নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক বোকা বাবার গল্প শোন

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০০

খুব তাড়াহুড়া করে বাসায় ফেরে রাশিদুল। দরজায় খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জারা। দুহাতে বাবাকে জড়িয়ে বুকে মাথা গেঁথে দেয়। মা এসে জিজ্ঞেস করে এত দেরী করেছ কেন? মেয়ে দুহাতে বাবার বুকে থাপ্পড় দিতে থাকে। বাবার চশমা ধরে টানাটানি করে। মেয়েকে নিয়ে রাশিদুল ফ্যানের নিচে বসে। বাসের ভীড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গা ঘেমে নেয়ে একাকার। শুধু ঘামাঘামি হলে হত, তুমি দাঁড়িয়ে আছ শতেক ধাক্কা সহ্য কর। শতেক জন এসে পা মাড়িয়ে দিয়ে যাবে। কিছু বলাও যাবে না। কেউ কেউ বলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। মাঝে মাঝে হাতাহাতিও হয়। আসলে কারোই দোষ নাই। সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। কন্ডাক্টর এসে বারবার ভাড়া চেয়ে বিরক্ত করে। আর বসে থাকলে দেখা যাবে আরেকজনের পশ্চাদ্দেশ তোমার মুখের উপর কিংবা তার দুই রানের মাঝামাঝি পয়েন্টটা তোমার গায়ে এমনভাবে সেট করে রেখেছে তোমার বমি পাচ্ছে কিন্তু তোমার কিছু করার নাই। ঐ লোকটারও দোষ নাই। তার পিছনে এমন ঠাসাঠাসি অবস্থা তার নিজের জান ত্রাহি ত্রাহি করছে। সারাদিনের অফিসের শেষে এই সমস্ত ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি পার করে বাসায় এলে মেয়েটা যখন নাকের ফুটোয় দুই আঙুল ঢুকিয়ে দেয় কিংবা চুল ধরে টানা করে তখন রাশিদুলের আর কিছু মনে থাকে না। মেয়ের এখনো কথা ফোটেনি। বায়না ধরতে পারে না। রাগ করতে পারে না। অভিমান করে না। একটু উঁ আঁ আর নাচানাচিতেই রাশিদুলের মনে হয় কত সুখের জীবন। মেয়ের মা চা এনে দেয়। মেয়েকে সাবধানে ধরে চায়ে চুমুক দেয়। উড়ুৎ উড়ুৎ করে চা খায়। এই নিয়ে জারার মা কত হাসাহাসি করে, তবু এই অভ্যাস যায় না তার। কিন্তু আজকে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, রাশিদুলের খেয়াল থাকে না। উড়ুৎ উড়ুৎ করার দরকার পড়ে না। মেয়েকে বুকের মাঝে ঝড়িয়ে ধরে, আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। বউ রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ?’

না শরীর খারাপ না। শরীর তার খারাপ করে না। কিন্তু আজকে জারাকে দেখলেই তার --, তার কি----? কি, সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিছু একটা করা দরকার? কি করবে? তার কি করার আছে। এই শহরে দেড় কোটি মানুষের ভীড়ে সে কি? খড়কুটা; একটা ধূলিকণা মাত্র। জারা এখন বাবার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। জারার হিসুতে ধূলিকণা ধুয়ে যায় না। জমাট বাঁধে। জারার হিসু পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। বউ এসে জারাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জারা রাশিদুলের মনের ভেতর বেড়ে উঠে বড় হয়ে যায়। জারার চারিদিকে কিলবিল করে ভাইরাস। দৈত্যের মত সে ভাইরাস শুঁড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে এগিয়ে আসে। অসহায় জারা আর্ত চিৎকার করে।বাবা! বাবা!! আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে চিৎকারে। মেয়ের চিৎকারে রাশিদুল কি করে? রাশিদুলের হাতে কোন ভ্যাকসিন নাই। রাশিদুল হাতড়ায়, খালি হাতড়ায়, ভ্যাকসিনের খোঁজে। ভ্যাকসিন পায় না। পায় মোবাইল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। মেসেজ দেয় সবাইকে যে আছে যেখানে। সবাইকে সে রিকোয়েস্ট করে,

