনে হয় সেগুলোও কত সুন্দর!

প্রকৃত বৈশিষ্ট বুঝতে হেয়লো এফেক্ট আমাদেরকে বাধা দেয়। এটা কাটাতে হলে আপনাকে ফেসভ্যালু বাদ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। বিশ্বমানের অর্কেস্ট্রাওগুলোতে বাছাইয়ের সময় পর্দার আড়ালে ক্যান্ডিডেটদেরকে পারফর্ম করতে হয় যাতে লিঙ্গ, বর্ণ, বয়স এবং চেহারা কোন ভূমিকা রাখতে না পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল আপনার, যথাযথ তথ্য নেয়ার ও বুঝার মত ধৈর্য্য থাকতে হবে।

[রলফ ডবেলি থেকে অনূদিত]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি।

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:২৮

আনু মোল্লাহ বলেছেন: এখানে মূলকথা হচ্ছে, আমরা অনেক সময় সামগ্রিক দিক চিন্তা না করে করে ধরাবাঁধা চিন্তা থেকেই আমরা একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিসিশন নিয়ে ফেলি। যেমন, সিস্কো কোম্পানীর ক্ষেত্রে প্রথমে বাজারে শেয়ার প্রাইচ ভাল দেখে সাংবাদিকরা ধরে নিয়েছে, নিশ্চয় এর সব কিছুই ভাল। পরে শেয়ারের দাম কমে যায়, তখন তারাই আবার সিস্কোকে বাজে বকা শুরু করে। অথচ সিস্কো আগে যা ছিল তাই আছে।
একই ভাবে, আমরা ধরে নিই, চেহারা-সুরত যখন সুন্দর তখন নিশ্চয়, নিষ্পাপ, সৎ ও কর্মঠ হবে। স্কুলে সুন্দর বাচ্চাদের বেশি মার্ক দেয়া - এইসব আর কি!

ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: এখন পরিস্কার। ভেরি ক্লিয়ার।

অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন বিষয় নিয়ে আলোচনা!

আমরা নিত্যই এই ইফেক্টের শিকার হয়ে বসে আছি। তাই বুঝতেই পারিনা আমাদের ভাবনাকেও কিভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয় বহুজাতিক কোম্পানী গুলো। আমরা কেবল তাদের ভোক্তা (শিকার) হয়েই জীবন পার করে দেই!

আর যাদের সচেতন করার দায়িত্ব তাদের একটা বৃহৎ অংশ স্পন্সরশীপের আড়ালে হারিয়ে যায়!
এবদম ক্ষুদ্র যে অংশটা সচেতন থাকে তাদের আবার গণমানুষের কাছে পৌছানোর পথ হিমালয়ে জয়ের চেয়েও কঠিনতর!
ফলে আমজনতা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে যায়!

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আসল কথা এটাই।
আমরা নিত্য নিত্যি এই হেলো এফেক্টের শিকার হই নিজের অজান্তেই। আমরা ধরে নিই কালো মানুষ মানেই খারাপ। এশিয়ান মানে অকর্মঠ। কোন তারকা যখন বলে, সাবান টা, শ্যাম্পুটা ভাল নিশ্চয়ই ভাল।

অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বিদ্রোহী। ভাল থাকবেন।

৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভাল একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মাহমুদুর রহমান ভাই।

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পণ্যের গুণগত মানের চাইতে প্যাকেটিং, নামকরণ, কোম্পানি অর্থাৎ বাহিরের চিত্রাদি, ভালো রিভিউ আমাদের বেশি আকর্ষিত করে।
মানুষের ক্ষেত্রেও এটা ঘটে।
সুন্দর চেহারার, ফিটফাট মানুষকে বেশি বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত মনে হয়। একটু কালো, শটকার্ট মানুষ শিক্ষিত, ভালো, স্মার্ট হলেও দূর থেকে কিন্তু বুঝা যায়। এটাই বাস্তবতা।

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৭

আনু মোল্লাহ বলেছেন: যথার্থই বলে প্রিয় জুনায়েদ ভাই। অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩২

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অসাধারণ লাগলো পুরো লেখাটি।
এই বাস্তবতা নিয়ে ভেবেছিলাম, কিন্তু এর যে এমন একটা নাম আছে জানতাম না, আপনাকে ধন্যবাদ

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৮

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ প্রিয় প্রান্ত ভাই।
আপনি রলফ ডবেলি'র দ্য আর্ট অব থিংকিং ক্ল্রিয়ারলি বইটা পড়তে পারেন।
আমি বইটা অনুবাদ করছি। আস্তে সামুতে দিব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.