নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি। প্রকাশিত গল্পের বইঃ প্রত্যুষের গল্প (পেন্সিল)\nউপন্যাসঃ এমনি এসে ভেসে যাই (তাম্রলিপি)।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ একটা সত্য গল্পের বয়ান

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

আজ বিকেলে নামিরার সাথে দখা হবে। নামিরার সবচেয়ে বড় অভিযোগ আমি তাকে কখনো ফুল কিনে দিই না। দিই না ব্যপারটা একেবারে সেরকম না। যতবার ফুল কিনে দিই, নামিরা বলার পরে দিই। আগে থেকে কিনে নেয়ার কথা আমার মনে থাকে না। নামিরা বলে, নিজে থেকে কিনে না দিলে কোন ফুলের কোন মান থাকে না। এই নিয়ে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনে ঝগড়া হয়ে গেছে। আমি আগের মতই আছি। যাচ্ছিলাম চেরাগী পাহাড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে। নজরুল স্কোয়ার আসতেই মনে হল চেরাগী পাহাড়ের ওখান থেকে তো ফুল কিনতে পারতাম।

রাস্তা ফাঁকা শুক্রবার দুপুরের রাস্তা। জুম্মার নামাজের পর রাস্তা আরো বেশি ফাঁকা থাকে। সুতরাং ঘুরে গিয়ে ফুল কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ইউ টার্ন নেয়ার জন্য গাড়ি স্লো করেছি, কোত্থেকে এক লোক উদয় হয়ে বাঁ পাশের লুকিং গ্লাস টা কট করে ভেঙে নিল। গ্লাস চোরেরা গ্লাস ভাংগাকে মোটামুটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই নিয়ে তৃতীয় বার গাড়ির গ্লাস ভাঙল। আগের দুইবার ছিল অগোচরে। একবার নিউ মার্কেটে পাঁচ মিনিটের জন্য গাড়িটা রেখে ভেতরে গেছি আর আসছি, এসেই দেখি লুকিং গ্লাস টা নাই। পরের বার চকবাজারে। কিছুই করার নেই পকেটের গচ্ছা দেয়া ছাড়া। কিন্তু এইবার শালারে পাইছি সামনে। হার্ড ব্রেক কষে যখন নামলাম তখনো দেখি লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। এই ক্ষেত্রে সাধারনত যা হয় নিমিষেই তারা পগার পার হয়ে যায় ( পগার পার জিনিসটা কি তা অবশ্য আমি জানিনা)। এই রকম হাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমিও যেন কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে গেলাম। সে দৌড় দিলে আমিও পিছু পিছু দৌড় দিয়ে তাকে ধরতাম, কিন্তু যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কি করি! নিজেকে সামলে নিয়ে কলার চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে এনে গাড়িতে ঢোকালাম। সে বেশ নির্বিকার। গাড়িতে ঢোকানোর সময় বা টেনে আনার সময় কোন বাধা দেয়নি। গাড়িতে এমন ভাবে বসল যেন তাকে আমি লিফট দিচ্ছি। লোকটার দিকে ভালকরে তাকালাম এবার। টেকো মাথা। ভদ্র চেহারা, নাকের আগায় একটা দাগ আছে। খোঁচা খোঁচা তিন চার দিনের দাঁড়ি। গায়ে ফতুয়া। বুকের বোতাম খোলা। কিন্তু তার ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয় নি।

বনিকে ফোন দিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি আমাদের বাসার গেটে আসতে, সাথে বিটুকেও নিয়ে আসতে হবে। আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের অপারেশন মাস্টার বিটু। শুক্রবারের রাস্তা, সুতরাং নিমিষেই নিয়ে বাসার গেটে পৌঁছে গেলাম। বনি আর বিটু রেডিই ছিল, ‘ব্যাপার কি?’

সংক্ষেপে বললাম ব্যাপার কি? বিটু বলল, মামাকে ছাদে নিয়ে চল। কিন্তু লোকটা এখনো নির্বিকার। চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় যে আমাদের কর্মকান্ডে সে বেশ মজা পাচ্ছে। বনি তাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে গাড়ি থেকে নামাল। দুগালে ঠাস ঠাস কয়েকটা বসিয়ে দিল। আমি বললাম, এখন থাক। ছাদে নিয়ে চল।
বনি আর বিটুর পরিকল্পনা হল ছাদে মুখ বেঁধে আচ্ছা মত বানানো। এর আগেও এ ধরনের অপারেশন আমরা ছাদেই করেছি। আমরা বলতে আসলে বলি আর বিটুই। মারামারি করার মত অত বেশি সাহস আমার নেই। অপারেশন আসলে বনি আর বিটুর। তারা মারামারি করে ঈদের আনন্দ পায়। শিকার ধরে এনে দিয়েছি আমার কাজ শেষ। সত্যি বলতে আমি যে ধরে আনতে পেরেছি এটাই বেশ। ছাদের নেয়ার জন্য কোন জোরজারি করা লাগেনি। নিজের মত স্বচ্ছন্দে ছাদে উঠে গেল।
ছাদে এসে লোকটা লুকিং গ্লাসটা খাওয়া শুরু করল। আমরা যেভাবে বার্গার খাই ঠিক সেভাবে। খাওয়ার সময় মুড়ি খাওয়ার মত কুড়মুড় আওয়াজ হচ্ছিল। খাওয়া শেষে লোকটা বলল, একটু পানি খাওয়ান। গলায় আটকে গেছে মনে হয়। আপনারা যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন, নজর লাগছে কিনা কে জানে। বিটু মারবে কি, নিজেই গিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে এল। পানি খেয়ে লোকটা বলল, বাথরুমে যাব। বাথরুমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। আমি বাসায় বাথরুমে নিয়ে গেলাম। এতক্ষন পরে বনি বলল, জিনিস একখান। ওস্তাদ আদমি। কওয়া দরকার ফ্লাশ যাতে না করে। গ্লাস খাওয়ার পরে হাগামুতা কেমন হয় তা দেখা দরকার। তার কথাতে আমরা কেন জানি কেউই হাসলাম না।

এই দিকে নামিরা ফোন দিচ্ছে বারবার। আমি বের হলে সে রেডি হবে। বার বার শাসাচ্ছে দেরি করলে ফাইনাল বোঝাপোড়া হবে আজকে। বিটু আমাকে ধমক দিল, হারামজাদা এইসময় পিরীতি না করলে হয় না! কিন্তু বনির ওস্তাদ আদমির তো বাথরুম থেকে বের হওয়ার কোন নাম নাই। আমরা ডাকাডাকি করলাম, ধরজা ধাক্কা দিলাম। কোন সাড়া নাই। শেষে মিস্ত্রী ডেকে দরজা ভাঙলাম।

দরজা ভেঙে দেখি ভিতরে কেউ নাই। কেউ ছিল, সে চিহ্নও নাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১২

কালীদাস বলেছেন: আচানক গল্প! বেটায় কি চোর ছিল নাকি জ্বিন ছিল?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১

আনু মোল্লাহ বলেছেন: হ্যাঁ, আচানক। তবে জ্বীনেরা গাড়ির লুকিং গ্লাস খায় এ ধরনের কোন তথ্যও আমার কাছে নাই!

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: এইডা কেমুন টুইস্ট দিলেন ভাই! পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খায়া গ্যালাম। প্রচ্চুর ভাল্লাগসে।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭

আনু মোল্লাহ বলেছেন: আপনার ভাললাগা আমার জন্য প্রেরণা প্রিয় মাহবুব ভাই। অনেক ধন্যবাদ জানবেন প্রিয়। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.