“আগামি শুক্রবার (০৪/০৫/২০১৭) সকাল ৯ টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত আমি একজন নাগরিক ও একজন পিতা হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাড়াতে চাই, হযরত আলি আর আয়শার হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে , যারা হযরত আলি আর আয়শা হত্যার বিচার চান আশা করি আপনাদের ও সাথে পাব”।

শুক্রবার সকালে, কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না।
শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা। হাতে তার মত একা একটা প্ল্যাকার্ড, বিষণ্ণ ও বিপ্লবী।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পের মতো মনে হয়নি; লেখার কোনটা মাথা, কোনটা লেজ, বুঝার উপায় নেই

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৪০

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আসলে এই গল্পের মাধ্যমে রূপকভাবে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ধর্ষনের প্রতিবাদ দেখাতে চেয়েছিলাম। যে টুকু বুঝা যায়নি সেটা আমার ব্যার্থতা।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চমৎকার।

গল্পেও যে এত দৃঢ় প্রতিবাদ হয় দেখে মুগ্ধ হলাম।
আবার বাস্তবতা্ও চরম ফুটেছে শেষ লাইনে..
কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না। শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা..


+++++

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

আনু মোল্লাহ বলেছেন: প্রিয় বিদ্রোহী ভাই, অনেক ভাল লাগল আপনার সুন্দর মন্তব্যে। চেষ্টা করেছি, ধর্ষনের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। গল্প আপনাদের ভাল লেগেছে, এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। ভাল থাকবেন।

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:২৪

এম এ কাশেম বলেছেন: সকলে গল্প বুঝে না, কেউ কেউ বুঝে ,
যে বুঝে না সে আজে বাজে বকে
যে বুঝে , সে চুপ থাকে - ভাবে......।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

আনু মোল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কাশেম ভাই।
গল্পের মাঝে প্রতিবাদ দেখানোর চেষ্টা করেছি। সেই সাথে আমাদের সময়ে আমরা কতটুকু আত্মকেন্দ্রিক সেটা তুলে আনতে চেয়েছি। গল্পের ভিতরে ঢোকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও ভালবাসা নেবেন।

৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গল্পের মাঝে এমন প্রতিবাদ প্রথমবার দেখলাম।। ভাল লেগেছে ধরনটি।।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আমাদের সমাজে আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের বিষয়গুলোও এখন কেমন যেন হয়েগেছে। প্রিতিবাদ প্রতিরোধের বিষয়গুলোতে গ্লামার থাকা চাই। ধর্ষনের প্রতিবাদে কন্যাসহ আত্মহত্যা করা রমজান আলীর মৃত্যু আমাদেরকে নাড়া দেয় নি। নিরবেই ঘটনাটা আমরা ভুলে গেছি। সেজন্যই গল্পটা লেখা।

অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল প্রিয় সচেতনহ্যাপী।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হোক প্রতিবাদ !

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:২১

আনু মোল্লাহ বলেছেন: হ্যাঁ, প্রতিবাদ হওয়া খুবই জরুরী। না হলে সমাজ ক্ষয়ে ক্ষয়ে এক সময় বন্ধ্যা হয়ে যাবে।

অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা প্রিয় মনিরা আপু।

৬| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: নষ্ট সমাজে জারার বাবারা আতঙ্কেই থাকবে...

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৩০

আনু মোল্লাহ বলেছেন: হ্যাঁ, এই নষ্ট সমাজে জারার বাবারা আতঙ্কেই থাকে। সেটাকে তুলে ধরা ছিল এই গল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিবেন প্রিয়।

৭| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা আর একটু গুছানো হলে দারুন হতো।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:০৯

আনু মোল্লাহ বলেছেন: গল্পের আকারে বলা হলেও ঘটনাটা সত্য। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.